এইচএসবিসি তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার-উদ্যোক্তা হওয়ার ডাক by মারুফ ইসলাম

আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ঘরে এল এইচএসবিসি তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার! তাও আবার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। মানে সবগুলো পুরস্কারই এল আইবিএর ঘরে। প্রথম বা স্বর্ণপদক জয় করল ফায়ার ফ্লাইস, দ্বিতীয় বা সিলভারপদক পেল কনসেপ্ট ক্রু আর তৃতীয় বা ব্রোঞ্জপদক লাভ করল ফোর সাইট নামের দল। এ তিনটি দলের সদস্যরাই আইবিএর শিক্ষার্থী।


সাফল্যের এ অংশটুকু জানা গেছে দিন কয়েক আগে। এবার জানা হবে কীভাবে করায়ত্ত হলো এমন অভূতপূর্ব অর্জন। প্রথমেই স্বর্ণপদক বিজয়ী দল ফায়ার ফ্লাইস। দলের সদস্য চারজন—মাকামে মাহমুদ, সৈয়দা রিজওয়ানা জাফরী, আয়শা সুলতানা ও রাখসান্দা জিহান। ‘প্রতিযোগিতায় আমরা যে আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম, সেটা ছিল একটু ব্যতিক্রম। আমরা দেখিয়েছিলাম, স্বল্পব্যয়ে মাছের আঁশ দিয়ে কীভাবে “ক্যাপসুল সেল” তৈরি করা যায়।’ কথা শুরু করলেন মাকামে মাহমুদ। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন রাখসান্দা, ‘প্রচলিত অর্থে ক্যাপসুল সেল তৈরি হয় “জেলাটিন” নামক এক ধরনের পদার্থ দিয়ে, যা কিনা আবার তৈরি হয় গরুর শিং, হাড়, পশুর চামড়া ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে।’
‘কিন্তু সেটা কোনো সমস্যা নয়।’ রাখসান্দাকে থামালেন রিজওয়ানা। ‘সমস্যা হচ্ছে, এই জেলাটিন আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। তাই আমরা ক্যাপসুল সেল তৈরি করতে পারি না। আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। ফলে সময় ও ব্যয়—দুটোর জন্যই বেশ ভোগান্তি পোহায় আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো।’
‘তাই আমরা খুঁজছিলাম এমন কিছু...’ কথা শুরু করলেন আয়শা, ‘যা হবে সহজলভ্য এবং দেশেই উৎপাদনযোগ্য।’
অতঃপর চার বন্ধুর শুধুই আইডিয়া খোঁজার পালা। আইডিয়া খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা যখন প্রায় দিশাহারা, তখনই যেন ত্রাণকর্তার মতো আবির্ভূত হলেন বন্ধু আরিফ ওয়াহিদ। আরিফ, বন্ধুমহলে যাঁর আরেক পরিচয় শুভ, তিনিই মাকামদের দিলেন ক্যাপসুল সেল সম্পর্কে ধারণা। তিনি বলেন, ‘ওষুধ শিল্প আমাদের একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু এই খাতে আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছি না কেবল ক্যাপসুল সেলের অভাবে। আমরা প্রয়োজনের মাত্র ৩০ শতাংশ নিজেরা উৎপাদন করতে পারি। বাকি ৭০ শতাংশ আমদানি করতে হয় চীন, ভারত বা ভিয়েতনাম থেকে। সুতরাং আমরা নিজেরাই যদি ক্যাপসুল সেল তৈরি করতে পারি...।’
শুভর আইডিয়াটা মনে ধরে গেল মাকামদের। শুরু হলো চার বন্ধুর শ্রমে-ঘামে একাকার হওয়া দিন-রাত্রি যাপন। যেভাবেই হোক আইডিয়াটা দাঁড় করাতে হবে! এ পর্যায়ে তাঁদের পরিশ্রমের সঙ্গী হন আরেক বন্ধু শাওন। তাঁদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। এ পরিশ্রম সর্বোচ্চ সাফল্যই এনে দিয়েছে মাকামদের হাতে। তাতে অবশ্য তাঁরা ভুলে যাননি বন্ধুদের; বরং কৃতজ্ঞতাই ঝরল মাকামের কণ্ঠ থেকে। ‘সত্যি, শাওন-শুভর কাছে আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। এরা দুজন নানাভাবে নিরলস খাটাখাটুনি করেছে আমাদের সঙ্গে।’
এবার জানা যাক সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদকজয়ীদের কথা। সিলভারপদকজয়ী দলের সদস্যরা হলেন: আশাপূর্ণা দাশ, সামজিদ সিরাজ ও সামিরা সাবা। এই তিন তরুণ পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব প্যাকেট উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণের কৌশল উপস্থাপন করে জয় করে নেন দ্বিতীয় পুরস্কার তথা সিলভারপদক।
অন্যদিকে, খালিদ আল মাশফিক, আনিকা তাসনিম, তানজির সিদ্দিকী ও নাফিসা ইকবাল— এই চার তরুণ ব্যক্তি উদ্যোগে বাংলাদেশে হরিণের ফার্ম তৈরি, হরিণের মাংসের বাজার সৃষ্টি এবং হরিণের শিং ও চামড়া বিদেশে রপ্তানিকরণ প্রক্রিয়ার সহজসাধ্য সমাধান দেখিয়ে জয় করে নেন তৃতীয় পুরস্কার তথা ব্রোঞ্জপদক।

No comments

Powered by Blogger.