সূর্যোদয়ের দেশে by রবিউল হাসান ও মুনিয়া ইসলাম মজুমদার
সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। ভাবতেই পারিনি কখনো
সূর্যোদয় আর জাপানকে একসঙ্গে দেখার সৌভাগ্য হবে। আর সেই সুবর্ণ সুযোগই করে
দিল ‘জেনেসিস’। জুনের ১০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের এই আয়োজনজুড়ে
ছিল নানা চমক।
এটি হয়ে উঠেছিল সার্কভুক্ত দেশগুলোর
তরুণদের এক মহা মিলনমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন
উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৮ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ
দল। এ দলে ছিলেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ১০ থেকে
১৫ জুন অনুষ্ঠিত এই শিক্ষা সফরের আয়োজক ছিল ‘জাপান-ইস্ট এশিয়া নেটওয়ার্ক অব
এক্সচেঞ্জ ফর স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথ’ (জেনেসিস)। ২০১১ সাল থেকে শুরু
হওয়ার পর এটি ছিল বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের তৃতীয় ব্যাচের জাপান সফরের
আমন্ত্রণ।
এবারের জেনেসিস সফরে অংশ নিয়েছেন সার্কভুক্ত সব কটি দেশের নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। একেক দেশের জন্য নির্ধারিত ছিল একেক শহর। বাংলাদেশ দলের সঙ্গী ছিলেন ভারত ও আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরা। আমাদের তিন দেশের গন্তব্য ছিল ফুকুসিমা। ২০১০ সালে সুনামি আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত ফুকুসিমা শহর। সবার মতো প্রথমে আমরাও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ফুকুসিমা শহরের নামটি শুনে। কিন্তু নিজের চোখে না দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না যে এত বড় একটা ট্র্যাজেডি থেকে এত অল্প সময়ে কীভাবে একটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে! মূলত এই জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। জাপানের গবেষকেরা ইতিমধ্যে পারমাণবিক আইসোটোপের তেজস্ক্রিয়তা ৮৩ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এই মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনা।
পাহাড়, সবুজ আর ছোট ছোট নদীঘেরা ফুকুশিমা আমাদের যারপরনাই বিমোহিত করল। জাপানের নিজস্ব খাবার আর সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করে দেওয়া হয় প্রতিমুহূর্তে। আমরা ঘুরেছি রেজিনা ফরেস্ট, সুরুগা ক্যাসল, য়ুমত এলাকার বৌদ্ধমন্দির আর ফুকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফুকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
এ সফরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কথা হচ্ছিল ফুকুসিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী এমিরির সঙ্গে। আর কিছুদিন পরই তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ হবে। এরপর এমিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে পেশাজীবন শুরু করতে চান। আফগানিস্তানের কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ নুরি নিজের দেশে ফিরে জাপানের নিয়মানুবর্তিতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা সবাইকে জানাতে চান। ভারতের শিলং থেকে আসা শিক্ষার্থী পাশা রিনি এখানকার আবহাওয়া খুব উপভোগ করেছেন। শিলংয়ের সঙ্গে জাপানের প্রাকৃতিক মিলগুলো তাঁকে মুগ্ধ করেছে।
এই শিক্ষা সফরে যে জিনিস আমাদের সবার মন ছুঁয়ে গেছে তা হলো, জাপানিদের আন্তরিকতা ও অতিথিপরায়ণতা। বুয়েটের বৈশাখী বোস যেমনটি বললেন, একটি সমৃদ্ধিশালী দেশের মানুষ এত বিনয়ী হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই হতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তানিয়া মুন অবাক হয়েছেন ফুকুশিমার কোথাও কোনো পুলিশ দেখতে না পেয়ে।
বাংলাদেশ দলের সমন্বয়কারী ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব নুমেরি জামান।
শেষ দিন আমরা বাংলাদেশি সংস্কৃতির কিছুটা ওখানে তুলে ধরার সুযোগ পাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবপ্রসাদের বাঁশির সুর, বুয়েটের রুবাইয়ার গান আর আমাদের দলীয় নৃত্য—যেন একখণ্ড বাংলাদেশ উপস্থাপিত হলো জাপানে। ফিরে আসার সময় আমাদের জাপানি সমন্বয়কারী ইয়ামামত সাংয়ের চোখে পানি দেখে আমাদের বুঝতে বাকি থাকল না যে এই অল্প কদিনেই তিনি বাংলাদেশকে কত ভালোবেসে ফেলেছেন। আমরা তাঁর হাতে বাংলাদেশের নকশি কাঁথা তুলে দিলাম। তাঁকে জড়িয়ে ধরে আমাদের চোখও ছলছল করে উঠল। লাল-সবুজ পতাকা বুকে নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওনা দিলাম আর সেতু রচনা করে এলাম জাপান-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার।
এবারের জেনেসিস সফরে অংশ নিয়েছেন সার্কভুক্ত সব কটি দেশের নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। একেক দেশের জন্য নির্ধারিত ছিল একেক শহর। বাংলাদেশ দলের সঙ্গী ছিলেন ভারত ও আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরা। আমাদের তিন দেশের গন্তব্য ছিল ফুকুসিমা। ২০১০ সালে সুনামি আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত ফুকুসিমা শহর। সবার মতো প্রথমে আমরাও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ফুকুসিমা শহরের নামটি শুনে। কিন্তু নিজের চোখে না দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না যে এত বড় একটা ট্র্যাজেডি থেকে এত অল্প সময়ে কীভাবে একটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে! মূলত এই জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। জাপানের গবেষকেরা ইতিমধ্যে পারমাণবিক আইসোটোপের তেজস্ক্রিয়তা ৮৩ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এই মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনা।
পাহাড়, সবুজ আর ছোট ছোট নদীঘেরা ফুকুশিমা আমাদের যারপরনাই বিমোহিত করল। জাপানের নিজস্ব খাবার আর সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করে দেওয়া হয় প্রতিমুহূর্তে। আমরা ঘুরেছি রেজিনা ফরেস্ট, সুরুগা ক্যাসল, য়ুমত এলাকার বৌদ্ধমন্দির আর ফুকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফুকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
এ সফরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কথা হচ্ছিল ফুকুসিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী এমিরির সঙ্গে। আর কিছুদিন পরই তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ হবে। এরপর এমিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে পেশাজীবন শুরু করতে চান। আফগানিস্তানের কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ নুরি নিজের দেশে ফিরে জাপানের নিয়মানুবর্তিতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা সবাইকে জানাতে চান। ভারতের শিলং থেকে আসা শিক্ষার্থী পাশা রিনি এখানকার আবহাওয়া খুব উপভোগ করেছেন। শিলংয়ের সঙ্গে জাপানের প্রাকৃতিক মিলগুলো তাঁকে মুগ্ধ করেছে।
এই শিক্ষা সফরে যে জিনিস আমাদের সবার মন ছুঁয়ে গেছে তা হলো, জাপানিদের আন্তরিকতা ও অতিথিপরায়ণতা। বুয়েটের বৈশাখী বোস যেমনটি বললেন, একটি সমৃদ্ধিশালী দেশের মানুষ এত বিনয়ী হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই হতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তানিয়া মুন অবাক হয়েছেন ফুকুশিমার কোথাও কোনো পুলিশ দেখতে না পেয়ে।
বাংলাদেশ দলের সমন্বয়কারী ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব নুমেরি জামান।
শেষ দিন আমরা বাংলাদেশি সংস্কৃতির কিছুটা ওখানে তুলে ধরার সুযোগ পাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবপ্রসাদের বাঁশির সুর, বুয়েটের রুবাইয়ার গান আর আমাদের দলীয় নৃত্য—যেন একখণ্ড বাংলাদেশ উপস্থাপিত হলো জাপানে। ফিরে আসার সময় আমাদের জাপানি সমন্বয়কারী ইয়ামামত সাংয়ের চোখে পানি দেখে আমাদের বুঝতে বাকি থাকল না যে এই অল্প কদিনেই তিনি বাংলাদেশকে কত ভালোবেসে ফেলেছেন। আমরা তাঁর হাতে বাংলাদেশের নকশি কাঁথা তুলে দিলাম। তাঁকে জড়িয়ে ধরে আমাদের চোখও ছলছল করে উঠল। লাল-সবুজ পতাকা বুকে নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওনা দিলাম আর সেতু রচনা করে এলাম জাপান-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার।
No comments