পর্বত অভিযান-জীবনে একটা চ্যালেঞ্জ চাই by ইনাম আল হক
জাপানের পর্বতারোহী ‘উকিরো মিউরা’ পঁচাত্তর বছর বয়সে তৃতীয়বার এভারেস্ট জয় করেছিলেন। তাঁর কথা ছিল, জীবনে চ্যালেঞ্জ না থাকলে চলে না! কথাটা ধ্রুব সত্য বলে মানতে হবে, তা নয়। চ্যালেঞ্জ ছাড়া নিশ্চয়ই জীবন চলে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য বেঁচে থাকাই তো একটা চ্যালেঞ্জ।
বাড়তি চ্যালেঞ্জ আমদানি করার আবার কী দরকার! তবে, জীবনসংগ্রামে আমরা সবাই যে সমান কাবু, এ কথাও ঠিক নয়। সচ্ছলতার ছোট ছোট মরূদ্যানে এ দেশেও অনেকের জীবন থিতু হয়। ছকে বাঁধা জীবন তাঁদের ভালোই চলে। কারও কারও আবার চলে না। অমন ‘প্রেডিকেটবল’ জীবনে তাঁরা জীবনের টক-ঝাল স্বাদের অভাব বোধ করেন। জীবনানন্দের কথায় সেই জীবন তাদের ‘ক্লান্ত করে, ক্লান্ত - ক্লান্ত করে।’ সুখে থাকতে তাদের ভূতে কিলায়। নিস্তরঙ্গ জীবনে ‘বোরডম’ এসে ভর করে।
আমার মনে হয়, চ্যালেঞ্জ না থাকলেও মানুষের জীবন চলে ঠিকই; তবে চলে গড়িয়ে গড়িয়ে। গড্ডলিকার জীবনে উদ্দীপনার বিরাট ঘাটতি থাকে। থিতিয়ে পড়া জীবনকে নাড়া দিতে মাঝে মাঝে তাই চ্যালেঞ্জ চাই। কারণে-অকারণে এমন কিছু করা চাই, যা করা প্রায় অসম্ভব। অন্তহীন সমুদ্র, চিরতুষারের মেরু, উত্তুঙ্গ পর্বত ইত্যাদি অগম্য স্থানগুলো জয় করা চাই। আবার আমাদের সমাজেও চ্যালেঞ্জ কম নেই। অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চাই, অবহেলিতের পাশে দাঁড়ানো চাই, গোঁড়ামির ভার কমানো চাই ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমাদের জীবনে চ্যালেঞ্জের অভাব নেই।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করার মতো মানুষও পৃথিবীতে কম নেই। কম হলে আমরা আজও হয়তো গুহা-মানবই রয়ে যেতাম। সাধ করে ওই সব মানুষ অসাধ্য সাধনে ব্রতী হন বলেই না সভ্যতা এগিয়ে চলে। তাই তো যাঁরা দুনিয়ার কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করেছেন, তাঁদের আমরা কদর করি। বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরাও আমাদের ‘হিরো’। এমন অনেক ব্যর্থ নায়কের কথা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। দক্ষিণ মেরু বিজয়ের জন্য ‘আর্নেস্ট শ্যাকলটনের’ প্রতিটি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল। উত্তর মেরুতে প্রথম অভিযাত্রী হতে ‘রওল্ড অ্যামান্ডসেন’ ব্যর্থ হয়েছিলেন। দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অভিযাত্রী হতে ‘ক্যাপ্টেন ফ্যালকন স্কট’ ব্যর্থ ও নিহত হয়েছিলেন। একই দুর্ভাগ্য নেমে এসেছিল ‘জর্জ ম্যালরি’ আর ‘স্যান্ডি আর্ভিনের’ অবিস্মরণীয় এভারেস্ট অভিযানে। ব্যর্থ হলেও এসব মানুষ সর্বকালের, সর্বজনের হিরো।
বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলে বড় ঝুঁকিও কিন্তু নিতে হয়। সফলতার সম্ভাবনা কম থাকে। কোনো কোনো সময় ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতিও সয়ে নিতে হয়। কখনো কখনো মৃত্যুঝুঁকি থাকে। এসব আছে বলেই তো এর নাম চ্যালেঞ্জ। আমাদের আটপৌরে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হলো টিকে থাকা; খুব উচ্চাভিলাষী হলে প্রতিবেশীর এক কাঠি ওপরে থাকা। এই জীবনের মূল সুর হলো ঝুঁকিটুকি এড়িয়ে চলা। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলোও তাই ছোট ছোট, হাতের নাগালের খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের এই আটপৌরে আকাঙ্ক্ষা দিয়ে শক্তিশালী মানুষের জীবন চলে না। এর জন্য চ্যালেঞ্জ চাই; হোক না কিছু ক্ষয়ক্ষতি, থাক না একটু মৃত্যুঝুঁকি।
তরুণের মধ্যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতাটা একটু বেশিই থাকে। কেন যে থাকে, তা জানি না। বয়োবৃদ্ধ বন্ধুরা বলেন, বাস্তবতা ভালো করে তখনো ঘা মারেনি তো, তাই কিছু ফালাফালি চলে আর কি! সত্যি কি তাই? মনে হয় না। তরুণের জীবন তো আমাদের চেয়েও অনিশ্চিত; আরও বেশি পরনির্ভরশীল আর নাজুক। তরুণের জন্য বাস্তবতাটা বৃদ্ধের চেয়ে কঠিন ছাড়া কোমল তো নয়। হয়তো তরুণের দেহে কোনো হরমোন বেশি থাকে বলেই তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতা বেশি। দেহ-রসায়নের কথা আমি কিছুই জানি না। আমি এটুকু জেনেই খুশি যে তারুণ্য থাকলে পৃথিবীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার মানুষের অভাব কোনো দিন হবে না।
ইনাম আল হক: অভিযাত্রিক, পর্বতারোহী
আমার মনে হয়, চ্যালেঞ্জ না থাকলেও মানুষের জীবন চলে ঠিকই; তবে চলে গড়িয়ে গড়িয়ে। গড্ডলিকার জীবনে উদ্দীপনার বিরাট ঘাটতি থাকে। থিতিয়ে পড়া জীবনকে নাড়া দিতে মাঝে মাঝে তাই চ্যালেঞ্জ চাই। কারণে-অকারণে এমন কিছু করা চাই, যা করা প্রায় অসম্ভব। অন্তহীন সমুদ্র, চিরতুষারের মেরু, উত্তুঙ্গ পর্বত ইত্যাদি অগম্য স্থানগুলো জয় করা চাই। আবার আমাদের সমাজেও চ্যালেঞ্জ কম নেই। অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চাই, অবহেলিতের পাশে দাঁড়ানো চাই, গোঁড়ামির ভার কমানো চাই ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমাদের জীবনে চ্যালেঞ্জের অভাব নেই।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করার মতো মানুষও পৃথিবীতে কম নেই। কম হলে আমরা আজও হয়তো গুহা-মানবই রয়ে যেতাম। সাধ করে ওই সব মানুষ অসাধ্য সাধনে ব্রতী হন বলেই না সভ্যতা এগিয়ে চলে। তাই তো যাঁরা দুনিয়ার কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করেছেন, তাঁদের আমরা কদর করি। বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরাও আমাদের ‘হিরো’। এমন অনেক ব্যর্থ নায়কের কথা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। দক্ষিণ মেরু বিজয়ের জন্য ‘আর্নেস্ট শ্যাকলটনের’ প্রতিটি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল। উত্তর মেরুতে প্রথম অভিযাত্রী হতে ‘রওল্ড অ্যামান্ডসেন’ ব্যর্থ হয়েছিলেন। দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অভিযাত্রী হতে ‘ক্যাপ্টেন ফ্যালকন স্কট’ ব্যর্থ ও নিহত হয়েছিলেন। একই দুর্ভাগ্য নেমে এসেছিল ‘জর্জ ম্যালরি’ আর ‘স্যান্ডি আর্ভিনের’ অবিস্মরণীয় এভারেস্ট অভিযানে। ব্যর্থ হলেও এসব মানুষ সর্বকালের, সর্বজনের হিরো।
বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলে বড় ঝুঁকিও কিন্তু নিতে হয়। সফলতার সম্ভাবনা কম থাকে। কোনো কোনো সময় ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতিও সয়ে নিতে হয়। কখনো কখনো মৃত্যুঝুঁকি থাকে। এসব আছে বলেই তো এর নাম চ্যালেঞ্জ। আমাদের আটপৌরে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হলো টিকে থাকা; খুব উচ্চাভিলাষী হলে প্রতিবেশীর এক কাঠি ওপরে থাকা। এই জীবনের মূল সুর হলো ঝুঁকিটুকি এড়িয়ে চলা। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলোও তাই ছোট ছোট, হাতের নাগালের খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের এই আটপৌরে আকাঙ্ক্ষা দিয়ে শক্তিশালী মানুষের জীবন চলে না। এর জন্য চ্যালেঞ্জ চাই; হোক না কিছু ক্ষয়ক্ষতি, থাক না একটু মৃত্যুঝুঁকি।
তরুণের মধ্যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতাটা একটু বেশিই থাকে। কেন যে থাকে, তা জানি না। বয়োবৃদ্ধ বন্ধুরা বলেন, বাস্তবতা ভালো করে তখনো ঘা মারেনি তো, তাই কিছু ফালাফালি চলে আর কি! সত্যি কি তাই? মনে হয় না। তরুণের জীবন তো আমাদের চেয়েও অনিশ্চিত; আরও বেশি পরনির্ভরশীল আর নাজুক। তরুণের জন্য বাস্তবতাটা বৃদ্ধের চেয়ে কঠিন ছাড়া কোমল তো নয়। হয়তো তরুণের দেহে কোনো হরমোন বেশি থাকে বলেই তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতা বেশি। দেহ-রসায়নের কথা আমি কিছুই জানি না। আমি এটুকু জেনেই খুশি যে তারুণ্য থাকলে পৃথিবীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার মানুষের অভাব কোনো দিন হবে না।
ইনাম আল হক: অভিযাত্রিক, পর্বতারোহী
No comments