ঝুঁকির মুখে কৃষি ও জনস্বাস্থ্য by তৌফিক মারুফ
কৃষির উৎপাদন সুরক্ষায় ক্ষেত্রবিশেষে কীটনাশকের দরকার আছে। তবে দেশে এই বিষের প্রয়োগ চলছে বেপরোয়াভাবে। বলা যায়, দেদার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। কৃষির অবস্থাও ক্রমেই হয়ে পড়ছে নাজুক।
এককথায় লাগামহীন ব্যবহারের কারণে কীটনাশক এখন কৃষি ও মানুষের ভয়ংকর শত্রুতে রূপ নিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি, লিভার ও হৃদযন্ত্রের রোগ, যক্ষ্মা, জন্ডিসের মতো প্রাণঘাতী রোগ দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যশস্যে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। কীটনাশকের বিষক্রিয়া জনস্বাস্থ্যেই থেমে নেই, কৃষিও পড়ে গেছে আশঙ্কার মধ্যে। এ অবস্থায় দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা এখন শঙ্কিত। আতঙ্ক আর সংশয় ভর করেছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। তারা নিশ্চিন্তে ফলমূল ও শাকসবজি কিনে খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। দেশের প্রথম খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের কার্যক্রমের উদ্বোধন হয় গত রবিবার। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি প্রায় সব বক্তাই খাদ্যশস্যে কীটনাশকের বিষক্রিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করেন। উল্লেখ করা হয়, খাদ্যশস্যে দেদার কীটনাশক ব্যবহারের নানা কুফলের কথা। অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এখন বাজারে কোনো ফল, শাকসবজি, মাছ বা অন্য কোনো খাদ্যসামগ্রী কিনতে গেলেই কীটনাশক বা রাসায়নিকের ভয়ে ভুগতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান বলেন, কৃষিতে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিজ পণ্য কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ ড. লতিফুল হায়দার জানান, 'দেশের ৫-৬ শতাংশ কৃষককে আমরা কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রয়োগ-প্রভাব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। নানা সীমাবদ্ধতায় বাকিরা আজও অন্ধকারে। তারা নিয়মনীতি না জেনে না বুঝে পোকা দমনের নামে হাটবাজারে কীটনাশক নামের যা পায় সবই মাত্রাতিরিক্ত হারে প্রয়োগ করে।'
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ নূরুল আলম জানান, কীটনাশকের অপপ্রয়োগের ফলে কেবল যে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে তা-ই নয়, বেশির ভাগ কীটপতঙ্গই কীটনাশক প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করে ফেলছে, যা দেশের কৃষির জন্য বড় ধরনের হুমকি। এ অবস্থা থেকে কৃষিকে রক্ষার জন্য জৈব কীটনাশক পদ্ধতি কার্যকর করার বিকল্প নেই।
আইপিএম বিশেষজ্ঞ ড. লতিফুল হায়দার বলেন, 'চাষাবাদে কীটপতঙ্গের উপদ্রব বন্ধে পাঁচটি ধাপ মেনে চলতে হয়। এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে কীটনাশক প্রয়োগ। কিন্তু আমাদের দেশে প্রথম পর্যায়েই সরাসরি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অপকারী-উপকারী নির্বিশেষে সব পোকামাকড়ই মরে যায়। পাশাপাশি বারবার মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।' তিনি আরো বলেন, 'ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক ব্র্যান্ড, সঠিক মাত্রা, সঠিক সময় ও স্থান নির্ণয় করাটা জরুরি। অন্যথায় ক্ষতি ঠেকানো যাবে না।'
কৃষিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মৎস্যসম্পদের জন্যও কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। মৎস্যসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ব্যবহৃত কীটনাশকের ৬০ শতাংশই চরম বিষাক্ত। ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত এবং মাত্র ১০ শতাংশ বিষাক্ত নয়। আর কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রায় ২৫ শতাংশই ফসলি জমিসংলগ্ন জলায় গিয়ে মিশে যায়। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মাছ ও মাছের ডিমের ওপর। বাধাগ্রস্ত হয় প্রজনন প্রক্রিয়া।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর বৈধভাবে প্রায় ২৭ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বাস্তবে এই পরিমাণ আরো বেশি। বিশ্বব্যাংকের ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশের বেশি কৃষক ফসলে প্রয়োজনের অনেক বেশি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন উইংয়ের পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার নাজমুল আহসান বলেন, দেশে এখন অনুমোদিত কৃষি কীটনাশক-বালাইনাশকের সংখ্যা দুই হাজার ৫৭০টি। বিভিন্ন অনিয়ম ও ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইতিমধ্যে এগুলো থেকে ৩১৩টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১২টি কীটনাশক-বালাইনাশক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান বৈধ কীটনাশকগুলো নিয়ম মেনে আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহারের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্লান্ট প্রটেকশন উইংয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে লাইসেন্সধারী আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান ৩৩৬টি এবং রিপ্যাকিং প্রতিষ্ঠান ১৪৪টি। এ ছাড়া ফরমুলেশন অনুমোদন রয়েছে ১৮টির। খুচরা সার-কীটনাশক বিক্রেতার সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৪৬। আর পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে তিন হাজার ৫৮৯টি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে কীটনাশকের বাজার-ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় এর অপব্যবহার বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ইউজ অব পেস্টিসাইড আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি, লিভার ও হৃদযন্ত্রের রোগ, যক্ষ্মা, জন্ডিসের মতো প্রাণঘাতী রোগ দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যশস্যে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। কীটনাশকের বিষক্রিয়া জনস্বাস্থ্যেই থেমে নেই, কৃষিও পড়ে গেছে আশঙ্কার মধ্যে। এ অবস্থায় দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা এখন শঙ্কিত। আতঙ্ক আর সংশয় ভর করেছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। তারা নিশ্চিন্তে ফলমূল ও শাকসবজি কিনে খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। দেশের প্রথম খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের কার্যক্রমের উদ্বোধন হয় গত রবিবার। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি প্রায় সব বক্তাই খাদ্যশস্যে কীটনাশকের বিষক্রিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করেন। উল্লেখ করা হয়, খাদ্যশস্যে দেদার কীটনাশক ব্যবহারের নানা কুফলের কথা। অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এখন বাজারে কোনো ফল, শাকসবজি, মাছ বা অন্য কোনো খাদ্যসামগ্রী কিনতে গেলেই কীটনাশক বা রাসায়নিকের ভয়ে ভুগতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান বলেন, কৃষিতে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিজ পণ্য কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ ড. লতিফুল হায়দার জানান, 'দেশের ৫-৬ শতাংশ কৃষককে আমরা কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রয়োগ-প্রভাব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। নানা সীমাবদ্ধতায় বাকিরা আজও অন্ধকারে। তারা নিয়মনীতি না জেনে না বুঝে পোকা দমনের নামে হাটবাজারে কীটনাশক নামের যা পায় সবই মাত্রাতিরিক্ত হারে প্রয়োগ করে।'
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ নূরুল আলম জানান, কীটনাশকের অপপ্রয়োগের ফলে কেবল যে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে তা-ই নয়, বেশির ভাগ কীটপতঙ্গই কীটনাশক প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করে ফেলছে, যা দেশের কৃষির জন্য বড় ধরনের হুমকি। এ অবস্থা থেকে কৃষিকে রক্ষার জন্য জৈব কীটনাশক পদ্ধতি কার্যকর করার বিকল্প নেই।
আইপিএম বিশেষজ্ঞ ড. লতিফুল হায়দার বলেন, 'চাষাবাদে কীটপতঙ্গের উপদ্রব বন্ধে পাঁচটি ধাপ মেনে চলতে হয়। এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে কীটনাশক প্রয়োগ। কিন্তু আমাদের দেশে প্রথম পর্যায়েই সরাসরি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অপকারী-উপকারী নির্বিশেষে সব পোকামাকড়ই মরে যায়। পাশাপাশি বারবার মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।' তিনি আরো বলেন, 'ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক ব্র্যান্ড, সঠিক মাত্রা, সঠিক সময় ও স্থান নির্ণয় করাটা জরুরি। অন্যথায় ক্ষতি ঠেকানো যাবে না।'
কৃষিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মৎস্যসম্পদের জন্যও কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। মৎস্যসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ব্যবহৃত কীটনাশকের ৬০ শতাংশই চরম বিষাক্ত। ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত এবং মাত্র ১০ শতাংশ বিষাক্ত নয়। আর কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রায় ২৫ শতাংশই ফসলি জমিসংলগ্ন জলায় গিয়ে মিশে যায়। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মাছ ও মাছের ডিমের ওপর। বাধাগ্রস্ত হয় প্রজনন প্রক্রিয়া।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর বৈধভাবে প্রায় ২৭ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বাস্তবে এই পরিমাণ আরো বেশি। বিশ্বব্যাংকের ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশের বেশি কৃষক ফসলে প্রয়োজনের অনেক বেশি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন উইংয়ের পেস্টিসাইড রেগুলেশন অফিসার নাজমুল আহসান বলেন, দেশে এখন অনুমোদিত কৃষি কীটনাশক-বালাইনাশকের সংখ্যা দুই হাজার ৫৭০টি। বিভিন্ন অনিয়ম ও ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইতিমধ্যে এগুলো থেকে ৩১৩টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১২টি কীটনাশক-বালাইনাশক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান বৈধ কীটনাশকগুলো নিয়ম মেনে আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহারের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্লান্ট প্রটেকশন উইংয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে লাইসেন্সধারী আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান ৩৩৬টি এবং রিপ্যাকিং প্রতিষ্ঠান ১৪৪টি। এ ছাড়া ফরমুলেশন অনুমোদন রয়েছে ১৮টির। খুচরা সার-কীটনাশক বিক্রেতার সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৪৬। আর পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে তিন হাজার ৫৮৯টি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে কীটনাশকের বাজার-ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় এর অপব্যবহার বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ইউজ অব পেস্টিসাইড আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
No comments