বিলুপ্তির পথে মেরু অঞ্চলের শিয়াল

উত্তর কানাডার অত্যন্ত শীতপ্রবণ অঞ্চলে এক ধরনের সাদা বর্ণের শিয়ালের বাস রয়েছে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের আবার জ্ঞাতিভাই হিসেবে লাল বর্ণের শিয়ালও রয়েছে। এরা আবার হাডসন উপত্যকায় বাস করে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, লাল বর্ণের শিয়ালের উপদ্রবের কারণে কিংবা আক্রমণের ফলে সাদা বর্ণের শিয়ালরা কানাডার অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়। মেরু অঞ্চলে অভিযান পরিচালনাকারী একটি কোম্পানির চার্চিল ওয়াইল্ড প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন সাদা বর্ণের শিয়ালরা তাদেরই জ্ঞাতি লাল বর্ণের শিয়াল দেখা মাত্রই দাঁড়িয়ে পড়ে এবং পেছনদিকে ঘুরে পালিয়ে যায়। এমনকি লাল বর্ণের শিয়ালদের সামনেও তারা পড়তে চায় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাদা লোমে আবৃত এ শিয়াল আকারে একটি বিড়ালের চেয়ে বড় নয়। এদের নিকটতম জ্ঞাতি লাল বর্ণের শিয়ালরা এদের চেয়ে আকারে বড়, তুলনামূলক এরা শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মকও বটে। পূর্ববর্তী এক গবেষণায় দেখা যায়, এদের আক্রমণের দরুন নিরীহ সাদা বর্ণের শিয়ালরা ক্রমশ উত্তরাঞ্চলে আবাস পরিবর্তন করছে। লাল বর্ণের শিয়ালরা শিকারের সময় যখন একই অঞ্চলে তাদের এই ছোট প্রজাতির মুখোমুখি হয় তখন এরা অপেক্ষাকৃত ছোট প্রজাতির সাদা শিয়ালদের মেরে ফেলতেও পিছপা হয় না। হাডসন উপত্যকার সিল রিভার লজের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা কয়েক বছর ধরে এই পর্যবেক্ষণ চালান। পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট মতে, কয়েক বছর ধরে মেরু অঞ্চলে খুব অল্পসংখ্যক সাদা শিয়াল দেখা যায়। পর্যবেক্ষণ লজ থেকে এ শিয়ালদের মাত্র দুটি আবাসস্থল লক্ষ্য করা গেছে বলে পর্যবেক্ষক দল উল্লেখ করে। এক বছরে প্রতিদিন গড়ে একডজন শিয়ালের বেশি দেখা যায়নি বলে চার্চিল ওয়াইল্ডস মাইক রিমেয়ার মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, গত বছর প্রায়ই সাদা বর্ণের শিয়ালদের দেখা গেছে। কিন্তু এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখন লাল, সিলভারসহ নানা বর্ণের শিয়ালদের দেখা যায়। লাল বর্ণের শিয়ালদের আক্রমণের ফলে হয়ত সাদা বর্ণের শিয়ালের সংখ্যা কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু জীববিজ্ঞানী ড. জিম রথ এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, লাল শিয়ালদের আক্রমণ হয়ত সাময়িক একটা প্রভাব ফেলবে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কারণ রয়েছে খাবার সঙ্কট, রোগের সংক্রমণ এমনকি বিভিন্ন পরজীবী প্রাণীর আক্রমণেও সাদা শিয়ালের সংখ্যা কমে যেতে পারে।
কানাডার মানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রথ বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ শেষে এক রিপোর্ট করেন। মেরু অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এ দু’প্রজাতির শিয়ালদের পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বলে উল্লেখ করেন। ২০১১ সালে লাল বর্ণের শিয়ালের তুলনায় সাদা বর্ণের শিয়ালের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল বলে তিনিও উল্লেখ করেন। ড. রথ আরও যুক্ত করেন, লাল শিয়ালদের শিকারের জন্য এক ধরনের বন্য খরগোশ প্রচুর পাওয়া যায়। কিন্তু সাদা বর্ণের শিয়ালদের বরফাবৃত অঞ্চলে শিকার পাওয়াটা দুঃসাধ্য বলে ক্রমান্বয়ে এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতদসত্ত্বেও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, লাল শিয়ালদের আক্রমণে মেরু অঞ্চলীয় স্বেতবর্ণের শিয়ালের সংখ্যা কমছে। কানাডার কুইবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডমিনিক বারটেক্স বলেন, আকারে বড় বলে লাল বর্ণের শিয়ালরা সব সময় আক্রমণাত্মক অবস্থায় থাকে।
মেরু অঞ্চলীয় শ্বেতবর্ণের শিয়ালের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার পেছনে খাদ্য সঙ্কট ও বিভিন্ন ধরনের রোগ দায়ী বলে ড. রথ মনে করেন। লাল বর্ণের শিয়ালের আবাস পরিবর্তনের ফলেও অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলের দিকে সাদা শিয়ালরা সরে যেতে বাধ্য হয়। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে এ প্রজাতির টিকে থাকাও অনেকটা উদ্বেগের বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সাবিনা ইয়াসমিন

No comments

Powered by Blogger.