নেতিবাচক ও অপরাধী এমপি!-ইতিবাচক পরিবর্তন হবে কী করে

গত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ঝড় বয়ে গেছে, তারপর একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা ছিল সর্বস্তরের মানুষের। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে দেশ বেরিয়ে আসবে, এমন প্রত্যাশা দানা বেঁধেছিল সবার মনে।


২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতির নেপথ্যের কারণটিও ছিল একটি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সূচনালগ্নের অংশীদার হওয়া। গত চার বছরে সেই পরিবর্তন কতটা হলো, সেটাই এখন বিবেচনার বিষয়। বিগত সেনাসমর্থিত জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিষয়টি প্রচারমাধ্যমে গুরুত্ব পায়। চার বছর পর দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি এখনো দুর্বৃত্তায়নের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ কথা মানতেই হবে, সমাজে জনপ্রতিনিধিদের একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। এই বিশেষ অবস্থান ও অবস্থা সৃষ্টির নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। জনপ্রতিনিধিরা জনকল্যাণে সময় ব্যয় করেন। আইনসভার সদস্য হিসেবে জনপ্রতিনিধির প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, আইনসভার সদস্যরা সংসদে উপস্থিত থাকার চেয়ে বাইরে থাকার ব্যাপারে বেশি উৎসাহী। সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সময় দেওয়ার চেয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ চেয়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের ধরনা দিতে দেখা যায়। কথিত আছে, এলাকার উন্নয়নকাজে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আগ্রহ ও উৎসাহের নেপথ্য কারণটি হচ্ছে প্রাপ্তিযোগ। অভিযোগ আছে, উন্নয়নকাজের বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ দেখা দিতে পারে, তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে না। প্রায় অকার্যকর করে রাখা হয়েছে উপজেলা পরিষদকে। এখন সব উন্নয়নকাজের সমন্বয় হচ্ছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে। সেখানে স্কুল-কলেজের নিয়োগ থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি- সব কিছুতেই সংসদ সদস্যদের অবাধ নিয়ন্ত্রণ। সংসদ সদস্যের নির্দেশ ছাড়া অনেক জায়গায়ই নতুন নিয়োগ হয় না, টেন্ডার হয় না। হয় না উন্নয়নকাজের ভাগ-বাটোয়ারা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন সেই তথ্যই দিচ্ছে। যেখানে বলা হয়েছে, নবম জাতীয় সংসদের ৯৭ শতাংশ সদস্য আইন প্রণয়নের দিকে নজর না দিয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত। টিআইবির প্রতিবেদনে যে নেতিবাচক কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক কাজে প্রভাব বিস্তার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন বরাদ্দের অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ৫৩.৫ শতাংশ সংসদ সদস্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত।
সাধারণত আমরা প্রচারমাধ্যমে সংসদ সদস্যদের অনেকের নানা কর্মকাণ্ডের চিত্র পাই। তাঁদের এসব কার্মকাণ্ড মোটেও ইতিবাচক নয়। অনেক সংসদ সদস্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সমাজে। অনেকের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এ প্রতিবেদন সম্পর্কে অনেকটা সে রকম প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেছে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরো অধিকসংখ্যক সংসদ সদস্য সম্পর্কে তথ্য নিলে বা বেশি লোকের মত নিলে ইতিবাচক তথ্য পাওয়া যেত। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব দায় সরকারি দলের ওপর বর্তায়। কারণ, তাদের সদস্যসংখ্যা বেশি।
আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ। সেই ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব দেশের রাজনীতিবিদদের। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের একটি নেতিবাচক কাজও সেই ইতিবাচক বাংলাদেশের যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নেতিবাচক সব বাধা সরিয়ে দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সেদিকে দৃষ্টি দেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.