তারেকের অনুপস্থিতিতেই এবারও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল- ছেলেকে আপাতত দেশে ফিরিয়ে আনতে চান না খালেদা জিয়া by শরীফুল ইসলাম
বিএনপি নেতাদের মধ্যে একটি অংশের চাপ থাকা সত্ত্বেও কৌশলগত কারণে এখনই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে না দলের হাইকমান্ড। তাই তারেক রহমানের উপস্থিতিতে এবারের জাতীয় কাউন্সিল করার পূর্ব
পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুপস্থিতিতেই আগামী ডিসেম্বরে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার কৌশল নিয়েছে দলটি। সূত্র মতে, এখনই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসুক তা তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াই চাচ্ছেন না। কারণ, ওয়ান ইলেভেনের সময় বিভিন্ন মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে তারেক রহমানের যে ইমেজ ক্ষুণœ হয়েছে তা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই খালেদা জিয়া চাচ্ছেন আরও সময় নিয়ে ইমেজ সঙ্কট কাটিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে দেশে ফিরিয়ে এনে দলের নেতৃত্ব তারেক রহমানের হাতে তুলে দিতে।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা চায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়বে বিএনপি হাইকমান্ডের কাছ থেকে এমন আগামী অঙ্গীকার। তবে তারা আপাতত দলের নেতৃত্বে তারেক রহমানকে দেখতে চায় না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি এগিয়ে যাক তারা তাই চায়। বিএনপিকে পছন্দ করে দেশের এমন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এমনটিই চান।
সূত্র মতে, তারেক রহমান পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি থাকলেও বিএনপির হাইকমান্ড চাইলে তাঁকে দেশে ফিরয়ে এনে মামলায় জামিন নিয়ে দলীয় কাজের দায়িত্ব দেয়া যেত। কিন্তু তাঁর মা খালেদা জিয়া চান না বলেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আপাতত তারেক রহমানকে দেশে আনা যাচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এবারও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হতে যাচ্ছে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাড়াই। এর ফলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দলের এমন নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলেই সিনিয়র নেতারা আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তাঁরা দলের পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল করবেন তারেক রহমানের উপস্থিতিতে। এর পর প্রায় ৩ বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরে আসেননি তারেক রহমান। গত এক বছর আগে থেকে দলের নেতাদের মধ্যে একটি অংশ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালান। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও করে আসেন। এ ছাড়া বছরখানেক আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ইলিয়াস আলী (বর্তমানে নিখোঁজ), স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কিছু নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য সারাদেশে সভা-সেমিনার করেন। সে সময় তাঁরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিটিও জোরালোভাবেই উত্থাপন করেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ড না চাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া থেমে গেছে। তাই আগামী ডিসেম্বরের আগে কোন অবস্থাতেই তারেক রহমানের দেশে ফিরে এসে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়া সম্ভব নয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিলে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাতে তারেক রহমান অংশ নেবেন এবং উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে। দলের কিছু নেতা জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। তারেক রহমানও লন্ডনে বসে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকদের মধ্যে কাকে কোন্্ পদে দেয়া যায় এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডিসেম্বরের মধ্যেই বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করবে। দলটির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ আছে আর মাত্র ৩ মাস। তবে আরও আগে থেকেই জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের জাতীয় কাউন্সিলকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যাঁরা এক বছর আগেও সক্রিয় ছিলেন তাঁরা এখন নীরব। কারণ, খালেদা জিয়া নিজেই আপাতত তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছেন। আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি করে দিত তারেক রহমান। এবারও তারেক রহমান ছাত্রদলের কমিটি করে দেয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ঈদের আগে ছাত্রদলের নেতাদের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ৪ দিনব্যাপী বৈঠক করেন। এ সময় তিনি ছাত্রদলের নেতাদের জানান, তারেক রহমান এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে ছাত্রদলের কোন বিষয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নিয়োগসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। তবে কাউন্সিলের আগে সারাদেশের সকল জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের টার্গেট থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের মতো এবারও অনেক জেলা-উপজেলার কমিটি ছাড়াই মনোনীত ডেলিগেটদের নিয়েই জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি চলছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ৩ বছর মেয়াদী জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ এ বছর ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য এমনিতেই মহাসচিব নিয়োগসহ দলের বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের জরুরী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর থেকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধের তাগিদ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই কিছু সদস্য বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করলেও অধিকাংশ নির্বাহী কমিটির নেতাই ঈদের পর চাঁদা পরিশোধ করবেন বলে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোন নেতার চাঁদা বকেয়া থাকলে তিনি জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়ার জন্য প্রতিনিধি কার্ড পাবেন না। তাই বাধ্য হয়েই নেতারা জাতীয় কাউন্সিলের আগে চাঁদা পরিশোধ করবেন।
বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে দলের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করে তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব করে ৩ বছর মেয়াদী ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির কলেবর না বাড়লেও তাতে বেশকিছু পদে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে জানা গেছে। তবে তারেক রহমান এখন যে পদে আছেন সে পদেই থাকছেন।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি অনুমোদন, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন, সাংগঠনিক জেলা বৃদ্ধি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমান কমিটির নেতাদের কাজের মূল্যায়নসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আন্দোলন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দলের অবস্থান ঠিক করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর আমাদের দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ৩ বছর পর পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। তাই সব নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক সময়েই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান এখনও অসুস্থ তাই তিনি হয়ত আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাতীয় কাউন্সিল করার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। তাই ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিল করলে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, তারেক রহমান অসুস্থ। বিদেশে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাই তিনি এবারের জাতীয় কাউন্সিলে থাকতে পারবেন কি না তা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা চায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়বে বিএনপি হাইকমান্ডের কাছ থেকে এমন আগামী অঙ্গীকার। তবে তারা আপাতত দলের নেতৃত্বে তারেক রহমানকে দেখতে চায় না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি এগিয়ে যাক তারা তাই চায়। বিএনপিকে পছন্দ করে দেশের এমন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এমনটিই চান।
সূত্র মতে, তারেক রহমান পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি থাকলেও বিএনপির হাইকমান্ড চাইলে তাঁকে দেশে ফিরয়ে এনে মামলায় জামিন নিয়ে দলীয় কাজের দায়িত্ব দেয়া যেত। কিন্তু তাঁর মা খালেদা জিয়া চান না বলেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আপাতত তারেক রহমানকে দেশে আনা যাচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এবারও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হতে যাচ্ছে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাড়াই। এর ফলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দলের এমন নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলেই সিনিয়র নেতারা আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তাঁরা দলের পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল করবেন তারেক রহমানের উপস্থিতিতে। এর পর প্রায় ৩ বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরে আসেননি তারেক রহমান। গত এক বছর আগে থেকে দলের নেতাদের মধ্যে একটি অংশ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালান। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও করে আসেন। এ ছাড়া বছরখানেক আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ইলিয়াস আলী (বর্তমানে নিখোঁজ), স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কিছু নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য সারাদেশে সভা-সেমিনার করেন। সে সময় তাঁরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিটিও জোরালোভাবেই উত্থাপন করেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ড না চাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া থেমে গেছে। তাই আগামী ডিসেম্বরের আগে কোন অবস্থাতেই তারেক রহমানের দেশে ফিরে এসে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়া সম্ভব নয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিলে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাতে তারেক রহমান অংশ নেবেন এবং উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে। দলের কিছু নেতা জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। তারেক রহমানও লন্ডনে বসে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকদের মধ্যে কাকে কোন্্ পদে দেয়া যায় এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডিসেম্বরের মধ্যেই বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করবে। দলটির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ আছে আর মাত্র ৩ মাস। তবে আরও আগে থেকেই জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের জাতীয় কাউন্সিলকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যাঁরা এক বছর আগেও সক্রিয় ছিলেন তাঁরা এখন নীরব। কারণ, খালেদা জিয়া নিজেই আপাতত তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছেন। আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি করে দিত তারেক রহমান। এবারও তারেক রহমান ছাত্রদলের কমিটি করে দেয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ঈদের আগে ছাত্রদলের নেতাদের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ৪ দিনব্যাপী বৈঠক করেন। এ সময় তিনি ছাত্রদলের নেতাদের জানান, তারেক রহমান এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে ছাত্রদলের কোন বিষয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নিয়োগসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। তবে কাউন্সিলের আগে সারাদেশের সকল জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের টার্গেট থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের মতো এবারও অনেক জেলা-উপজেলার কমিটি ছাড়াই মনোনীত ডেলিগেটদের নিয়েই জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি চলছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ৩ বছর মেয়াদী জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ এ বছর ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য এমনিতেই মহাসচিব নিয়োগসহ দলের বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের জরুরী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর থেকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধের তাগিদ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই কিছু সদস্য বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করলেও অধিকাংশ নির্বাহী কমিটির নেতাই ঈদের পর চাঁদা পরিশোধ করবেন বলে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোন নেতার চাঁদা বকেয়া থাকলে তিনি জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়ার জন্য প্রতিনিধি কার্ড পাবেন না। তাই বাধ্য হয়েই নেতারা জাতীয় কাউন্সিলের আগে চাঁদা পরিশোধ করবেন।
বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে দলের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করে তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব করে ৩ বছর মেয়াদী ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির কলেবর না বাড়লেও তাতে বেশকিছু পদে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে জানা গেছে। তবে তারেক রহমান এখন যে পদে আছেন সে পদেই থাকছেন।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি অনুমোদন, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন, সাংগঠনিক জেলা বৃদ্ধি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমান কমিটির নেতাদের কাজের মূল্যায়নসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আন্দোলন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দলের অবস্থান ঠিক করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর আমাদের দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ৩ বছর পর পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। তাই সব নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক সময়েই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান এখনও অসুস্থ তাই তিনি হয়ত আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাতীয় কাউন্সিল করার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। তাই ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিল করলে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, তারেক রহমান অসুস্থ। বিদেশে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাই তিনি এবারের জাতীয় কাউন্সিলে থাকতে পারবেন কি না তা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
No comments