কবি by আসিফ মেহ্দী
কবিতার জোরে বেচারার নামই হয়ে গেছে ‘কবি’! বাবা-মায়ের দেওয়া নামে কেউ আর তাকে ডাকে না। ‘বেচারা’ বলার কারণ, গ্রামের মানুষ তাকে খ্যাপানোর জন্যই ‘কবি’ শব্দটা ব্যবহার করে; যেন যার কাজকর্মের যোগ্যতা নেই, সে-ই হয় কবি!
আমাদের কবি তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসের ‘নিতাই কবি’র মতো নয়। গ্রামের অ্যানালগ পরিবেশে থাকলেও শহরের ডিজিটাল হাওয়া তার চারিত্রিক সনদপত্রের বারোটা বাজিয়েছে। লাভ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কবি যেন শেয়ারবাজারের রাঘববোয়ালদের মতোই পাকা! ‘পিক আওয়ারে’ প্রেম করে একজনের সঙ্গে আর ‘অফ-পিক আওয়ারে’ গল্প জমায় আরেকজনের সঙ্গে। তবে তার ফেসবুকের প্রোফাইলে দেখা যায়, ‘ইন এ রিলেশনশিপ উইথ কবিতা’। ‘কবিতা’ তারই আরেকটি ফেক আইডি হয়তো!
ঘটনা ঘটল গত মাসের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে। অনেক হিসাব কষে কবি ঠিক করল, মীনার সঙ্গে দেখা করবে সকালে, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির উত্তর দিকের পুকুরপাড়ের ডাব গাছতলায়। আর টুনুর সঙ্গে দেখা করবে বিকেলে, কাজলা বুড়ির বাঁশবাগানের কাছে।
শীতের সকালে পিঠা আর খেজুরের রস খেয়ে, গায়ে সোয়েটারের ওপর পাঞ্জাবি চাপিয়ে, শরীরে বিলেতি খুশবু মেখে কবি রওনা দিল পুকুরপাড়ের উদ্দেশে। সেখানে সময়মতো উপস্থিত হয়ে ভালোবাসার প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো কবি। অচিরেই ভালোবাসার দ্বিতীয় পরীক্ষারও মুখোমুখি হলো সে। মীনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে নাকি জীবন পর্যন্ত কোরবান করে দিতে পারবে। মীনা তাকে জীবন উৎসর্গ করার মতো বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলল না। শুধু গাছ থেকে তার জন্য একটা ডাব পেড়ে দিতে বলল। এ যুগে চাঁদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের অভাব আছে বলে মনে হয় না; কিন্তু গাছ থেকে ডাব পাড়ার জন্য মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কবি নিজেও গাছবিদ্যায় পারদর্শী নয়। অথচ কবির নিজেরই একটা অণুপ্যারোডি আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর বৃক্ষগত ডাব, নহে বিদ্যা নহে ডাব হইলে অভাব’! প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে পালিয়েছিল কবি, কিন্তু এই পরীক্ষা থেকে পালিয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
হঠাৎ গুগল কর্তৃপক্ষের ওপর তার ভয়ানক রাগ চাপে। লোকে বলে, গুগলে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! তবে গুগল কেন এমন করছে না, সার্চ করলে আস্ত জিনিসই এসে হাজির হবে! যা হোক, ডাবের বদলে ফুল দিয়ে যদি কিছুটা মেকআপ করা যায়! কবি পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করল। তারপর চোখ বন্ধ করে, এক হাঁটু মাটিতে গেড়ে কাব্যিক ভঙ্গিতে মীনাকে গোলাপ নিবেদন করল। সে সময় হঠাৎ ‘সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন’ টাইপের এক চড় এসে পড়ল কবির গালে! চোখ খুলে খানিকক্ষণ বেচারা কিছুই দেখতে পেল না। দৃষ্টি পরিষ্কার হলে দেখল, চড় মেরেছে টুনু! কী আশ্চর্য, টুনু এ সময় এখানে এল কী করে! মেয়েটার সময়-স্থান জ্ঞান নেই দেখছি!
টুনু মীনার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপু, দুষ্ট প্রেমিকের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।’ মীনাও একমত হলো, ‘ঠিকই বলেছিস টুনু। দুর্জন বিশ্বপ্রেমিক হলেও পরিত্যাজ্য। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ১০-২০টা ভুলও ক্ষমা করে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রেমের পরীক্ষায় প্রেমিকের ভুল ক্ষমা করা অসম্ভব! চল যাই।’
দু-দুটো পোষা ময়না পাখি চোখের সামনে দিয়ে উড়ে চলে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় কবি হাসবে না কাঁদবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। প্রেমের ঘানি টানতে যে খরচাপাতি হয়েছে, সেগুলোর জন্যও মন ভারী হয়ে উঠল। কবি নিজেকে সান্ত্বনা দিল এই বলে, সে তো হূৎপিণ্ডের চার ভাগের দুই ভাগ দুজনকে দিয়েছিল। আরও দুই ভাগ তো অক্ষতই রয়েছে!
ঘটনা ঘটল গত মাসের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে। অনেক হিসাব কষে কবি ঠিক করল, মীনার সঙ্গে দেখা করবে সকালে, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির উত্তর দিকের পুকুরপাড়ের ডাব গাছতলায়। আর টুনুর সঙ্গে দেখা করবে বিকেলে, কাজলা বুড়ির বাঁশবাগানের কাছে।
শীতের সকালে পিঠা আর খেজুরের রস খেয়ে, গায়ে সোয়েটারের ওপর পাঞ্জাবি চাপিয়ে, শরীরে বিলেতি খুশবু মেখে কবি রওনা দিল পুকুরপাড়ের উদ্দেশে। সেখানে সময়মতো উপস্থিত হয়ে ভালোবাসার প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো কবি। অচিরেই ভালোবাসার দ্বিতীয় পরীক্ষারও মুখোমুখি হলো সে। মীনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে নাকি জীবন পর্যন্ত কোরবান করে দিতে পারবে। মীনা তাকে জীবন উৎসর্গ করার মতো বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলল না। শুধু গাছ থেকে তার জন্য একটা ডাব পেড়ে দিতে বলল। এ যুগে চাঁদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের অভাব আছে বলে মনে হয় না; কিন্তু গাছ থেকে ডাব পাড়ার জন্য মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কবি নিজেও গাছবিদ্যায় পারদর্শী নয়। অথচ কবির নিজেরই একটা অণুপ্যারোডি আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর বৃক্ষগত ডাব, নহে বিদ্যা নহে ডাব হইলে অভাব’! প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে পালিয়েছিল কবি, কিন্তু এই পরীক্ষা থেকে পালিয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
হঠাৎ গুগল কর্তৃপক্ষের ওপর তার ভয়ানক রাগ চাপে। লোকে বলে, গুগলে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! তবে গুগল কেন এমন করছে না, সার্চ করলে আস্ত জিনিসই এসে হাজির হবে! যা হোক, ডাবের বদলে ফুল দিয়ে যদি কিছুটা মেকআপ করা যায়! কবি পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করল। তারপর চোখ বন্ধ করে, এক হাঁটু মাটিতে গেড়ে কাব্যিক ভঙ্গিতে মীনাকে গোলাপ নিবেদন করল। সে সময় হঠাৎ ‘সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন’ টাইপের এক চড় এসে পড়ল কবির গালে! চোখ খুলে খানিকক্ষণ বেচারা কিছুই দেখতে পেল না। দৃষ্টি পরিষ্কার হলে দেখল, চড় মেরেছে টুনু! কী আশ্চর্য, টুনু এ সময় এখানে এল কী করে! মেয়েটার সময়-স্থান জ্ঞান নেই দেখছি!
টুনু মীনার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপু, দুষ্ট প্রেমিকের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।’ মীনাও একমত হলো, ‘ঠিকই বলেছিস টুনু। দুর্জন বিশ্বপ্রেমিক হলেও পরিত্যাজ্য। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ১০-২০টা ভুলও ক্ষমা করে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রেমের পরীক্ষায় প্রেমিকের ভুল ক্ষমা করা অসম্ভব! চল যাই।’
দু-দুটো পোষা ময়না পাখি চোখের সামনে দিয়ে উড়ে চলে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় কবি হাসবে না কাঁদবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। প্রেমের ঘানি টানতে যে খরচাপাতি হয়েছে, সেগুলোর জন্যও মন ভারী হয়ে উঠল। কবি নিজেকে সান্ত্বনা দিল এই বলে, সে তো হূৎপিণ্ডের চার ভাগের দুই ভাগ দুজনকে দিয়েছিল। আরও দুই ভাগ তো অক্ষতই রয়েছে!
No comments