আজ শোকের দিন
আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। জাতির অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। পঁচাত্তরের এই দিনে জাতির জনকের দেহ যখন বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করেছিল ঘাতকরা, তখন বৃষ্টিরূপে অশ্রুপাত করেছিল বাংলার প্রকৃতিও।বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীনতার লাল সূর্য এনে দিয়েছিলেন যে মানুষটি,
সেই মহামানবকে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল এ দেশেরই মানুষরূপী গুটিকয়েক হায়েনা। অথচ জনগণের দাবি আদায়ের জন্য, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য সেই মানুষটি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বলেছেন বাঙালির স্বাধীনতার কথা। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, 'এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কণ্ঠস্বর, মুজিবর, সে যে মুজিবর।'
স্বাধীনতার সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতি হারিয়ে ফেলল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশব্যাপী তখন স্লোগান ছিল 'জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব'। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, কাজ করছিলেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল একদল রক্তপিপাসু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্য। স্বাধীনতার মাত্র কিছুদিন পরই রাষ্ট্র হারায় তার গর্ব ও ইতিহাসের মহানায়ককে। আজ সেই ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর ৩৭তম শাহাদাতবার্ষিকী।
সেদিন বিপথগামী সেনা সদস্যরা আরো যাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তাঁরা হলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব, তাঁর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে যাওয়া কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
শেখ রাসেল তখন ১০ বছরের শিশু। তাঁকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলকে উদ্দেশ্য করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, 'রাসেল, অবোধ শিশু, তোর জন্য আমিও কেঁদেছি খোকা।'
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের রক্ষা করতে জারি করা হয়েছিল কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। এ কারণে দীর্ঘদিন সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে না পারার যন্ত্রণা বইতে হয়েছে জাতিকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের উদ্যোগ নেয়। তবে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখনো বিদেশে পালিয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি। তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে এখনো সাফল্যের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিদেশে পালিয়ে থাকা ছয় খুনি হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।
বিদেশে পালিয়ে থাকা এই ছয় খুনিকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি নিয়ে এ বছর পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস।
পঁচাত্তরের পর বেশির ভাগ সময়ই এই দিনটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলিত। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। এ ছাড়া বিধি সংশোধন করে সরকারিভাবে নির্ধারিত দিন ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার মাধ্যমে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পুনর্বহাল করে।
এবারও যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে দিনটি। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালিত হবে যথাযথ মর্যাদায়। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে যেসব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আজও বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করলে জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, 'এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের কার্যক্রম চলছে। তবে একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং এসব বিচারপ্রক্রিয়া স্তব্ধ করা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে।' প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সেখানেও সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে।
সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে সংবাদপত্রে। এ ছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিনটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে দলটি। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতি হারিয়ে ফেলল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশব্যাপী তখন স্লোগান ছিল 'জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব'। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, কাজ করছিলেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল একদল রক্তপিপাসু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্য। স্বাধীনতার মাত্র কিছুদিন পরই রাষ্ট্র হারায় তার গর্ব ও ইতিহাসের মহানায়ককে। আজ সেই ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর ৩৭তম শাহাদাতবার্ষিকী।
সেদিন বিপথগামী সেনা সদস্যরা আরো যাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তাঁরা হলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব, তাঁর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে যাওয়া কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
শেখ রাসেল তখন ১০ বছরের শিশু। তাঁকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলকে উদ্দেশ্য করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, 'রাসেল, অবোধ শিশু, তোর জন্য আমিও কেঁদেছি খোকা।'
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের রক্ষা করতে জারি করা হয়েছিল কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। এ কারণে দীর্ঘদিন সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে না পারার যন্ত্রণা বইতে হয়েছে জাতিকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের উদ্যোগ নেয়। তবে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখনো বিদেশে পালিয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি। তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে এখনো সাফল্যের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিদেশে পালিয়ে থাকা ছয় খুনি হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।
বিদেশে পালিয়ে থাকা এই ছয় খুনিকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি নিয়ে এ বছর পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস।
পঁচাত্তরের পর বেশির ভাগ সময়ই এই দিনটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলিত। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। এ ছাড়া বিধি সংশোধন করে সরকারিভাবে নির্ধারিত দিন ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার মাধ্যমে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পুনর্বহাল করে।
এবারও যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে দিনটি। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালিত হবে যথাযথ মর্যাদায়। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে যেসব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আজও বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করলে জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, 'এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের কার্যক্রম চলছে। তবে একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং এসব বিচারপ্রক্রিয়া স্তব্ধ করা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে।' প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সেখানেও সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে।
সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে সংবাদপত্রে। এ ছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিনটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে দলটি। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
No comments