ভালোবাসার বিয়ের অপরাধ!নববধূকে পিটিয়ে মারল শ্বশুরবাড়ির লোকজন
প্রেম করে বিয়ে করাই ছিল মনিরার (২০)
অপরাধ! নববধূ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে গেলেও হয়নি বধূবরণ; উল্টো তাৎক্ষণিক শুরু হয়
মারধর। গুরুতর আহত অবস্থায় নববধূকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান স্বামী
নাসির।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গতকাল শনিবার ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা মনিরাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায়
স্বামী নাসির উদ্দিন (২২) ও তাঁর চাচা মমতাজ উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে
পুলিশ। মনিরা রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার নিকুঞ্জ মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণীর
ছাত্রী ছিলেন। নিহত মনিরার বাবা বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি হত্যা মামলা
দায়ের করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মনিরার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এখন
পলাতক। স্বজনদের অভিযোগ, প্রেম করে বিয়ে করার কারণে রাজধানীর খিলক্ষেতের
বড়ুরা পশ্চিমপাড়ার হাজিবাড়ীতে স্বামীর সামনেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিটিয়ে
হত্যা করে মনিরাকে।
মনিরার স্বামী নাসির উদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে হাসপাতালে অবস্থানকালে কালের কণ্ঠকে জানান, ১৭ জুন তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করে তাঁর বন্ধু হাসান ও মনিরার বান্ধবী রিপার বাড়িতে ওঠেন। নাসির গত শুক্রবার সকালে মনিরাকে মনিরার বাসায় রেখে নিজ বাড়িতে যান এবং মনিরাকে মেনে নেওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনকে বোঝান। পরিবারের লোকজন তাঁর কথায় সায় দিলে মনিরাকে তাঁদের বাড়িতে আসতে বলেন। স্বামীর ফোন পেয়ে মনিরা সকাল ১০টার দিকে চলে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই আকস্মিকভাবে নাসিরের বাবা হাসান আলী, মা নার্গিস আক্তার, বড় বোন হাসিনা আক্তার, হাসিনার স্বামী মিলন, মিলনের ভাই দেলোয়ার, নাসিরের ছোট দুই ভাই মাসুদ ও দেলু, ফুফু মনোয়ারা বেগম ও চাচা দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজন মনিরাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাসির বলেন, 'তারা আমাদের দুজনকেই মারধর করে। মোটা লাঠিসোঁটা যা পাইছে তাই দিয়া মারছে। মনিরারে মারতে বাধা দিতে গেলে তারা আমারে মারধর করে একটা রুমে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে মারধর থেকে বাঁচতে মনিরা দৌড়ে বাড়ির বাইরে পাশের বালুর মাঠে গেলে সেখানে অচেতন হয়ে পড়ে।' নাসির বিলাপ করে বলেন, 'আমি ওরে (মনিরা) বাঁচাইতে দরজা ভেঙে বাইরে আসছি। পরে হাসপাতালে নিছি। ওরে আর বাঁচাইতে পারলাম না...।'
স্বজন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনিরা ও নাসির একই কলেজে পড়তেন। থাকতেন একই মহল্লায়। চার বছরের প্রেমের পর মাত্র চার দিন আগে প্রেমের টানে পালিয়ে গিয়ে আদালতের মাধ্যমে দুজন বিয়ে করেন। বন্ধুদের বাসায় তিন দিন কাটানোর পর নাসিরের পরিবারের লোকজন নববধূ মনিরাকে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে মনিরার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নাসির ও তাঁর চাচা মমতাজকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে নাসিরের পরিবারের অন্যরা পলাতক।
মনিরার বাবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ও গ্যারেজ মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি পরিবার নিয়ে বড়ুরার পশ্চিমপাড়ার ১৬০/১ নম্বর বাড়িতে থাকেন। তাঁর বড় মেয়ে মনিরা নিকুঞ্জ মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়তেন। প্রতিবেশী ও কাপড় ব্যবসায়ী হাসান আলীর ছেলে নাসিরের সঙ্গে তাঁর মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাসির একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। গত ১৭ জুন মনিরা ও নাসির বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গত শুক্রবার নাসিরের বাড়িতে মনিরার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মোস্তফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'ওরা আমার মেয়েটারে পিটাইয়া মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই।'
মনিরার বাবা ও স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় নাসির শুক্রবার সকালে মনিরাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মনিরাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সোয়া ৮টার দিকে চিকিৎসকরা মনিরাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল সকালে খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক মনিরার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠান। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরার ডান চোখের ওপর ফোলা জখম, মাথার মাঝখানে, হাতে ও হাঁটুতে থেঁতলানো ও ফোলা জখম আছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুন নাসির মনিরাকে অপহরণ করে নিয়ে যান, এরপর বিয়ে করেন। শুক্রবার নাসির ও তাঁর পরিবারের লোকজন মনিরাকে মারধর করে।
তবে মনিরার বাবা মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নাসির আমার মেয়েকে মারে নাই। ওর সঙ্গে প্রেম করছে, বিয়ে করছে দেইখাই বাড়ির লোকজন মারছে।' তিনি দাবি করেন, নাসিরের পরিবারের সঙ্গে তাঁর কখনো কোনো বিরোধ ছিল না। ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, 'জখম দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে মনিরার মৃত্যু হয়েছে।'
সরেজমিনে খিলক্ষেতের বড়ুরা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মনিরার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কান্নার রোল। গতকাল বিকেলেই মনিরার লাশ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হরদির বাজার এলাকায় তাঁর দাদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। মনিরার ছোট বোন হাবিবা বলে, 'আমার বোন বলছিল, আমি মরে গেলে তোমরা আমারে দাদার বাড়িতে কবর দিও। তাই তারে সেখানেই নিয়া গেছে।' হাবিবা আরো বলে, 'আশপাশের লোকজন আমাদের বলছে, তারা আগে থেকেই মারার প্রস্তুতি নিয়া ছিল। আপু ওই বাড়িতে যাওয়ার পরই চারদিক থেকে ঘেরাও কইরা মারপিট শুরু করে।' মনিরার নানি খাদেজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'মাইয়াডা নতুন সংসার করব বইলা স্বপ্ন দেখছে। বাপেরে ভয়ে বলতে পারে নাই, যদি মাইনা না নেয়। কি লাভ হইল ডরাইয়া। কি লাভ হইলো স্বপ্ন দেইখা। আমি পাষণ্ডগুলার ফাঁসি চাই।'
মনিরার মৃত্যুর ঘটনায় গোটা বড়ুরা গ্রামে এখন তোলপাড় চলছে। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, নববধূকে গ্রহণ করার পরিবর্তে নাসিরের পরিবারের লোকজন মনিরাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হামলার সময় মনিরা আর্তচিৎকার করলেও ভয়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে যায়নি। নাসির স্ত্রীকে হামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বলে জানায় তারা। স্থানীয়রা জানায়, প্রেমের টানেই দুজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে বলে এলাকায় আগেই খবর ছড়ায়। নাসিরের পরিবার মনিরার পরিবারের চেয়ে সচ্ছল বলেই সম্পর্কটি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়। গতকাল নাসিরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। লোকমান হোসেন, মোতাহার, শেফালী বেগম, মমতাজ বেগম ও সোহেলসহ কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, বিয়ের পর নতুন বধূকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় তাঁরা এলাকার সবাই এখন লজ্জিত।
মনিরার স্বামী নাসির উদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে হাসপাতালে অবস্থানকালে কালের কণ্ঠকে জানান, ১৭ জুন তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করে তাঁর বন্ধু হাসান ও মনিরার বান্ধবী রিপার বাড়িতে ওঠেন। নাসির গত শুক্রবার সকালে মনিরাকে মনিরার বাসায় রেখে নিজ বাড়িতে যান এবং মনিরাকে মেনে নেওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনকে বোঝান। পরিবারের লোকজন তাঁর কথায় সায় দিলে মনিরাকে তাঁদের বাড়িতে আসতে বলেন। স্বামীর ফোন পেয়ে মনিরা সকাল ১০টার দিকে চলে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই আকস্মিকভাবে নাসিরের বাবা হাসান আলী, মা নার্গিস আক্তার, বড় বোন হাসিনা আক্তার, হাসিনার স্বামী মিলন, মিলনের ভাই দেলোয়ার, নাসিরের ছোট দুই ভাই মাসুদ ও দেলু, ফুফু মনোয়ারা বেগম ও চাচা দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজন মনিরাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাসির বলেন, 'তারা আমাদের দুজনকেই মারধর করে। মোটা লাঠিসোঁটা যা পাইছে তাই দিয়া মারছে। মনিরারে মারতে বাধা দিতে গেলে তারা আমারে মারধর করে একটা রুমে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে মারধর থেকে বাঁচতে মনিরা দৌড়ে বাড়ির বাইরে পাশের বালুর মাঠে গেলে সেখানে অচেতন হয়ে পড়ে।' নাসির বিলাপ করে বলেন, 'আমি ওরে (মনিরা) বাঁচাইতে দরজা ভেঙে বাইরে আসছি। পরে হাসপাতালে নিছি। ওরে আর বাঁচাইতে পারলাম না...।'
স্বজন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনিরা ও নাসির একই কলেজে পড়তেন। থাকতেন একই মহল্লায়। চার বছরের প্রেমের পর মাত্র চার দিন আগে প্রেমের টানে পালিয়ে গিয়ে আদালতের মাধ্যমে দুজন বিয়ে করেন। বন্ধুদের বাসায় তিন দিন কাটানোর পর নাসিরের পরিবারের লোকজন নববধূ মনিরাকে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে মনিরার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নাসির ও তাঁর চাচা মমতাজকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে নাসিরের পরিবারের অন্যরা পলাতক।
মনিরার বাবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ও গ্যারেজ মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি পরিবার নিয়ে বড়ুরার পশ্চিমপাড়ার ১৬০/১ নম্বর বাড়িতে থাকেন। তাঁর বড় মেয়ে মনিরা নিকুঞ্জ মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়তেন। প্রতিবেশী ও কাপড় ব্যবসায়ী হাসান আলীর ছেলে নাসিরের সঙ্গে তাঁর মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাসির একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। গত ১৭ জুন মনিরা ও নাসির বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গত শুক্রবার নাসিরের বাড়িতে মনিরার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মোস্তফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'ওরা আমার মেয়েটারে পিটাইয়া মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই।'
মনিরার বাবা ও স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় নাসির শুক্রবার সকালে মনিরাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মনিরাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সোয়া ৮টার দিকে চিকিৎসকরা মনিরাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল সকালে খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক মনিরার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠান। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরার ডান চোখের ওপর ফোলা জখম, মাথার মাঝখানে, হাতে ও হাঁটুতে থেঁতলানো ও ফোলা জখম আছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুন নাসির মনিরাকে অপহরণ করে নিয়ে যান, এরপর বিয়ে করেন। শুক্রবার নাসির ও তাঁর পরিবারের লোকজন মনিরাকে মারধর করে।
তবে মনিরার বাবা মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নাসির আমার মেয়েকে মারে নাই। ওর সঙ্গে প্রেম করছে, বিয়ে করছে দেইখাই বাড়ির লোকজন মারছে।' তিনি দাবি করেন, নাসিরের পরিবারের সঙ্গে তাঁর কখনো কোনো বিরোধ ছিল না। ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, 'জখম দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে মনিরার মৃত্যু হয়েছে।'
সরেজমিনে খিলক্ষেতের বড়ুরা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মনিরার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কান্নার রোল। গতকাল বিকেলেই মনিরার লাশ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হরদির বাজার এলাকায় তাঁর দাদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। মনিরার ছোট বোন হাবিবা বলে, 'আমার বোন বলছিল, আমি মরে গেলে তোমরা আমারে দাদার বাড়িতে কবর দিও। তাই তারে সেখানেই নিয়া গেছে।' হাবিবা আরো বলে, 'আশপাশের লোকজন আমাদের বলছে, তারা আগে থেকেই মারার প্রস্তুতি নিয়া ছিল। আপু ওই বাড়িতে যাওয়ার পরই চারদিক থেকে ঘেরাও কইরা মারপিট শুরু করে।' মনিরার নানি খাদেজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'মাইয়াডা নতুন সংসার করব বইলা স্বপ্ন দেখছে। বাপেরে ভয়ে বলতে পারে নাই, যদি মাইনা না নেয়। কি লাভ হইল ডরাইয়া। কি লাভ হইলো স্বপ্ন দেইখা। আমি পাষণ্ডগুলার ফাঁসি চাই।'
মনিরার মৃত্যুর ঘটনায় গোটা বড়ুরা গ্রামে এখন তোলপাড় চলছে। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, নববধূকে গ্রহণ করার পরিবর্তে নাসিরের পরিবারের লোকজন মনিরাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হামলার সময় মনিরা আর্তচিৎকার করলেও ভয়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে যায়নি। নাসির স্ত্রীকে হামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বলে জানায় তারা। স্থানীয়রা জানায়, প্রেমের টানেই দুজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে বলে এলাকায় আগেই খবর ছড়ায়। নাসিরের পরিবার মনিরার পরিবারের চেয়ে সচ্ছল বলেই সম্পর্কটি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়। গতকাল নাসিরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। লোকমান হোসেন, মোতাহার, শেফালী বেগম, মমতাজ বেগম ও সোহেলসহ কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, বিয়ের পর নতুন বধূকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় তাঁরা এলাকার সবাই এখন লজ্জিত।
No comments