আবার হবে মনা...আবার হবে by তারেক মাহমুদ
মা এখন ক্রিকেটও বোঝেন! অবাক হয়ে যান মুশফিকুর রহিম। মা কখনো খেলা বুঝতেন না। আরেকটু জোরে মারলে ছক্কা হবে—ক্রিকেট সম্পর্কে এই ছিল তাঁর জ্ঞান। সেই মা এখন বোঝাচ্ছেন, ‘এবার হয়নি। পরেরবার হবে।’ মুশফিকের বিস্ময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। নাকের ডগা দিয়ে এশিয়া কাপের ট্রফিটা চলে যাওয়ায় গোটা দেশ দুঃখের সাগরে ভাসছে।
অথচ মা কি দারুণভাবেই না বাঁচিয়ে রাখছেন আশা!
মুশফিকের মা কথা বলতে পারেন না। কারও কথা শুনতেও পান না। জন্মগতভাবেই এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বুকের ভেতর জমা হওয়া সুখ-দুঃখের ভাষা কণ্ঠনালি বেয়ে না এলেও ক্রিকেটের আবেগ এখন তাঁকেও স্পর্শ করে। সন্তানকে মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখে মায়ের চোখেও নামে অশ্রুর বান। ক্রিকেট নিয়ে মায়ের এতটা আবেগ দেখে মুশফিকও বিস্মিত, ‘মা কখনো খেলা বুঝতেন না। যদি আরও জোরে মারতে ছক্কা হতো, এতটুকুই বুঝতেন। আমার খুবই ভালো লাগছে যে মা এখন খেলা বুঝছেন।’
মা শুধু নন, এশিয়া কাপের বুকভাঙা সমাপ্তির পর বাংলাদেশ অধিনায়ক পাশে পাচ্ছেন পুরো পরিবারকেই। মা-বাবাসহ প্রায় পুরো পরিবারই সেদিন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাক্ষী হয়েছে ইতিহাসের। ঢাকায় এসে সবাই মুশফিকের উত্তরার বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন ভোরে বগুড়ায় ফিরে যাওয়ার কথা। থাকতে হলো মুশফিকের ইচ্ছাতেই। ফজরের নামাজ পড়েই হোটেল ছেড়ে বাসায় চলে আসেন তিনি। প্রিয়জনদের সঙ্গে কিছুটা সময় থেকে যদি মন একটু হালকা হয়।
বিষণ্ন সময়ে কাঁধে বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের হাতটাও পাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। উপলব্ধি করছেন, মাঠে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও মানুষের হূদয়ের চ্যাম্পিয়ন তাঁর দল, ‘শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে, প্রশংসা করেছে। বলেছে, কপালে ছিল না, তাই ফাইনালে জিতিনি। সবার এমন ভালোবাসা দেখে ভালো লাগছে।’
কিন্তু মানুষের এসব কথা তো সাময়িক সান্ত্বনা মাত্র। নিজের সঙ্গে যুদ্ধে যে প্রতি রাতেই হেরে যাচ্ছেন! বারবার ফিরে আসে ২২ মার্চ, ২ রানের হার। ঘুম ছুটে যায়। মনে হয়, আবার কি ফিরে এল সেই দিন! ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমার সেঞ্চুরির পরও দল হেরে গিয়েছিল। এরপর প্রায় দেড়-দুই মাস ঘুমোতে পারিনি। রাতে না, দিনেও না। এখনো সেটাই হচ্ছে। জানি না কত দিন ভোগাবে...’—এশিয়া কাপের ফাইনাল মুশফিকের স্মৃতিকে করছে ভারাক্রান্ত।
শুনলে অবাক হবেন, সন্তানের এ অবস্থায় একটুও বিচলিত নন মাহবুব হামিদ। বিচলিত হননি মুশফিককে সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখেও। কেন হবেন? ২৩ বছর ধরে যে মুশফিককে দেখছেন, এ তো সেই মুশফিকই!
‘এবার হয়তো আপনারা দেখেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই কান্না আমার ছেলে সব সময়ই কাঁদে। মুশফিক একা না। খেলায় আশাভঙ্গের কিছু ঘটলে সাকিব, তামিমরাও কাঁদে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারার পর ওরা অঝোরে কেঁদেছিল। সেই কান্না এত দিন ড্রেসিংরুমে থাকলেও এবার আর গোপন থাকেনি। গোপন থাকেনি আমাদের কান্নাও। এতটা পথ এগিয়েও দরজায় হাত দিয়ে দেখি দরজাটা লক করা, কাঁদব না?’—এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলার সময় বোধহয় আরেকবার কণ্ঠ ধরে এল মাহবুব হামিদের।
সেদিন বাংলাদেশ দলের হতাশার দৃশ্য গ্যালারি থেকে ভিডিও করছিলেন ভদ্রলোক। ভিডিও করতে করতেই চোখে পড়ল ছেলের চোখ ছলছল করছে, ‘ক্যামেরাটা জুম করে নিয়েছিলাম। মুশফিকের দিকে ঘোরাতেই দেখলাম ওর চোখে পানি। আমার পাশে ওর মা ছিল। তাকে বলিনি ছেলে কাঁদছে। কিন্তু একটু পর মুশফিক মাটিতে বসে পড়ল, এরপর শুয়ে পড়ল। বিষণ্ন। অন্যরা সান্ত্বনা দিচ্ছে। সাকিব টেনে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল...আমিও আর ঠিক থাকতে পারিনি।’ মাঠে ছেলেকে ওভাবে ভেঙে পড়তে দেখে ঠিক থাকতে পারেননি মুশফিকের মা-ও। সন্তানের কষ্টে চোখ বেয়ে পড়ছিল পানি।
সেই মা এখন অনেক শক্ত। পরিণত ক্রিকেট বোধ তাঁকেও বোঝাচ্ছে, যা হয়নি একদিন তা ঠিকই হবে। বগুড়ায় বাচ্চাদের আদর করে ডাকে ময়না, ময়না থেকে মনা। ছোটবেলায় মুশফিক ‘ফরসা মনা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। মা সেই ‘ফরসা মনা’কে বারবার বোঝাতে চাচ্ছেন, ‘আবার হবে মনা...আবার হবে।’
কথাটা বিশ্বাস করতে পারেন মুশফিক। মায়ের মন কখনো মিথ্যা বলে না।
মুশফিকের মা কথা বলতে পারেন না। কারও কথা শুনতেও পান না। জন্মগতভাবেই এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বুকের ভেতর জমা হওয়া সুখ-দুঃখের ভাষা কণ্ঠনালি বেয়ে না এলেও ক্রিকেটের আবেগ এখন তাঁকেও স্পর্শ করে। সন্তানকে মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখে মায়ের চোখেও নামে অশ্রুর বান। ক্রিকেট নিয়ে মায়ের এতটা আবেগ দেখে মুশফিকও বিস্মিত, ‘মা কখনো খেলা বুঝতেন না। যদি আরও জোরে মারতে ছক্কা হতো, এতটুকুই বুঝতেন। আমার খুবই ভালো লাগছে যে মা এখন খেলা বুঝছেন।’
মা শুধু নন, এশিয়া কাপের বুকভাঙা সমাপ্তির পর বাংলাদেশ অধিনায়ক পাশে পাচ্ছেন পুরো পরিবারকেই। মা-বাবাসহ প্রায় পুরো পরিবারই সেদিন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাক্ষী হয়েছে ইতিহাসের। ঢাকায় এসে সবাই মুশফিকের উত্তরার বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন ভোরে বগুড়ায় ফিরে যাওয়ার কথা। থাকতে হলো মুশফিকের ইচ্ছাতেই। ফজরের নামাজ পড়েই হোটেল ছেড়ে বাসায় চলে আসেন তিনি। প্রিয়জনদের সঙ্গে কিছুটা সময় থেকে যদি মন একটু হালকা হয়।
বিষণ্ন সময়ে কাঁধে বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের হাতটাও পাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। উপলব্ধি করছেন, মাঠে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও মানুষের হূদয়ের চ্যাম্পিয়ন তাঁর দল, ‘শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে, প্রশংসা করেছে। বলেছে, কপালে ছিল না, তাই ফাইনালে জিতিনি। সবার এমন ভালোবাসা দেখে ভালো লাগছে।’
কিন্তু মানুষের এসব কথা তো সাময়িক সান্ত্বনা মাত্র। নিজের সঙ্গে যুদ্ধে যে প্রতি রাতেই হেরে যাচ্ছেন! বারবার ফিরে আসে ২২ মার্চ, ২ রানের হার। ঘুম ছুটে যায়। মনে হয়, আবার কি ফিরে এল সেই দিন! ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমার সেঞ্চুরির পরও দল হেরে গিয়েছিল। এরপর প্রায় দেড়-দুই মাস ঘুমোতে পারিনি। রাতে না, দিনেও না। এখনো সেটাই হচ্ছে। জানি না কত দিন ভোগাবে...’—এশিয়া কাপের ফাইনাল মুশফিকের স্মৃতিকে করছে ভারাক্রান্ত।
শুনলে অবাক হবেন, সন্তানের এ অবস্থায় একটুও বিচলিত নন মাহবুব হামিদ। বিচলিত হননি মুশফিককে সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখেও। কেন হবেন? ২৩ বছর ধরে যে মুশফিককে দেখছেন, এ তো সেই মুশফিকই!
‘এবার হয়তো আপনারা দেখেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই কান্না আমার ছেলে সব সময়ই কাঁদে। মুশফিক একা না। খেলায় আশাভঙ্গের কিছু ঘটলে সাকিব, তামিমরাও কাঁদে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারার পর ওরা অঝোরে কেঁদেছিল। সেই কান্না এত দিন ড্রেসিংরুমে থাকলেও এবার আর গোপন থাকেনি। গোপন থাকেনি আমাদের কান্নাও। এতটা পথ এগিয়েও দরজায় হাত দিয়ে দেখি দরজাটা লক করা, কাঁদব না?’—এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলার সময় বোধহয় আরেকবার কণ্ঠ ধরে এল মাহবুব হামিদের।
সেদিন বাংলাদেশ দলের হতাশার দৃশ্য গ্যালারি থেকে ভিডিও করছিলেন ভদ্রলোক। ভিডিও করতে করতেই চোখে পড়ল ছেলের চোখ ছলছল করছে, ‘ক্যামেরাটা জুম করে নিয়েছিলাম। মুশফিকের দিকে ঘোরাতেই দেখলাম ওর চোখে পানি। আমার পাশে ওর মা ছিল। তাকে বলিনি ছেলে কাঁদছে। কিন্তু একটু পর মুশফিক মাটিতে বসে পড়ল, এরপর শুয়ে পড়ল। বিষণ্ন। অন্যরা সান্ত্বনা দিচ্ছে। সাকিব টেনে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল...আমিও আর ঠিক থাকতে পারিনি।’ মাঠে ছেলেকে ওভাবে ভেঙে পড়তে দেখে ঠিক থাকতে পারেননি মুশফিকের মা-ও। সন্তানের কষ্টে চোখ বেয়ে পড়ছিল পানি।
সেই মা এখন অনেক শক্ত। পরিণত ক্রিকেট বোধ তাঁকেও বোঝাচ্ছে, যা হয়নি একদিন তা ঠিকই হবে। বগুড়ায় বাচ্চাদের আদর করে ডাকে ময়না, ময়না থেকে মনা। ছোটবেলায় মুশফিক ‘ফরসা মনা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। মা সেই ‘ফরসা মনা’কে বারবার বোঝাতে চাচ্ছেন, ‘আবার হবে মনা...আবার হবে।’
কথাটা বিশ্বাস করতে পারেন মুশফিক। মায়ের মন কখনো মিথ্যা বলে না।
No comments