প্রসঙ্গ আইএসআইর টাকা-প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করেছে বিএনপি
প্রথম আলোয় ৪ মার্চ ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রুপি দেয় আইএসআই!’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রের বক্তব্য নিচে হুবহু প্রকাশ করা হলো:
প্রথম আলো পত্রিকায় গত ৪ মার্চ, ২০১২ তারিখের সংখ্যায় পয়লা পৃষ্ঠায় “১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রুপি দেয় আইএসআই!” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই যে, এ সংবাদটি পুরোপুরি অসত্য, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, বানোয়াট শুধু নয়, খুবই অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে।
প্রকাশিত ওই মনগড়া সংবাদটির প্রতিটি বর্ণ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আপনাদের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র হিসেবে দুবাই থেকে প্রকাশিত ‘খালিজ টাইমস’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত পত্রিকায় তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে সম্পাদককে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসাবে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলাম যে, অভিযোগটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচারণামূলক।
আমরা আশা করেছিলাম যে, সত্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয়ার পর হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাটি প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশ করবে না। কেননা, এর আগে খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’-এ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভারত থেকে বস্তা ভরা টাকা পেয়েছে মর্মে একই ধরনের অভিযোগসংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও প্রথম আলো সেই সংবাদ-সূত্রের বরাত দিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ কিংবা প্রচার করেনি।
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আলোচ্য মামলাটির কার্যবিবরণীর ভিত্তিতে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে বিশদ সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হলেও তার কোনোটিতেই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। আদালতে আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কতিপয় দল ও রাজনীতিবিদকে সে দেশে ১৯৯০ (আসলে ১৯৯১) সালের সাধারণ নির্বাচনে অর্থ প্রদানের বিষয়ে স্বীকারোক্তি রয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণসহ তাদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি-সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি জানা সত্ত্বেও প্রথম আলো ভিনদেশি একটি পত্রিকায় কোনো সূত্রের উল্লেখ ছাড়াই প্রকাশিত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে খুবই বিস্ময়করভাবে প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বসহকারে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। এটা অবশ্যই হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে আরও জানতে পেরেছি যে, খালিজ টাইমস-এ প্রকাশিত অসত্য প্রতিবেদনটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের দুটি পত্রিকায় বিকৃত তথ্যভিত্তিক যে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, সে দুটির রচয়িতা দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী প্রথম আলোর নয়াদিল্লিস্থ সংবাদদাতা। তা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, খুবই পরিকল্পিতভাবে যোগসাজশের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করাই ছিল এ প্রচারণার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সাংবাদিকতার মৌল নীতিমালার সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে এহেন সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রথম আলো দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ও এর নেত্রীর সুনাম ও সামাজিক মর্যাদাকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। শুধু তা-ই নয়, এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে অপপ্রচারণার একটি হাতিয়ারও তুলে দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে জনাব দুররানি নিজেই বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের জবানবন্দিতে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথাই বলেননি। তার কাছ থেকে যাচাই না করে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় পুরো অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছে।
আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম যে, বিদ্বেষপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক এই খবরের অসত্যতা প্রমাণিত হবার পর প্রথম আলো এর জন্য অন্তত দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে তাদের পাঠক ও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের কথা বিবেচনা করে পেশাগত সততা ও সাংবাদিকতার মৌল নীতির প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ রাখবে। দুঃখের বিষয়, প্রত্যাশা ও প্রতীক্ষা সফল না হওয়ায় আজ আমাদেরকেই প্রকাশিত অসত্য সংবাদটির তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে।
এই প্রতিবাদলিপিটি প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বসহকারে হুবহু প্রকাশের জন্য আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি। আমরা আশা করি, একই সঙ্গে প্রথম আলো ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে।
প্রথম আলোর বক্তব্য: প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান বা সূত্রে পাওয়া নয়। দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস-এ খবরটি প্রকাশ হয় ৩ মার্চ। ওই পত্রিকার বরাত দিয়েই পরদিন প্রথম আলো তা প্রকাশ করে। দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এক সংবাদমাধ্যমের খবর অন্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা সাংবাদিকতার একটি স্বীকৃত চর্চা। এটা দুনিয়াজোড়াই হয়।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য প্রথম আলোয় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের একটি অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘খালিজ টাইমস একটি প্রতিবেদনে খালেদাকে আইএসআইয়ের পাঁচ কোটি রুপি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘ভারতপন্থী’ আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রুপি দেয় আইএসআই। তবে পাকিস্তানের দ্য নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার-এর প্রতিবেদনে খালেদাকে অর্থ দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো তথ্য নেই।’
বস্তুত খালিজ টাইমসের খবরটি নজরে আসার পর পেশাগত সতর্কতা হিসেবে প্রথম আলো একই বিষয়ে ওই দিন পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় কি সংবাদ ছেপেছে, তাও অনলাইনে দেখার চেষ্টা করেছে। ডন, দ্য নেশনসহ অন্য পত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে আইএসআইয়ের অর্থ দেওয়ার ওই খবরটি ছিল সংক্ষিপ্ত। দ্য নিউজ ও ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার-এ ছিল বিস্তারিত। কিন্তু তাতেও খালেদা জিয়াকে অর্থ দেওয়ার প্রসঙ্গটি ছিল না। তাই খালিজ টাইমসের দেওয়া তথ্যটি যে পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাতে নেই, প্রথম আলো প্রতিবেদনের একই অনুচ্ছেদে তা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
একই সঙ্গে সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী, প্রথম আলো ওই বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চায় এবং দলের মহাসচিবের বক্তব্য প্রতিবেদনে যুক্ত করে। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা মহামিথ্যা। বিএনপি বিদেশিদের টাকায় চলা রাজনৈতিক দল নয়। এ খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচার।’ তিনি বলেন, ‘দি ইকোনমিস্ট-এ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন হয়েছিল, এর পাল্টা হিসেবে টাকা দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।’
এ প্রক্রিয়া থেকেই পরিষ্কার হওয়ার কথা, খালিজ টাইমস-এর খবরটি প্রকাশের পেছনে প্রথম আলোর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
এর পরও বিভিন্ন সময় বিএনপি আইএসআইয়ের টাকার বিষয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছে, তা যথাযথভাবে প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ মার্চ বিএনপি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়। একই দিনে বিএনপিদলীয় সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী সংসদে বলেন, বিএনপি আইএসআইয়ের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। হলফনামায় (পাকিস্তানের আদালতে দেওয়া আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির) বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে টাকা দেওয়ার কোনো কথা নেই। এসব বক্তব্য প্রথম আলোতে ছাপা হয়।
এর আগে ৯ মার্চ ‘আইএসআইয়ের টাকা কাল্পনিক গল্প: ফখরুল’, ১৫ মার্চ ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা এনজয় করি: ফখরুল’, ১৭ মার্চ ‘ভারতের কাছ থেকে বস্তা বস্তা টাকা নিয়েছে আ.লীগ: ফখরুল’, ২২ মার্চ ‘জনগণ জানে ভারতের টাকা কারা এনেছে: ফখরুল’—এই সব শিরোনামে প্রথম আলোতে খবর প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ২৪ মার্চ ‘পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি: বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার তথ্য ভিত্তিহীন’, ‘প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বিএনপি’, ‘আইএসআই বিএনপিকে নয় পিএনপিকে অর্থ দিয়েছে: খন্দকার মোশাররফ’ এবং ২৫ মার্চ ‘আইএসআইয়ের সাবেক প্রধানের বিবৃতি: বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট’, ‘খালিজ টাইমসে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে বিএনপি’ ও ‘আইএসআইয়ের টাকা নেওয়ার খবরের সমালোচনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান দুররানি বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ‘বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট’ শিরোনামে গতকাল তাও প্রথম আলো প্রকাশ করেছে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই যে, এ সংবাদটি পুরোপুরি অসত্য, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, বানোয়াট শুধু নয়, খুবই অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে।
প্রকাশিত ওই মনগড়া সংবাদটির প্রতিটি বর্ণ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আপনাদের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র হিসেবে দুবাই থেকে প্রকাশিত ‘খালিজ টাইমস’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত পত্রিকায় তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে সম্পাদককে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসাবে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলাম যে, অভিযোগটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচারণামূলক।
আমরা আশা করেছিলাম যে, সত্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয়ার পর হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাটি প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশ করবে না। কেননা, এর আগে খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’-এ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভারত থেকে বস্তা ভরা টাকা পেয়েছে মর্মে একই ধরনের অভিযোগসংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও প্রথম আলো সেই সংবাদ-সূত্রের বরাত দিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ কিংবা প্রচার করেনি।
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আলোচ্য মামলাটির কার্যবিবরণীর ভিত্তিতে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে বিশদ সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হলেও তার কোনোটিতেই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। আদালতে আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কতিপয় দল ও রাজনীতিবিদকে সে দেশে ১৯৯০ (আসলে ১৯৯১) সালের সাধারণ নির্বাচনে অর্থ প্রদানের বিষয়ে স্বীকারোক্তি রয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণসহ তাদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি-সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি জানা সত্ত্বেও প্রথম আলো ভিনদেশি একটি পত্রিকায় কোনো সূত্রের উল্লেখ ছাড়াই প্রকাশিত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে খুবই বিস্ময়করভাবে প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বসহকারে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। এটা অবশ্যই হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে আরও জানতে পেরেছি যে, খালিজ টাইমস-এ প্রকাশিত অসত্য প্রতিবেদনটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের দুটি পত্রিকায় বিকৃত তথ্যভিত্তিক যে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, সে দুটির রচয়িতা দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী প্রথম আলোর নয়াদিল্লিস্থ সংবাদদাতা। তা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, খুবই পরিকল্পিতভাবে যোগসাজশের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করাই ছিল এ প্রচারণার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সাংবাদিকতার মৌল নীতিমালার সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে এহেন সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রথম আলো দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ও এর নেত্রীর সুনাম ও সামাজিক মর্যাদাকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। শুধু তা-ই নয়, এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে অপপ্রচারণার একটি হাতিয়ারও তুলে দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে জনাব দুররানি নিজেই বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের জবানবন্দিতে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথাই বলেননি। তার কাছ থেকে যাচাই না করে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় পুরো অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছে।
আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম যে, বিদ্বেষপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক এই খবরের অসত্যতা প্রমাণিত হবার পর প্রথম আলো এর জন্য অন্তত দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে তাদের পাঠক ও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের কথা বিবেচনা করে পেশাগত সততা ও সাংবাদিকতার মৌল নীতির প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ রাখবে। দুঃখের বিষয়, প্রত্যাশা ও প্রতীক্ষা সফল না হওয়ায় আজ আমাদেরকেই প্রকাশিত অসত্য সংবাদটির তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে।
এই প্রতিবাদলিপিটি প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বসহকারে হুবহু প্রকাশের জন্য আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি। আমরা আশা করি, একই সঙ্গে প্রথম আলো ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে।
প্রথম আলোর বক্তব্য: প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান বা সূত্রে পাওয়া নয়। দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস-এ খবরটি প্রকাশ হয় ৩ মার্চ। ওই পত্রিকার বরাত দিয়েই পরদিন প্রথম আলো তা প্রকাশ করে। দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এক সংবাদমাধ্যমের খবর অন্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা সাংবাদিকতার একটি স্বীকৃত চর্চা। এটা দুনিয়াজোড়াই হয়।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য প্রথম আলোয় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের একটি অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘খালিজ টাইমস একটি প্রতিবেদনে খালেদাকে আইএসআইয়ের পাঁচ কোটি রুপি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘ভারতপন্থী’ আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রুপি দেয় আইএসআই। তবে পাকিস্তানের দ্য নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার-এর প্রতিবেদনে খালেদাকে অর্থ দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো তথ্য নেই।’
বস্তুত খালিজ টাইমসের খবরটি নজরে আসার পর পেশাগত সতর্কতা হিসেবে প্রথম আলো একই বিষয়ে ওই দিন পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় কি সংবাদ ছেপেছে, তাও অনলাইনে দেখার চেষ্টা করেছে। ডন, দ্য নেশনসহ অন্য পত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে আইএসআইয়ের অর্থ দেওয়ার ওই খবরটি ছিল সংক্ষিপ্ত। দ্য নিউজ ও ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার-এ ছিল বিস্তারিত। কিন্তু তাতেও খালেদা জিয়াকে অর্থ দেওয়ার প্রসঙ্গটি ছিল না। তাই খালিজ টাইমসের দেওয়া তথ্যটি যে পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাতে নেই, প্রথম আলো প্রতিবেদনের একই অনুচ্ছেদে তা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
একই সঙ্গে সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী, প্রথম আলো ওই বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চায় এবং দলের মহাসচিবের বক্তব্য প্রতিবেদনে যুক্ত করে। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা মহামিথ্যা। বিএনপি বিদেশিদের টাকায় চলা রাজনৈতিক দল নয়। এ খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচার।’ তিনি বলেন, ‘দি ইকোনমিস্ট-এ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন হয়েছিল, এর পাল্টা হিসেবে টাকা দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।’
এ প্রক্রিয়া থেকেই পরিষ্কার হওয়ার কথা, খালিজ টাইমস-এর খবরটি প্রকাশের পেছনে প্রথম আলোর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
এর পরও বিভিন্ন সময় বিএনপি আইএসআইয়ের টাকার বিষয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছে, তা যথাযথভাবে প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ মার্চ বিএনপি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়। একই দিনে বিএনপিদলীয় সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী সংসদে বলেন, বিএনপি আইএসআইয়ের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। হলফনামায় (পাকিস্তানের আদালতে দেওয়া আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির) বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে টাকা দেওয়ার কোনো কথা নেই। এসব বক্তব্য প্রথম আলোতে ছাপা হয়।
এর আগে ৯ মার্চ ‘আইএসআইয়ের টাকা কাল্পনিক গল্প: ফখরুল’, ১৫ মার্চ ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা এনজয় করি: ফখরুল’, ১৭ মার্চ ‘ভারতের কাছ থেকে বস্তা বস্তা টাকা নিয়েছে আ.লীগ: ফখরুল’, ২২ মার্চ ‘জনগণ জানে ভারতের টাকা কারা এনেছে: ফখরুল’—এই সব শিরোনামে প্রথম আলোতে খবর প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ২৪ মার্চ ‘পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি: বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার তথ্য ভিত্তিহীন’, ‘প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বিএনপি’, ‘আইএসআই বিএনপিকে নয় পিএনপিকে অর্থ দিয়েছে: খন্দকার মোশাররফ’ এবং ২৫ মার্চ ‘আইএসআইয়ের সাবেক প্রধানের বিবৃতি: বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট’, ‘খালিজ টাইমসে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে বিএনপি’ ও ‘আইএসআইয়ের টাকা নেওয়ার খবরের সমালোচনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান দুররানি বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ‘বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট’ শিরোনামে গতকাল তাও প্রথম আলো প্রকাশ করেছে।
No comments