অদম্য মেধাবী by জাহিরুল ইসলাম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে জ্যোৎস্না খাতুন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। জ্যোৎস্নাসহ তিন মেধাবিনীকে নিয়ে গতকাল একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার। অপর দু'জন রূপালি ও মেহেরুন্নেসা। মেধাক্রমে তাদের স্থান যথাক্রমে সপ্তম ও অষ্টবিংশতম।


ওই প্রতিবেদনে জানা যায় পড়াশোনার জন্য তিন দরিদ্র পিতার সন্তানদের নিদারুণ সংগ্রামের কাহিনী। তারা শুনিয়েছে তাদের স্বপ্নের কথাও। জ্যোৎস্না হতে চায় শিক্ষিকা। আর রূপালি ও মেহেরুন্নেসা হতে চায় ডাক্তার। মাদ্রাসা পড়ূয়া ছাত্রীদের এমন মনোবল আমাদের দেশে সহজে মেলে না। কিন্তু উদাহরণটি যদি এখানে মাদ্রাসাছাত্রীদের অনুপ্রেরণা জোগাত তা হতো আনন্দের বিষয়।
আমাদের দেশেও পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এ রকম অনেক মেধাবী জ্যোৎস্নার ছবি আমরা পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই। গত ৯ মে সমকালের প্রথম পাতায় নাটোরের মেয়ে সুবর্ণার জীবন-সংগ্রামের কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া সুবর্ণার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। সন্তানকে কলেজে ভর্তি করানোর মতো সামর্থ্য নেই দিনমজুর মা ছানোয়ারা বেগমের। কারও সহায়তা না পেলে নিজের মতোই মেয়েকে কাজে লাগিয়ে দেবেন তিনি। মেয়ের লেখাপড়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন।
আমাদের দেশে মেয়েরা এক সময় শিক্ষায়-দীক্ষায় পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। ছেলেদের মতো মেয়েরাও এগিয়ে আসছে। সাম্প্রতিককালের পাবলিক পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার ফল অন্তত সে কথাই প্রমাণ করে। বোঝা যায়, একটু যত্ন এবং সহযোগিতা পেলে মেয়েরাও তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে। বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাদের সেই সুযোগই করে দেওয়া উচিত। কেননা, ছেলেদের মতোই মেয়েরাও দেশের সম্পদ। দেশের উন্নতির জন্য বৈষম্য ভুলে মেয়েদের মেধাকেও লালন করে তাদের সুপ্ত সম্ভাবনাগুলো বিকশিত করার দায়িত্ব আমাদেরই। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মেয়েদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। মেয়েদের 'মেয়ে' হিসেবে না দেখে 'মানুষ' হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সম্ভাবনা বিকাশের পথ প্রশস্ত করা।
কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম। দেখা যায়, অযত্ন এবং অবহেলার কারণে এই অদম্য মেধাবীদের অনেকেই হারিয়ে যায়। অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে তাদের নেমে পড়তে হয় জীবন-সংগ্রামে। এই হারিয়ে যাওয়াতে ক্ষতি আমাদেরই। তাদের মধ্যে যে কোনো বিদ্বান ও প্রতিভাবান নারী লুকিয়ে নেই তা কে জানে!
এই অদম্য মেধাবীদের সাফল্যের পেছনে মেধা এবং আত্মবিশ্বাসই তাদের একমাত্র সম্বল। ক্রীড়া, শিল্প, সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার নজির আমাদের দেশে রয়েছে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থাও চালু করেছে। যৌক্তিক কথা হলো, তাদের লালন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সমাজের সবাই নিজ দায়িত্বে এগিয়ে এলে তাদের লালন করা অসম্ভব নয়। শিক্ষা সহায়তার জন্য তখন কোনো মেধাবীকেও আর কারও দ্বারে গিয়ে ধর্ণা ধরতে হবে না। দরিদ্রতার নির্মম কশাঘাতে জীবন-সংগ্রামে জয়ী হয়ে কেবল আত্মবিশ্বাসের জোরে যারা সফলতার এত উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারে তাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা কেন এগিয়ে আসব না?
zahirul.du@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.