স্পীকারের রুলিং নিয়ে আদালতের রায়ে উত্তপ্ত হবে সংসদ- আজ ১৪তম অধিবেশন শুরু ॥ বিএনপি যাচ্ছে না

জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। তবে সংসদ বর্জনের ধারাবাহিকতায় এই অধিবেশনেও যোগ দিচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের বিল আনা না হলে এ অধিবেশনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যোগ দেবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।


আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে। তবে বিরোধী দল না থাকলেও গত অধিবেশনে স্পীকারের দেয়া রুলিংয়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালত রায় দেয়ায় এ ইস্যুতে অধিবেশনের প্রথম দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবারের এ সংক্ষিপ্ত অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এর আগে গত ৮ জুলাই সংসদের ১৩তম (বাজেট) অধিবেশন শেষ হয়। সংবিধান অনুযায়ী একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। মঙ্গলবার অধিবেশন শুরুর আগে বিকেল ৪টায় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসবে। ওই বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ও কার্যসূচী চূড়ান্ত হবে।
অধিবেশনের প্রথম দিনেই স্পীকারের রুলিং নিয়ে আদালতের দেয়া রায় নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হবে বলে সরকারী দলের একাধিক সংসদ সদস্য আভাস দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, স্পীকারের রুলিং আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে না। রুলিংয়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে সংসদের সার্বভৌমত্ব খর্ব করা হয়েছে। একই রকম মন্তব্য করেছেন স্পীকার নিজেও। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ শুধু স্বাধীন নয়, সার্বভৌম। তাই সার্বভৌম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের রুলিং চ্যালেঞ্জ করে আদালত রায় দিলেও ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলে যাবে না সংসদ। কারণ আপীলে গেলে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হবে। তিনি বলেন, এই দেশ পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ। এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র বিরাজমান এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে পরিচালিত হয় সংসদ। তিনি আরও বলেন, জনগণের রায়ে সংসদ সদস্য মনোনীত হন। এরপর সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন স্পীকার। আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এই সংসদ থেকে। সংসদের মনোনীত রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দেন বিচারপতিদের। তাই রুলিংকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দেয়া রায়ের বিষয়ে সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে এ বিষয়ে সংবিধানের ৭৮ (১) অনুচ্ছেদে সংসদের কার্যধারা সংক্রান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে গত শনিবার কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধি অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু একটি নোটিস জমা দিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ে। তবে স্পীকারই ঠিক করবেন ওই নোটিসের ওপর সাধারণ আলোচনা হবে কি না।
এছাড়াও এবারের অধিবেশনে বহুল আলোচিত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১১ নিয়েও সংসদে আলোচনা হতে পারে। কারণ এই বিলটি নিয়ে সরকারী দলের মধ্যেই ভিন্নমত রয়েছে। অধিবেশনে মোট ১৯টি বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিল-২০১২সহ ১৬টি বিল বিগত অধিবেশনগুলোতে উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠনো হয়।

বিএনপি যাচ্ছে না
জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের নিশ্চয়তা পেলে সংসদে যোগ দেবে দলটি।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনাসভায় বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, সংসদকে সরকার অকার্যকর করে রেখেছে। বিরোধী দলের নোটিস গ্রহণ করা হয় না। তাই আমরা কাল ( মঙ্গলবার) সংসদ অধিবেশনে যোগ দেব না। সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে দলীয় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে নির্দলীয় সরকারের বিল উত্থাপন করা হবে, এমন নিশ্চয়তা পেলে আমরা সংসদে ফিরে যাব। সংসদ কার্যকর করতে বিরোধী দলের প্রতি নাগরিক সমাজের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ ঘরানার সুশীল ব্যক্তিরা বলতে শুরু করেছেন, বিরোধী দলের সংসদে যাওয়া উচিত। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যে সংসদে বিরোধী দলের একটি নোটিসও গ্রহণ করা হয় না, সেই সংসদে আমরা গিয়ে কি করব?
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চতুর্থ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বিএনপি- জামায়াতপন্থী সংগঠন স্বাধীনতা ফোরাম এ আলোচনাসভার আয়োজন করে। পরে তারেকের আরোগ্য কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাসভায় বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের দুর্নীতি সম্পর্কে কথা বলেছিলাম বলে আমার বিরুদ্ধে সারাদেশে ৪২টি মামলা করা হয়েছিল। সরকার তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ বললেও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন প্রমাণ পায়নি বলেও দাবি করেন বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ। ফারুক বলেন, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মশিউর রহমান, সৈয়দ মোদাচ্ছের গংয়ের এদেশ থেকে লুট করা টাকার হিসাব একদিন নেয়া হবে। সেদিন বেশি দূরে নয়। ১৮ দলীয় জোটের ঘোষিত কর্মসূচী নিয়ে সরকারী দলের নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে শিখতে হবে না, বরং খালেদা জিয়ার কারিশমাতেই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনাসভায় অংশ নেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.