সুন্দরবনে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা- সরকার ও জাতিসংঘের সমীক্ষা প্রতিবেদন by ইফতেখার মাহমুদ
বিশ্ব
ঐতিহ্য সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজডুবিতে সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস তেল
বনে ছড়িয়ে পড়াকে ‘গুরুতর’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সমীক্ষা দল। তারা বলেছে, প্রাথমিক
পর্যবেক্ষণে তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব সীমিত হলেও বনের প্রাণিকুল ও
প্রতিবেশব্যবস্থার ওপরে তা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। গত
বৃহস্পতিবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়।
‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব’ শীর্ষক এ সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, সুন্দরবনের মতো এত সমৃদ্ধ একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকার ভেতরে
দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৯ ডিসেম্বর তেল
ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার তাৎক্ষণিকভাবে শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ
করায় বনের ক্ষতি অনেক কমেছে। তবে বনের মধ্যে তেল ছড়িয়ে পড়ায় তা
বনজীবীদের জীবন ও জীবিকার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তেলের কারণে
সুন্দরবনের পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতি বুঝতে এবং তা মোকাবিলায় দীর্ঘ মেয়াদে
পর্যবেক্ষণব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদনটির সুপারিশ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। সরকার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে নৌ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। ঘষিয়াখালী খাল জুনে চালু হলে শ্যালা নদী দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শ্যালা নদীতে এমটি টোটাল নামের একটি জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী জাহাজ ওটি সাউদার্ন-৭ সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নিয়ে ডুবে যায়। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় ও তথ্য সংগ্রহে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে সমীক্ষা চালায়। এটি তত্ত্বাবধান করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) সদস্য, তেল নিঃসরণে বিশেষজ্ঞসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সদস্যরা। এ ছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ঢাকা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকও এ দলে ছিলেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল। এতে বলা হয়েছিল, মূল প্রতিবেদন জমার আগ পর্যন্ত সুন্দরবনের ভেতরে দিয়ে নৌ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কিন্তু ৬ জানুয়ারি সরকার শ্যালা দিয়ে আবারও নৌ চলাচলের অনুমতি দেয়।
এর আগে ৫ জানুয়ারি থেকে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান একাধিক সমাবেশে সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে মন্তব্য করেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বাগেরহাটের মংলা-রামপাল আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেক শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান।
তেলবাহী জাহাজ সাউদার্ন স্টার-৭-কে ধাক্কা দেওয়ায় অভিযুক্ত এমটি টোটালের মালিক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং নরসিংদী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ। বন বিভাগ থেকে করা মামলায় এমটি টোটালের ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টোটাল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ট্রিমসের কার্যালয় রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত লেনে। এ ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন করে তুলবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার। তবে সরকার ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে নদী ও তীরে সমীক্ষা চালায়।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ছড়িয়ে পড়া সাড়ে তিন লাখ লিটার তেলের মাত্র ১৯ শতাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি তেল সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থায় রয়ে গেছে। তেলের কারণে বনে মাছের পরিমাণ কমেছে এবং মাছ ধরার সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি ছাড়া তেল উত্তোলন করায় তাদের বেশির ভাগই চুলকানি, বমি, মাথাব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
পরিবেশবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এভাবে নৌ চলাচলের অনুমতি দেওয়া এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বনটিকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি মুখে ফেলবে।
বড় একটি দুর্ঘটনার পর যদি আবারও আগের মতো জাহাজ চলাচল করে এবং দায়ী ব্যক্তিরা শাস্তির আওতায় না আসেন তাহলে পরে অন্যরাও আইন না মেনে নৌযান চলাচলের সাহস পাবেন।
এ বিষয়ে দুবাই সিটি করপোরেশনের বন্য প্রাণীবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বন্য প্রাণীবিশেষজ্ঞ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, সুন্দরবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠিক হবে না। কেননা, আমরা হাজার চেষ্টা করেও এমন আরেকটি বন সৃষ্টি করতে পারব না। তাই সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ও হিসাব-নিকাশ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থেই সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে কঠোর হতে হবে।’
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদনটির সুপারিশ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। সরকার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে নৌ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। ঘষিয়াখালী খাল জুনে চালু হলে শ্যালা নদী দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শ্যালা নদীতে এমটি টোটাল নামের একটি জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী জাহাজ ওটি সাউদার্ন-৭ সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নিয়ে ডুবে যায়। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় ও তথ্য সংগ্রহে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে সমীক্ষা চালায়। এটি তত্ত্বাবধান করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) সদস্য, তেল নিঃসরণে বিশেষজ্ঞসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সদস্যরা। এ ছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ঢাকা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকও এ দলে ছিলেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল। এতে বলা হয়েছিল, মূল প্রতিবেদন জমার আগ পর্যন্ত সুন্দরবনের ভেতরে দিয়ে নৌ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কিন্তু ৬ জানুয়ারি সরকার শ্যালা দিয়ে আবারও নৌ চলাচলের অনুমতি দেয়।
এর আগে ৫ জানুয়ারি থেকে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান একাধিক সমাবেশে সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে মন্তব্য করেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বাগেরহাটের মংলা-রামপাল আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেক শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান।
তেলবাহী জাহাজ সাউদার্ন স্টার-৭-কে ধাক্কা দেওয়ায় অভিযুক্ত এমটি টোটালের মালিক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং নরসিংদী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ। বন বিভাগ থেকে করা মামলায় এমটি টোটালের ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টোটাল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ট্রিমসের কার্যালয় রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত লেনে। এ ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন করে তুলবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার। তবে সরকার ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে নদী ও তীরে সমীক্ষা চালায়।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ছড়িয়ে পড়া সাড়ে তিন লাখ লিটার তেলের মাত্র ১৯ শতাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি তেল সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থায় রয়ে গেছে। তেলের কারণে বনে মাছের পরিমাণ কমেছে এবং মাছ ধরার সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি ছাড়া তেল উত্তোলন করায় তাদের বেশির ভাগই চুলকানি, বমি, মাথাব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
পরিবেশবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এভাবে নৌ চলাচলের অনুমতি দেওয়া এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বনটিকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি মুখে ফেলবে।
বড় একটি দুর্ঘটনার পর যদি আবারও আগের মতো জাহাজ চলাচল করে এবং দায়ী ব্যক্তিরা শাস্তির আওতায় না আসেন তাহলে পরে অন্যরাও আইন না মেনে নৌযান চলাচলের সাহস পাবেন।
এ বিষয়ে দুবাই সিটি করপোরেশনের বন্য প্রাণীবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বন্য প্রাণীবিশেষজ্ঞ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, সুন্দরবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠিক হবে না। কেননা, আমরা হাজার চেষ্টা করেও এমন আরেকটি বন সৃষ্টি করতে পারব না। তাই সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ও হিসাব-নিকাশ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থেই সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে কঠোর হতে হবে।’
No comments