দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ বাংলাদেশি খুন

ক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককেই হত্যা করা হয়েছে তাঁদের নিজস্ব ব্যবসাকেন্দ্রে। দেশটির বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গ ও ডারবানে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হতভাগ্য বাংলাদেশিরা হলেন আহমেদ নূর, দিল মোহাম্মদ, মোবারক হোসেইন, শহীদুল্লাহ ও সোহেল।দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মিজানুর রহমান গতকাল বুধবার বিডিনিউজকে জানান, জোহানেসবার্গে ১ নভেম্বর খুন হন আহমেদ নূর ও দিল মোহাম্মদ। চার দিনের ব্যবধানে ৫ নভেম্বর একই শহরে খুন হন মোবারক হোসেইন।


আর ডারবানে সোমবার ঈদের রাতে খুন হন শহীদুল্লাহ ও সোহেল।মিজানুর জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় গত দুই মাসে ১০ থেকে ১২ জন বাংলাদেশি সেখানে খুন হয়েছেন। গত বছরও বিভিন্ন ঘটনায় সেখানে নিহত হন ১৩ বাংলাদেশি। তিনি জানান, আহমেদ নূর ও দিল মোহাম্মদ জোহানেসবার্গে একটি মুদি দোকান চালাতেন। ওই দোকানে অনেক বছর ধরে কাজ করা এক কৃষ্ণাঙ্গই তাঁদের খুন করে। ঘটনার রাতে তাঁদের কাছে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিল। ওই কৃষ্ণাঙ্গ কর্মচারী হাতুড়ি দিয়ে তাঁদের খুলি ফাটিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। মোবারক হোসেইন খুন হন নিজের মুদি দোকানে। রাতে একদল ডাকাত তাঁর দোকানে হানা দিলে তিনি একজনকে ধরে ফেলেন। এ সময় ওই ডাকাত তাঁর পেট ও মাথায় গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহমেদ নূর, দিল মোহাম্মদ ও মোবারকের মরদেহ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ সোমবার রাতে ডারবানে নিজেদের দোকানে খুন হন শহীদুল্লাহ ও তাঁর শ্যালক সোহেল। ফার্স্ট সেক্রেটারি জানান, ১ বা ২ নভেম্বর শহীদের দোকানে ডাকাতি হলে তিনি মামলা করেন। পুলিশ ডাকাতদের একজনকে গ্রেপ্তারও করে। এরপর মঙ্গলবার সকালে দোকানের ভেতরে শহীদুল্লাহ ও সোহেলের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। মামলা করায় প্রতিশোধ নিতেই তাঁদের খুন করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সোমবার রাতে ডারবানের নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিহত দুই যুবকের মধ্যে শহীদুল্লাহর (৪৫) বাড়ি বেগমগঞ্জ উপজেলার মুজাহিদপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নূর উল্লাহ। আর সোহেলের (৩০) বাবার নাম ওবায়দুল হক। বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ গ্রামে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রশিদ কালের কণ্ঠকে জানান, এ ধরনের কোনো সংবাদ তাঁরা পাননি। তবে তাঁরা খোঁজ নেবেন।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহীদ সম্পর্কে সোহেলের ফুফাতো বোনের জামাতা। তিনি প্রায় সাত বছর ধরে ডারবান শহরে বসবাস করছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সোহেলও সেখানে যান। তাঁরা দুজন একটি দোকান চালাতেন এবং রাতে সেখানেই ঘুমাতেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত এলাকার কয়েকজনের কাছ থেকে তারা জেনেছে সোমবার রাতে দোকানঘরের ওপরের চালা কেটে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢুকে শহীদ ও সোহেলকে জবাই করে। পরদিন সকালে দোকান খুলতে না দেখে আশপাশের ব্যবসায়ীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁদের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
শহীদুল্লাহর স্ত্রীর বড় ভাই বাদশা জানান, তাঁর ভগি্নপতির সাত বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, যে এখনো বাবাকে দেখেনি। তাঁরা স্বজনদের মরদেহ দেশে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.