সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন-মেঘনা তীরের মাটি লুট
দীর্ঘ এক মাস ধরে মেঘনা নদীর তীরে মাটি লুটপাট করছে প্রভাবশালী একটি মহল। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, কুমিল্লার মেঘনা ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে এই লুটপাট চালানোর খবর উঠে এসেছে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে।
স্থানীয় গ্রামবাসী প্রতিরোধ করতে গিয়ে লুটেরাদের টেঁটা-বল্লমের আঘাতে তাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত। এই ক্ষতের দাগ কতটা গভীর, সেটাই ফুটে উঠেছে ৬৫ বছর বয়সী আমির হামজার বক্তব্যে, ‘এরা শুধু আমাগো জমির মাটি কাইট্টা নিয়াই শেষ করছে না; টেঁটা-বল্লম দিয়া, গাই দিয়া আমাদের শরীরের গোশতও নিয়া যাচ্ছে।’ অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
এতটা প্রকাশ্যে ও নির্বিঘ্নে মাটি লুট চালিয়ে যেতে পারছে মূলত ক্ষমতার জোরে। বালুমহাল ইজারা নিয়ে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে তীরের বালু কেটে নিচ্ছে যে চক্রটি, ওই চক্র মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামের আশীর্বাদপুষ্ট। তাই নিরীহ গ্রামবাসী নিজেদের জমি রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কোপের আঘাতে আহত হলেও উল্টো মামলা খেয়ে আতঙ্কে তাদেরই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা কিংবা পুলিশ যদি সন্ত্রাসীদের অভিভাবক ও পাহারাদারের ভূমিকায় থাকে, তাহলে জনগণ কার কাছে যাবে? কার ওপর ভরসা করবে?
লুটেরাদের কবল থেকে বাদ পড়ছে না নদীতীরের ফসলি জমি, এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত জায়গার মাটিও। এভাবে নদীতীরের মাটি লুটের ফলে মেঘনার গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা যেমন আছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বসতবাড়ি চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে আর বিপুল ফসলি জমি তলিয়ে যেতে পারে। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র কোম্পানি কর্তৃক সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা সত্ত্বেও কোনো ফল হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই এক মাসেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি অথবা নিতে পারেনি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি তারা ব্যবস্থা নিতে অপারগ হয়, তাহলে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা আবশ্যক।
No comments