টেপরী রানীর বঞ্চনার দিন আজও ফুরায়নি by ফিরোজ আমিন সরকার
বয়সের ভারে ন্যূব্জ এক নারীর নাম টেপরী রানী। মুখের বলিরেখায় ফেলে আসা জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের ছাপ। সেই মুখচ্ছবি এখন আরও বিষণ্ন। একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে। ভুলতে পারেননি সেই ভয়াবহ দিনের কথা। শূন্যে দৃষ্টি মেলে তিনি বয়ান করেন যুদ্ধদিনের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি।
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলের বলিদ্বারা গ্রামের মুদিরাম বর্মণের মেয়ে টেপরী রানী। যৌবনের শুরুতেই বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রাম বাঁশরাইলের বৈশাখু বর্মন ওরফে মাটাংয়ের সঙ্গে। তখন যুদ্ধের ডামাডোল চলছে।
বিয়ের তিনদিন পর বাপের বাড়িতে নাইওর আসেন টেপরী। এ সময় পাকহানাদাররা ছড়িয়ে পরে পুরো রানীশংকৈল উপজেলায়। চলে হত্যাযজ্ঞ, লুট, অগ্নিসংযোগ আর নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন।
প্রাণরক্ষায় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে যায়। মুদিরামের পরিবারটিও বাড়ি ছেড়ে শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হায়নারা তাদের পিছু ছাড়েনি। স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় হানাদাররা টেপরী রানীকে ধরে নিয়ে যায় তাদের আস্তানায়।
সেখানে আটক রেখে তার ওপর চলে সম্মিলিতভাবে পাশবিক অত্যাচার। সারাদিন এভাবে কেটে যায়। সন্ধ্যায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সকালে ফের বাড়ি থেকে তুলে আনা হয় পাকিদের আস্তানায়।
এভাবেই কেটে যায় একাত্তরের ৬টি মাস। নির্মম নির্যাতনে টেপরীর শরীর ভেঙে যায়। অবশেষে তিনি ছাড়া পান হায়নাদের কবল থেকে। কিন্তু ততদিনে সর্বনাশ হয়ে যায় টেপরীর। তার গর্ভে সন্তান চলে আসে।
স্বাধীনতার সূর্য উঁকি দিলে বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তির কেতন উড়িয়ে বিজয় উল্লাস করে। একই সময় প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন টেপরী।
চারদিকে মুক্তির আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও তার ছোয়া লাগেনি ওই পরিবারটিতে। একসময় টেপরীর কোলজুড়ে আসে অনাহূত পুত্র সন্তান। পরিবারটি মুষঢ়ে পড়ে। যুদ্ধশিশুটি তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। স্বামী তাকে আর ঘরে তোলেনি।
ভাঙা কপাল নিয়ে টেপরী থেকে যান বাপের বাড়িতে। গ্রামবাসীদের শত লাঞ্চনা-গঞ্জনাও তার মাতৃত্বের মমতা কেড়ে নিতে পারেনি। হোক অনাহূত, তবুও তো পেটের সন্তান। তাকে তিনি ঠিকই মানুষ করেন। কিন্তু তার অসহায়ত্ব আর নিঃসঙ্গতা আরও বাড়ে। যুদ্ধের কয়েক বছর পর বাবা-মা চলে যান না ফেরার দেশে।
যুদ্ধশিশু সুধীর চন্দ্রের বয়স এখন একচল্লিশ। দুই সন্তানের জনক তিনি। রিকশা-ভ্যান চালিয়ে চলছে তার সংসার। এক হাতের রোজগার তাই ছেলের কষ্ট দেখে টেপরীও সকাল হলে বেড়িয়ে পড়েন কাজের খোঁজে। এ গ্রাম-ও গ্রাম ঘুরে ক্ষেত খামারে কাজ করে কিছু রোজগার করেন।
টিনের ছাউনি আর বাঁশের বেড়ার ঘরে থাকেন জনম দুঃখী টেপরী। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় আর কিছু চান না তিনি। চোখ মুছে টেপরী রানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা আমার স্বপ্ন ভেঙেছে, সংসার ভেঙেছে, তাদের বিচার হলেই মরে শান্তি পাবো’।
টেপরীর ভাই রমেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমারও এক হাতের রোজগার, তাই বোনকে দেখার সামর্থ হয়ে ওঠেনা’।
ওই গ্রামের সমাজকর্মী দীনেশ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে টেপরীর। দিনদিন কর্মক্ষম হয়ে পড়ছেন তিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম জানান, ’৭১-এ পাকসেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে টেপরী আজ ভেলায় ভাসছে। তার পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
বিয়ের তিনদিন পর বাপের বাড়িতে নাইওর আসেন টেপরী। এ সময় পাকহানাদাররা ছড়িয়ে পরে পুরো রানীশংকৈল উপজেলায়। চলে হত্যাযজ্ঞ, লুট, অগ্নিসংযোগ আর নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন।
প্রাণরক্ষায় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে যায়। মুদিরামের পরিবারটিও বাড়ি ছেড়ে শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হায়নারা তাদের পিছু ছাড়েনি। স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় হানাদাররা টেপরী রানীকে ধরে নিয়ে যায় তাদের আস্তানায়।
সেখানে আটক রেখে তার ওপর চলে সম্মিলিতভাবে পাশবিক অত্যাচার। সারাদিন এভাবে কেটে যায়। সন্ধ্যায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সকালে ফের বাড়ি থেকে তুলে আনা হয় পাকিদের আস্তানায়।
এভাবেই কেটে যায় একাত্তরের ৬টি মাস। নির্মম নির্যাতনে টেপরীর শরীর ভেঙে যায়। অবশেষে তিনি ছাড়া পান হায়নাদের কবল থেকে। কিন্তু ততদিনে সর্বনাশ হয়ে যায় টেপরীর। তার গর্ভে সন্তান চলে আসে।
স্বাধীনতার সূর্য উঁকি দিলে বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তির কেতন উড়িয়ে বিজয় উল্লাস করে। একই সময় প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন টেপরী।
চারদিকে মুক্তির আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও তার ছোয়া লাগেনি ওই পরিবারটিতে। একসময় টেপরীর কোলজুড়ে আসে অনাহূত পুত্র সন্তান। পরিবারটি মুষঢ়ে পড়ে। যুদ্ধশিশুটি তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। স্বামী তাকে আর ঘরে তোলেনি।
ভাঙা কপাল নিয়ে টেপরী থেকে যান বাপের বাড়িতে। গ্রামবাসীদের শত লাঞ্চনা-গঞ্জনাও তার মাতৃত্বের মমতা কেড়ে নিতে পারেনি। হোক অনাহূত, তবুও তো পেটের সন্তান। তাকে তিনি ঠিকই মানুষ করেন। কিন্তু তার অসহায়ত্ব আর নিঃসঙ্গতা আরও বাড়ে। যুদ্ধের কয়েক বছর পর বাবা-মা চলে যান না ফেরার দেশে।
যুদ্ধশিশু সুধীর চন্দ্রের বয়স এখন একচল্লিশ। দুই সন্তানের জনক তিনি। রিকশা-ভ্যান চালিয়ে চলছে তার সংসার। এক হাতের রোজগার তাই ছেলের কষ্ট দেখে টেপরীও সকাল হলে বেড়িয়ে পড়েন কাজের খোঁজে। এ গ্রাম-ও গ্রাম ঘুরে ক্ষেত খামারে কাজ করে কিছু রোজগার করেন।
টিনের ছাউনি আর বাঁশের বেড়ার ঘরে থাকেন জনম দুঃখী টেপরী। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় আর কিছু চান না তিনি। চোখ মুছে টেপরী রানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা আমার স্বপ্ন ভেঙেছে, সংসার ভেঙেছে, তাদের বিচার হলেই মরে শান্তি পাবো’।
টেপরীর ভাই রমেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমারও এক হাতের রোজগার, তাই বোনকে দেখার সামর্থ হয়ে ওঠেনা’।
ওই গ্রামের সমাজকর্মী দীনেশ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে টেপরীর। দিনদিন কর্মক্ষম হয়ে পড়ছেন তিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম জানান, ’৭১-এ পাকসেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে টেপরী আজ ভেলায় ভাসছে। তার পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
No comments