বাধা পেরিয়ে আজ চার দলের মহাসমাবেশ

সব বাধা পেরিয়ে আজ সোমবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মহাসমাবেশে নতুন কর্মসূচি দেবেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মহাসমাবেশ ঘিরে কয়েক দিন ধরে দেশজুড়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।


রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোয় কয়েক দিন আগেই অতিথি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়ক ও নৌপথে যান চলাচলও বন্ধ করা হয়। এমনকি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতিও দেওয়া হয় গতকাল রোববার বিকেলে। বিএনপির অভিযোগ, মহাসমাবেশ বানচাল করতে এসব বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ১১টি শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত স্থানে এ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়। পরে রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হয় মঞ্চ তৈরির কাজ। বিএনপি মহাসমাবেশস্থলের সীমানা মতিঝিলের শাপলা চত্বর, পুরানা পল্টনের তোপখানা ও শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছে।
আজ বেলা দুইটায় শুরু হবে মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা। বিকেল সাড়ে চারটায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করা এ কর্মসূচি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ও সরকার পতনের দাবিতে চারদলীয় জোট এই মহাসমাবেশ করছে। গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভা থেকে খালেদা জিয়া ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ নামে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা এর বিরোধিতা করেছেন। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধী দল এ ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে। ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলের দিন ঢাকায় সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপি ওই কর্মসূচি এক দিন পেছাতে বাধ্য হয়। এবার মহাসমাবেশের আগে-পরে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাই এই মহাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল বিরোধী দল। চার দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে বাধা, হোটেল-কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া না দেওয়া, খাবার হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশ, দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে এই মহাসমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
মহাসমাবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের শঙ্কার কথা বলেন গত শনিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন গতকাল বলেন, কর্মসূচি নিয়ে জনগণ শঙ্কিত।
তবে বিএনপির চেয়ারপারসন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, এই কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
এদিকে সরকারের অবস্থান ও মহাসমাবেশ করতে বিএনপি অনড় থাকায় সহিংসতার আশঙ্কায় ভীতি সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গত দুই দিন রাজধানীতে গণপরিবহনের চলাচল ছিল খুবই কম, বিশেষ করে গতকাল হাতেগোনা কয়েকটি গণপরিবহন চলেছে। সহিংসতার আশঙ্কায় ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যানও রাস্তায় ছিল কম। ফলে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা, ভিআইপি সড়কে চলেছে রিকশা।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি: মহাসমাবেশ ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই আবেদনে বলেন, আজ (সোমবার) নয়াপল্টনে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হবে। আবেদনে এই কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মী ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রস্তুতি: বর্তমান সরকারের আমলে চারদলীয় জোটের এটাই প্রথম মহাসমাবেশ। তাই মহাসমাবেশ সফল করতে শরিক দলগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ডিএমপি গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিলেও সকাল থেকেই সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন। রাতে শুরু হয় মঞ্চ তৈরি।
মহাসমাবেশ থেকে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বে ১৬টি দল নিয়ে সম্প্রসারিত এই জোটের নাম হবে ‘সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোট’। বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে এই জোটের ঘোষণাপত্র অনুমোদন করে।
বিএনপি সূত্র জানায়, মহাসমাবেশে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া। নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপির ও জোটের নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণাও দেবেন তিনি। তবে মহাসমাবেশ থেকে শিগগিরই বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। এইচএসসি পরীক্ষা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর জুন-জুলাইয়ের দিকে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে মহাসমাবেশে সরকারের বাধা এবং কোনো নাশকতা ঘটানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, মহাসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সাজ সাজ রব: মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টন এলাকায় সাজ সাজ রব পড়েছে। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং বিভিন্ন ভবনের সামনের দিক পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
সকাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকের ভিড় জমে। মাইক ব্যবহারের অনুমতি না থাকায় সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে গান বাজানো হয়। অনেক কর্মীকে গানের তালে নাচতে দেখা গেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে মির্জা ফখরুল মাইকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের (রোববার) মতো আপনারা বাসায় চলে যান।’ তাঁদের সোমবার সকাল ১০টায় সমাবেশস্থলে হাজির থাকার আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আপনারা বাধা সত্ত্বেও কর্মসূচিতে এসেছেন, সে জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
তবে রাত পর্যন্ত বিএনপির কর্মীদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মহাজোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার পর থেকে বিএনপি এ নিয়ে আন্দোলন করছে। ইতিমধ্যে দলটি আটটি হরতাল পালন করেছে। এই দাবিতে গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা থেকে সিলেট, উত্তরাঞ্চল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ অভিমুখে চারটি রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.