ইউনূসের গড়া গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের খোদকারি by গাজীউল হাসান খান

একটি সরকার ও বিশেষ করে তার অর্থ মন্ত্রণালয়ের চোখের সামনে দিয়ে যখন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতাসহ অন্যান্য ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি বিশ্বখ্যাত সফল ব্যাংকের সংস্কারের নামে কারসাজি জনমনে হাজারও প্রশ্নের জন্ম দেয়।
হতে পারে গ্রামীণ ব্যাংক একটি রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ সংস্থা; তাই বলে কি তার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. ইউনূসকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করতে কোনো অসুবিধা ছিল? গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী অনেকটা সমার্থক হয়ে পড়েছিলেন। সে অবস্থায় অতীতের একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যাতে শেষ পর্যন্ত ড. ইউনূস সম্পৃক্ত হননি, তাকে কেন্দ্র করে এ ব্যক্তিটি এবং তিলে তিলে তাঁর গড়ে তোলা একটি প্রবাদতুল্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানকে লণ্ডভণ্ড করতে হবে কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের যদি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস। এ প্রতিষ্ঠান যেমন তিনি গড়েছেন, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে এটি পরিচালনা করতে গিয়ে তিনিই হয়তো সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করতে পেরেছেন, কোথায় কোথায় এর সংস্কার বা পরিবর্তন প্রয়োজন। সে উপলব্ধি থেকে ড. ইউনূস বলেছেন, 'সংস্কার বা পরিবর্তনের নামে সরকার আসলে গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার পথে অগ্রসর হচ্ছে। জনগণ এটা হতে দেবে না। যেকোনো মূল্যে তারা গ্রামীণ ব্যাংকের পরিকল্পিত বিভাজনকে রুখবে।' তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকার কিভাবে কেড়ে নেবে? এটা তো ছিনতাইয়ের মতো কথা হয়ে গেল, আইনের নয়। যে আইন একটি নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে, সে আইনকে কিভাবে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়া যায়? এ প্রশ্ন এখন শুধু ড. ইউনূসের নয়, অনেকের মনেই দেখা দিয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৪ লাখ গ্রাহক, যার অধিকাংশই গ্রামবাংলার হতদরিদ্র, নারী, তারাই এ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিক। এই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ও সমাজের অধঃপতিত মানুষগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়েই ড. ইউনূস একদিন গড়ে তুলেছিলেন এ বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড। সেই গ্রামীণ ব্যাংকই লাভ করেছে বিশ্বের একমাত্র নোবেলজয়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সম্প্রতি সরকার গঠিত কমিশন তাদের এক সুপারিশে ব্যাংকটিতে এখন সরকারের শেয়ার বা মালিকানা ৫১ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঋণগ্রহীতারাই হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের মূল মালিক এবং এ নীতি ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই একদিন এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। অথচ বর্তমান সরকারের বামপন্থী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি বলেছেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়।' ড. ইউনূস তেমনটা দাবিও করেননি। ইনু বলেছেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের বেশির ভাগ বিনিয়োগ সরকারের।' হক কথা, তবে এ সরকারের বিনিয়োগ কতটুকু? অতীতের এরশাদ সরকার থেকে বিএনপির বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় আসা সাবেক সরকারগুলোও গ্রামীণ ব্যাংকে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে। তা ছাড়া অনুদান এসেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও। কিন্তু তারা কেউ গ্রামীণ ব্যাংকের সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি। এ ব্যাপারে এখানে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার অবতারণা করছি। আমি তখন বাংলাদেশের ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাসে তথ্য ও প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করছিলাম। সে সময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান (পরলোকগত) বিশ্বব্যাংকের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। সাইফুর রহমান আরো অনেকের মতো আমাকেও অত্যন্ত আদর-স্নেহ করতেন এবং সম্মান দিতেন একজন সহকর্মীর মতো। তিনি একদিন কর্মরত অবস্থায় আমাকে বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানের রুমে ডেকে পাঠালেন। খবর পেয়ে দূতাবাস থেকে বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনস্থ সদর দপ্তরে হাজির হয়েছিলাম যথাসময়ে। দেরি করলে মহাবিপদ, কারণ সাইফুর রহমান অত্যন্ত অভিমানী মানুষ ছিলেন। তা ছাড়া সেদিন রাতে আমার বাসায় তাঁর খাওয়ার দাওয়াত ছিল। দেরি করলে আবার বেঁকে বসতে পারেন, তাই ভেবে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই হাজির হয়েছিলাম। ভেতরে ঢুকে দেখি চেয়ারম্যান সাহেব সম্ভবত পূর্ব ইউরোপের কোনো অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি কিছু কথাবার্তা বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত কথা উঠল গ্রামীন ব্যাংক ও তার প্রতিষ্ঠাতা কিংবদন্তিতূল্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে সাইফুর রহমান বললেন, দারিদ্র্য বিমোচন ড. ইউনূসের একার কাজ নয়, তবে বিশ্বের সব দেশেই নিচুতলার হতদরিদ্র, বিশেষ করে অবহেলিত নারী গোষ্ঠীকে জাতীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা এবং তাদের মধ্যে মর্যাদা বোধ সৃষ্টি করার ব্যাপারে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে হতদরিদ্র ও অধিকারবঞ্চিত নারীরাও এখন যত ক্ষুদ্রই হোক, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ড. ইউনূসের কথা বলতে বলতে সাইফুর রহমানের চোখে-মুখে সেদিন একটি গর্বের ভাব ফুটে উঠতে দেখেছি। সে গর্ব তাঁর দেশের একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষকে নিয়ে, যাঁর পরিচিতি তখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।
অতিথি যথারীতি একসময় চেয়ারম্যানের কক্ষ ত্যাগ করলেন। সাইফুর রহমান নিঃসংকোচে তখন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় আমাকে তাঁর সামনে এসে বসতে বললেন। তারপর যা ঘটল, তা অত্যন্ত হাসির উদ্রেক করেছিল। রুমে তখন আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। আমার দিকে মুখটি বাড়িয়ে দিয়ে নিচু গলায় বললেন, 'গ্রামীণ ব্যাংককে টাকা দিই আমি আর মহাত্মা গান্ধী হন ইউনূস। তার পরও ইউনূসের প্রশংসা করতে হয়। বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানগিরি চলে গেলে আমাকে কে চিনবে! গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী একটা নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান গড়ে নিয়েছেন।' তাঁর মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলাম। ড. ইউনূসের প্রতি খ্যাতির কারণে কোথাও কোনো ঈর্ষা কিংবা হিংসার ভাব দেখলাম না। শুনলাম না গ্রামীণ ব্যাংকের সুষ্ঠু পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর কোনো অভিযোগ। আর আজ ইনু সাহেব দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, গ্রামীণ ব্যাংক কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আসল বিষয়টি হচ্ছে ড. ইউনূসের বিশ্বখ্যাতি ও নোবেল প্রাইজ পাওয়াটা অনেকের জন্য গাত্রদাহ ও প্রতিহিংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাঁর জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙেচুরে খানখান করতে হবে কেন? সোনালী ও জনতাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে গত সাড়ে চার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে অত্যন্ত সমস্যাসংকুল করে তোলা হয়েছে। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাকে যত ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ পরিমাণ অর্থ বলে উল্লেখ করুন না কেন, এ অর্থ এ দেশের জনগণের। সে অর্থ নিয়ে জালিয়াতি করার কোনো সুযোগই হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ কিংবা অন্য কারো নেই। লোপাটকৃত অর্থের জন্য বর্তমান সরকারকেই অনাগত কাল ধরে এ দেশের মানুষ দায়ী করে যাবে। এ দায় বর্তমান সরকার এড়াতে পারবে না। সরকারের ব্যর্থতা ও অতিকথনের কারণে দেশের মানুষ ক্রমশ এতটাই বিগড়ে গেছে যে তার ফলাফল এখন বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ সর্বত্র প্রতিফলিত হতে শুরু করেছে। দেশের ৮৪ লাখ পরিবার গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত এবং লাখ লাখ পরিবার শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসেছে। মুহিত সাহেব কিংবা ইনু সাহেবের অপরিণামদর্শী বক্তব্য সেসব মানুষকে ক্রমশই আরো বিক্ষুব্ধ করছে। কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না। কারো ক্ষমতাই স্থায়ী নয়। রাজনীতি করলে একদিন ওই সব সাধারণ মানুষের কাতারে রাজপথে নেমে আসতে হবে। চোখ দুটো বন্ধ করে একবার সেদিনের কথা একটুখানি ভাবুন। তাহলে এই মুখ চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ড. ইউনূস একজন নিরহংকার ও ভালো কাজে অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি। দেশের হতদরিদ্র, অবহেলিত ও লাঞ্ছিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে শুধু সমাজের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই তাঁর উদ্দেশ্য নয়; তাঁর সার্বিক পরিকল্পনা আরো বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী। শিক্ষা ক্ষেত্রে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের প্রতিভাবান ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান থেকে শুরু করে যখন আরো বহু কার্যক্রম তিনি হাতে নিয়েছিলেন, ঠিক তখনই তাঁকে সরকারি বিধিবিধানের অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। অথচ সরকারের কত তোষামোদকারীকে দেওয়া হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কিংবা করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। যে ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকের প্রধান হওয়ার প্রস্তাবকে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন; তাঁর পক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে অধিষ্ঠিত থাকার বাসনা কোনো বিবেচনার মধ্যেই আসে না। তবে তাঁর নিজ হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠান ও দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুভূতি তাঁকে যে সদা জাগ্রত রাখে, তা বলাই বাহুল্য। সে কারণেই গ্রামীণ ব্যাংককে টুকরো টুকরো করার চিন্তা-ভাবনা তাঁকে এতটা পীড়া দেয়। সে জন্যই তিনি উল্লিখিত সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ছিল ৬০ শতাংশ। তবে ১৯৮৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের শেয়ার বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ ও সরকারের ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা। আর ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে গত বছর ২৫ শতাংশ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকার সর্বমোট এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ সরকারের দেওয়ার কথা ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আবার বর্তমান সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের এক সুপারিশে ব্যাংকটিতে সরকারের শেয়ার ৫১ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূস অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেছেন, 'ঋণগ্রহীতারাই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক। সে হিসেবে তারা এখানে ৯৭ শতাংশের মালিক আর সরকার ৩ শতাংশের অংশীদার।' এই মালিকানা নিয়ে এত দিন আইনের কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু পর্যায়ক্রমে এখন সেখানে নানা ধরনের বিরোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিরোধ শেষ পর্যন্ত এ প্রবাদতুল্য প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তা সোনালী ও জনতাসহ সরকার নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য ব্যাংকের অবস্থা দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়। সে কারণেই গ্রামবাংলার হতদরিদ্র মানুষের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এত আশঙ্কা।
অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ইউনূস শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের কারণেই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেননি। তাঁর উদ্ভাবিত সামাজিক ব্যবসা নীতির পরিকল্পনা এখন আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দারুণ সাড়া ফেলেছে। তাঁর এ উল্লিখিত সামাজিক ব্যবসা নীতির ভিত্তিতে এখন কাজ চলছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সৌদি আরব, সুইডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ২০০৮ সালে 'ক্রিয়েটিং অ্যা ওয়্যার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি' নামে সামাজিক ব্যবসা নীতির ওপর ড. ইউনূসের একটি মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সে গ্রন্থটি ঢাকা ও ওয়াশিংটন থেকে একযোগে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। প্রকাশিত সে গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঢাকার ডেইলি স্টারে এর ওপর একটা বিশদ পর্যালোচনা লিখি। সে পর্যালোচনাটি গ্রামীণের নেটওয়ার্কেও রিলিজ করা হয়েছিল। সে গ্রন্থে ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিরও একটি মানবিক অবয়ব থাকতে হবে; নতুবা পুঁজিবাদ নেহায়েত শোষণের হাতিয়ারে পরিণত হবে এবং তা বৃহত্তর অর্থে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বিশ্বের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থে, অর্থাৎ জনকল্যাণ বয়ে আনতে পারে তেমন সামাজিক ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করতে বিশ্বের ধনবান বা বিত্তশালী মানুষ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তিনি একটি অত্যন্ত সৃষ্টিশীল বাণিজ্যের পথ দেখিয়েছেন, যা একাধারে যেমন লাভজনক হবে, তেমনি বয়ে আনবে জনকল্যাণ। ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূর করার পাশাপাশি সে সামাজিক ব্যবসা নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্র্য দূর করতে সহায়ক হবে। তাই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও একটি কথাই বারবার বলেছেন, 'অতীতমুখিতা ছেড়ে আমাদের ভবিষ্যৎমুখী হতে হবে। সব কিছুতে সাধারণ মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.