শহীদ যোদ্ধাদের ৫৭১টি কবর সংরক্ষণ হচ্ছে by শরিফুল হাসান
যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চার দশক ধরে এই কবরগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৫৭১টি কবর সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠর কবরও থাকছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে এত দিন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও মুন্সী আব্দুর রউফের কবর সংরক্ষিত ছিল না।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত কবরে নামফলকে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় এবং যে যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়েছেন তাঁর বর্ণনা থাকবে। ‘শহীদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি গত জানুয়ারি মাসে হাতে নেওয়া হয়েছে। শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। প্রকল্পে খরচ হবে ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। আর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের কবর রাঙামাটির নানিয়ারচরে। এই দুটি কবরে নামফলক স্থাপন ও সংরক্ষণ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর প্রতি সম্মান জানানো হবে। এ ছাড়া এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনো কোনো কবরে দুই থেকে আটজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ রয়েছে। কোনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর এই তালিকায় বাদ পড়ে গেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নতুন করে আবেদন পাঠানো যাবে। যাচাই-বছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে বেশি ৯৫টি কবর চিহ্নিত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ভারতের সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি কবরও সেখানে আনা হবে। এ জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কুল্লাপাথর এলাকায় তিন একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী কসবার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে জানান, মুুক্তিযুদ্ধের সময় কসবার সাগরতলা, কুল্লাপাথর, মাদলা, কইখোলা মুক্ত এলাকা ছিল। আশপাশের এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে কেউ শহীদ হলে এখানে কবর দেওয়া হতো। জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত যুদ্ধে প্রচুর লোক শহীদ হন। বিশেষ করে কসবার যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তখন আবদুল মান্নান ওরফে বিনু ফকির নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ির পাশের একটি জায়গা মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের জন্য দান করেন। সেখানেই ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। এই স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এর বাইরে গোপালগঞ্জে ৭০, কুষ্টিয়ায় ৪৭, ঝিনাইদহে ৪০, ফেনীতে ৩৫, কুমিল্লায় ৩৩, নোয়াখালীতে ২৭, জামালপুরে ২৩, ঝালকাঠিতে ১৮, কুড়িগ্রামে ১৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪, সিরাজগঞ্জে ১৩, যশোর ও বগুড়ায় ১২টি করে, মেহেরপুরে ১১, নড়াইল ও কিশোরগঞ্জে ১০টি করে, দিনাজপুরে আট, হবিগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ছয়টি করে, গাইবান্ধা, কক্সবাজার ও নরসিংদীতে সাত, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ীতে পাঁচটি করে, ঠাকুরগাঁও ও মৌলভীবাজারে চারটি করে, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও শরীয়তপুরে তিনটি করে, বান্দরবান ও মাদারীপুরে দুটি করে, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বরগুনা ও রাজশাহীতে একটি করে কবর সংরক্ষণ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এম এ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় যান। অথচ এই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে করতেই আমাদের ৪০ বছর লেগে গেল। তবে এত দিন পরে হলেও কাজটি শুরু হয়েছে বলে সরকারকে ধন্যবাদ।’ তিনি বলেন, ‘এই কাজে যেন জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ হবে।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। আর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের কবর রাঙামাটির নানিয়ারচরে। এই দুটি কবরে নামফলক স্থাপন ও সংরক্ষণ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর প্রতি সম্মান জানানো হবে। এ ছাড়া এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনো কোনো কবরে দুই থেকে আটজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ রয়েছে। কোনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর এই তালিকায় বাদ পড়ে গেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নতুন করে আবেদন পাঠানো যাবে। যাচাই-বছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে বেশি ৯৫টি কবর চিহ্নিত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ভারতের সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি কবরও সেখানে আনা হবে। এ জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কুল্লাপাথর এলাকায় তিন একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী কসবার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে জানান, মুুক্তিযুদ্ধের সময় কসবার সাগরতলা, কুল্লাপাথর, মাদলা, কইখোলা মুক্ত এলাকা ছিল। আশপাশের এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে কেউ শহীদ হলে এখানে কবর দেওয়া হতো। জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত যুদ্ধে প্রচুর লোক শহীদ হন। বিশেষ করে কসবার যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তখন আবদুল মান্নান ওরফে বিনু ফকির নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ির পাশের একটি জায়গা মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের জন্য দান করেন। সেখানেই ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। এই স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এর বাইরে গোপালগঞ্জে ৭০, কুষ্টিয়ায় ৪৭, ঝিনাইদহে ৪০, ফেনীতে ৩৫, কুমিল্লায় ৩৩, নোয়াখালীতে ২৭, জামালপুরে ২৩, ঝালকাঠিতে ১৮, কুড়িগ্রামে ১৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪, সিরাজগঞ্জে ১৩, যশোর ও বগুড়ায় ১২টি করে, মেহেরপুরে ১১, নড়াইল ও কিশোরগঞ্জে ১০টি করে, দিনাজপুরে আট, হবিগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ছয়টি করে, গাইবান্ধা, কক্সবাজার ও নরসিংদীতে সাত, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ীতে পাঁচটি করে, ঠাকুরগাঁও ও মৌলভীবাজারে চারটি করে, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও শরীয়তপুরে তিনটি করে, বান্দরবান ও মাদারীপুরে দুটি করে, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বরগুনা ও রাজশাহীতে একটি করে কবর সংরক্ষণ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এম এ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় যান। অথচ এই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে করতেই আমাদের ৪০ বছর লেগে গেল। তবে এত দিন পরে হলেও কাজটি শুরু হয়েছে বলে সরকারকে ধন্যবাদ।’ তিনি বলেন, ‘এই কাজে যেন জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ হবে।’
No comments