সাফল্যের গল্প শোনালেন ড. ইউনূস by নিজাম সিদ্দিকী
‘আমি সাফল্যগুলো তুলে ধরতে চাই। কারণ
ব্যর্থতার কথা শুনে হতাশা জাগবে। জীবনে এগুনো যাবে না। তা ছাড়া আমি
ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত মনে করি না। ব্যর্থতার পরে আবার নতুন শক্তিতে অগ্রসর
হতে হবে। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করতে হবে ব্যর্থতাকে।
’নগরের
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ছাত্র ও তরুণ সমাবেশে এভাবেই সাফল্যের
মূলমন্ত্র শোনাচ্ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত
বৃহস্পতিবার সকালে এ সমাবেশের আয়োজন করে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস
সুহূদ-চট্টগ্রাম।
প্রায় দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তাঁর নিজের জীবনের গল্প, গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক ব্যবসার প্রভাব, তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। মিলনায়তনভর্তি দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে ড. ইউনূসের সাফল্যের কথা শুনেছেন আর স্বাগত জানিয়েছেন করতালি দিয়ে।
কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সূচনা বক্তব্য দেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সুহূদ-চট্টগ্রামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
মঞ্চে উঠেই ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ আমার উদ্দেশ্য স্মৃতিচারণা করা, তোমাদের খোঁজখবর নেওয়া। পাণ্ডিত্যপূর্ণ কোনো কথা নয়, আমি কাজের কথাই বলতে চেষ্টা করি।’ এরপর একে একে বলে যান তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কথাসহ নানা প্রসঙ্গ। জবাব দিলেন তরুণদের নানা প্রশ্নের।
প্রথম বিশ্বভ্রমণ: ১৫ বছর বয়সেই ড. ইউনূস অর্জন করলেন এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। বয়েজ স্কাউটের সদস্য হিসেবে ইউরোপে বিশ্বজাম্বুরিতে অংশ নেওয়ার ডাক পড়ল তাঁর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাছাই করা তিনজনের একজন ছিলেন তিনি। বাবা যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বললেন, ‘যাও, বিদেশ গেলে আক্কল (জ্ঞান-বুদ্ধি) হবে।’ ইউরোপে তাঁর প্রায় ছয় মাস অবস্থানকালে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা কথাগুলোর ওপর ভিত্তি করে ছাপা হয় তাঁর ‘বালক পরিব্রাজকের দিনলিপি’ নামের বইটি।
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা: স্বাধীনতার পর ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ সময়ে বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষের কথা শুনে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে জোবরা গ্রামে ইরি ধান লাগাতে গিয়ে দেখি, গ্রামের গরিব মানুষের ওপর মহাজনদের শোষণ। কিন্তু মহাজনী প্রথা বন্ধ করার উপায় ছিল না। গরিব কৃষকদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করলে তারা গরিবদের টাকা ঋণ দিতে রাজি হলো না। দীর্ঘ আট মাস দেনদরবার চলার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিলাম, ‘ব্যাংকের টাকার জামিনদার হব আমি। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জেলও খাটব।’ এমন প্রস্তাবের পরে জনতা এবং কৃষি ব্যাংক শাখায় খোলা হলো, ‘পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা’। পরে ব্যাংক করার অনুমতি পান বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প এবং এরপর গ্রামীণ ব্যাংক। এভাবেই এগিয়ে চলল গ্রামীণ ব্যাংক।
দেশের বাইরে গ্রামীণ: ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে আগ্রহী হন। কিন্তু পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কারণে এটি স্থায়ী হয়নি। ২০০৮ সালে নিউইয়র্ক, এরপরে ওমাহা নেব্রাহা, ইন্ডিয়ানা, লস এঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ডেট্রয়েট প্রভৃতি শহরে চালু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম।
সামাজিক ব্যবসা: ড. ইউনূস বলেন, সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে ব্যবসা তাই সামাজিক ব্যবসা। এতে মুনাফার কোনো সুযোগ নেই। শুধু মূলধনটাই ফেরত পাওয়া যাবে। সমাজের যে কেউ স্বল্প পরিসরে এ ব্যবসা করতে পারেন। ব্যবসার পরিধি বাড়লে আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকবে।
রংপুরে খোলা পায়খানা ব্যবহারকারী দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা হয়। আবার গ্রামগঞ্জের মানুষের জন্য চালু করা হয় সৌরবিদ্যুৎ। এগুলোও সামাজিক ব্যবসা।
বেকারত্ব ও তরুণ সমাজ: ড. ইউনূস তরুণদের প্রেরণা জুগিয়ে বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রযুক্তি তাকে অসীম ক্ষমতা দিচ্ছে। এখন তোমাদের শক্তিকে ব্যবহার করতে জানতে হবে। জেদ থাকতে হবে যেকোনো কাজ করার জন্য। বাধা সরিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সৃজনশীলতা।’ তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের জায়গা মানুষের সমাজে নয়, জাদুঘরে। একদিন তাই হবে। আর বেকারত্ব হচ্ছে আগ্রহ, যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার অভাব।’
নবীন উদ্যোক্তা ঋণ: তরুণেরা ক্ষুদ্রঋণে যুক্ত হতে পারবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষা ঋণ দেওয়া হয়। এতে চাকরি করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি চালু হয়েছে নবীন উদ্যোক্তা ঋণ। তোমরা কোনো সামাজিক পরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের জানাও। আমরা টাকা দেব।’
প্রায় দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তাঁর নিজের জীবনের গল্প, গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক ব্যবসার প্রভাব, তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। মিলনায়তনভর্তি দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে ড. ইউনূসের সাফল্যের কথা শুনেছেন আর স্বাগত জানিয়েছেন করতালি দিয়ে।
কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সূচনা বক্তব্য দেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সুহূদ-চট্টগ্রামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
মঞ্চে উঠেই ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ আমার উদ্দেশ্য স্মৃতিচারণা করা, তোমাদের খোঁজখবর নেওয়া। পাণ্ডিত্যপূর্ণ কোনো কথা নয়, আমি কাজের কথাই বলতে চেষ্টা করি।’ এরপর একে একে বলে যান তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কথাসহ নানা প্রসঙ্গ। জবাব দিলেন তরুণদের নানা প্রশ্নের।
প্রথম বিশ্বভ্রমণ: ১৫ বছর বয়সেই ড. ইউনূস অর্জন করলেন এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। বয়েজ স্কাউটের সদস্য হিসেবে ইউরোপে বিশ্বজাম্বুরিতে অংশ নেওয়ার ডাক পড়ল তাঁর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাছাই করা তিনজনের একজন ছিলেন তিনি। বাবা যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বললেন, ‘যাও, বিদেশ গেলে আক্কল (জ্ঞান-বুদ্ধি) হবে।’ ইউরোপে তাঁর প্রায় ছয় মাস অবস্থানকালে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা কথাগুলোর ওপর ভিত্তি করে ছাপা হয় তাঁর ‘বালক পরিব্রাজকের দিনলিপি’ নামের বইটি।
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা: স্বাধীনতার পর ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ সময়ে বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষের কথা শুনে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে জোবরা গ্রামে ইরি ধান লাগাতে গিয়ে দেখি, গ্রামের গরিব মানুষের ওপর মহাজনদের শোষণ। কিন্তু মহাজনী প্রথা বন্ধ করার উপায় ছিল না। গরিব কৃষকদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করলে তারা গরিবদের টাকা ঋণ দিতে রাজি হলো না। দীর্ঘ আট মাস দেনদরবার চলার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিলাম, ‘ব্যাংকের টাকার জামিনদার হব আমি। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জেলও খাটব।’ এমন প্রস্তাবের পরে জনতা এবং কৃষি ব্যাংক শাখায় খোলা হলো, ‘পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা’। পরে ব্যাংক করার অনুমতি পান বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প এবং এরপর গ্রামীণ ব্যাংক। এভাবেই এগিয়ে চলল গ্রামীণ ব্যাংক।
দেশের বাইরে গ্রামীণ: ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে আগ্রহী হন। কিন্তু পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কারণে এটি স্থায়ী হয়নি। ২০০৮ সালে নিউইয়র্ক, এরপরে ওমাহা নেব্রাহা, ইন্ডিয়ানা, লস এঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ডেট্রয়েট প্রভৃতি শহরে চালু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম।
সামাজিক ব্যবসা: ড. ইউনূস বলেন, সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে ব্যবসা তাই সামাজিক ব্যবসা। এতে মুনাফার কোনো সুযোগ নেই। শুধু মূলধনটাই ফেরত পাওয়া যাবে। সমাজের যে কেউ স্বল্প পরিসরে এ ব্যবসা করতে পারেন। ব্যবসার পরিধি বাড়লে আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকবে।
রংপুরে খোলা পায়খানা ব্যবহারকারী দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা হয়। আবার গ্রামগঞ্জের মানুষের জন্য চালু করা হয় সৌরবিদ্যুৎ। এগুলোও সামাজিক ব্যবসা।
বেকারত্ব ও তরুণ সমাজ: ড. ইউনূস তরুণদের প্রেরণা জুগিয়ে বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রযুক্তি তাকে অসীম ক্ষমতা দিচ্ছে। এখন তোমাদের শক্তিকে ব্যবহার করতে জানতে হবে। জেদ থাকতে হবে যেকোনো কাজ করার জন্য। বাধা সরিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সৃজনশীলতা।’ তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের জায়গা মানুষের সমাজে নয়, জাদুঘরে। একদিন তাই হবে। আর বেকারত্ব হচ্ছে আগ্রহ, যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার অভাব।’
নবীন উদ্যোক্তা ঋণ: তরুণেরা ক্ষুদ্রঋণে যুক্ত হতে পারবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষা ঋণ দেওয়া হয়। এতে চাকরি করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি চালু হয়েছে নবীন উদ্যোক্তা ঋণ। তোমরা কোনো সামাজিক পরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের জানাও। আমরা টাকা দেব।’
No comments