চরাচর-চন্দ্রদ্বীপের দুর্গাসাগর by সাইফুল ইসলাম খান
প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত আজকের বরিশালের পূর্বনাম চন্দ্রদ্বীপ। সে আমলে চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী ছিল মাধবপাশায়। চন্দ্রদ্বীপের পালবংশের ইতিহাস থাকলেও সেখানে রাজবাড়ীর কোনো অস্তিত্ব নেই, এমনকি নেই কোনো ধ্বংসাবশেষও। একমাত্র দুর্গাসাগর দিঘিই টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। দেশের অনেক রাজবাড়ী টিকে আছে, আছে রাজার দিঘিও।
কিন্তু দুর্গাসাগর দিঘির চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বর্তমানে এটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসে শুধু এ দিঘিটি দেখতে। শুধু চোখের প্রশান্তিই নয়, বরং জল যেমন তৃষ্ণা নিবারণ করে, এ দিঘিটিও মানুষের মনে এক ধরনের প্রশান্তি আনে। তাই অনেকেই বার বার ঘুরতে আসেন এখানে। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া। চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দিঘির উত্তর পাশে আছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। অনেকটা এল আকৃতির দিঘিটির মধ্য-উত্তর ভাগে আছে দ্বীপসদৃশ একটি মাটির টিলা। দুর্গাসাগর দিঘিকে যদি সাগর হিসেবে কল্পনা করতে পারেন, তবে এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে যায় পারের বৃক্ষরাজির ছায়া। এমন মনোমুঙ্কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ দিঘিটি খনন করেন রাণী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে।
চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের পঞ্চদশ রাজা ছিলেন শিবনারায়ণ। 'পাগলা রাজা' নামে খ্যাত শিবনারায়ণের স্ত্রী রানি দুর্গাবতী ছিলেন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল। তিনি রাজবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধন ও প্রজাসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে একটি দিঘি খনন করতে মনস্থির করেন। জনশ্রুতি আছে, রানি একবার হেঁটে যতদূর যেতে পারবেন, দিঘিও তত বড় হবে। রানি দুর্গাবতী ৬১ কানি ভূমি হেঁটে গেলে ওই জমির ওপর দীঘি খনন করা হয়। দিঘির পশ্চিম পাশে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শালনা ও ফুলতলা গ্রাম। রানি দুর্গাবতীর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই চন্দ্রদ্বীপের পালবংশের রাজত্বের অবসান ঘটে। এরপর শত বছর জঙ্গলাকীর্ণ থাকার পর জেলা বোর্ড দিঘিটি সংস্কার করেন। তারপর ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আবদুর রব সেরনিয়াবাত দিঘিটি পুনঃখনন ও সংস্কার করেন। বর্তমানে এটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দিঘি এবং অন্যতম দর্শনীয় স্থান। স্বাধীনতার পর যেভাবে মাধবপাশার দুর্গাসাগর দিঘিটি পুনঃখনন, সংস্কার ও বৃক্ষায়ণ করে দৃষ্টিনন্দন এবং দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য প্রাচীন রাজদিঘিকে একইভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হোক, এটাই সৌন্দর্য পিপাসুদের প্রত্যাশা।
সাইফুল ইসলাম খান
চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের পঞ্চদশ রাজা ছিলেন শিবনারায়ণ। 'পাগলা রাজা' নামে খ্যাত শিবনারায়ণের স্ত্রী রানি দুর্গাবতী ছিলেন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল। তিনি রাজবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধন ও প্রজাসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে একটি দিঘি খনন করতে মনস্থির করেন। জনশ্রুতি আছে, রানি একবার হেঁটে যতদূর যেতে পারবেন, দিঘিও তত বড় হবে। রানি দুর্গাবতী ৬১ কানি ভূমি হেঁটে গেলে ওই জমির ওপর দীঘি খনন করা হয়। দিঘির পশ্চিম পাশে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শালনা ও ফুলতলা গ্রাম। রানি দুর্গাবতীর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই চন্দ্রদ্বীপের পালবংশের রাজত্বের অবসান ঘটে। এরপর শত বছর জঙ্গলাকীর্ণ থাকার পর জেলা বোর্ড দিঘিটি সংস্কার করেন। তারপর ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আবদুর রব সেরনিয়াবাত দিঘিটি পুনঃখনন ও সংস্কার করেন। বর্তমানে এটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দিঘি এবং অন্যতম দর্শনীয় স্থান। স্বাধীনতার পর যেভাবে মাধবপাশার দুর্গাসাগর দিঘিটি পুনঃখনন, সংস্কার ও বৃক্ষায়ণ করে দৃষ্টিনন্দন এবং দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য প্রাচীন রাজদিঘিকে একইভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হোক, এটাই সৌন্দর্য পিপাসুদের প্রত্যাশা।
সাইফুল ইসলাম খান
No comments