রাজনীতি-চার দশক পর দেশের হালহকিকত by মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এক চমকপ্রদ ঘটনা। হিসাবে ছিল না। হিসাব মেলেনি। এ ভূখণ্ডের বুদ্ধিধর ব্যক্তিরা তার কল্পনা করেননি। ১৯৪৭ সালে কয়েক সপ্তাহের জন্য মৃতবৎসা একটা ভাবনা আলোর মুখও দেখল না। তবে আমাদের ভাষার মণিকোঠায় এক স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের সম্ভাবনা বিদেশি পণ্ডিতেরা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদের রক্তে সে ভ্রুণ প্রাণ পেল। পাঁচশ বছরের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পারের ছেলেরা অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করার ডাক দিল। দেশ স্বাধীন হলো। দুই চোখে দারুণ স্বপ্ন। অতি দ্রুত সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। হুজ্জতে বার ভূঁইয়ার দেশ অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থান ঘটে গেল। সেই ‘কু’-অভ্যাস দেখে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বন্ধুরা হাত কামড়াল। এখনো দেশের লোক এবং বিদেশে আমাদের দেশের বন্ধুরা আশা ছাড়েননি।
আমরা এ কয় মাস নানা সমারোহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্ব্বশত জন্মবার্ষিকী পালন করছি। আমি কী তাঁকে আমার বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য মানব? ১০৬ বছর আগে ১৩১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কথাগুলো তাঁর ‘দেশনায়ক’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, সেগুলো আজ বড় প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে: ‘আমাদের দেশে সম্প্রতি যে সকল আন্দোলন-আলোচনার ঢেউ উঠিয়াছে তাহার মধ্যে অনেকটা আছে যাহা কলহমাত্র। নিঃসন্দেহেই দেশবৎসল লোকেরা এই কলহের জন্য অন্তরে অন্তরে লজ্জা অনুভব করিতেছেন। কারণ, কলহ অক্ষমের উত্তেজনা প্রকাশ, তাহা অকর্মণ্যের একপ্রকার আত্মবিনোদন।’
আজ আমাদের ছাত্ররা সতীর্থকে ছাদ থেকে ফেলে দিচ্ছে, ছুরি দিয়ে আঘাত করছে, টেন্ডারবাজি করে সতীর্থকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। ১৩৪৬ সালের ফাল্গুনে ছাত্রদের উদ্দেশে এক বক্তৃতায় কবি বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা এ-কথা...ভুলে যায় যে, যাঁরা অকুণ্ঠিত মনে নিয়ম ভাঙতে চান, তাঁরা নিয়ম গড়তে কোনো দিন পারেন না। এই ভাঙন-ধরানো মন সাংঘাতিকভাবে বিস্তার লাভ করছে, এঁদের হাতে কীর্তি গঠিত হচ্ছে না, কীর্তি ভাঙছে। দলাদলিতে ক্রমাগতই ফাটল ধরিয়ে দিচ্ছে দেশের আশ্রয়সৌধকে।
ছাত্রদের মধ্যে যাঁরা এই সৃষ্টিশক্তি সৃষ্টিপ্রীতির মূলে আঘাত করেছেন, তাঁরা এটা করেছেন স্বাজাত্য-কর্তব্যের দোহাই দিয়ে। সভা-ভাঙা দল-ভাঙা স্কুল-ভাঙা মাথা-ভাঙা সমস্ত এর অন্তর্ভুক্ত করে মারণ-তাণ্ডবের পেছনে দাঁড়িয়ে বাহবা দিয়েছেন। যে-বয়সে কোনো একটা গড়ে তোলবার শক্তি বা অভিজ্ঞতা থাকে না সেই বয়সে তাঁরা নিজের দলের সুযোগ ঘটাবার জন্য এদের কানে ভাঙার মাহাত্ম্য ঘোষণা করে নেশা জমিয়েছেন। দেশকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করবার কাজে ছেলেদের উৎসাহ জাগিয়েছেন,—এই কাজটা সবচেয়ে সহজ।...ধ্বংস করবার কাজে যখন আগুন লাগানো হয় তখন সর্বনাশ করতে করতে সেটা আপনি ছড়িয়ে পড়ে—তাতে কারো কোনো কৃতিত্বের প্রয়োজন হয় না, বুদ্ধির তো নয়ই। যে-বয়সে স্বভাবতই পরিণাম-দৃষ্টি থাকে না, যখন দায়িত্ববোধের যথেষ্ট চর্চা হয়নি, তখন এই আগুন লাগানো মাতামাতিতে দল বাঁধতে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো দেশের অনিষ্ট সাধন আমি তো কিছু মনে করতে পারি নে।’
৬ মে ১৯৩৯ সালে অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এখানকার এক দল ছাত্র আপন নবলব্ধ রাষ্ট্রসম্পদের মর্যাদা নষ্ট করে তাকে সর্বজনের কাছে অশ্রদ্ধেয় করবার জন্য উঠে পড়ে সংকোচ করলে না। তুমি তো য়ুরোপের বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যায়তনের সঙ্গে সুপরিচিত, তার কর্মধারাকে অবরুদ্ধ করবার জন্য এ রকম হাস্যকর বাল্যলীলা কখনো দেখেছ কি? এ রকম উপদ্রব এ দেশে আজকাল দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়ছে, বিদ্যাসাধনার শান্তি ও গাম্ভীর্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এই কৌতুকাবহ শোচনীয় কাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল যখন আমাদের পোলিটিশানেরা আপন দলাদলির স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তারুণ্যের জয়ধ্বনিতে ছাত্রদের বুদ্ধিস্থৈর্য ও আত্মসংযম রক্ষার প্রয়োজনকে উপেক্ষা করতে শেখালেন, এমন-কি তাদের অন্যায় আবদারকে নির্বিচারে প্রশ্রয় দিতে লাগলেন। সেদিন আমি অত্যন্ত লজ্জাবোধ করেছিলুম, এবং বুঝেছিলুম এতে করে রাষ্ট্রতপস্যার মূলে লাগিয়ে দেবে দুর্বলতার বিনাশ শক্তি। ছেলেমেয়েদের আবেগপ্রবণ মনে আত্মশ্লাঘার বেগে তাদের শ্রদ্ধাভক্তি ও বিচারবুদ্ধিকে গোড়া থেকে শিথিল করে দিয়ে আমাদের কর্মক্ষেত্রের যে হাওয়া দুষিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার থেকে সহজে নিষ্কৃতি পাব না।...মূল্যবান সম্পদকে সৃষ্টি করে তোলার একান্ত উদ্যমে যারা অভ্যস্ত নয়, দেশের শুভগ্রহের সেই সকল ত্যাজ্যপুত্রেরা গোড়া থেকেই ছোট বড়ো সকল বিষয়েই আপন শক্তি প্রকাশ করতে চায় ভেঙে ফেলবার আস্ফাালন। বাল্যোচিত আবদারগ্রস্ত তাদের মনোবৃত্তি। অতি তুচ্ছ বিষয়েও অদ্ভুত জেদের সঙ্গে তারা আপস করতে নারাজ। এরাই তেরো কাঠা বালুজমির জন্যে তেরো হাজার টাকার মামলা চালায়।’
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎসের ভাষায়, ‘বিশ্বে যখন হতাশা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য প্রকট, যখন বৈশ্বিক শঠতা ও অসাম্য চলছে, যখন আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানগুলো তৈরি হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর, আরও সঠিকভাবে বললে, ওই সব দেশের মধ্যকার বিশেষ কিছু স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে এবং ইতিমধ্যে যারা সুবিধাবঞ্চিত, তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও কেড়ে নিতে, তখন যুবসমাজ নিজেদের ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য আরও সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে তোলার গঠনমূলক কাজে লিপ্ত না হয়ে বরং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে—এটাই স্বাভাবিক। আর তার ফলে আমাদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে।’
এ বড় দুঃখের কথা এত বছর পরে স্বাধীনতা লাভের পরেও দেশের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না।
আমাদের এ ভূখণ্ডে নির্বাচনে কখনোই কারচুপিশূন্য হয়নি। কম বেশি যে কারচুপি হয়েছে তাতে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রভাবিত হয়নি। যেখানে ভোটাররা মোটামুটিভাবে দেশের আইন মোতাবেক ভোট দিতে পেরেছে এবং নির্বাচনের ফলাফলে মোটের ওপর জনগণের মত প্রতিফলিত হয়েছে, ঈষৎদুষ্ট হলেও তা গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ অস্থিরতা পরিহার করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ সম্পর্কে একটা গবেষণা হওয়া উচিত।
আমি পাকিস্তান, পাপুয়া-নিউগিনি ও অ্যান্টিগা-বারবুডায় নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা বলে না যে নির্বাচন বয়কট করে দেশের লোক লাভবান হবে। গোয়ালা দুধে পানি মেশালে আমরা দুধ পান বন্ধ করতে পারি না। প্রকাশক ডাহা বদমাশি করলে লেখক লেখালেখি ছেড়ে দেয় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা যে স্লোগান উদ্ভাবন করেছিলাম, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’, সেটা মনে রেখে অতন্দ্র প্রহরায় সব নাগরিককে সতর্ক থাকতে হবে।
সেনা স্বৈরশাসন দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে—এমন প্রত্যাশা করার মতো নজির ইতিহাসে নেই। রোমান আমলের ডিক্টেটরের শাসনকাল ছিল অতি সীমিত। জরুরি অবস্থার অবসানে সেনাসর্দাররা সিসিলি গিয়েছিল বড় বড় বাঁধাকপির চাষ করতে। নিজেদের নিয়োজিত করতে আজকাল লোকে অবসর নিতে চায় না। ভয় বাঘের পিঠ থেকে নামলে যদি বাঘ খেয়ে ফেলে।
ক্ষমতায় কারা অধিষ্ঠিত হবেন নির্বাচন শুধু তা নির্ণয় করে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বেরও সেটি একটি আস্থার পরীক্ষা। আমাদের দেশে গো-হারা হেরেও হারু পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলকে গলার জোরে অস্বীকার করে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখেন। নির্বাচনে নিজেদের দলের লোক হেরে যাবে বলে ডাকসুতে বহুদিন নির্বাচন হয়নি। যথাসময়ে নিয়ম মেনে দলের মধ্যে বা বাইরে নির্বাচন না করে নিজেকে বা নিজের বশংবদকে পদে রেখে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না।
‘না’ বলা মানুষের মর্যাদার বিষয়। কিন্তু আমরা ‘মানি না’, ‘মানব না’ ধরনের যেসব বালখিল্যতা লক্ষ করি, তা ছেলেবেলার সেই ছড়ার কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—‘আনি মানি জানি না/ পরের ছেলে মানি না।’ সরকারে না থেকেও বিরোধী দল সরকারি দলের ধাঁচে তাদের অধিকার, বিশেষাধিকার বা রবরবার ধুন ধরে।
আমরা গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ নিইনি। গণতন্ত্র সবার মত—দ্বিমত ও ভিন্নমত নিয়ে। নির্বাচনে সব পক্ষ জয়লাভ করে না, কিন্তু সব পক্ষের জয় হয় যদি যারা জিতেছে এবং যারা নির্বাচনে হেরেছে তার সবাই ফলাফল স্বীকার করে নেয়; আর নির্বাচনী কাঠামো নড়বড়ে না হয়ে শক্ত আইন-রেওয়াজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। অবরোধ-ধর্মঘট পালন করে দেশ অচল করে, হুমকি দিয়ে পরিবর্তন আনলে যে কোনো লাভ হবে না, তা ইতিমধ্যে আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে এবং ২০০৬-০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যে কাণ্ড আমরা করেছিলাম, তাতে কি গণতন্ত্রের পথে একটি পা-ও এগিয়েছি?
শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পাওনা বাড়িয়ে নিচ্ছে অশ্লীল দ্রুততায়। গণতন্ত্রে যেসব গ্রিক দার্শনিকগণ আপত্তি করেছিলেন তাঁরা বলতেন, এখানে নির্বাচিত ব্যক্তিরা শুধু আখের নয়, ইহকালের সুখসুবিধা নিশ্চিত করার যেকোনো পন্থা অবলম্বন করবে।
কয়েক বছর আগে আমাদের একজন নির্বাচিত মন্ত্রী আপসোস করে বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতই কম বেতন পান যে দেশের বাইরে সে কথা বলতে তাঁর লজ্জা হয়। তাঁর দেশের লোকের বহু লোক যে দিনে এক ডলারও ব্যয় করতে পারেন না, সে কথা তাঁর মনে উদয় হয়নি।
আমাদের সরকার-বিরোধিতার যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তা বড়ই নিরাশাব্যঞ্জক। দেশ শাসন করার যিনি দায়িত্বভার বহন করেন তাঁর জন্য সামর্থ্য-ক্ষমতার প্রয়োজন। তাঁর হাড়গোড় ভেঙে ঠুঁটো জগন্নাথ করলে দেশের সমূহ বিপদ। অনুরূপভাবে, বিরোধী দল দেশের সম্ভাব্য বিকল্প সরকার, সেই বিকল্পের হাড়গোড় ভেঙে তাকেও আমরা ঠুঁটো করে রাখতে পারি না। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল বিকল্প সরকারের সম্ভাব্য সূত্র। সরকার বিরোধী দলকে সম্মান করবে, সমীহ করবে এবং অযথা আঘাত দিয়ে কথা বলবে না; কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবে না। বিরোধী দলকে মনে রাখতে হবে, তারা সরকারের সমকক্ষ নয়—না আইনের চোখে, না মানুষের চোখে। তাদের অধিকার বিশেষ অধিকার, সরকারের সমতুল্য নয়। তারা বিরোধী দলের দায়িত্ব সাধ্যমতো পালন না করলে তাদের মর্যাদার আসন নষ্ট হতে বাধ্য। অবশ্য বিরোধী দলের বাক্স্বাধীনতা সরকারি দলের চেয়ে ব্যাপকতর ও প্রশস্ততর। তবে বিরোধী দল যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে অযথা সংসদ বর্জন করতে থাকে, তখন আমার মনে হয় সরকারের ওপর কোনো মানভঞ্জনের দায়িত্ব অর্পিত হয় না। দায়িত্বগুণে সরকার সত্যভাষণে সিদ্ধহস্ত হবে, তা না হলে ধরা খেয়ে যাবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের রেওয়াজমতো সরকারের অবস্থান বিরোধী দলের চেয়ে অনেক বেশি নাজুক। বিরোধী দল আসামি পক্ষের উকিলের মতো অবিবেচিত বক্তব্য দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। সরকারের সে রেয়াত নেই।
এখন কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছেন। এই দাবি একসময় দেশে অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। পরে সংবিধান সংশোধন করে সেই দাবি মেনে নেওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে ফাটকাবাজি খেলা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ঠিকা-ঝির মতো নির্দিষ্ট সময়ে সব কিছু সাফসুতরা করতে হয়। প্রতিদানে যিনি নির্বাচনে হেরে যান, তাঁর কাছ থেকে জীবনভর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকর্তাদের গঞ্জনা শুনতে হয়। যিনি নির্বাচনে জেতেন, তিনি ভাবেন—এবং তা সঠিকভাবেই ভাবেন—যে তিনি ভোটের জোরে নির্বাচনে জিতেছেন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের পর যে নতুন জাতীয় সংসদে প্রথম অধিবেশন বসে, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের বা নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান-সদস্যদের আমন্ত্রণ করা হয়নি। নৌকা পার হয়ে লোকে যে আদরের নামে পাটনিকে সম্ভাষণ করে, সেভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পর তার তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দেখা হয়।
আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এখনো দুবছর পড়ে আছে। এত সকাল-সকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মাতামাতি! আগামী কয়েক মাসে বা নির্বাচনের আগে তা হয়তো সুরাহা হবে। এত আগেভাগে সেই সুরাহা নিশ্চিত করার জন্য এখন যদি আমরা সব কিছু অচল করে দিই, তবে সকলের জন্য সে হবে সমূহ বিপদ।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সাবেক প্রধান বিচারপতি।
আমরা এ কয় মাস নানা সমারোহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্ব্বশত জন্মবার্ষিকী পালন করছি। আমি কী তাঁকে আমার বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য মানব? ১০৬ বছর আগে ১৩১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কথাগুলো তাঁর ‘দেশনায়ক’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, সেগুলো আজ বড় প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে: ‘আমাদের দেশে সম্প্রতি যে সকল আন্দোলন-আলোচনার ঢেউ উঠিয়াছে তাহার মধ্যে অনেকটা আছে যাহা কলহমাত্র। নিঃসন্দেহেই দেশবৎসল লোকেরা এই কলহের জন্য অন্তরে অন্তরে লজ্জা অনুভব করিতেছেন। কারণ, কলহ অক্ষমের উত্তেজনা প্রকাশ, তাহা অকর্মণ্যের একপ্রকার আত্মবিনোদন।’
আজ আমাদের ছাত্ররা সতীর্থকে ছাদ থেকে ফেলে দিচ্ছে, ছুরি দিয়ে আঘাত করছে, টেন্ডারবাজি করে সতীর্থকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। ১৩৪৬ সালের ফাল্গুনে ছাত্রদের উদ্দেশে এক বক্তৃতায় কবি বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা এ-কথা...ভুলে যায় যে, যাঁরা অকুণ্ঠিত মনে নিয়ম ভাঙতে চান, তাঁরা নিয়ম গড়তে কোনো দিন পারেন না। এই ভাঙন-ধরানো মন সাংঘাতিকভাবে বিস্তার লাভ করছে, এঁদের হাতে কীর্তি গঠিত হচ্ছে না, কীর্তি ভাঙছে। দলাদলিতে ক্রমাগতই ফাটল ধরিয়ে দিচ্ছে দেশের আশ্রয়সৌধকে।
ছাত্রদের মধ্যে যাঁরা এই সৃষ্টিশক্তি সৃষ্টিপ্রীতির মূলে আঘাত করেছেন, তাঁরা এটা করেছেন স্বাজাত্য-কর্তব্যের দোহাই দিয়ে। সভা-ভাঙা দল-ভাঙা স্কুল-ভাঙা মাথা-ভাঙা সমস্ত এর অন্তর্ভুক্ত করে মারণ-তাণ্ডবের পেছনে দাঁড়িয়ে বাহবা দিয়েছেন। যে-বয়সে কোনো একটা গড়ে তোলবার শক্তি বা অভিজ্ঞতা থাকে না সেই বয়সে তাঁরা নিজের দলের সুযোগ ঘটাবার জন্য এদের কানে ভাঙার মাহাত্ম্য ঘোষণা করে নেশা জমিয়েছেন। দেশকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করবার কাজে ছেলেদের উৎসাহ জাগিয়েছেন,—এই কাজটা সবচেয়ে সহজ।...ধ্বংস করবার কাজে যখন আগুন লাগানো হয় তখন সর্বনাশ করতে করতে সেটা আপনি ছড়িয়ে পড়ে—তাতে কারো কোনো কৃতিত্বের প্রয়োজন হয় না, বুদ্ধির তো নয়ই। যে-বয়সে স্বভাবতই পরিণাম-দৃষ্টি থাকে না, যখন দায়িত্ববোধের যথেষ্ট চর্চা হয়নি, তখন এই আগুন লাগানো মাতামাতিতে দল বাঁধতে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো দেশের অনিষ্ট সাধন আমি তো কিছু মনে করতে পারি নে।’
৬ মে ১৯৩৯ সালে অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এখানকার এক দল ছাত্র আপন নবলব্ধ রাষ্ট্রসম্পদের মর্যাদা নষ্ট করে তাকে সর্বজনের কাছে অশ্রদ্ধেয় করবার জন্য উঠে পড়ে সংকোচ করলে না। তুমি তো য়ুরোপের বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যায়তনের সঙ্গে সুপরিচিত, তার কর্মধারাকে অবরুদ্ধ করবার জন্য এ রকম হাস্যকর বাল্যলীলা কখনো দেখেছ কি? এ রকম উপদ্রব এ দেশে আজকাল দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়ছে, বিদ্যাসাধনার শান্তি ও গাম্ভীর্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এই কৌতুকাবহ শোচনীয় কাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল যখন আমাদের পোলিটিশানেরা আপন দলাদলির স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তারুণ্যের জয়ধ্বনিতে ছাত্রদের বুদ্ধিস্থৈর্য ও আত্মসংযম রক্ষার প্রয়োজনকে উপেক্ষা করতে শেখালেন, এমন-কি তাদের অন্যায় আবদারকে নির্বিচারে প্রশ্রয় দিতে লাগলেন। সেদিন আমি অত্যন্ত লজ্জাবোধ করেছিলুম, এবং বুঝেছিলুম এতে করে রাষ্ট্রতপস্যার মূলে লাগিয়ে দেবে দুর্বলতার বিনাশ শক্তি। ছেলেমেয়েদের আবেগপ্রবণ মনে আত্মশ্লাঘার বেগে তাদের শ্রদ্ধাভক্তি ও বিচারবুদ্ধিকে গোড়া থেকে শিথিল করে দিয়ে আমাদের কর্মক্ষেত্রের যে হাওয়া দুষিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার থেকে সহজে নিষ্কৃতি পাব না।...মূল্যবান সম্পদকে সৃষ্টি করে তোলার একান্ত উদ্যমে যারা অভ্যস্ত নয়, দেশের শুভগ্রহের সেই সকল ত্যাজ্যপুত্রেরা গোড়া থেকেই ছোট বড়ো সকল বিষয়েই আপন শক্তি প্রকাশ করতে চায় ভেঙে ফেলবার আস্ফাালন। বাল্যোচিত আবদারগ্রস্ত তাদের মনোবৃত্তি। অতি তুচ্ছ বিষয়েও অদ্ভুত জেদের সঙ্গে তারা আপস করতে নারাজ। এরাই তেরো কাঠা বালুজমির জন্যে তেরো হাজার টাকার মামলা চালায়।’
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎসের ভাষায়, ‘বিশ্বে যখন হতাশা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য প্রকট, যখন বৈশ্বিক শঠতা ও অসাম্য চলছে, যখন আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানগুলো তৈরি হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর, আরও সঠিকভাবে বললে, ওই সব দেশের মধ্যকার বিশেষ কিছু স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে এবং ইতিমধ্যে যারা সুবিধাবঞ্চিত, তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও কেড়ে নিতে, তখন যুবসমাজ নিজেদের ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য আরও সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে তোলার গঠনমূলক কাজে লিপ্ত না হয়ে বরং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে—এটাই স্বাভাবিক। আর তার ফলে আমাদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে।’
এ বড় দুঃখের কথা এত বছর পরে স্বাধীনতা লাভের পরেও দেশের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না।
আমাদের এ ভূখণ্ডে নির্বাচনে কখনোই কারচুপিশূন্য হয়নি। কম বেশি যে কারচুপি হয়েছে তাতে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রভাবিত হয়নি। যেখানে ভোটাররা মোটামুটিভাবে দেশের আইন মোতাবেক ভোট দিতে পেরেছে এবং নির্বাচনের ফলাফলে মোটের ওপর জনগণের মত প্রতিফলিত হয়েছে, ঈষৎদুষ্ট হলেও তা গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ অস্থিরতা পরিহার করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ সম্পর্কে একটা গবেষণা হওয়া উচিত।
আমি পাকিস্তান, পাপুয়া-নিউগিনি ও অ্যান্টিগা-বারবুডায় নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা বলে না যে নির্বাচন বয়কট করে দেশের লোক লাভবান হবে। গোয়ালা দুধে পানি মেশালে আমরা দুধ পান বন্ধ করতে পারি না। প্রকাশক ডাহা বদমাশি করলে লেখক লেখালেখি ছেড়ে দেয় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা যে স্লোগান উদ্ভাবন করেছিলাম, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’, সেটা মনে রেখে অতন্দ্র প্রহরায় সব নাগরিককে সতর্ক থাকতে হবে।
সেনা স্বৈরশাসন দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে—এমন প্রত্যাশা করার মতো নজির ইতিহাসে নেই। রোমান আমলের ডিক্টেটরের শাসনকাল ছিল অতি সীমিত। জরুরি অবস্থার অবসানে সেনাসর্দাররা সিসিলি গিয়েছিল বড় বড় বাঁধাকপির চাষ করতে। নিজেদের নিয়োজিত করতে আজকাল লোকে অবসর নিতে চায় না। ভয় বাঘের পিঠ থেকে নামলে যদি বাঘ খেয়ে ফেলে।
ক্ষমতায় কারা অধিষ্ঠিত হবেন নির্বাচন শুধু তা নির্ণয় করে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বেরও সেটি একটি আস্থার পরীক্ষা। আমাদের দেশে গো-হারা হেরেও হারু পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলকে গলার জোরে অস্বীকার করে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখেন। নির্বাচনে নিজেদের দলের লোক হেরে যাবে বলে ডাকসুতে বহুদিন নির্বাচন হয়নি। যথাসময়ে নিয়ম মেনে দলের মধ্যে বা বাইরে নির্বাচন না করে নিজেকে বা নিজের বশংবদকে পদে রেখে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না।
‘না’ বলা মানুষের মর্যাদার বিষয়। কিন্তু আমরা ‘মানি না’, ‘মানব না’ ধরনের যেসব বালখিল্যতা লক্ষ করি, তা ছেলেবেলার সেই ছড়ার কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—‘আনি মানি জানি না/ পরের ছেলে মানি না।’ সরকারে না থেকেও বিরোধী দল সরকারি দলের ধাঁচে তাদের অধিকার, বিশেষাধিকার বা রবরবার ধুন ধরে।
আমরা গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ নিইনি। গণতন্ত্র সবার মত—দ্বিমত ও ভিন্নমত নিয়ে। নির্বাচনে সব পক্ষ জয়লাভ করে না, কিন্তু সব পক্ষের জয় হয় যদি যারা জিতেছে এবং যারা নির্বাচনে হেরেছে তার সবাই ফলাফল স্বীকার করে নেয়; আর নির্বাচনী কাঠামো নড়বড়ে না হয়ে শক্ত আইন-রেওয়াজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। অবরোধ-ধর্মঘট পালন করে দেশ অচল করে, হুমকি দিয়ে পরিবর্তন আনলে যে কোনো লাভ হবে না, তা ইতিমধ্যে আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে এবং ২০০৬-০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যে কাণ্ড আমরা করেছিলাম, তাতে কি গণতন্ত্রের পথে একটি পা-ও এগিয়েছি?
শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পাওনা বাড়িয়ে নিচ্ছে অশ্লীল দ্রুততায়। গণতন্ত্রে যেসব গ্রিক দার্শনিকগণ আপত্তি করেছিলেন তাঁরা বলতেন, এখানে নির্বাচিত ব্যক্তিরা শুধু আখের নয়, ইহকালের সুখসুবিধা নিশ্চিত করার যেকোনো পন্থা অবলম্বন করবে।
কয়েক বছর আগে আমাদের একজন নির্বাচিত মন্ত্রী আপসোস করে বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতই কম বেতন পান যে দেশের বাইরে সে কথা বলতে তাঁর লজ্জা হয়। তাঁর দেশের লোকের বহু লোক যে দিনে এক ডলারও ব্যয় করতে পারেন না, সে কথা তাঁর মনে উদয় হয়নি।
আমাদের সরকার-বিরোধিতার যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তা বড়ই নিরাশাব্যঞ্জক। দেশ শাসন করার যিনি দায়িত্বভার বহন করেন তাঁর জন্য সামর্থ্য-ক্ষমতার প্রয়োজন। তাঁর হাড়গোড় ভেঙে ঠুঁটো জগন্নাথ করলে দেশের সমূহ বিপদ। অনুরূপভাবে, বিরোধী দল দেশের সম্ভাব্য বিকল্প সরকার, সেই বিকল্পের হাড়গোড় ভেঙে তাকেও আমরা ঠুঁটো করে রাখতে পারি না। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল বিকল্প সরকারের সম্ভাব্য সূত্র। সরকার বিরোধী দলকে সম্মান করবে, সমীহ করবে এবং অযথা আঘাত দিয়ে কথা বলবে না; কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবে না। বিরোধী দলকে মনে রাখতে হবে, তারা সরকারের সমকক্ষ নয়—না আইনের চোখে, না মানুষের চোখে। তাদের অধিকার বিশেষ অধিকার, সরকারের সমতুল্য নয়। তারা বিরোধী দলের দায়িত্ব সাধ্যমতো পালন না করলে তাদের মর্যাদার আসন নষ্ট হতে বাধ্য। অবশ্য বিরোধী দলের বাক্স্বাধীনতা সরকারি দলের চেয়ে ব্যাপকতর ও প্রশস্ততর। তবে বিরোধী দল যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে অযথা সংসদ বর্জন করতে থাকে, তখন আমার মনে হয় সরকারের ওপর কোনো মানভঞ্জনের দায়িত্ব অর্পিত হয় না। দায়িত্বগুণে সরকার সত্যভাষণে সিদ্ধহস্ত হবে, তা না হলে ধরা খেয়ে যাবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের রেওয়াজমতো সরকারের অবস্থান বিরোধী দলের চেয়ে অনেক বেশি নাজুক। বিরোধী দল আসামি পক্ষের উকিলের মতো অবিবেচিত বক্তব্য দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। সরকারের সে রেয়াত নেই।
এখন কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছেন। এই দাবি একসময় দেশে অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। পরে সংবিধান সংশোধন করে সেই দাবি মেনে নেওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে ফাটকাবাজি খেলা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ঠিকা-ঝির মতো নির্দিষ্ট সময়ে সব কিছু সাফসুতরা করতে হয়। প্রতিদানে যিনি নির্বাচনে হেরে যান, তাঁর কাছ থেকে জীবনভর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকর্তাদের গঞ্জনা শুনতে হয়। যিনি নির্বাচনে জেতেন, তিনি ভাবেন—এবং তা সঠিকভাবেই ভাবেন—যে তিনি ভোটের জোরে নির্বাচনে জিতেছেন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের পর যে নতুন জাতীয় সংসদে প্রথম অধিবেশন বসে, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের বা নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান-সদস্যদের আমন্ত্রণ করা হয়নি। নৌকা পার হয়ে লোকে যে আদরের নামে পাটনিকে সম্ভাষণ করে, সেভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পর তার তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দেখা হয়।
আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এখনো দুবছর পড়ে আছে। এত সকাল-সকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মাতামাতি! আগামী কয়েক মাসে বা নির্বাচনের আগে তা হয়তো সুরাহা হবে। এত আগেভাগে সেই সুরাহা নিশ্চিত করার জন্য এখন যদি আমরা সব কিছু অচল করে দিই, তবে সকলের জন্য সে হবে সমূহ বিপদ।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সাবেক প্রধান বিচারপতি।
No comments