সীমান্তে মন গললেও তিস্তায় এখনো গলেনি মমতার by শওকত ওসমান রচি
পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত
চুক্তি অনুমোদনের বিষয়ে তার আপত্তি তুলে নিয়েছেন। ওই চুক্তি অনুমোদনের জন্য
ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন বিল আলোচনার অপোয় রয়েছে বলে
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সায় মিললেও এখনো
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মন গলেনি। সরকারের আমন্ত্রণে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী এ নেত্রীর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা। ২১
ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তিনিই
প্রধান অতিথি থাকছেন বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তারা জানান,
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ সফরকে কেন্দ্র করে সরকারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। নানা
প্রস্তুতি সরকারের তরফ থেকে নেয়া হচ্ছে। মমতার ইলিশ দাবি মেটাতে পারে
সরকার। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অন্য দিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও মমতার এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে
বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শিগগির ‘ভালো খবর’ নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার
আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ওই দিকে বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীলতার মধ্যে
মুখ্যমন্ত্রী মমতার সফর নিয়ে সংশয় এরই মধ্যে কেটে গেছে বলে কর্মকর্তারা
জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সফরের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সবুজ
সঙ্কেত রয়েছে বলে তারা জানান। এর আগে ১৯৯৮ সালে মমতা একবার বাংলাদেশে
এসেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি একটি যুব
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা এসেছিলেন। এবার তিনি ঢাকা আসছেন বাংলাদেশ
সরকারের আমন্ত্রণে।
এর আগে দুই দেশের মধ্যকার তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা, এমনটিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় মমতার আপত্তির কারণেই মনমোহনের ওই সফরে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি স্বারের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ কারণে এবারের ঢাকা সফর মমতার জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কর্মকর্তারা জানান, নরেন্দ্র মোদি গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন যে, তিনি শিগগিরই ভালো খবর নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তারা জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি স্বার- এ দু’টির কোনো একটি বাস্তবায়ন করেই মোদি বাংলাদেশ সফর করতে চান।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সফরের আগেই পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশী প্রায় ৬০ মৎস্যজীবীদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্দী মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রী এরই মধ্যে নিজেই ভারতীয় সাংবাদিকদের জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাইছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা যেন মুক্তি পান। এ জন্য পদ্ধতিগত যা যা করতে হবে, তা দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। যাতে তার ঢাকা সফরের আগেই বাংলাদেশী মৎস্যজীবীরা দেশে ফিরতে পারেনÑ এ ধারণা দেন তিনি।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সাথে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে তিনি শেষমুহূর্তে বাংলাদেশে না আসার সিদ্ধান্ত নেন। মমতার বক্তব্য, সেই সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র তাকে ভুল বুঝিয়েছিল। তাকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্র ওই চুক্তি করতে যাচ্ছিল বলে মমতার অভিযোগ। এরপর কেন্দ্রে পালাবদল ঘটেছে। অন্য দিকে দুই দেশের সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধন বিলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিলকে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা সমর্থন করেছেন। মমতা নিজেও সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে গিয়ে ছিটমহলবাসীর এ বিল সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন। চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে সে দেশে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এ অধিবেশনেই সীমান্ত বিল পাস করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত এর মধ্যকার সীমান্তকে ঘিরে দীর্ঘ দিন ধরে নানা সমস্যা। সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মন্ত্রী-সচিব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যেও বৈঠক হয়। কোনো বৈঠক থেকে ফলপ্রসূ কোনো সমাধান আসছে না বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে বিভিন্ন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব বিশেষ করে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আকুতি থাকলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। এ চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার ওপরই দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তের অনেক সমস্যা সমাধান নির্ভর করছে বলে তারা জানিয়েছেন।
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয় নেহেরু-নুন চুক্তি। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যকার সব ছিটমহল বিনিময় করার কথা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের তিন হাজার ২৪ একর জমি থাকলেও ভারত তিন হাজার ৫০৬ একর জমি অপদখল করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত ৪৮২ একর জমি বেশি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের তারকাটার বেড়ার মধ্যেও বাংলাদেশের প্রচুর জমি চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অপদখল প্রসঙ্গে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জুন থেকে সিলেট সীমান্তের জৈন্তাপুর উপজেলায় অপদখলীয় জমি নিয়ে দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিসহ অনভিপ্রেত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। বর্তমানেও বিজিবি-বিএসএফ নিজ নিজ দাবির পক্ষে অনড় থাকায় বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট এলাকায় ভারত অপদখলীয় জমির পরিমাণের অনেক বেশি পরিমাণ জমি দাবি করে আসছে।
এ ছাড়া সীমান্তে ছিটমহল নিয়ে সঙ্কট দীর্ঘ দিনের। ৬০ বছর ধরে ছিটমহল সমস্যা ঝুলে আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে ছিটমহল সমস্যাটি প্রকট এবং চিহ্নিত সমস্যাগুলোর অন্যতম। ছিটমহলের মালিক বংলাদেশ না ভারত তা হিসাব কষতেই বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এসব ছিটমহলকে ঘিরে। ছিটমহলবাসী নিজ ভূমিতে থেকেও পরবাসী। ছিটমহলবাসীর কোনো ভোটাধিকার নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হয় নিজেদের উদ্যোগেই। ঠিকমতো চিকিৎসা-শিক্ষা কিছুই মিলছে না তাদের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বিচার, পানীয়জল এবং আধুনিক সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত। দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্নপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার এ বিষয়ে সমাধানের জন্য বলা হলেও ভারতীয় পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
ওই দিকে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার মধ্যেই দিল্লিতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। হত্যা বন্ধে বারবার ভারতের প থেকে আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। গত ১৫ দিনে শুধু দিনাজপুর ও মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর গুলিতে তিন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় সর্বশেষ দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায়। সে সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন অনিল গোস্বামী। সম্প্রতি তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার জায়গায় নিয়োগ পেয়েছেন এল সি গয়াল। এবারের বৈঠক চলবে বুধবার পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোজাম্মেল হক খান। বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়াল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকেও সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পাবে। হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে দিল্লিকে চাপ দেয়া হবে ঢাকার প থেকে। এ ছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসতে পারেন সে বিষয়েও এ বৈঠকে আভাস পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
ভারতের প থেকে বারবার সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। এবারের আলোচনায়ও এ বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এবারের বৈঠকে ১৮টি বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হবে। এ ছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তিও গুরুত্ব পাবে বৈঠকে। উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াসহ বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী ভারতীয়দের ফিরিয়ে দেয়া এবং নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ভারতের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। ভারতীয় ভিসাপ্রাপ্তির েেত্র বিড়ম্বনা কমাতে উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হবে। বৈঠকে ভারতের কাছে থাকা বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের একটি তালিকাও দেয়া হবে। ভারতের প থেকে সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
এর আগে দুই দেশের মধ্যকার তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা, এমনটিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় মমতার আপত্তির কারণেই মনমোহনের ওই সফরে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি স্বারের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ কারণে এবারের ঢাকা সফর মমতার জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কর্মকর্তারা জানান, নরেন্দ্র মোদি গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন যে, তিনি শিগগিরই ভালো খবর নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তারা জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি স্বার- এ দু’টির কোনো একটি বাস্তবায়ন করেই মোদি বাংলাদেশ সফর করতে চান।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সফরের আগেই পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশী প্রায় ৬০ মৎস্যজীবীদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্দী মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রী এরই মধ্যে নিজেই ভারতীয় সাংবাদিকদের জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাইছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা যেন মুক্তি পান। এ জন্য পদ্ধতিগত যা যা করতে হবে, তা দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। যাতে তার ঢাকা সফরের আগেই বাংলাদেশী মৎস্যজীবীরা দেশে ফিরতে পারেনÑ এ ধারণা দেন তিনি।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সাথে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে তিনি শেষমুহূর্তে বাংলাদেশে না আসার সিদ্ধান্ত নেন। মমতার বক্তব্য, সেই সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র তাকে ভুল বুঝিয়েছিল। তাকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্র ওই চুক্তি করতে যাচ্ছিল বলে মমতার অভিযোগ। এরপর কেন্দ্রে পালাবদল ঘটেছে। অন্য দিকে দুই দেশের সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধন বিলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিলকে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা সমর্থন করেছেন। মমতা নিজেও সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে গিয়ে ছিটমহলবাসীর এ বিল সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন। চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে সে দেশে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এ অধিবেশনেই সীমান্ত বিল পাস করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত এর মধ্যকার সীমান্তকে ঘিরে দীর্ঘ দিন ধরে নানা সমস্যা। সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মন্ত্রী-সচিব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যেও বৈঠক হয়। কোনো বৈঠক থেকে ফলপ্রসূ কোনো সমাধান আসছে না বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে বিভিন্ন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব বিশেষ করে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আকুতি থাকলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। এ চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার ওপরই দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তের অনেক সমস্যা সমাধান নির্ভর করছে বলে তারা জানিয়েছেন।
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয় নেহেরু-নুন চুক্তি। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যকার সব ছিটমহল বিনিময় করার কথা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের তিন হাজার ২৪ একর জমি থাকলেও ভারত তিন হাজার ৫০৬ একর জমি অপদখল করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত ৪৮২ একর জমি বেশি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের তারকাটার বেড়ার মধ্যেও বাংলাদেশের প্রচুর জমি চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অপদখল প্রসঙ্গে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জুন থেকে সিলেট সীমান্তের জৈন্তাপুর উপজেলায় অপদখলীয় জমি নিয়ে দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিসহ অনভিপ্রেত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। বর্তমানেও বিজিবি-বিএসএফ নিজ নিজ দাবির পক্ষে অনড় থাকায় বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট এলাকায় ভারত অপদখলীয় জমির পরিমাণের অনেক বেশি পরিমাণ জমি দাবি করে আসছে।
এ ছাড়া সীমান্তে ছিটমহল নিয়ে সঙ্কট দীর্ঘ দিনের। ৬০ বছর ধরে ছিটমহল সমস্যা ঝুলে আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে ছিটমহল সমস্যাটি প্রকট এবং চিহ্নিত সমস্যাগুলোর অন্যতম। ছিটমহলের মালিক বংলাদেশ না ভারত তা হিসাব কষতেই বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এসব ছিটমহলকে ঘিরে। ছিটমহলবাসী নিজ ভূমিতে থেকেও পরবাসী। ছিটমহলবাসীর কোনো ভোটাধিকার নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হয় নিজেদের উদ্যোগেই। ঠিকমতো চিকিৎসা-শিক্ষা কিছুই মিলছে না তাদের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বিচার, পানীয়জল এবং আধুনিক সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত। দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্নপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার এ বিষয়ে সমাধানের জন্য বলা হলেও ভারতীয় পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
ওই দিকে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার মধ্যেই দিল্লিতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। হত্যা বন্ধে বারবার ভারতের প থেকে আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। গত ১৫ দিনে শুধু দিনাজপুর ও মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর গুলিতে তিন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় সর্বশেষ দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায়। সে সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন অনিল গোস্বামী। সম্প্রতি তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার জায়গায় নিয়োগ পেয়েছেন এল সি গয়াল। এবারের বৈঠক চলবে বুধবার পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোজাম্মেল হক খান। বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়াল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকেও সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পাবে। হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে দিল্লিকে চাপ দেয়া হবে ঢাকার প থেকে। এ ছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসতে পারেন সে বিষয়েও এ বৈঠকে আভাস পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
ভারতের প থেকে বারবার সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। এবারের আলোচনায়ও এ বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এবারের বৈঠকে ১৮টি বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হবে। এ ছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তিও গুরুত্ব পাবে বৈঠকে। উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াসহ বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী ভারতীয়দের ফিরিয়ে দেয়া এবং নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ভারতের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। ভারতীয় ভিসাপ্রাপ্তির েেত্র বিড়ম্বনা কমাতে উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হবে। বৈঠকে ভারতের কাছে থাকা বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের একটি তালিকাও দেয়া হবে। ভারতের প থেকে সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
No comments