ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ- অর্থনীতি বাঁচাতেই হবে
ব্যবসায়ীদের
কাজ ব্যবসা করা, মাঠে থাকা নয়। নীতিগত বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
তাদের জন্য অপরিহার্য। এজন্য ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে তাদের
আলোচনা-দেনদরবারের প্রয়োজন পড়ে। সরকারের বাইরে যেসব দল থাকে তাদের সঙ্গেও
আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন কথা বলতে
হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ইস্যুতে, এমনকি তারা রাজপথেও নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
তাদের ঘোষণা_ অর্থনীতি বাঁচাতে হলে দ্রুত হরতাল ও সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
তারা এটাও বলছেন, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে কোটি কোটি শ্রমিক অনাহারে
থাকতে বাধ্য হবে। এ শঙ্কা প্রকাশ উপলক্ষেই শনিবার পোশাক খাতের উৎপাদক ও
রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বস্ত্র ও পোশাক খাতের প্রায় ৪০টি সংগঠনের
নেতাদের প্রতিবাদী অনশন দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ
সদর দপ্তরের সামনে তারা প্রতীক অনশনে বসেছিলেন একটিই দাবি নিয়ে_ চলমান
সহিংসতা থেকে বস্ত্র ও পোশাক খাতকে বাঁচাতে হবে। তাদের হুঁশিয়ারি_ দ্রুত
সমস্যার সমাধান না হলে মালিক ও শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
এ সময়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম রাজনীতিবিদদের
উদ্দেশে বলেছেন, 'দ্রুত সিদ্ধান্তে আসুন। সহিংসতা বন্ধ করুন। আমাদের ব্যবসা
করতে দিন।' তাদের এ আকুলতায় সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করবেন কি? অনশনস্থলে
বক্তব্য রাখতে গিয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের কষ্টের কথা বলেছেন।
শ্রমিকদের কারখানায় আসা-যাওয়ার পথে উদ্বেগের কথা বলেছেন। চলমান সহিংসতায়
দেশের ভাবমূর্তি যেভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সেটা তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, যে
দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারে সে দেশে বিদেশি
ক্রেতারা আসতে চাইছেন না। ক্রেতারা তাদের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিয়ে
উদ্বিগ্ন। সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে_ কারখানায় যাবেন না। কোনো আলোচনার
প্রয়োজন পড়লে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বলছেন_ বিদেশে এসে কথা বলুন। এভাবে
চলতে থাকলে অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের বোঝা বাড়বে। নতুন একদল ঋণখেলাপি হবেন। কেউ
কেউ নিঃস্ব হয়ে যাবেন। আমাদের প্রশ্ন_ এ কেমন আন্দোলন, যা অর্থনীতিকে পঙ্গু
করে দেয়? শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাতে মারার ব্যবস্থা করে? গতকাল রোববার
সমকালে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, যাতে বলা হয়_ এখন সন্ধ্যা নামতে না
নামতেই অভিজাত এলাকার মার্কেটগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। সবারই শঙ্কা
নিরাপত্তা নিয়ে। কখন অলক্ষ্যে পেট্রোল বোমা বা ককটেল গায়ে এসে পড়ে, সেটাই
ভয়। এ কেমন রাজনীতি যে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কা
সৃষ্টি করে? এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
নেতৃবৃন্দের এবং একই সঙ্গে সরকারের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম
মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সরকার এবং আন্দোলনকারী দলের
সঙ্গে আলোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে,
এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সরকার এবং আন্দোলনকারী শক্তি_ সবাইকে তাদের কথা
শুনতে হবে। মনে রাখা চাই_ সবার ওপরে দেশ। অর্থনীতিতে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে ভালো করছিল_ এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কেন তার ভিত্তিমূলে আঘাত
হানা হচ্ছে? এতে কোনো দল লাভবান হবে না। জনগণেরও কোনো লাভ নেই। আমরা আশা
করব_ শুভবুদ্ধির জয় হবে। রাজনীতির মতপার্থক্য রাজনৈতিক উপায়ে নিষ্পত্তি করা
হবে। হিংসা-হানাহানির পথ অবশ্যই পরিত্যাগ করা হবে।
No comments