ট্যানারি মালিকদের কম দামে চামড়া কেনার প্রস্তুতি-পুঁজি হারানোর ভয়ে ছোট ব্যবসায়ীরা by আবুল কাশেম
আড়াই হাজার কোটি টাকা মূল্যের প্রায় এক কোটি পশুর চামড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সারা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়ৎদাররা তাকিয়ে আছেন ট্যানারি মালিকদের দিকে। আর বিশ্ববাজারে মন্দার কথা বলে কম দামে চামড়া কেনার আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছেন ট্যানারি মালিকরা। ইতিমধ্যেই তাঁরা ব্যাংক থেকে ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করবেন।এ বছর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ না করায় মাঠ পর্যায় থেকে কেনা চামড়ার কেমন দাম পাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সারা দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
ট্যানারি মালিকরা বলেছেন, কোরবানির পশুর সব চামড়া কেনার মতো সামর্থ্য তাঁদের রয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার কারণে গতবারের চেয়ে চামড়ার দাম এবার কম হবে। অবশ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, চলতি
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
ঈদের আগে চামড়া শিল্পের তিনটি সংগঠন দাম নির্ধারণের বৈঠক করে দাম নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে ট্যানারি মালিকরা অবশ্য বলেন, কোন ট্যানারি মালিক কি দামে চামড়া কিনবেন তা স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে দাম নির্ধারণ না করায় মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ছোট ফড়িয়ারা অঞ্চলভেদে বিভিন্ন দামে চামড়া কিনেছেন। তাঁদের অনেকে এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তাঁদের গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ছাগলের প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে কিনতে বলেছেন। মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বেশি দামে কেনার কারণেই তাঁরা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দাবি করছেন। এতে একদিকে জেলা পর্যায়ের বড় ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা যেমন লোকসানের ভয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না, তেমনি পূঁজি হারানোর ভয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারাও কমমূল্যে তা বিক্রিতে নারাজ।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ বছর চামড়া কিনতে গিয়ে আমাদের অবস্থা খারাপ। এ বছর সর্বনিম্ন এক হাজার ৫০০ টাকা ও সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা দিয়ে গরুর চামড়া কিনতে হয়েছে।
পাবনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, এ বছর ট্যানারি মালিকরা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ তৃণমূল পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে খরচ পড়ছে গরুর চামড়া ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আগামীকাল শুক্রবার নাটোরের চামড়া হাটের দিকে তাঁরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন বলে জানান এ চামড়া ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীরা জানান, লবণের দাম বেশি হওয়ায় এবার তাঁদের সংরক্ষণ খরচও বেড়েছে। আগে প্রতি বস্তা লবণ (৭৫ কেজি) ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হঠাৎ করে ঈদের আগের রাতে তা ৫০০ টাকায় উঠেছে।
জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের ক্ষতির আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এবারের ঈদে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ গরু ও ৩০ থেকে ৪০ লাখ ছাগলের চামড়া পাওয়া যাবে। এর মূল্য প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ট্যানারি মালিকরা ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কোরবানির এই বিপুল পরিমাণ চামড়া কেনার সক্ষমতা ট্যানারি মালিকদের রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বছর কেমন দামে চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকরা_এমন এক প্রশ্নের উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, গতবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু কেনা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি দামে। এ বছর গতবারের তুলনায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে বলে ধারণা দেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও মেসার্স এম. বি. ট্যানারি লিমিটেডের মালিক মো. মোজাফফর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার দাম নির্ধারণ করা না হলেও গরুর চামড়া ৮০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫০ টাকা বর্গফুট দরে কেনা শুরু করবেন তিনি। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশের চামড়ার বড় বড় হাট থেকে কেনা শুরু করবেন মোজাফফর।
মোজাফফর রহমান জানান, 'ঈদের আগে প্রতি বর্গফুট চামড়ার রপ্তানি মূল্য ছিল দুই ডলার। এখন আমদানিকারকরা দেড় ডলার হাঁকছেন। রপ্তানি মূল্য থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ, মুনাফার হিসাব বাদ দিয়েই ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করবেন। আমার হিসাবে, এ বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৮০ টাকা ও ছাগলের প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫০ টাকা হওয়া উচিত।'
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক মন্দা আর গতবারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার চামড়া এখনো অবিক্রীত থাকায় এবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ২০০টি ট্যানারির মধ্যে বেশ কিছু ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মন্দা হলেও ট্যানারি মালিকরা এটাও জানেন যে, ভারতে চামড়ার দাম বেশি হলে তা পাচার হয়ে যাবে। তাই মন্দা সত্ত্বেও চামড়ার দাম এ বছর গতবারের তুলনায় খুব একটা কমবে না।'
নিজের ট্যানারির জন্য কবে থেকে কী দরে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে মোজাফফর রহমান বলেন, এখনো কোনো চামড়া কিনিনি। আগামী রবিবার টঙ্গীর চামড়া হাটে প্রথম চামড়া কিনব। এরপর বুধবার যাব কিশোরগঞ্জের হাটে, শনিবার নাটোরে।
আড়ৎদারদের পাওনা টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো বাকিতে বেচাকেনা হয় না। তবে ১৯৭৯ সালে চামড়ার বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। ওই সময়কার ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের পাওনা কোনো কোনো ট্যানারি মালিক এখনো পরিশোধ করেননি।
চামড়ার আড়ৎ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আফতাব জানান, গত বছর কোরবানিতে ৪০ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর সারা দেশে গরুর চামড়ার পরিমাণ হতে পারে ৪২ থেকে ৪৩ লাখ। তিনি বলেন, 'কোরবানির আগে তিনটি সংগঠন বসেছিল। তখন ট্যানারি মালিকরা বলছিলেন, তাঁরা ব্যাপারিদের জানিয়ে দেবেন কেমন দামে চামড়া কিনতে হবে। তাই চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।'
তবে আন্তর্জাতিক মন্দার কারণে এ বছর গতবারের তুলনায় চামড়ার দাম কম হবে বলে জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে এক মাস ধরে চামড়ার দাম কমছে। আর স্থানীয় বাজারে চার মাস আগে থেকেই দরপতন হচ্ছে।'
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছর এপ্রিলে চামড়ার দাম ছিল সর্বোচ্চ। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চামড়ার দাম কমে মধ্য জানুয়ারির পর্যায়ে নেমে গেছে। তবে এখনো ভেড়া ও ছাগলের চামড়ার দাম বাড়ছে। আমেরিকাতে চামড়ার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামার আশঙ্কা রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় চামড়ার দাম কমছে না। এদিকে চামড়ার দাম আরো কমার আশায় চীনের ব্যবসায়ীরা ইউরোপ থেকে ভেড়ার চামড়া কেনা আপাতত বন্ধ রেখেছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আড়ৎদারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ আফতাব বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা আমরা চাই না। জেলা পর্যায় থেকে আগামী সপ্তাহেই ঢাকার পোস্তার আড়ৎগুলোতে চামড়া আসতে শুরু করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করেননি। আগামী সপ্তাহে কেনা শুরু করবেন। তার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
ঈদের আগে চামড়া শিল্পের তিনটি সংগঠন দাম নির্ধারণের বৈঠক করে দাম নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে ট্যানারি মালিকরা অবশ্য বলেন, কোন ট্যানারি মালিক কি দামে চামড়া কিনবেন তা স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে দাম নির্ধারণ না করায় মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ছোট ফড়িয়ারা অঞ্চলভেদে বিভিন্ন দামে চামড়া কিনেছেন। তাঁদের অনেকে এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তাঁদের গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ছাগলের প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে কিনতে বলেছেন। মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বেশি দামে কেনার কারণেই তাঁরা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দাবি করছেন। এতে একদিকে জেলা পর্যায়ের বড় ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা যেমন লোকসানের ভয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না, তেমনি পূঁজি হারানোর ভয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারাও কমমূল্যে তা বিক্রিতে নারাজ।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ বছর চামড়া কিনতে গিয়ে আমাদের অবস্থা খারাপ। এ বছর সর্বনিম্ন এক হাজার ৫০০ টাকা ও সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা দিয়ে গরুর চামড়া কিনতে হয়েছে।
পাবনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, এ বছর ট্যানারি মালিকরা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ তৃণমূল পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে খরচ পড়ছে গরুর চামড়া ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আগামীকাল শুক্রবার নাটোরের চামড়া হাটের দিকে তাঁরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন বলে জানান এ চামড়া ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীরা জানান, লবণের দাম বেশি হওয়ায় এবার তাঁদের সংরক্ষণ খরচও বেড়েছে। আগে প্রতি বস্তা লবণ (৭৫ কেজি) ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হঠাৎ করে ঈদের আগের রাতে তা ৫০০ টাকায় উঠেছে।
জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের ক্ষতির আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এবারের ঈদে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ গরু ও ৩০ থেকে ৪০ লাখ ছাগলের চামড়া পাওয়া যাবে। এর মূল্য প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ট্যানারি মালিকরা ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কোরবানির এই বিপুল পরিমাণ চামড়া কেনার সক্ষমতা ট্যানারি মালিকদের রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বছর কেমন দামে চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকরা_এমন এক প্রশ্নের উত্তরে শাহীন আহমেদ বলেন, গতবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু কেনা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি দামে। এ বছর গতবারের তুলনায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে বলে ধারণা দেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও মেসার্স এম. বি. ট্যানারি লিমিটেডের মালিক মো. মোজাফফর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার দাম নির্ধারণ করা না হলেও গরুর চামড়া ৮০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫০ টাকা বর্গফুট দরে কেনা শুরু করবেন তিনি। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশের চামড়ার বড় বড় হাট থেকে কেনা শুরু করবেন মোজাফফর।
মোজাফফর রহমান জানান, 'ঈদের আগে প্রতি বর্গফুট চামড়ার রপ্তানি মূল্য ছিল দুই ডলার। এখন আমদানিকারকরা দেড় ডলার হাঁকছেন। রপ্তানি মূল্য থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ, মুনাফার হিসাব বাদ দিয়েই ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করবেন। আমার হিসাবে, এ বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৮০ টাকা ও ছাগলের প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫০ টাকা হওয়া উচিত।'
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক মন্দা আর গতবারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার চামড়া এখনো অবিক্রীত থাকায় এবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ২০০টি ট্যানারির মধ্যে বেশ কিছু ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মন্দা হলেও ট্যানারি মালিকরা এটাও জানেন যে, ভারতে চামড়ার দাম বেশি হলে তা পাচার হয়ে যাবে। তাই মন্দা সত্ত্বেও চামড়ার দাম এ বছর গতবারের তুলনায় খুব একটা কমবে না।'
নিজের ট্যানারির জন্য কবে থেকে কী দরে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে মোজাফফর রহমান বলেন, এখনো কোনো চামড়া কিনিনি। আগামী রবিবার টঙ্গীর চামড়া হাটে প্রথম চামড়া কিনব। এরপর বুধবার যাব কিশোরগঞ্জের হাটে, শনিবার নাটোরে।
আড়ৎদারদের পাওনা টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো বাকিতে বেচাকেনা হয় না। তবে ১৯৭৯ সালে চামড়ার বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। ওই সময়কার ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের পাওনা কোনো কোনো ট্যানারি মালিক এখনো পরিশোধ করেননি।
চামড়ার আড়ৎ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আফতাব জানান, গত বছর কোরবানিতে ৪০ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর সারা দেশে গরুর চামড়ার পরিমাণ হতে পারে ৪২ থেকে ৪৩ লাখ। তিনি বলেন, 'কোরবানির আগে তিনটি সংগঠন বসেছিল। তখন ট্যানারি মালিকরা বলছিলেন, তাঁরা ব্যাপারিদের জানিয়ে দেবেন কেমন দামে চামড়া কিনতে হবে। তাই চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।'
তবে আন্তর্জাতিক মন্দার কারণে এ বছর গতবারের তুলনায় চামড়ার দাম কম হবে বলে জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে এক মাস ধরে চামড়ার দাম কমছে। আর স্থানীয় বাজারে চার মাস আগে থেকেই দরপতন হচ্ছে।'
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছর এপ্রিলে চামড়ার দাম ছিল সর্বোচ্চ। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চামড়ার দাম কমে মধ্য জানুয়ারির পর্যায়ে নেমে গেছে। তবে এখনো ভেড়া ও ছাগলের চামড়ার দাম বাড়ছে। আমেরিকাতে চামড়ার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামার আশঙ্কা রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় চামড়ার দাম কমছে না। এদিকে চামড়ার দাম আরো কমার আশায় চীনের ব্যবসায়ীরা ইউরোপ থেকে ভেড়ার চামড়া কেনা আপাতত বন্ধ রেখেছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আড়ৎদারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ আফতাব বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা আমরা চাই না। জেলা পর্যায় থেকে আগামী সপ্তাহেই ঢাকার পোস্তার আড়ৎগুলোতে চামড়া আসতে শুরু করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করেননি। আগামী সপ্তাহে কেনা শুরু করবেন। তার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না।
No comments