পাঠ্যপুস্তক সরবরাহে নৈরাজ্য বন্ধ করুন-নকলে নাকাল শিক্ষা

আসল জিনিস গুদামঘরে, নকল জিনিস খোলাবাজারে। কলিকালে নাকি সবই উল্টো হয়ে যায়, বাংলাদেশে এখন বুঝি সেই কলিকালই সমাসন্ন। উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের নকলে ভরে আছে পাঠ্যপুস্তকের বাজার। বেশি দামে, নিম্নমানের ছাপায় এবং ভুলসহ সেগুলোই কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


ওদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গুদামে পড়ে থাকছে আসল বই। এনসিটিবি বই ছেপে খালাস, নকল হটিয়ে সেগুলোকে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার গরজটা তাদের কম। কিন্তু নকল ব্যবসায়ীদের ব্যবসার গরজ তাদের থেকে বেশি হওয়ায় নকলের কাছে হেরে যাচ্ছে আসল।
গত শনিবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদন, ‘নকলের দাপটে আসল চেনা দায়’। প্রবাদ আছে, গুণের থেকে দোষই বেশি সংক্রমিত হয়। পাঠ্যপুস্তকের বেলায় দেখা যাচ্ছে, আসলের থেকে নকলের কদরই বেশি। এনসিটিবি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলো নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় নকল পুস্তক ব্যবসায়ীদের হয়েছে পোয়া বারো। তাঁরা বিনা বাধায় নকল বইয়ের কারবার করে লাভবান হচ্ছেন, কিন্তু প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
মুশকিল হলো, সাংবাদিকেরা যা জানেন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে হয় জানে না। তাই এনসিটিবি অনিয়ম দেখেও না দেখে থাকতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাত নকলের বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ একাধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সজাগ করতে পারত। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকের আসল-নকল নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কম। তারা কেবল এ বিষয়ে পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দিয়েই খালাস!
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, মাদ্রাসা বোর্ড ছাড়াই যেখানে এবার আট লাখের বেশি শিক্ষার্থী এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, সেখানে এনসিটিবির হাতে রয়েছে মাত্র দেড় লাখের কিছু বেশি বই। পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের কিনতেই হবে। এবং আসল বই-ই তারা চাইবে, যেখানে তা দামেও কম। কিন্তু বিপণনব্যবস্থা না থাকা এবং তদারকির অভাবে এ রকম নিশ্চিত বাজারও যদি এনসিটিবি ধরতে না পারে, তাহলে তাদের দক্ষতা ও নিষ্ঠা নিয়ে সন্দেহ জাগবেই।
শুধু উচ্চমাধ্যমিকে নয়, শিক্ষার সকল স্তরেই বোর্ড অনুমোদিত বই নকলের দাপটে নাকাল হচ্ছে। ভুল ও অননুমোদিত বই থেকে শিক্ষকেরা পাঠদান করে চলেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকম নৈরাজ্যকর অবস্থায় শিক্ষার মান কী দাঁড়াচ্ছে, তা ভাববার বিষয়। আমরা আশা করব, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি জরুরি গুরুত্বসহকারে নেবে এবং শক্ত হাতে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।

No comments

Powered by Blogger.