ভোটার তালিকা হালনাগাদ-নতুন ইসির জন্য পরীক্ষা

বিদ্যমান ভোটার তালিকা চার পর্যায়ে হালনাগাদ করার কাজ শনিবার যেভাবে শুরু হয়েছে তা অনেকের কাছেই আকস্মিক মনে হবে। অনেকে জানতেন না যে সেদিন গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে। অনবহিত ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা স্বভাবতই কঠিন হবে। থাকবে ভুলভ্রান্তির ঝুঁকিও।


পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবেই এমনটি ঘটেছে ধারণা করা যায়। অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় প্রচারধর্মী কার্যক্রম দেখা গেলেও এবার তা অনুপস্থিত। 'যত গর্জে, তত বর্ষে না' বলে বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজে তো গর্জনই কম দেখা যাচ্ছে! বর্ষণ কতটা হয়, এখন সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতির কারণে ঢাকার সাভার উপজেলার খবর পাওয়া গেছে। হয়তো উপকরণ ও উপস্থিতিও যথাযথ ছিল। বাকি ৬৩ জেলার ৬৩ উপজেলায় এ সংক্রান্ত প্রচার ও কাজ কীভাবে চলছে খতিয়ে দেখতে বলব আমরা। সহযোগী একটি বাংলা দৈনিকে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, অনেক এলাকায় তথ্য সংগ্রহে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়নি। হালনাগাদ কাজ শুরুর আগে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও অংশগ্রহণকারী ও প্রশিক্ষকদের যাতায়াত ভাতা এখনও দেওয়া হয়নি। অতীতে প্রশিক্ষণ শেষেই ওই খরচ হাতে পেতেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রাপ্য অর্থ হয়তো এক পর্যায়ে পরিশোধ করা হবে; কিন্তু কাজ শুরুর আগেই দেওয়া হলে কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দেয়, তা আর পাওয়া যাবে না। হতাশ তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের দিয়ে আর যাই হোক, সর্বোত্তম ফল আশা করা যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসব অভিযোগ অবিলম্বে খতিয়ে দেখা। প্রথম পর্যায়ের কাজ যেহেতু এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা দূর করার সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হয়ে যায়নি প্রচারের সুযোগও। সংবাদমাধ্যমের সম্প্রসারণের এই যুগে খুব সহজেই ভোটারদের এ সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন করা সম্ভব। বাকি তিনটি পর্যায়ে কোন কোন এলাকায় হালনাগাদ কাজ চলবে তা পর্যাপ্ত সময় থাকতে এখনই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন? আগামী তিন পর্যায়ের কাজ শুরুর আগে প্রচার কাজেও ঘাটতি রাখা যাবে না। নাগরিক অধিকার ও সুশাসন নিয়ে কর্মরত উন্নয়ন সংস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। অস্বীকার করা যাবে না যে আট কোটির বেশি ভোটারের একটি তালিকা হালনাগাদ করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কঠিনেরে ভালোবেসেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ-ও মনে রাখা জরুরি যে, বিদ্যমান ভোটার তালিকা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। তবে এতেও বেশ কিছু ভুলত্রুটি ছিল এবং তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। মনে রাখা জরুরি, বিদায়ী নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রমে একটি গুণগত মান নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে। এ থেকে পিছিয়ে পড়ার অবকাশ নেই। তারা অবশ্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল, তা আর অক্ষুণ্ন নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে। সেটাই তাদের জন্য পরীক্ষা। ভোটার তালিকা হালনাগাদ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে কমিশন তাদের প্রথম পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উতরে যাক_ এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.