বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নব অধ্যায়-আস্থার সফর

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা তিন দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লি ফিরে গেছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর নিশ্চয়ই গুরুত্ববহ। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দুইদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, মনমোহন সিংয়ের সফরকালে সীমান্ত-বিরোধ নিষ্পত্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে।


অস্বীকার করার উপায় নেই, এ সমস্যা দুটি দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে আছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ই এ সমস্যা সমাধানে মতৈক্য হয়েছিল। কিন্তু এত দিনেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ জন্য দায়ী পারস্পরিক আস্থার অভাব। আশা করি, এস এম কৃষ্ণার সফর অনাস্থার দেয়াল সরিয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। তাঁর সফরে কী কী বিষয়ে সমঝোতা বা কয়টি চুক্তি সই হয়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ। ভারতের পক্ষ থেকে যেসব বিষয়ে উদ্বেগ ছিল, বাংলাদেশ তার প্রায় পুরোটাই প্রশমিত করতে পেরেছে। এখন ভারতের পালা। সীমান্তে হতাহতের সংখ্যা শূন্যে নিয়ে আসার যে আশ্বাস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন, তার দ্রুত বাস্তবায়নই দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ।
বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার কথা বলে আসছে। ভারত রাজিও হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিশেষ করে, অশুল্ক বাধার কারণে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের যে সীমিত সুযোগ আছে তা থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এ কথা ঠিক, কেবল বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা নিয়ে আমরা বেশিদূর এগোতে পারব না।সে জন্য দরকার বিনিয়োগ। বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে; কর্মসংস্থান বাড়বে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকটি তাৎপর্যপূর্ণ। বিরোধীদলীয় নেতা ভারতের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের আগে তা জাতীয় সংসদে আলোচনা করার কথা বলেছেন। আমরাও মনে করি, কেবল ভারত নয়, যেকোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি হলে তা সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই আলোচনায় অংশ নিতে হলে তো বিরোধী দলকে সংসদে যেতে হবে। আশা করি, সংসদে গিয়েই বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর এই যৌক্তিক দাবিদেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দুই পক্ষের বিপরীত অবস্থান কাম্য নয়। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের অন্যতম শর্ত পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। এত দিন দুই দেশের মধ্যে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোর দ্রুত ও যৌক্তিক সমাধানই পারে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে; এবং সেটি হতে হবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে উভয়েই লাভবান হবে, এ ভিত্তিতে। অতীতের সব সংশয় ও সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নব অধ্যায়ের সূচনা করবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.