চার দশকের সংঘাতের অবসান-ফিলিপাইনে মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসন সরকার-মরো শান্তিচুক্তি সই

ফিলিপাইনের মুসলিম বিদ্রোহী গোষ্ঠী মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের (এমআইএলএফ) সঙ্গে সরকারের শান্তিচুক্তি সই হয়েছে। রাজধানী ম্যানিলায় প্রেসিডেন্ট ভবনে গতকাল সোমবার চুক্তিটি সই হয়। গত ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকুইনো এমআইএলএফের সঙ্গে শান্তি চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার ঘোষণা দেন।


চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের শান্তি আলোচনার ফসল এ চুক্তি। সই হওয়া চুক্তিটি শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে একটি রূপরেখা (ফ্রেমওয়ার্ক)। চুক্তির সব শর্ত পূরণ হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও এলাকায় মুসলমানদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠন করা হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ এলাকার স্বাধীনতার দাবিতে দেশটির সবচেয়ে বড় এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী সংগ্রাম করছিল। প্রায় ১২ হাজার সক্রিয় সদস্যের এ সংগঠনটির সশস্ত্র সংগ্রামে এখন পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে অনুমান করা হয়। নতুন চুক্তিতে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে এসেছে বিদ্রোহীরা।
সরকারের পক্ষে শান্তি আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারী মারভিক লিওনেন এবং এমআইএলএফের প্রধান মধ্যস্থতাকারী মোহাঘের ইকবাল চুক্তিতে সই করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট একুইনো এবং এমআইএলএফ নেতা মুরাদ ইব্রাহিম। চুক্তি সই হওয়ার আগে উভয়ে একে অপরকে উপহার দেন। এ সময় মুরাদ বলেন, 'এটাই হলো সত্যিকারের শান্তি।' চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও। প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনার পর চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে সরকার ও বিদ্রোহীরা একমত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত মিন্দানাও অঞ্চলে পার্লামেন্টারি ধাঁচের শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে। পাঁচটি প্রদেশ, দুটি মহানগর, ছয়টি শহর ও আশপাশের গ্রাম নিয়ে গঠিত হবে এ অঞ্চল। যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১০ শতাংশ। এমআইএলএফের সদস্যরা ধাপে ধাপে অস্ত্র জমা দেবে। এ সময় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব বুঝে নেবে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। মিন্দানাওয়ের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, মুদ্রা নীতি ও নাগরিকত্ববিষয়ক সব ক্ষমতা থাকবে ফিলিপাইন সরকারের হাতে। মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসিত সরকার ট্যাক্স, ফি ইত্যাদি আদায়ের ক্ষমতা পাবে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব 'ন্যায়সঙ্গত'ভাবে উভয় সরকার ভাগ করে নেবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো বিধি তৈরি হয়নি। মিন্দানাওয়ের কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শরীয়া আইন প্রযোজ্য হবে। দেওয়ানি মামলা পরিচালিত হবে শরীয়া আইন অনুযায়ী। তবে ফৌজদারি মামলা শরীয়া আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে না। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে মতৈক্য হয়নি। বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। স্বশাসিত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে 'মৌলিক আইন' (বেসিক ল) ২০১৫ সালের মধ্যে পার্লামেন্টে পাস করা হবে। পরে এর ওপর আঞ্চলিকভাবে গণভোট নেওয়া হবে। আর মিন্দানাও আঞ্চলিক পার্লামেন্টের নির্বাচন হবে ২০১৬ সালে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.