চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-উদার সঞ্চরণশীল বিশ্ববিদ্যালয় by আনোয়ারুল আজিম আরিফ
দায়িত্ব নিয়েই আমি বলেছিলাম, উপাচার্য হিসেবে আমার প্রথম কাজটিই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে নিয়ে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে সেশনজট একটি বড় বাধা, তা কমানোই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের উপযোগী করে বিশ্ব্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার
জন্য আমার আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৫ জুন উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঐকান্তিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষার প্রতিই আমি বেশি নজর দিয়েছি। সেশনজট কমানো, কৃতী শিক্ষক-গবেষকদের সম্মাননা আর গবেষণা কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার বিষয়েও তদারকি করছি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ক্যাম্পাসে এসে প্রীত হয়েছেন। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে যখন হাজারো শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্য, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনা। ৪ ফেব্রুয়ারি সামান্য কথাকাটাকাটির জের ডেকে আনে দুই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু। আহত একাধিকজন মৃত্যুর সঙ্গে হাসপাতালের কেবিনে লড়ছে। এক আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে এসে শোকে মুহ্যমান বাবার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে_ কারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলছে? এক কথায় বলব, যারা স্থিতিশীল ক্যাম্পাস চায় না_ তারাই রয়েছে এর পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা-গবেষণার স্থান, সংঘাত এখানে কাম্য নয়। সেদিন সংঘর্ষের খবর পাওয়া মাত্রই আমি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের থামাতে ছুটে গেছি। সিনিয়র শিক্ষক, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে পরিস্থিতি থামানোর নির্দেশ দিই। কিন্তু দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে এসেছিল।
আমি ছাত্রদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ক্যাম্পাসে একটি মডেল থানা প্রতিষ্ঠার জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন থেকেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। মডেল থানা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত একদল আর্মড পুলিশ ক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিটিং, মিছিল এবং পোস্টারিং, লিফলেটসহ সব রাজনৈতিক কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে এই সময়ে আমার পাশে সহকর্মীরা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সরকার থেকে পাওয়া দুটি নতুন বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি বাস উপহার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন উদ্যোগের জন্য সংশিল্গষ্ট সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। একে খান ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ নতুন আইন অনুষদ ভবন নির্মাণে এগিয়ে এসেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিকশিত করায় ইতিবাচক পদক্ষেপ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাচ্ছি আমরা। সম্প্রতি 'দ্য রুল অব দি এনজিওস ইন বাংলাদেশ টু অ্যাচিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এলিভিয়েট পোভারটি' শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্যাম্পাসে। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটিসহ (এসআইইউসি) পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার এবং ১৩ জন গ্র্যাজুয়েট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় সফর করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার নরওয়ে সফরের মাধ্যমে চবির সঙ্গে একটি পাঁচ বছরমেয়াদি গবেষণা বৃত্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দায়িত্ব নিয়েই আমি বলেছিলাম, উপাচার্য হিসেবে আমার প্রথম কাজটিই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে নিয়ে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে সেশনজট একটি বড় বাধা, তা কমানোই হবে আমার মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের উপযোগী করে বিশ্ব্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার জন্য আমার আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উদার সঞ্চরণশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে পরিণত করতে আগামী ১৭ মার্চ থেকে ক্যাম্পাস আবার সচল হতে যাচ্ছে। আমার প্রাণপ্রিয় হাজারো শিক্ষার্থী নির্ভয়চিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে। আবার কোলাহলে মুখর হবে ক্যাম্পাস_ এটাই আমার চাওয়া। সবাইকে মহান স্বাধীনতার মাসে একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে বিচরণের আহ্বান জানাই।
প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম আরিফ উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
vccu66@gmail.com
জন্য আমার আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৫ জুন উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঐকান্তিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষার প্রতিই আমি বেশি নজর দিয়েছি। সেশনজট কমানো, কৃতী শিক্ষক-গবেষকদের সম্মাননা আর গবেষণা কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার বিষয়েও তদারকি করছি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ক্যাম্পাসে এসে প্রীত হয়েছেন। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে যখন হাজারো শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্য, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনা। ৪ ফেব্রুয়ারি সামান্য কথাকাটাকাটির জের ডেকে আনে দুই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু। আহত একাধিকজন মৃত্যুর সঙ্গে হাসপাতালের কেবিনে লড়ছে। এক আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে এসে শোকে মুহ্যমান বাবার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে_ কারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলছে? এক কথায় বলব, যারা স্থিতিশীল ক্যাম্পাস চায় না_ তারাই রয়েছে এর পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা-গবেষণার স্থান, সংঘাত এখানে কাম্য নয়। সেদিন সংঘর্ষের খবর পাওয়া মাত্রই আমি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের থামাতে ছুটে গেছি। সিনিয়র শিক্ষক, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে পরিস্থিতি থামানোর নির্দেশ দিই। কিন্তু দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে এসেছিল।
আমি ছাত্রদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ক্যাম্পাসে একটি মডেল থানা প্রতিষ্ঠার জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন থেকেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। মডেল থানা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত একদল আর্মড পুলিশ ক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিটিং, মিছিল এবং পোস্টারিং, লিফলেটসহ সব রাজনৈতিক কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে এই সময়ে আমার পাশে সহকর্মীরা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সরকার থেকে পাওয়া দুটি নতুন বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি বাস উপহার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন উদ্যোগের জন্য সংশিল্গষ্ট সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। একে খান ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ নতুন আইন অনুষদ ভবন নির্মাণে এগিয়ে এসেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিকশিত করায় ইতিবাচক পদক্ষেপ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাচ্ছি আমরা। সম্প্রতি 'দ্য রুল অব দি এনজিওস ইন বাংলাদেশ টু অ্যাচিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এলিভিয়েট পোভারটি' শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্যাম্পাসে। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটিসহ (এসআইইউসি) পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার এবং ১৩ জন গ্র্যাজুয়েট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় সফর করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার নরওয়ে সফরের মাধ্যমে চবির সঙ্গে একটি পাঁচ বছরমেয়াদি গবেষণা বৃত্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দায়িত্ব নিয়েই আমি বলেছিলাম, উপাচার্য হিসেবে আমার প্রথম কাজটিই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে নিয়ে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে সেশনজট একটি বড় বাধা, তা কমানোই হবে আমার মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের উপযোগী করে বিশ্ব্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার জন্য আমার আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উদার সঞ্চরণশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে পরিণত করতে আগামী ১৭ মার্চ থেকে ক্যাম্পাস আবার সচল হতে যাচ্ছে। আমার প্রাণপ্রিয় হাজারো শিক্ষার্থী নির্ভয়চিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে। আবার কোলাহলে মুখর হবে ক্যাম্পাস_ এটাই আমার চাওয়া। সবাইকে মহান স্বাধীনতার মাসে একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে বিচরণের আহ্বান জানাই।
প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম আরিফ উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
vccu66@gmail.com
No comments