স্মরণ-আমার ভাই সম্রাট by জান্নাতুল নাঈম
এই কথা আর কোনো দিন বলতে পারব না, বলতে পারব না—ভাইয়া কেমন আছিস, বাইরে যাস না, সময় ভালো না। এ ধরনের অনেক আদর-ভালোবাসা আর শাসনমাখা কথাগুলো। বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারব না, আয় দোস্ত, ঈদ মোবারক। আমি আদর করে ওকে দোস্ত বলে ডাকতাম। আমাদের সব সমস্যা ওর সঙ্গে ভাগাভাগি করতাম। আর কোনো দিন তো বলতে পারব না, বল তো ভাইয়া, কী করা যায়?
টিভি চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখেছি। যেখানে বলা হয়, বাবু বেঁচে থাকলে ওর বয়স হতো ৪৫, বাবু বিয়ে করত কি না, ওর বাবুটা কেমন হতো—এ জাতীয় কথা। বিজ্ঞাপনটি দেখে খুব মর্মাহত হতাম। কিন্তু কখনো ভাবিনি, ওই বিজ্ঞাপনের কথাগুলো আমাদের জীবনে সত্য হয়ে যাবে। ভালোবাসার মানুষগুলো কেন এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। কেন? এই ভাইকে আমরা তিন বোন অনেক ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছিলাম। কখনো বুঝতে দিইনি কোনো কিছুর কষ্ট, কিন্তু বিধাতা কেন এত কষ্ট দিয়ে ওকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন? ও তো অনেক ছোট ছিল, যাওয়ার সময় তো ওর হয়নি। আমার কানে এখনো বারবার বাজে, ‘আমি আসছি বড় বুজি।’
ও আমাকে বড় বুজি বলত। কিন্তু ও তো এল না। আর কোনো দিন আসবেও না। ওর কাপড় ধোয়া বা ওর জন্য রান্না করা হবে না। তৈরি করে দেওয়া হবে না ওর প্রিয় কোনো খাবার। আমাদের ছেড়ে, মা-বাবাকে ছেড়ে গন্তব্যহীন চলার পথে চিরদিনের জন্য ২০১০ সালের ২৭ মে ঘাতক বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে চলে গেছে আমাদের প্রিয় আদরের ছোট সম্রাট।
ভাইয়া, তুই কি আর কোনো দিন ফিরে আসবি না? কোনো দিন না?
আজও ভোর হয়, দুপুর হয়, সন্ধ্যা হয়, তার পর রাত। কিন্তু রাত কেটে যে ভাইয়া আর ভোর আসছে না। আমাদের জীবনের যে অন্ধকার, তা তো কাটছে না। এখন তো কেউ আর বলে না, ‘আমার সকালে কোচিং আছে, ছয়টায় ডেকে দিয়েন’ বা ‘আম্মা, ১০টা টাকা দেন, রিকশা ভাড়া দেব।’ কেউ তো আমাদের জন্য গরম জিলাপি এনে বলে না, খেতে কেমন? তোর মতো করে কেউ তো ফিওনা-রায়ীদকে গুল্লুস-বুললে বলে ডাকে না। তাদের জন্য মুঠোভরে চকলেট আনে না। বলে না কেউ, ‘বড় বুজি, আপনি খুলনায় থেকে যান। আপনার ঢাকায় অনেক কষ্ট হয়।’ আমার ছোট বোনও ইন্টার্ন ডাক্তার। সে যখন মেডিকেলে পড়ে তখন সম্রাট বলত, ‘আপু, আপনি যখন ডাক্তার হবেন, তখন আমাকে কিন্তু অনেক প্যাড, কলম আর নানান জিনিস গিফট করতে হবে।’ আজ সেই ছোট আপু ডাক্তার। গিফটও পায় অনেক কিছু, কিন্তু সেই গিফটগুলো আজ আর কেউ চায় না। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি—যারা বই পড়ে, তাদের নাকি কোনো শত্রু থাকে না। আমার এই ছোট ভাই তো জীবনে অনেক বই পড়েছে। তার তো শত্রু থাকার কথা নয়। ২০১০ সালের ২৭ মে সম্রাটের মৃত্যুর পর, সে সময় বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ইমদাদুল হক মিলন একটি লেখা লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল—‘সম্রাট, তোমার মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়’। সম্রাট যখন বইয়ের জগতে ডুবে থাকত তখন কি আমরা জানতাম, সম্রাটকে নিয়ে এই বিখ্যাত লেখক কোনো দিন কিছু লিখবেন? তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সম্রাটের পদচারণ ছিল সম্রাটেরই মতো’। আমার ভাই সত্যিই সম্রাট, এ কথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। এই হারানোর ব্যথা যে কী—তা আমরা প্রতিটি দিন, রাত আর ক্ষণ উপলব্ধি করছি। মামা আর মামার বাড়ি অনেক আদরের। কিন্তু আমাদের তিন বোনের সন্তানেরা তো কোনো দিন আর সেই আদর পাবে না, কোনো দিন না।
জানিস ভাইয়া, তোকে যারা যন্ত্রদানবের নিচে ফেলে হত্যা করেছে, তারা কিন্তু এই বাংলায় বুক উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আজও। তাদের কোনো বিচার হয়নি। ঘাতক যানের চালকের বিচার কি হয় এ দেশে? তুই তো ভাইয়া চলে গেছিস অনেক দূরে। তোকে হারানোর ব্যথা ওরা কেউ বুঝবে না, কেউ না। এই বাংলাদেশে কি তাহলে কোনো দিন হামিম, আসিফ কিংবা সম্রাটের হত্যাকারীদের বিচার হবে না, কোনো দিন না? এভাবে কি শুধু আমরা হারিয়েই যাব, আর ওরা থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে?
জান্নাতুল নাঈম
ও আমাকে বড় বুজি বলত। কিন্তু ও তো এল না। আর কোনো দিন আসবেও না। ওর কাপড় ধোয়া বা ওর জন্য রান্না করা হবে না। তৈরি করে দেওয়া হবে না ওর প্রিয় কোনো খাবার। আমাদের ছেড়ে, মা-বাবাকে ছেড়ে গন্তব্যহীন চলার পথে চিরদিনের জন্য ২০১০ সালের ২৭ মে ঘাতক বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে চলে গেছে আমাদের প্রিয় আদরের ছোট সম্রাট।
ভাইয়া, তুই কি আর কোনো দিন ফিরে আসবি না? কোনো দিন না?
আজও ভোর হয়, দুপুর হয়, সন্ধ্যা হয়, তার পর রাত। কিন্তু রাত কেটে যে ভাইয়া আর ভোর আসছে না। আমাদের জীবনের যে অন্ধকার, তা তো কাটছে না। এখন তো কেউ আর বলে না, ‘আমার সকালে কোচিং আছে, ছয়টায় ডেকে দিয়েন’ বা ‘আম্মা, ১০টা টাকা দেন, রিকশা ভাড়া দেব।’ কেউ তো আমাদের জন্য গরম জিলাপি এনে বলে না, খেতে কেমন? তোর মতো করে কেউ তো ফিওনা-রায়ীদকে গুল্লুস-বুললে বলে ডাকে না। তাদের জন্য মুঠোভরে চকলেট আনে না। বলে না কেউ, ‘বড় বুজি, আপনি খুলনায় থেকে যান। আপনার ঢাকায় অনেক কষ্ট হয়।’ আমার ছোট বোনও ইন্টার্ন ডাক্তার। সে যখন মেডিকেলে পড়ে তখন সম্রাট বলত, ‘আপু, আপনি যখন ডাক্তার হবেন, তখন আমাকে কিন্তু অনেক প্যাড, কলম আর নানান জিনিস গিফট করতে হবে।’ আজ সেই ছোট আপু ডাক্তার। গিফটও পায় অনেক কিছু, কিন্তু সেই গিফটগুলো আজ আর কেউ চায় না। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি—যারা বই পড়ে, তাদের নাকি কোনো শত্রু থাকে না। আমার এই ছোট ভাই তো জীবনে অনেক বই পড়েছে। তার তো শত্রু থাকার কথা নয়। ২০১০ সালের ২৭ মে সম্রাটের মৃত্যুর পর, সে সময় বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ইমদাদুল হক মিলন একটি লেখা লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল—‘সম্রাট, তোমার মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়’। সম্রাট যখন বইয়ের জগতে ডুবে থাকত তখন কি আমরা জানতাম, সম্রাটকে নিয়ে এই বিখ্যাত লেখক কোনো দিন কিছু লিখবেন? তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সম্রাটের পদচারণ ছিল সম্রাটেরই মতো’। আমার ভাই সত্যিই সম্রাট, এ কথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। এই হারানোর ব্যথা যে কী—তা আমরা প্রতিটি দিন, রাত আর ক্ষণ উপলব্ধি করছি। মামা আর মামার বাড়ি অনেক আদরের। কিন্তু আমাদের তিন বোনের সন্তানেরা তো কোনো দিন আর সেই আদর পাবে না, কোনো দিন না।
জানিস ভাইয়া, তোকে যারা যন্ত্রদানবের নিচে ফেলে হত্যা করেছে, তারা কিন্তু এই বাংলায় বুক উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আজও। তাদের কোনো বিচার হয়নি। ঘাতক যানের চালকের বিচার কি হয় এ দেশে? তুই তো ভাইয়া চলে গেছিস অনেক দূরে। তোকে হারানোর ব্যথা ওরা কেউ বুঝবে না, কেউ না। এই বাংলাদেশে কি তাহলে কোনো দিন হামিম, আসিফ কিংবা সম্রাটের হত্যাকারীদের বিচার হবে না, কোনো দিন না? এভাবে কি শুধু আমরা হারিয়েই যাব, আর ওরা থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে?
জান্নাতুল নাঈম
No comments