সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
১৫০
উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৮১৮ সালে সিরামপুরে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে খ্রিস্টান-অখ্রিস্টান সব শিক্ষার্থীকেই শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হতো। এই মিশন পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিক ১৮২৭ সালে একটি চার্টার অনুমোদন করেন।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ছাড়াও সিরামপুর মিশন বাংলা ভাষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে ছিল অভিধান প্রণয়ন ও ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা। এছাড়াও উইলিয়াম কেরি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এ ব্যাপারে মিশনারিদের সাহায্য করেছিলেন রামরাম বসু। তিনি নিজে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ না করলেও মিশনারিদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাইবেল অনুবাদে তার প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল। রামরাম বসু খ্রিস্টধর্ম-সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এই মিশন থেকে দিগদর্শন ও সমাচার দর্পণ নামে দুটি সাময়িকীও প্রকাশ করা হয়। এভাবেই এ দেশে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু। দ্য ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া নামে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশিত হয় সিরামপুর মিশন থেকে। এটিই ছিল দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার আদিরূপ। উদ্ভিদচর্চা ও কৃষি উন্নয়নেও উইলিয়াম কেরি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি উদ্ভিদ উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য সিরামপুরে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উদ্ভিদ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি নানা দেশ থেকে উদ্ভিদ বীজ এনে এখানে বপন করেন। কেরির এই প্রচেষ্টার ফল ছিল উত্তরকালে প্রতিষ্ঠিত এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। হিন্দু ধর্মের ভেতর কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ ছিল। যেমন সতীদাহ প্রথা বা কালাপানি (সমুদ্র) পাড়ি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। এসবের বিরুদ্ধে কেরি জনমত তৈরি করতে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
বাংলার এই ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির অনুকরণে পরে আরও কয়েকটি প্রটেস্ট্যান্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লন্ডন মিশনারি সোসাইটি, চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং চার্চ অব স্কটল্যান্ড। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং অ্যাংলিকান সোসাইটি খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও সমাজকর্মে প্রাথমিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন মেরি আন কুক। ১৮৩০ সালে চার্চ অব স্কটল্যান্ডের মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় আসেন। তিনি খ্রিস্টান শিক্ষার একটি মানসম্মত ধারা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা উত্তরকালে খ্যাতিমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে সুপরিচিত হয়। আলেকজান্ডার ডাফ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। মনে করা হয়, তার প্রভাবেই ১৮৩৫ সালে সরকার সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি প্রবর্তন করেছিল।
মিশনারিরা ভাষা ও শিক্ষার উন্নয়নে যে অবদান রেখেছিলেন, তা আধুনিক বাংলা ভাষা বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদিও মিশনারিরা সাধারণ মানুষের মধ্যে খ্রিস্টের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলা ভাষার উন্নয়ন করেছিলেন, তবুও তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। তবে এ পর্যায়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে খুব বেশি সাফল্য পাননি মিশনারিরা। বাংলার গোঁড়া ধর্মচিন্তা, সামাজিক বিধিনিষেধ এবং জমিদারদের প্রতিরোধের মুখে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অনেকটা কঠিন ছিল। উইলিয়াম ডাফ বাংলার শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা নিয়েছিলেন। তাদের সামনে পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা ছড়িয়ে দেন। তার চেষ্টায় কয়েকজন অভিজাত হিন্দু খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কৃষ্ণ মোহন ব্যানার্জি। তবে মিশনারিরা ১৮৩০ সালের দিকে কৃষ্ণনগরে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এই দরিদ্র শ্রেণীর অনেকেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।
উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৮১৮ সালে সিরামপুরে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে খ্রিস্টান-অখ্রিস্টান সব শিক্ষার্থীকেই শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হতো। এই মিশন পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিক ১৮২৭ সালে একটি চার্টার অনুমোদন করেন।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ছাড়াও সিরামপুর মিশন বাংলা ভাষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে ছিল অভিধান প্রণয়ন ও ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা। এছাড়াও উইলিয়াম কেরি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এ ব্যাপারে মিশনারিদের সাহায্য করেছিলেন রামরাম বসু। তিনি নিজে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ না করলেও মিশনারিদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাইবেল অনুবাদে তার প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল। রামরাম বসু খ্রিস্টধর্ম-সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এই মিশন থেকে দিগদর্শন ও সমাচার দর্পণ নামে দুটি সাময়িকীও প্রকাশ করা হয়। এভাবেই এ দেশে বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু। দ্য ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া নামে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশিত হয় সিরামপুর মিশন থেকে। এটিই ছিল দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার আদিরূপ। উদ্ভিদচর্চা ও কৃষি উন্নয়নেও উইলিয়াম কেরি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি উদ্ভিদ উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য সিরামপুরে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন বা উদ্ভিদ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি নানা দেশ থেকে উদ্ভিদ বীজ এনে এখানে বপন করেন। কেরির এই প্রচেষ্টার ফল ছিল উত্তরকালে প্রতিষ্ঠিত এগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। হিন্দু ধর্মের ভেতর কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ ছিল। যেমন সতীদাহ প্রথা বা কালাপানি (সমুদ্র) পাড়ি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। এসবের বিরুদ্ধে কেরি জনমত তৈরি করতে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
বাংলার এই ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির অনুকরণে পরে আরও কয়েকটি প্রটেস্ট্যান্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লন্ডন মিশনারি সোসাইটি, চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং চার্চ অব স্কটল্যান্ড। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে চার্চ মিশনারি সোসাইটি এবং অ্যাংলিকান সোসাইটি খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও সমাজকর্মে প্রাথমিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন মেরি আন কুক। ১৮৩০ সালে চার্চ অব স্কটল্যান্ডের মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় আসেন। তিনি খ্রিস্টান শিক্ষার একটি মানসম্মত ধারা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা উত্তরকালে খ্যাতিমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে সুপরিচিত হয়। আলেকজান্ডার ডাফ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। মনে করা হয়, তার প্রভাবেই ১৮৩৫ সালে সরকার সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি প্রবর্তন করেছিল।
মিশনারিরা ভাষা ও শিক্ষার উন্নয়নে যে অবদান রেখেছিলেন, তা আধুনিক বাংলা ভাষা বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদিও মিশনারিরা সাধারণ মানুষের মধ্যে খ্রিস্টের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলা ভাষার উন্নয়ন করেছিলেন, তবুও তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। তবে এ পর্যায়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে খুব বেশি সাফল্য পাননি মিশনারিরা। বাংলার গোঁড়া ধর্মচিন্তা, সামাজিক বিধিনিষেধ এবং জমিদারদের প্রতিরোধের মুখে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অনেকটা কঠিন ছিল। উইলিয়াম ডাফ বাংলার শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা নিয়েছিলেন। তাদের সামনে পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা ছড়িয়ে দেন। তার চেষ্টায় কয়েকজন অভিজাত হিন্দু খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কৃষ্ণ মোহন ব্যানার্জি। তবে মিশনারিরা ১৮৩০ সালের দিকে কৃষ্ণনগরে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এই দরিদ্র শ্রেণীর অনেকেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।
No comments