বর্বরতার শিকার গৃহকর্মী-বিচার নিশ্চিত করুন

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপতৎপরতা এক চরম ও হতাশাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমরা প্রায়শই লক্ষ করছি, অর্থ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেশে অনেক মানুষকে অন্ধ করে তুলছে। সব ধরনের মানবিক বোধ বিলুপ্ত হয়ে পাশবিক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
যার শিকার হতে হচ্ছে ভিন্নমতের মানুষ থেকে শুরু করে বাসায় ঘরের কাজে সহায়তা করা 'কাজের মেয়ে' নামক অসহায় শিশু-কিশোরীদেরও। প্রভাবশালী ও বিত্তশালীদের হাতে কাজের মেয়ে নির্যাতনের একটির পর একটি বিকৃত ঘটনা উঠে আসছে। আবারও এক নৃশংস 'কাজের মেয়ে' নির্যাতনের ভয়াবহ ঘটনা উঠে এসেছে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে। গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে নির্বাচিত তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির 'এপিএস' বলে কথিত ও পরিচিত (যদিও এই ব্যক্তি সিমিন হোসেন রিমির এপিএস নন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওই সংসদ সদস্য।) কাজল মোল্লা নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পিঠা চুরি করে খাওয়ার অভিযোগে গরম তেলে ১৬ বছর বয়সী কাজের মেয়েটির দুই হাত পুড়িয়ে দেওয়া এবং বাথরুমে কয়েক দিন গুরুতর আহত অবস্থায় আটকে রাখার। এরপর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এক পর্যায়ে কাজল মোল্লা মেয়েটিকে বাথরুমেই ধর্ষণ করে। সে কথা প্রতিবেদককে নিজ মুখেই জানিয়েছে নির্যাতনের শিকার মেয়েটি। চলতে থাকে টানা নির্যাতন। এক পর্যায়ে মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েটিকে কাজল মোল্লার গাড়িচালক মেয়েটির গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। আরো হতাশাজনক ব্যাপার হলো, মেয়েটিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতে বাধা প্রদান করছে। ক্যাডারদের দ্বারা নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছে মেয়েটির পরিবার এবং এ ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের মনে রাখতে হবে, এ ঘটনা প্রকাশের পর সারা দেশের মানুষের সহানুভূতি ও সহমর্মিতা তৈরি হয়েছে অসহায় মেয়েটি ও তার পরিবারের প্রতি। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না করে এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক প্রীতি দেখানো হলে তার খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। এ ঘটনায় যারা সহযোগিতা করছে ও অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নচেৎ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।

No comments

Powered by Blogger.