মেধা বিকাশের নির্দেশক নয় by লিও জেমস পেরেরা

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সমভাবে শিক্ষার্থীদের মেধারও বিকাশ ঘটছে। এ বছর ৮২ হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া (গোল্ডেন ফাইভ) শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটা আগের মতোই।


আর এটি মেধা বিকাশের পরিমাপক হলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতেও পেত। কিন্তু তা তো পাচ্ছে না।
বরং এসএসসিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ শতাংশ এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হচ্ছে। মেধার বিকাশ সঠিকভাবে হলে এ সংখ্যা বড়জোর ২-৩ শতাংশে নেমে আসত। শিক্ষক ও অভিভাবকের সম্মিলিত সহায়তায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অধিকতর মনোযোগ দেওয়ায় মেধার বিকাশ কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তা জিপিএ-৫ সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে যেকোনোভাবে ৮০-এর ওপর নম্বর পাওয়া, যথাযথভাবে পড়াশোনা করা নয়। সীমিত পড়াশোনার মাধ্যমে এ ফলাফল অর্জন করায় তাদের মেধার বিকাশ হয় না। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার প্রবণতাও বেড়েছে। এ জন্য তারা পুরো বই না পড়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে নেয়।
এসব কারণেই জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি দুই মাস সচেতনভাবে পড়াশোনা করে তাহলেই জিপিএ-৫ পাওয়া সম্ভব। এরা চার থেকে পাঁচ বছরের প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রথমে প্রশ্নের একটি ছোট তালিকা প্রস্তুত করে। এর ওপর চলে প্রস্তুতি। এ কারণে তারা পাঠ্যপুস্তক ব্যাপকভাবে পড়ছে না। অল্প পড়েই ভালো ফল করছে।
জিপিএ-৫ পাওয়ার পেছনে নম্বরের সীমারেখাও একটি বড় কারণ বলে মনে করি। বর্তমানে জিপিএ-৫ পাওয়ার সীমা হলো ৮০-১০০ নম্বরের। এ কারণে সবার লক্ষ্য থাকে ৮০ পাওয়া। এ সীমা ৯১-১০০ তে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আর এ সীমার মধ্যে যারা থাকবে তারাই আলাদা স্বীকৃৃতি পাবে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায়, অনেকে ইনকোর্স, মিডটার্ম পরীক্ষায় খারাপ করে। এর কারণ একটি সংক্ষিপ্ত পড়াশোনার মধ্য দিয়ে তারা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের শিক্ষাটা মুখস্থনির্ভর। বিষয়ের ওপর তাদের দখল থাকে কম। ফলে কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।
শুধু জিপিএর ওপর ভিত্তি করে কলেজে ভর্তি করা উচিত নয়। অনেক ভালো শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে ভালো জিপিএ নাও পেতে পারে। এ কারণে সে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না, এটা ঠিক নয়। তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে সে যোগ্যতা দেখাতে পারে। জিপিএ-৫ই একমাত্র মেধার নিয়ামক নয়। তবে ভাল যে গ্রেডিং পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সংকীর্ণ প্রতিযোগিতা কমে এসেছে। সনাতন পদ্ধতিতে এক-দুই নম্বরের জন্য ফলের পার্থক্য হতো বিরাট। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে গ্রেডিং পদ্ধতির দুর্বলতা কমাতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাই জিপিএ পদ্ধতিরও পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষায় কমন প্রশ্ন খোঁজার একটা প্রবণতা আছে। এ থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। প্রশ্ন এমনভাবে করতে হবে যেন মুখস্থ করার সুযোগ না থাকে। এক বছরের প্রশ্নের সঙ্গে আরেক বছরের প্রশ্নেরও কোনো মিল থাকবে না। জিপিএ-৫ বাড়ানোর জন্য পরীক্ষার খাতায় গ্রেস দেওয়ার প্রবণতাও বন্ধ করতে হবে। খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝেছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট ছোট প্রশ্ন করে মেধা যাচাই করতে হবে। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো ফল দেবে।
ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা: অধ্যক্ষ, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.