অভিমত ভিন্নমত
বিরোধী দলের কাজ কী গরমের কারণে বিএনপির পূর্বঘোষিত নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা মাঝপথে থেমে গেছে। দলের কর্মীরা কিছু দূর পর্যন্ত হেঁটে এগোলেও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা হাঁটা ছেড়ে দিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে পড়েন, অনেকে পদযাত্রা ছেড়ে চলে যান।
এমনটা হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। আমাদের বড় নেতারা থাকেন বিশাল দালানে, ঠান্ডা কক্ষে, চড়েন শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে। তাঁরা কী করে এই খরতাপে রাস্তায় হেঁটে যাত্রা করবেন। ওই দিন সৃষ্টিকর্তা একটু শৈত্যপ্রবাহ বইয়ে দিলে তাঁরা আরাম-আয়েশে পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ করতে পারতেন। পুলিশ বা সরকারি দলের কেউ এসেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিল না! সে রকম কিছু হলে অন্তত বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে পদযাত্রাকারীদের দেহমনে তেজ সৃষ্টি হতো।
লোডশেডিং কমাতে এসির ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে রাখার সরকারি অনুরোধে এসব নেতা কান দিয়েছেন—এ কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে। যে দাবিতে এই পদযাত্রা সেটি কি আসলেই বিএনপির মনের দাবি, নাকি অহেতুক জল ঘোলা করা? আসলে কি ভোলা উপনির্বাচনে এমন কারচুপি হয়েছে যে নির্বাচনটি বাতিল করা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর দুই কমিশনারের পদত্যাগের দাবি তোলা যায়? জনগণ ও বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটি মনে করেন কি না?
দাবি ন্যায্য ও আন্তরিক হলে শুধু রোদ-গরমের কারণে কর্মসূচির মাঝপথে বাড়ি ফিরে যাওয়া স্বাভাবিক নয়, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরা এটা করতে পারেন না। কথায় কথায় জান দেব, রক্ত দেব বলে যাঁরা রাজপথ কাঁপাতে পারেন, তাঁরা একটু রোদ-গরম সহ্য করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত পালন করতে পারবেন না, এটা কেমন কথা?
আমরা লক্ষ করছি, বর্তমান বিরোধী দল কোথাও তাদের ভূমিকা জোরালোভাবে রাখতে পারছে না। না সংসদের ভেতরে, না সংসদের বাইরে। নবম জাতীয় সংসদের এই পনেরো-ষোল মাসের অধিকাংশ সময় তাঁরা যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত থেকেছে। একসময় তারা সংসদে যোগ দিয়েছে বটে, জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলার চেয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে বেশি ব্যস্ত থেকেছে। সবকিছুর মধ্যে তারা ভারতের ‘ষড়যন্ত্র’ খুঁজতে বেশি পছন্দ করে। এগুলো সত্যিকার ও কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নয়।
শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা—এই মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিরোধী দলের উচিত সরকারের মন্দ কাজের যেমন বিরোধিতা করা, তেমনি ভালো কাজে সহযোগিতা করা। সরকারি দলের লোকেরা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করছে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে, স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী হতে দিতে চাচ্ছে না, খুন-ধর্ষণ-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ দমন করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই। এসবের দাবিতে বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলনে রোদ-বৃষ্টির কারণে পিছু হটলে চলবে না। একই সঙ্গে সরকারের ভালো কাজে সহযোগিতা করাও বিরোধী দলের কর্তব্য। যুদ্ধকালীন অপরাধের বিচার সমগ্র জাতির দাবি। অথচ এ বিচারের ক্ষেত্রে বিরোধী দল উল্টো ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়।
কাজী জোবায়েদ
কোমারপুর, আদমদীঘি, বগুড়া।
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন সময়ের দাবি
দেশে চরম বিদ্যুৎ-ঘাটতি চলছে। কৃষক বিদ্যুতের অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না। শহরে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে। আর গ্রামে তো বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অচিরেই গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। সুতরাং গ্যাস বাদে বিদ্যুৎ উত্পাদনের বিকল্প খুঁজতে হবে এখনই। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এর বিকল্প হতে পারে। রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তাদের সাহায্য নিয়ে আমরা এ কাজ শুরু করতে পারি।
আমরা জানি, এটা রাতারাতি করা সম্ভব নয়। তথাপি এখন থেকেই কাজ শুরু করা উচিত। নয়তো ভবিষ্যতে বিদ্যুতের সংকট আরও প্রকট হয়ে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় ধস নামতে পারে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি হলো, এক সরকার কাজ শুরু করবে আর অন্যজন লাল ফিতা কাটবে—এটা একদম সহ্য করতে পারেন না নেতা-নেত্রীরা। দেশের স্বার্থে এমন সংস্কৃতির শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। চর্চা করতে হবে সুস্থ সংস্কৃতির।
সুতরাং বিদ্যুতের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করা এখন সময়ের দাবি।
রুহুল আমিন।
ruhulswdu@yahoo.com
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন-সংকট
১ মে প্রথম আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন-সংকট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নেই। তবু তাঁরা নিজেরাই আবাসিক হলগুলোতে উঠে থাকেন। প্রথম বছর তাদের কষ্ট করতে হয়, তবে তা সাময়িক। ছয় মাস থেকে এক বছরের মতো সময় কষ্ট করে গণরুম বা বারান্দায় থাকতে হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে সবাই রুমে উঠতে পারে। কিন্তু, প্রতিবেদনটির বিবরণে সাধারণ মানুষের এমন ধারণা জন্মাতে পারে যে সব সময় বা পুরো শিক্ষাজীবন ছাত্রছাত্রীদের এভাবেই দিন কাটাতে হয়। আসলে তা নয়।
দ্বিতীয়ত, চারজনের রুমে আটজন থাকাটা কষ্টকর হলেও শিক্ষার্থীদের তা সহনীয় হয়ে গেছে। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এক বিছানায় ডাবল থাকাটা অস্বাভাবিক নয় বৈকি। তা ছাড়া, সব হলে সব সময় ডাবল থাকতে হয় না। যেমন শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, একুশে হল, জহুরুল হক হলসহ অনেক হলে ছাত্ররা তৃতীয় বর্ষ থেকেই একক বিছানা পেয়ে থাকেন।
অধিক জনসংখ্যার কারণে নানাবিধ সমস্যা হয়, সেসব সমস্যায় খাপ খাইয়ে চলতে হয়। আমরা কি এক দিনও যানজট ছাড়া ভাবতে পারি? তাই বলে কি সবকিছু থেমে আছে? এমনকি প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি যানজটে পড়েছে, এমন খবরও আমরা শুনেছি। এ রকম অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বাইরে নয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব না? অবশ্যই বলব, লেখালেখি হবে, তবে তা হবে ভেবেচিন্তে। ঢালাওভাবে খালি গায়ে, ঘুমন্ত ছাত্রদের বিছানাপত্র এলোমেলো কাপড়-চোপড়ের ছবি প্রকাশ করলে শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার ও জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদাবোধে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সীমিত সম্পদের এই দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তা বাংলাদেশের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ভালো বিষয়গুলো বড় করে দেখতে চাই, এভাবে সামনে এগোতে চাই। সাময়িক কষ্টগুলোকে ‘উদ্বাস্তু শিবির’ বলে অতিরঞ্জিত করে দেখতে চাই না।
মো. আজহারুল ইসলাম
ছাত্র-সহকারী, ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমরা কোথায় আছি?
১০ মে মিজানুর রহমান খানের ‘একটি চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার শুনানি’ শীর্ষক নিবন্ধটিতে যা পড়লাম তা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে আমরা কোথায় আছি? কীসের মাঝে বাস করি আমরা সাধারণ জনগণ?
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে দেশে দেশে একটাই কথা উচ্চারিত হয়—বিচার বিভাগকে যে রাষ্ট্রে সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয়, সেটাই হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র। অন্যায় করলে বিচার হবে—এই বিশ্বাসই সমাজে ন্যায্যতার ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখে। এ জন্যই বিচার বিভাগের সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠিত থাকাটা ভীষণ জরুরি।
কিন্তু আমরা কী দেখছি? সাতক্ষীরার চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের নয় বছরের নিষ্পাপ শিশু অর্ণবকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে পিশাচ-চক্র। এ রকম বহুক্ষেত্রে আমরা দেখি, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। অপরাধীকে বাঁচাতে প্রভাবশালী সমাজপতি, রাজনৈতিক নেতা, খাকি বাহিনী, কলুষিত আইনজীবী মহল বড়ই সহানুভূতিশীল। আদালতের প্রশাসনও যেন তাদের চেয়ে কম নয়। হায়, সবার কাছে ঠোকর খেয়ে যার কাছে আশ্রয় চাইব, সেখানেও যদি স্বচ্ছতার ঘাটতি পড়ে, তবে আর কে আছে আমাদের পাশে? এটাই কি আইনের শাসন?
আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নেই—এটা একটা আশঙ্কার বিষয়, কিন্তু তার চেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো, আমাদের ফরিয়াদ শোনার কেউ নেই। অতি আধুনিক রাষ্ট্রেও খুন-রাহাজানিসহ ভয়ানক অপরাধগুলো ঘটে। কিন্তু সেই অপরাধের বিচারও সেখানে ঘটে। এবং বিচারে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সেই শাস্তিটুকু অনুশোচনার সঙ্গে, প্রায়শ্চিত্তমূলকভাবেই মেনে নিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে অপরাধী একেবারে শেষ পর্যন্তও যেন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, সে অপরাধ করেছে। বরং বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করে, ‘আদালতে যতক্ষণ অপরাধ প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ কাউকে অপরাধী বলা অন্যায়।’ কারণ জানাই কথা, আদালতের কলকাঠি কীভাবে নাড়াতে হয়, সেটা তারা ভালোই জানে।
নয় বছরের শিশুকে বীভত্স কায়দায় হত্যা করেছে যারা, সেই পিশাচদের তীক্ষধার খড়গের নিচে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো, এটাই আমাদের বেঁচে থাকার সান্ত্বনা। শুধু আবেদন, দয়া করে হাল ছেড়ে দেবেন না। লেগে থাকুন, অপরাধী যত ক্ষমতাবানই হোক, সত্যের চেয়ে শক্তিমান তো কখনোই নয়, তাই না?
গুঞ্জন চৌধুরী
গীতিকার ও মিডিয়াকর্মী, ঢাকা।
চ্যানেল ওয়ান আবার চালু হোক
বেসরকারি টিভি চ্যানেল চ্যানেল ওয়ান সরকার বন্ধ করে দিল। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, কোনো রাজনৈতিক কারণে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা হয়নি। তরঙ্গ বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে চ্যানেলের যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির চেয়ারম্যানও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট আবেদন করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর এমন বক্তব্য যদি শতভাগ সঠিকও হয়, তবু এ নিয়ে গুঞ্জন চলছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করার পাল্টা হিসেবেও বিষয়টিকে দেখছেন কেউ কেউ।
ধরে নিলাম, রাজনৈতিক কারণে নয়, শুধু মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতা বা ঋণ শোধ করতে না পেরে যন্ত্রপাতি নিলামে ওঠাই চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করার কারণ। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়াই কি ছিল একমাত্র সমাধান? আর কোনো বিকল্প কি ছিল না? সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় চার শ মানুষ, তাদের পরিবারগুলোর ভবিষ্যত্ কি একেবারেই গুরুত্বহীন বিষয়? কারও দায় থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। অনিয়ম হলে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাও করা যেত।
টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে প্রশ্ন জাগছে, এ দেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতার ভবিষ্যত্ কী? একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পেছনে কত মানুষের কত শ্রম, কত বিনিয়োগ থাকে তাও মনে রাখা উচিত। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এখন কি কেউ মাত্র তিন বছরের জন্য টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন? কেননা, সরকার বদলের এক বছরের মধ্যে কেউ যদি লাইসেন্স পায়, তাহলে প্রতিষ্ঠা করতে লেগে যায় আরও এক বছর। বাকি থাকে তিন বছর। এই তিন বছর পর যদি সরকার পরিবর্তন হয়, তাহলে প্রচলিত সূত্র মেনে সেই চ্যানেলের ভাগ্যে কী দাঁড়ায়! এভাবে সংবাদকর্মীরা কি বারবার বেকার হতেই থাকবেন?
এখন কী করণীয়? প্রথমত, সঠিক ও যোগ্য লোককে টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়ার বিধান করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে পেশাদারির সঙ্গে। তৃতীয়ত, সরকার যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই যেকোনো টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে পারবে না—এই মর্মে একটি আইন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, চ্যানেল ওয়ান আবার দেখার সুযোগ করে দিন। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে নয়, সরকার চাইলে কি যৌক্তিকভাবে, নিয়ম-কানুনের মধ্যেই চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার আবার চালু করার অনুমতি দিতে পারে না?
শামীম আল আমিন
বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেল ওয়ানের সাংবাদিক।
amin.one007@gmail.com
আর কত প্রাণ গেলে...
এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সম-অধিকার, সমান সুযোগ, সবার জন্য উন্নয়ন’। কিন্তু যে সমাজে নারীকে বাঁচতেই দেওয়া হয় না সেখানে কী হবে এই স্লোগান দিয়ে? আমরা যেখানে নারীর জন্য একটি নিরাপদ সমাজই নির্মাণ করতে পারিনি, সেখানে কীভাবে সম-অধিকার, সমান সুযোগ এগুলোর কথা বলি? একটি নারীশিশু জন্মের পর যত দিন মা-বাবার কোলে থাকে শুধু তত দিনই যেন সে নিরাপদ। তারপর যখন সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন থেকেই শুরু হয় তার নিরাপত্তাহীনতা। রাস্তাঘাটে নারীদের সঙ্গে বখাটেদের কুরুচিপূর্ণ আচরণ সাধারণ ঘটনা। একজন কিশোরী বা তরুণীর জীবনে যখন এসব প্রতিনিয়ত চলতে থাকে তখন কি তার স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব? প্রতিবাদ করতে গেলে লাঞ্ছিত হতে হয়। আর আমরা সভ্য সমাজের লোকজন তার জন্য কিছুই করতে পারি না। এমন অসহায়ত্বের মধ্যে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে?
আমরা যখন নির্ভরযোগ্য কোনো সমাধান দিতে পারিনি তখন কোন মুখে তাদের বলি, সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না? আমাদের কোনো আশ্বাস কি তাদের এতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারে? কিন্তু আর কত মেয়ে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আত্মহননের পথটি বেছে নেবে? আর কত প্রাণ চায় এই মানুষরূপী নরপিশাচগুলো? যে বয়সে একটা মেয়ে হাসবে, খেলবে, গাইবে, মন দিয়ে পড়াশোনা করবে, সে বয়সে তাকে করতে হচ্ছে জন্তু-জনোয়ারের কাছ থেকে নিজের সম্ভ্রম রক্ষার লড়াই। এ আমরা কোন সমাজে বাস করছি? এটাকে কি সভ্য সমাজ বলা যায়?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবেও আমাদের কিছু করতে হবে। তীব্র সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই বখাটেদের উত্পাত বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আবেদন, রাজনৈতিকভাবেও আপনারা এদের প্রতিহত করার পদক্ষেপ নিন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিন, যেন কেউ এই বখাটেদের সমর্থন না দেয়। বরং যেখানেই এদের তত্পরতা দেখা যাবে সেখানেই যেন সবাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আর দেখতে চাই না পত্রিকার খবর হিসেবে ফাহিমা, মাহিমা, ইলোরা, পিংকিদের মতো আবারও কোনো মেয়ের আত্মহত্যার মর্মস্পর্শী কাহিনি।
মো. মমতাজ-আল-শিবলী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
titubau2009@gmail.com
ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি প্রসঙ্গে
গত ৬ মে প্রথম আলোয় মশিউল আলমের ‘ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক লেখাটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের দুর্যোগময় মুহূর্তে যখন চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাঁদের অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি, ঠিক সেই সময় ওই লেখা আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। চলচ্চিত্রশিল্পের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা না করে শুধু প্রেক্ষাগৃহ রক্ষার জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার যে সুপারিশ তিনি করেছেন, তাকে আমরা চলচ্চিত্র-গণবিরোধী বলেই মনে করছি।
মশিউল আলম লিখেছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের চলচ্চিত্রশিল্প বিকশিত না হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বিলুপ্তির দিকে এগোলে বিষয়টি হবে শেষ বিচারে আত্মঘাতী।’ আসলে কি তাই? স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে একটা সুরক্ষার মধ্যেই চলচ্চিত্রশিল্প গড়ে উঠেছে।
এই মুহূর্তে চলচ্চিত্রশিল্প বহুবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি। অশ্লীলতা থেকে মুক্ত হয়ে যখন চলচ্চিত্রশিল্প নতুন করে বিকশিত হওয়ার পথ খুঁজছে, তখন ভারতীয় ছবির আমদানিতে আমাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো উপকৃত হতে পারে, কিন্তু চলচ্চিত্রশিল্পের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্পী-কলাকুশলীদের কী হবে সে কথাটি মশিউল আলম ভুলে গেলেন কী করে?
ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির দাবি ত্যাগ করে চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান শত্রু ভিডিও পাইরেসি এবং ভারতীয় টিভি বিনোদন চ্যানেলগুলো বন্ধ করার দাবি তোলা উচিত বলে আমরা মনে করি।
শওকত জামিল
সভাপতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, ঢাকা।
প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ৮০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি সাড়ে ৩৭ হাজার। মোট শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ, সরকারি এক লাখ ৮২ হাজার। মোট প্রাথমিক শিক্ষার্থী এক কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। বাকিরা পড়ে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় এবং মাদরাসায়।
প্রথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব বেশি। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ঝরে পড়ার প্রবণতা কমানো যেতে পারে। শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, তার সদ্ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এসব উদ্যোগ দেখ-ভাল করাও খুব জরুরি। কোন এলাকার বিদ্যালয় ভালো, কোন এলাকায় খারাপ চলছে, সেসবের কারণ কী, তা জানা গেলে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ জন্য শিক্ষা উন্নয়ন সূচক নির্ণয় জরুরি। এ রকম সূচক নির্ধারণের একটা উদ্যোগ নেয় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক পরিচালিত ‘বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নয়ন সূচক’ নামের প্রতিবেদনে ঢাকা শহরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় শিক্ষাচিত্র সন্তোষজনক হলেও সূত্রাপুর, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অবস্থা শোচনীয়। মেট্রোপলিটন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধা বেশি, শিক্ষার্থীদের আর্থসামাজিক অবস্থাও অপেক্ষাকৃত ভালো। সেই তুলনায় এদের শিক্ষার অবস্থা কেন আশানুরূপ নয়, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শিক্ষাচিত্র কিছুটা ভালো। বরিশাল ও চট্টগ্রামের অবস্থা তার পরে। আর সবচেয়ে খারাপ হলো সিলেট বিভাগের অবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থা বেশ খারাপ। জেলাওয়ারি হিসাবে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে আর সুনামগঞ্জের সবচেয়ে নিচে। সার্বিকভাবে দশটি ভালো জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, ফেনী, মানিকগঞ্জ ও রাজশাহী। আর খারাপের ক্রমানুসারে: সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সিলেট, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, গাইবান্ধা, শেরপুর ও নেত্রকোনা।
৬ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের ২৫ শতাংশ এখনো স্কুলে যায় না। এদের বাদ দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়? এই ২৫ শতাংশকে স্কুলে পাঠানো এবং স্কুলে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, বিদ্যালয়গামী ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে না।
ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার তারতম্যের কারণে সব এলাকার শিক্ষাচিত্র সমান নয়। তাই এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। বেশি খারাপ এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার সংকট দূর করে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফলতা আসতে পারে।
তপন বাগচী, কবি ও সাংবাদিক, ঢাকা।
ফিরে যাচ্ছি কি সেই বর্বর যুগে?
ইতিহাসের পাতায় অসভ্য, বর্বর যুগের একটি চিত্র অঙ্কিত আছে। যেখানে ছিল না কোনো মানবিক মূল্যবোধ, ছিল না কোনো মায়া-মমতা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি। কথায় কথায় মানুষ মানুষের প্রতি সহিংসতায় মত্ত হয়ে উঠত। এই একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার চরম উত্কর্ষের যুগে প্রবেশ করে মনের মধ্যে এ কথাটি বারবার আলোড়ন সৃষ্টি করছে। কেন চট্টগ্রামের কিশোর সৌমেনকে প্রাণ দিতে হলো তার সহপাঠীদের হাতে! কেন প্রাণ দিতে হলো জামালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র শাহ জামাল স্বাধীনকে?
আজকের সমাজে কিশোর অপরাধ যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তা ভাবতে গেলে শিউরে উঠি। আগামী দিনের নাগিক যারা হবে, তারা যদি সামান্য কথায় জীবন সংহার করে, তাহলে তাদের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে? এ অপরাধপ্রবণতার কারণ যা-ই হোক না কেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে। সে জন্য প্রয়োজন একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন।
মোহাম্মদ এ জামান
ঠাকুরগাঁও।
লোডশেডিং কমাতে এসির ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে রাখার সরকারি অনুরোধে এসব নেতা কান দিয়েছেন—এ কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে। যে দাবিতে এই পদযাত্রা সেটি কি আসলেই বিএনপির মনের দাবি, নাকি অহেতুক জল ঘোলা করা? আসলে কি ভোলা উপনির্বাচনে এমন কারচুপি হয়েছে যে নির্বাচনটি বাতিল করা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর দুই কমিশনারের পদত্যাগের দাবি তোলা যায়? জনগণ ও বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটি মনে করেন কি না?
দাবি ন্যায্য ও আন্তরিক হলে শুধু রোদ-গরমের কারণে কর্মসূচির মাঝপথে বাড়ি ফিরে যাওয়া স্বাভাবিক নয়, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরা এটা করতে পারেন না। কথায় কথায় জান দেব, রক্ত দেব বলে যাঁরা রাজপথ কাঁপাতে পারেন, তাঁরা একটু রোদ-গরম সহ্য করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত পালন করতে পারবেন না, এটা কেমন কথা?
আমরা লক্ষ করছি, বর্তমান বিরোধী দল কোথাও তাদের ভূমিকা জোরালোভাবে রাখতে পারছে না। না সংসদের ভেতরে, না সংসদের বাইরে। নবম জাতীয় সংসদের এই পনেরো-ষোল মাসের অধিকাংশ সময় তাঁরা যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত থেকেছে। একসময় তারা সংসদে যোগ দিয়েছে বটে, জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলার চেয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে বেশি ব্যস্ত থেকেছে। সবকিছুর মধ্যে তারা ভারতের ‘ষড়যন্ত্র’ খুঁজতে বেশি পছন্দ করে। এগুলো সত্যিকার ও কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নয়।
শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা—এই মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিরোধী দলের উচিত সরকারের মন্দ কাজের যেমন বিরোধিতা করা, তেমনি ভালো কাজে সহযোগিতা করা। সরকারি দলের লোকেরা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করছে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে, স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী হতে দিতে চাচ্ছে না, খুন-ধর্ষণ-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ দমন করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই। এসবের দাবিতে বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলনে রোদ-বৃষ্টির কারণে পিছু হটলে চলবে না। একই সঙ্গে সরকারের ভালো কাজে সহযোগিতা করাও বিরোধী দলের কর্তব্য। যুদ্ধকালীন অপরাধের বিচার সমগ্র জাতির দাবি। অথচ এ বিচারের ক্ষেত্রে বিরোধী দল উল্টো ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়।
কাজী জোবায়েদ
কোমারপুর, আদমদীঘি, বগুড়া।
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন সময়ের দাবি
দেশে চরম বিদ্যুৎ-ঘাটতি চলছে। কৃষক বিদ্যুতের অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না। শহরে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে। আর গ্রামে তো বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অচিরেই গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। সুতরাং গ্যাস বাদে বিদ্যুৎ উত্পাদনের বিকল্প খুঁজতে হবে এখনই। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এর বিকল্প হতে পারে। রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তাদের সাহায্য নিয়ে আমরা এ কাজ শুরু করতে পারি।
আমরা জানি, এটা রাতারাতি করা সম্ভব নয়। তথাপি এখন থেকেই কাজ শুরু করা উচিত। নয়তো ভবিষ্যতে বিদ্যুতের সংকট আরও প্রকট হয়ে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় ধস নামতে পারে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি হলো, এক সরকার কাজ শুরু করবে আর অন্যজন লাল ফিতা কাটবে—এটা একদম সহ্য করতে পারেন না নেতা-নেত্রীরা। দেশের স্বার্থে এমন সংস্কৃতির শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। চর্চা করতে হবে সুস্থ সংস্কৃতির।
সুতরাং বিদ্যুতের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করা এখন সময়ের দাবি।
রুহুল আমিন।
ruhulswdu@yahoo.com
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন-সংকট
১ মে প্রথম আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন-সংকট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নেই। তবু তাঁরা নিজেরাই আবাসিক হলগুলোতে উঠে থাকেন। প্রথম বছর তাদের কষ্ট করতে হয়, তবে তা সাময়িক। ছয় মাস থেকে এক বছরের মতো সময় কষ্ট করে গণরুম বা বারান্দায় থাকতে হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে সবাই রুমে উঠতে পারে। কিন্তু, প্রতিবেদনটির বিবরণে সাধারণ মানুষের এমন ধারণা জন্মাতে পারে যে সব সময় বা পুরো শিক্ষাজীবন ছাত্রছাত্রীদের এভাবেই দিন কাটাতে হয়। আসলে তা নয়।
দ্বিতীয়ত, চারজনের রুমে আটজন থাকাটা কষ্টকর হলেও শিক্ষার্থীদের তা সহনীয় হয়ে গেছে। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এক বিছানায় ডাবল থাকাটা অস্বাভাবিক নয় বৈকি। তা ছাড়া, সব হলে সব সময় ডাবল থাকতে হয় না। যেমন শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, একুশে হল, জহুরুল হক হলসহ অনেক হলে ছাত্ররা তৃতীয় বর্ষ থেকেই একক বিছানা পেয়ে থাকেন।
অধিক জনসংখ্যার কারণে নানাবিধ সমস্যা হয়, সেসব সমস্যায় খাপ খাইয়ে চলতে হয়। আমরা কি এক দিনও যানজট ছাড়া ভাবতে পারি? তাই বলে কি সবকিছু থেমে আছে? এমনকি প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি যানজটে পড়েছে, এমন খবরও আমরা শুনেছি। এ রকম অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বাইরে নয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব না? অবশ্যই বলব, লেখালেখি হবে, তবে তা হবে ভেবেচিন্তে। ঢালাওভাবে খালি গায়ে, ঘুমন্ত ছাত্রদের বিছানাপত্র এলোমেলো কাপড়-চোপড়ের ছবি প্রকাশ করলে শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার ও জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদাবোধে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সীমিত সম্পদের এই দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তা বাংলাদেশের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ভালো বিষয়গুলো বড় করে দেখতে চাই, এভাবে সামনে এগোতে চাই। সাময়িক কষ্টগুলোকে ‘উদ্বাস্তু শিবির’ বলে অতিরঞ্জিত করে দেখতে চাই না।
মো. আজহারুল ইসলাম
ছাত্র-সহকারী, ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমরা কোথায় আছি?
১০ মে মিজানুর রহমান খানের ‘একটি চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার শুনানি’ শীর্ষক নিবন্ধটিতে যা পড়লাম তা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে আমরা কোথায় আছি? কীসের মাঝে বাস করি আমরা সাধারণ জনগণ?
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে দেশে দেশে একটাই কথা উচ্চারিত হয়—বিচার বিভাগকে যে রাষ্ট্রে সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয়, সেটাই হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র। অন্যায় করলে বিচার হবে—এই বিশ্বাসই সমাজে ন্যায্যতার ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখে। এ জন্যই বিচার বিভাগের সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠিত থাকাটা ভীষণ জরুরি।
কিন্তু আমরা কী দেখছি? সাতক্ষীরার চম্পাফুল ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের নয় বছরের নিষ্পাপ শিশু অর্ণবকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে পিশাচ-চক্র। এ রকম বহুক্ষেত্রে আমরা দেখি, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। অপরাধীকে বাঁচাতে প্রভাবশালী সমাজপতি, রাজনৈতিক নেতা, খাকি বাহিনী, কলুষিত আইনজীবী মহল বড়ই সহানুভূতিশীল। আদালতের প্রশাসনও যেন তাদের চেয়ে কম নয়। হায়, সবার কাছে ঠোকর খেয়ে যার কাছে আশ্রয় চাইব, সেখানেও যদি স্বচ্ছতার ঘাটতি পড়ে, তবে আর কে আছে আমাদের পাশে? এটাই কি আইনের শাসন?
আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নেই—এটা একটা আশঙ্কার বিষয়, কিন্তু তার চেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো, আমাদের ফরিয়াদ শোনার কেউ নেই। অতি আধুনিক রাষ্ট্রেও খুন-রাহাজানিসহ ভয়ানক অপরাধগুলো ঘটে। কিন্তু সেই অপরাধের বিচারও সেখানে ঘটে। এবং বিচারে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সেই শাস্তিটুকু অনুশোচনার সঙ্গে, প্রায়শ্চিত্তমূলকভাবেই মেনে নিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে অপরাধী একেবারে শেষ পর্যন্তও যেন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, সে অপরাধ করেছে। বরং বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করে, ‘আদালতে যতক্ষণ অপরাধ প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ কাউকে অপরাধী বলা অন্যায়।’ কারণ জানাই কথা, আদালতের কলকাঠি কীভাবে নাড়াতে হয়, সেটা তারা ভালোই জানে।
নয় বছরের শিশুকে বীভত্স কায়দায় হত্যা করেছে যারা, সেই পিশাচদের তীক্ষধার খড়গের নিচে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো, এটাই আমাদের বেঁচে থাকার সান্ত্বনা। শুধু আবেদন, দয়া করে হাল ছেড়ে দেবেন না। লেগে থাকুন, অপরাধী যত ক্ষমতাবানই হোক, সত্যের চেয়ে শক্তিমান তো কখনোই নয়, তাই না?
গুঞ্জন চৌধুরী
গীতিকার ও মিডিয়াকর্মী, ঢাকা।
চ্যানেল ওয়ান আবার চালু হোক
বেসরকারি টিভি চ্যানেল চ্যানেল ওয়ান সরকার বন্ধ করে দিল। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, কোনো রাজনৈতিক কারণে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা হয়নি। তরঙ্গ বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে চ্যানেলের যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির চেয়ারম্যানও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট আবেদন করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর এমন বক্তব্য যদি শতভাগ সঠিকও হয়, তবু এ নিয়ে গুঞ্জন চলছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করার পাল্টা হিসেবেও বিষয়টিকে দেখছেন কেউ কেউ।
ধরে নিলাম, রাজনৈতিক কারণে নয়, শুধু মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতা বা ঋণ শোধ করতে না পেরে যন্ত্রপাতি নিলামে ওঠাই চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করার কারণ। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়াই কি ছিল একমাত্র সমাধান? আর কোনো বিকল্প কি ছিল না? সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় চার শ মানুষ, তাদের পরিবারগুলোর ভবিষ্যত্ কি একেবারেই গুরুত্বহীন বিষয়? কারও দায় থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। অনিয়ম হলে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাও করা যেত।
টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে প্রশ্ন জাগছে, এ দেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতার ভবিষ্যত্ কী? একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পেছনে কত মানুষের কত শ্রম, কত বিনিয়োগ থাকে তাও মনে রাখা উচিত। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এখন কি কেউ মাত্র তিন বছরের জন্য টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন? কেননা, সরকার বদলের এক বছরের মধ্যে কেউ যদি লাইসেন্স পায়, তাহলে প্রতিষ্ঠা করতে লেগে যায় আরও এক বছর। বাকি থাকে তিন বছর। এই তিন বছর পর যদি সরকার পরিবর্তন হয়, তাহলে প্রচলিত সূত্র মেনে সেই চ্যানেলের ভাগ্যে কী দাঁড়ায়! এভাবে সংবাদকর্মীরা কি বারবার বেকার হতেই থাকবেন?
এখন কী করণীয়? প্রথমত, সঠিক ও যোগ্য লোককে টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়ার বিধান করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে পেশাদারির সঙ্গে। তৃতীয়ত, সরকার যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই যেকোনো টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে পারবে না—এই মর্মে একটি আইন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, চ্যানেল ওয়ান আবার দেখার সুযোগ করে দিন। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে নয়, সরকার চাইলে কি যৌক্তিকভাবে, নিয়ম-কানুনের মধ্যেই চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার আবার চালু করার অনুমতি দিতে পারে না?
শামীম আল আমিন
বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেল ওয়ানের সাংবাদিক।
amin.one007@gmail.com
আর কত প্রাণ গেলে...
এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সম-অধিকার, সমান সুযোগ, সবার জন্য উন্নয়ন’। কিন্তু যে সমাজে নারীকে বাঁচতেই দেওয়া হয় না সেখানে কী হবে এই স্লোগান দিয়ে? আমরা যেখানে নারীর জন্য একটি নিরাপদ সমাজই নির্মাণ করতে পারিনি, সেখানে কীভাবে সম-অধিকার, সমান সুযোগ এগুলোর কথা বলি? একটি নারীশিশু জন্মের পর যত দিন মা-বাবার কোলে থাকে শুধু তত দিনই যেন সে নিরাপদ। তারপর যখন সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন থেকেই শুরু হয় তার নিরাপত্তাহীনতা। রাস্তাঘাটে নারীদের সঙ্গে বখাটেদের কুরুচিপূর্ণ আচরণ সাধারণ ঘটনা। একজন কিশোরী বা তরুণীর জীবনে যখন এসব প্রতিনিয়ত চলতে থাকে তখন কি তার স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব? প্রতিবাদ করতে গেলে লাঞ্ছিত হতে হয়। আর আমরা সভ্য সমাজের লোকজন তার জন্য কিছুই করতে পারি না। এমন অসহায়ত্বের মধ্যে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে?
আমরা যখন নির্ভরযোগ্য কোনো সমাধান দিতে পারিনি তখন কোন মুখে তাদের বলি, সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না? আমাদের কোনো আশ্বাস কি তাদের এতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারে? কিন্তু আর কত মেয়ে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আত্মহননের পথটি বেছে নেবে? আর কত প্রাণ চায় এই মানুষরূপী নরপিশাচগুলো? যে বয়সে একটা মেয়ে হাসবে, খেলবে, গাইবে, মন দিয়ে পড়াশোনা করবে, সে বয়সে তাকে করতে হচ্ছে জন্তু-জনোয়ারের কাছ থেকে নিজের সম্ভ্রম রক্ষার লড়াই। এ আমরা কোন সমাজে বাস করছি? এটাকে কি সভ্য সমাজ বলা যায়?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবেও আমাদের কিছু করতে হবে। তীব্র সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই বখাটেদের উত্পাত বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আবেদন, রাজনৈতিকভাবেও আপনারা এদের প্রতিহত করার পদক্ষেপ নিন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিন, যেন কেউ এই বখাটেদের সমর্থন না দেয়। বরং যেখানেই এদের তত্পরতা দেখা যাবে সেখানেই যেন সবাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আর দেখতে চাই না পত্রিকার খবর হিসেবে ফাহিমা, মাহিমা, ইলোরা, পিংকিদের মতো আবারও কোনো মেয়ের আত্মহত্যার মর্মস্পর্শী কাহিনি।
মো. মমতাজ-আল-শিবলী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
titubau2009@gmail.com
ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি প্রসঙ্গে
গত ৬ মে প্রথম আলোয় মশিউল আলমের ‘ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক লেখাটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের দুর্যোগময় মুহূর্তে যখন চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাঁদের অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি, ঠিক সেই সময় ওই লেখা আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। চলচ্চিত্রশিল্পের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা না করে শুধু প্রেক্ষাগৃহ রক্ষার জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার যে সুপারিশ তিনি করেছেন, তাকে আমরা চলচ্চিত্র-গণবিরোধী বলেই মনে করছি।
মশিউল আলম লিখেছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের চলচ্চিত্রশিল্প বিকশিত না হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বিলুপ্তির দিকে এগোলে বিষয়টি হবে শেষ বিচারে আত্মঘাতী।’ আসলে কি তাই? স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে একটা সুরক্ষার মধ্যেই চলচ্চিত্রশিল্প গড়ে উঠেছে।
এই মুহূর্তে চলচ্চিত্রশিল্প বহুবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি। অশ্লীলতা থেকে মুক্ত হয়ে যখন চলচ্চিত্রশিল্প নতুন করে বিকশিত হওয়ার পথ খুঁজছে, তখন ভারতীয় ছবির আমদানিতে আমাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো উপকৃত হতে পারে, কিন্তু চলচ্চিত্রশিল্পের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্পী-কলাকুশলীদের কী হবে সে কথাটি মশিউল আলম ভুলে গেলেন কী করে?
ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির দাবি ত্যাগ করে চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান শত্রু ভিডিও পাইরেসি এবং ভারতীয় টিভি বিনোদন চ্যানেলগুলো বন্ধ করার দাবি তোলা উচিত বলে আমরা মনে করি।
শওকত জামিল
সভাপতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, ঢাকা।
প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ৮০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি সাড়ে ৩৭ হাজার। মোট শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ, সরকারি এক লাখ ৮২ হাজার। মোট প্রাথমিক শিক্ষার্থী এক কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। বাকিরা পড়ে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় এবং মাদরাসায়।
প্রথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব বেশি। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ঝরে পড়ার প্রবণতা কমানো যেতে পারে। শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, তার সদ্ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এসব উদ্যোগ দেখ-ভাল করাও খুব জরুরি। কোন এলাকার বিদ্যালয় ভালো, কোন এলাকায় খারাপ চলছে, সেসবের কারণ কী, তা জানা গেলে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ জন্য শিক্ষা উন্নয়ন সূচক নির্ণয় জরুরি। এ রকম সূচক নির্ধারণের একটা উদ্যোগ নেয় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক পরিচালিত ‘বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নয়ন সূচক’ নামের প্রতিবেদনে ঢাকা শহরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় শিক্ষাচিত্র সন্তোষজনক হলেও সূত্রাপুর, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অবস্থা শোচনীয়। মেট্রোপলিটন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধা বেশি, শিক্ষার্থীদের আর্থসামাজিক অবস্থাও অপেক্ষাকৃত ভালো। সেই তুলনায় এদের শিক্ষার অবস্থা কেন আশানুরূপ নয়, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শিক্ষাচিত্র কিছুটা ভালো। বরিশাল ও চট্টগ্রামের অবস্থা তার পরে। আর সবচেয়ে খারাপ হলো সিলেট বিভাগের অবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থা বেশ খারাপ। জেলাওয়ারি হিসাবে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে আর সুনামগঞ্জের সবচেয়ে নিচে। সার্বিকভাবে দশটি ভালো জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, ফেনী, মানিকগঞ্জ ও রাজশাহী। আর খারাপের ক্রমানুসারে: সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সিলেট, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, গাইবান্ধা, শেরপুর ও নেত্রকোনা।
৬ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের ২৫ শতাংশ এখনো স্কুলে যায় না। এদের বাদ দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়? এই ২৫ শতাংশকে স্কুলে পাঠানো এবং স্কুলে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, বিদ্যালয়গামী ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে না।
ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার তারতম্যের কারণে সব এলাকার শিক্ষাচিত্র সমান নয়। তাই এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। বেশি খারাপ এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার সংকট দূর করে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফলতা আসতে পারে।
তপন বাগচী, কবি ও সাংবাদিক, ঢাকা।
ফিরে যাচ্ছি কি সেই বর্বর যুগে?
ইতিহাসের পাতায় অসভ্য, বর্বর যুগের একটি চিত্র অঙ্কিত আছে। যেখানে ছিল না কোনো মানবিক মূল্যবোধ, ছিল না কোনো মায়া-মমতা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি। কথায় কথায় মানুষ মানুষের প্রতি সহিংসতায় মত্ত হয়ে উঠত। এই একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার চরম উত্কর্ষের যুগে প্রবেশ করে মনের মধ্যে এ কথাটি বারবার আলোড়ন সৃষ্টি করছে। কেন চট্টগ্রামের কিশোর সৌমেনকে প্রাণ দিতে হলো তার সহপাঠীদের হাতে! কেন প্রাণ দিতে হলো জামালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র শাহ জামাল স্বাধীনকে?
আজকের সমাজে কিশোর অপরাধ যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তা ভাবতে গেলে শিউরে উঠি। আগামী দিনের নাগিক যারা হবে, তারা যদি সামান্য কথায় জীবন সংহার করে, তাহলে তাদের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে? এ অপরাধপ্রবণতার কারণ যা-ই হোক না কেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে। সে জন্য প্রয়োজন একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন।
মোহাম্মদ এ জামান
ঠাকুরগাঁও।
No comments