এমপিদের নেতিবাচক কাজ-সমালোচনা আমলে নিন

জাতীয় সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অনুসন্ধান চালিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তার চিত্র হতাশাব্যঞ্জকই বলতে হবে। সাড়ে তিনশ' সদস্যের মধ্যে ১৪৯ জনের বিষয়ে শিক্ষক,


গণমাধ্যম কর্মী, আইনজীবী এবং অন্যান্য পেশার ৬০০ জনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ৬০০ জন না হয়ে ৬ হাজার বা ৬০ হাজার জনের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হলো না, কেন সাড়ে তিনশ' সদস্যকেই অনুসন্ধানের আওতায় আনা হলো না_ এ ধরনের অভিমত দেওয়াই যায়। কেউবা বলতে পারেন যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতা উল্টালে দেশে কোনো না কোনো স্থানে জাতীয় সংসদ সদস্য এবং তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের সম্পর্কে যেসব অভিযোগ প্রকাশিত হয়, তাতেও দেখা যায় একই চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ১৪৯ সদস্যের ৯৭ শতাংশই নেতিবাচক কাজে জড়িত এবং তারা আইন প্রণেতা ও জনপ্রতিনিধির পদকে অর্থ আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। সাংসদরা যেসব নেতিবাচক কাজ করেন তার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন বরাদ্দের অপব্যবহার, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, সরকারি কেনাকাটায় হস্তক্ষেপ, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়া ইত্যাদি। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য কাজে জড়িত হওয়ার গুরুতর অভিযোগও কারও কারও সম্পর্কে রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদের বাকি সদস্যদের সম্পর্কে টিআইবি খোঁজখবর করলেও ভিন্ন চিত্র উঠে আসত বলে মনে হয় না। এর আগে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তাদের অধিকাংশের আমলনামাও বোধকরি একই হতো। টিআইবির প্রতিবেদনকে তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা মতলববাজি বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ পথে চললে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয় তখনও কিন্তু একই ধরনের অভিযোগ উঠে থাকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও দলের মন্ত্রী-এমপিরা দলের ভেতর থেকেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, সময়মতো এসব সমালোচনা আমলে নিলে আখেরে দলেরই লাভ হয়। টিআইবি যাদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের কারও সঙ্গেই অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করেনি। এটাকে প্রতিবেদনের অপূর্ণতা বলা যেতে পারে। তবে সেটাকেই বড় করে দেখা ঠিক হবে না। নেতিবাচক কাজে যুক্ত থেকেও কেউ কেউ অনেক ভালো কাজও করছেন, প্রতিবেদনে তারও উল্লেখ রয়েছে। আমরা আশা করব যে, সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলের প্রত্যেক সদস্যই প্রতিবেদনের অভিযোগগুলো অনুধাবনে সচেষ্ট হবেন এবং কীভাবে তা থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তার পন্থা বের করবেন। ভালো কাজ কীভাবে বাড়ানো যায় সে চেষ্টাও নিশ্চয়ই থাকবে। সংসদে একটানা সাত দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকা নিষিদ্ধ করা, বিতর্কিত সংসদ সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কার, আর্থিক অনিয়মের তথ্য প্রকাশ, স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যদের সংশ্লিষ্ট না করা এবং সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি সংক্রান্ত বিলকে আইনে পরিণত করাসহ যেসব সুপারিশ টিআইবি করেছে, সে বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, দলীয় শীর্ষ পর্যায়েও আলোচনা হতে হবে এবং সেখান থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা এলে তা গণতন্ত্রের জন্যও সুফল বয়ে আনবে।
 

No comments

Powered by Blogger.