কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা
১০ মে ২০১২ প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল প্ল্যান বাংলাদেশ। এতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেন। তাঁদের বক্তব্য এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হলো।
যাঁরা অংশ নিলেন
আ ফ ম রুহুলহক
মন্ত্রী, স্বাস্থ্যও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
মুহম্মদ হুমায়ুন কবির
সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্যও পরিবার কল্যাণমন্ত্রণালয়
মাখদুমা নার্গিস
অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক, রিভাইটালাইজেশন অবকমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প)
খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ
মহাপরিচালক, স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর
গণেশ চন্দ্র সরকার
আইইএম অ্যান্ড লাইন ডাইরেক্টর আইইসি মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
আনোয়ার হোসেন সিকদার
ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান বাংলাদেশ
সেলিনা আমিন
কান্ট্রি প্রজেক্টস ম্যানেজার, প্ল্যান বাংলাদেশ
সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা
পরিচালক প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা ও লাইন ডাইরেক্টর, এমএনসি অ্যান্ড এএইচ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মোহাম্মদ শরীফ
পরিচালক এমসিএইচ সার্ভিসেস ও লাইন ডাইরেক্টর, এমসিআরএএইচ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
কে এম আজাদ
ডিপিএম কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কমিউনিকেশন অফিসার, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প
মোমেনা খাতুন
স্বাস্থ্যউপদেষ্টা
মো. খায়রুলইসলাম
কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ
শেহলীনা আহমেদ
স্বাস্থ্যও জনসংখ্যাবিষয়ক উপদেষ্টা, ডিএফআইডি
মো. ইফতেখার হাসান খান
স্বাস্থ্যউপদেষ্টা, প্ল্যান বাংলাদেশ
মো. রাজ্জাকুলআলম
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্ল্যান বাংলাদেশ
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সফল হলে স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে যাবে। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে কিছু অসংগতি তুলে ধরা হয়েছিল। তিন মাস পর আবার আমাদের প্রতিবেদকেরা কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন, সেখানে সময়মতো চিকিৎসক আসেননি। রোগীরা সেবা পাচ্ছে না। আজ এই আলোচনা করার আগে মহেশখালী, সিলেট, বরগুনা, রংপুরসহ কয়েকটি জায়গায় খোঁজ নিয়ে প্রায় আগের চিত্রই পাওয়া গেছে। তবে একটি ভালো খবর হচ্ছে, এই অবস্থার পরও রোগীরা আসছে। এখন সেলিনা আমিনের কাছ থেকে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনব।
সেলিনা আমিন
প্ল্যান বাংলাদেশ ১৪ বছর ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করছে। প্রচলিত প্রথার মাধ্যমে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে এমনভাবে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম যে পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজনই এটিকে পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করে। প্রথম পর্যায়ে আটটি, দ্বিতীয় ধাপে ১৮টি এবং সবশেষে ৪৪টি পর্যন্ত ক্লিনিক তারা চালিয়ে নিতে পারছে। এখন আমরা এক হাজার কমিউনিটি গ্রুপকে দক্ষ করার ব্যবস্থা করছি। এর মধ্যে ৪৫০টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন তারা সময়মতো ক্লিনিক খোলা, ওষুধ সরবরাহসহ অন্যান্য কার্যক্রম ভালোভাবে করছে। প্ল্যান বাংলাদেশ গাজীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এ বছর শুরু হবে বরগুনায়। আমাদের প্রত্যয় হচ্ছে, আপনাদের উৎসাহ সহযোগিতা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া।
আব্দুল কাইয়ুম
প্ল্যান বাংলাদেশের সেলিনা আমিনের কাছ থেকে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে কথা শুনলাম। এবার বলবেন হুমায়ুন কবির।
মুহম্মদ হুমায়ুন কবির
প্ল্যান বাংলাদেশ কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো দিক। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) থাকার কথা। সিএইচসিপি নিয়োগে আমাদের কিছু সময় লেগেছে। দেরি হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। এ জন্য তিন দিন বসবেন স্বাস্থ্য সহকারী এবং তিন দিন বসবেন পরিবার কল্যাণ সহকারী, যাতে চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত না হয়। কিন্তু সিএইচসিপিদের এখন প্রশিক্ষণ থাকায় ক্লিনিকে উপস্থিতিতে ঘাটতি রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় চললে এটি টেকসই হবে। কারণ, এখানে জামি দেয় একজন, অন্যরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। তাই টেকসই কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি।
কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করলে টেকসই হবে না। এমন অনেক দুর্গম এলাকা আছে, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে তত্ত্বাবধান করা সম্ভব নয়। প্ল্যান বাংলাদেশ যেভাবে কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করেছে, সেটা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরাও এভাবেই কাজটি এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কমিউনিটিকেন্দ্রিক কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে কার্যকর করা। কমিউনিটি গ্রুপগুলো কার্যকর হলেই জবাবদিহি আসবে। এ ক্ষেত্রে যাঁরা সরকারি কর্মচারী আছেন, তাঁরাই কমিউনিটি ক্লিনিকের খোঁজখবর রাখবেন এবং কে কোথায় আছেন, প্রশ্ন করবেন। অনেকগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক আমি পরিদর্শন করেছি। কিছুদিন আগে একটায় ভিজিটে যাই। সেখানে দেখা যায় ক্লিনিকে একজন আছেন, একজন নেই। তখন আমি আশপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা খোলা থাকে কি না; ওষুধপত্র পাওয়া যায় কি না। তারা খোলা থাকা এবং ওষুধপ্রাপ্তির ব্যাপারে ইতিবাচক উত্তর দেয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকবে। ওষুধপত্র সবকিছু সরবরাহ করা হবে। সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেখাশোনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি গ্রুপগুলো কর্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে যারা জমি ও অন্যান্য সেবা দিয়েছে, তাদের সম্পৃক্ত করতে পারলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা টেকসই হবে।
ঠিকমতো ওষুধ দিতে পারলে এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের প্রশিক্ষণ শেষ হলে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া যাবে। এটা ঠিক যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। একটু সময় লাগলেও আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। আরও একটি ভালো খবর হলো, কোনো কোনো ক্লিনিকে নিজেদের উদ্যোগে স্বাভাবিক প্রসব করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নয়, আমরা পুষ্টিসেবাও দেব। এখন অনেকগুলো ক্লিনিক থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সম্ভাবনা যে বিশাল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো কিছু ক্লিনিকে অনুপস্থিতি আছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কারণেও এটা হচ্ছে। এসব কিছু সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মাখদুমা নার্গিস
কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সালের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক তৈরি হয়েছে। সে সময় এর মধ্যে আট হাজার ক্লিনিক চালু ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তন হয় এবং এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর বন্ধ থাকায় এগুলোর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (নতুন জনবল) নিয়োগ করা হয়েছে। অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এককথায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দেশের ৪২৩টি উপজেলায় সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণ চলছে। এটি তিন মাসের প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণের ফলে তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবাই এটিকে ভালো বলে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন দিন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে তিন দিন করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় সেবা দেওয়া হবে। এর মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ থাকায় অনেক সময় অনুপস্থিত থাকতে হয়। তার পরও বলা যাবে না যে ঠিকভাবে অফিস করছেন। বাংলাদেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়েছে খুব সাধারণ মানুষের জায়গায়।
এ ক্ষেত্রে বিত্তবানদের অংশগ্রহণ খুবই কম। এসব লোকজন নিয়েই আমরা কমিউনিটি গ্রুপ করেছি। এ গ্রুপে স্থানীয় ইউপি সদস্য সভাপতি, জমিদানকারী সহসভাপতি, দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের অংশগ্রহণ এমনকি একজন ভূমিহীন নারীও থাকবেন। তাঁরা সেবাদানকারীদের সময়মতো ক্লিনিকে উপস্থিতিসহ ওষুধ সরবরাহ, হিসাবপত্র ও যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করবেন। এ জন্য কমিউনিটি গ্রুপগুলো খুব শক্তিশালী করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক না থাকলে তাঁরা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন না। কমিউনিটি গ্রুপগুলোর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর (এনজিও) সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ভবিষ্যতে প্রতিটি ক্লিনিকের সঙ্গে নতুন কক্ষ তৈরি করে নিরাপদ প্রসব করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কাজ করতে গিয়ে আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে। গণমাধ্যম সেটা ধরিয়ে দেবে। আজ প্রথম আলোর সংবাদ দেখে আমি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের ফোন করেছি। তাঁরা বলেছেন, আর্সেনিক প্রোগ্রাম থাকায় স্বাস্থ্য সহকারী ক্লিনিকের বাইরে আছেন। তাঁদের বলেছি, কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, তা লিখে মোবাইল নম্বর ক্লিনিকের সামনে টাঙিয়ে রাখতে। ফোন করলেও জানা যাবে, তাঁরা কোথায় আছেন। তবে সিএইচসিপিরা প্রশিক্ষণ শেষে কাজে যোগ দিলে এ অবস্থা থাকবে না। এখন ৪২৩টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ হচ্ছে। আপনারা আমাদের এ প্রশিক্ষণগুলো দেখেন। তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।
আব্দুল কাইয়ুম
শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরলেন মাখদুমা নার্গিস। এখন বলবেন মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
আ ফ ম রুহুল হক
আজ বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি সফল নাম। দেশে ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তার মধ্যে হয়তো ১০০টির সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। সংবাদপত্রগুলো কেবল যেগুলোর সেবার মান খারাপ, সেগুলোর সংবাদ প্রকাশ করে। এতে মনে করার কোনো কারণ নেই যে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার মান খারাপ। সংবাদপত্রের সমালোচনাকে সমর্থন করি। কারণ, এর মাধ্যমে অনেক সময় দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সংবাদ কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মন্ত্রণালয় থেকে দুর্বলতাগুলো স্বীকার করা হয়। যদি বলি, জেলা-উপজেলার সব হাসপাতাল সঠিকভাবে চলছে, সব কমিউনিটি ক্লিনিক সঠিকভাবে চলছে, এটা সত্য বলা হবে না এবং এ কথা কেউ গ্রহণ করবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। প্ল্যান বাংলাদেশসহ আপনারা যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা জানেন এবং আমরাও জানি, যেখানে স্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালো চলছে। কারণ, তাঁরা প্রতিদিন ক্লিনিকগুলোর বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করছেন।
বঙ্গবন্ধু এই স্বপ্ন দেখেছিলেন, কোনো কিছুকে টেকসই করতে হলে সেখানে স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। মাঝেমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে বক্তৃতা করি। তখন এলাকার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করি, এই ক্লিনিক আপনাদের। আপনারা এর মালিক। আপনারা এটিকে দেখেশুনে রাখবেন। এলাকার মানুষ যখন এটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, তখন ক্লিনিকটি টেকসই হয়। তবে এখানে আপনারা জানেন যে কেউ কাজ করছে, কেউ করছে না। কেউ উপস্থিত, কেউ অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এগুলো সবই সমস্যার অংশ। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাগুলো অতিক্রম করতে হবে। সবশেষে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কি না, সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে পেরেছি কি না, এ বিষয়ে আপনারা যতই সমালোচনা করেন, বলব যে এ ক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফল হয়েছি।
যতটুকু অপূর্ণতা, সেটাকে কীভাবে সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করি। বিগত সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এ সময় আমার দেখামতে, প্ল্যান বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং গ্রামের লোকজনের তত্ত্বাবধানে গাজীপুরে একটি ক্লিনিক খোলা ছিল। শুধু যে খোলা ছিল তা-ই নয়, সেখানে রোগীকে প্রসব করানো হতো। এভাবে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। বিদেশে বক্তৃতা করার সময় একটি কথা বলি, সাইক্লোন, বন্যা, শীত, জলোচ্ছ্বাসসহ বড় বড় দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের মানুষ একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে সিডরের কাছাকাছি সময় হাইতিতে ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে যায় এবং সেখানে লুটপাট শুরু হয়। বিদেশিদের বলেছি, দেখ, আমাদের মানুষ কীভাবে বিপদে মানুষকে সাহায্য করে। স্বীকার করি, কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু বহুলাংশে কমিউনিটি ক্লিনিক সাফল্য অর্জন করেছে।
আগে কর্মীদের কোনো বসার জায়গা ছিল না। এখন সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। তারা এখানে বসে তাদের কাজকর্ম ঠিক করে নিতে পারছে। ফলে বাড়ি বাড়ি যাওয়ায় তাদের আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া কর্মপরিকল্পনায় পরিবার কল্যাণ সহকারী ও স্বাস্থ্য সহকারীদের কে কয় দিন বাড়ি বাড়ি যাবে, সে বিষয়ে বলা আছে। অতএব, বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ কমবে—এই আশঙ্কা ঠিক নয়।
খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা অবশ্যই জরুরি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এটা প্রায় নিশ্চিত যে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থায়িত্ব থাকবে না। দেশের কয়েক জায়গায় কয়েকটি ক্লিনিক ভালো চলতে দেখেছি। কারণ, সেখানে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা আছে।
কোনো মানুষ যখন চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ইত্যাদি কিনে দেয়, তখন সে একধরনের একাত্মবোধ অনুভব করে। ফলে তারা এর ভালোমন্দ দিকগুলো দেখাশোনা করে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় ২৮ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মনে করি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এখন স্থায়ীভাবে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়ার ফলে সেবার মান আরও বেড়ে যাবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, এখান থেকে গ্রামীণ সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়ায় জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাপ কমবে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নিয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ সাধারণ মানুষ। ছয় লাখ রোগীকে সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এগুলো আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
রকফেলার ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ‘লো কস্ট গুড হেলথ’ নামের একটি ডকুমেন্টারি করেছে। সেখানে তারা পৃথিবীকে দেখিয়েছে, বাংলাদেশ কীভাবে স্বল্প ব্যয়ে ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। সংবাদপত্রের সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। দোষত্রুটি ধরে না দিলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব না।
গণেশ চন্দ্র সরকার
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর উদ্দেশ্য ছিল, এখান থেকে প্রাথমিক সেবা পাবে এবং রেফারেল পদ্ধতি থাকবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখানে তিন দিন পরিবার কল্যাণ সহকারী, তিন দিন স্বাস্থ্য সহকারী কাজ করবেন। কিন্তু দেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ হাসপাতালে এলেও পরিবার পরিকল্পনাসেবার জন্য এখনো হাসপাতালে আসতে চায় না। এ বিষয়ে তারা বাড়িতে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ কারণে তিন দিন পরিবার কল্যাণ সহকারী দিয়ে কতটুকু কাজ করা সম্ভব, সেটি একটি প্রশ্ন।
১৯৭৫ সালে এ খাতে যে জনবল ছিল, তা আর বাড়েনি। আজ জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আগের জনবল দিয়ে এখন সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একজন কর্মী একবার কোনো বাড়িতে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার যেতে তাঁর এক বছর সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে মানুষ সেবা পাবে, তাদের নানা রকম অভিযোগ থাকবে। এভাবে কত দিনই বা চলতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মী কিন্তু কেন্দ্রে বসে সেবাটি দিতে পারেন। পরিবার পরিকল্পনাকর্মী সেটা পারেন না। কারণ, তাঁকে বাড়ি বাড়ি যেতে হয়।
মোমেনা খাতুন
সবাই এখানে কমিউনিটি গ্রুপকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। আরও বলেছেন সমর্থক (সাপোর্ট) গ্রুপের কথা। এ দুই বিষয়ের প্রতি আমারও দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যেখানে কমিউনিটি গ্রুপ শক্তিশালী, সেখানে এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খুব সফলতার সঙ্গে চলেছে। যেমন, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কথা বলা যায়। স্থানীয় মানুষকে কমিউনিটি গ্রুপ বোঝাবে যে এ ক্লিনিকগুলো তাদেরই। তাহলে তারা নিজেরাই এর ভালো-মন্দ—সব দিক দেখবে। আমাদের একটি স্লোগান ছিল, আমাদের স্বাস্থ্য আমাদের হাতেই। সবাইকে এ স্লোগানের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে মালিকানার ধারণা দিলে তারা এটি চালিয়ে নেবে। তার ওপর সরকারের তত্ত্বাবধান তো আছেই। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির সার্কুলারে কার কী দায়িত্ব, সেটা বণ্টন করা আছে। সেখানে কমিউনিটি গ্রুপ বা সমর্থক গ্রুপেরও কিছু দায়িত্বের কথা বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা নিজেদের কাজ মনে করে গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। মোটের ওপর স্থানীয় ব্যক্তিদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছাড়া এ ক্লিনিকগুলো ভালোভাবে চালানো সম্ভব নয়।
মো. খায়রুল ইসলাম
সরকার কীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিককে দেখবে, সেটি একটি বিষয়। শুধু দু-একজনকে দু-এক মাস প্রশিক্ষণ দিয়ে ছেড়ে দিলে খুব ভালো চলবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনি বলছেন, কমিউনিটি গ্রুপ ব্যবস্থাপনা করবে। এখন পরিবার কল্যাণ সহকারী, স্বাস্থ্য সহকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার—তাঁরা যদি অফিসে না যান, তাহলে কমিউনিটি গ্রুপ কী ব্যবস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে নেবে? তাদের কী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? কোথায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে? বা তাঁর কথায় কি বেতন কাটা যাবে?
প্রতিটি ক্লিনিক মেরামত বাবদ বছরে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। যেটি ভালো আছে, তার জন্য ৮০ হাজার; যেটি ধসে গেছে, তার জন্যও ৮০ হাজার। আমি সুপারিশ করি, পরবর্তী অর্থ বরাদ্দের সময় ৮০ হাজার টাকা যেন কমিউনিটি গ্রুপকে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত বলব, বাড়ি পরিদর্শন ২০০৭ সালে ছিল ২১ শতাংশ। এখন হয়েছে ১৫ শতাংশ। এর কারণ কী? আগে গ্রামীণ স্বাস্থ্যের যে সূচক ছিল, তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার গুরুত্বের কথা সব সময় বলা হয়েছে। কিন্তু এখন বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে, কিন্তু মানুষের সেবা গ্রহণ কমেনি। এ বিষয়গুলো আমাদের ভাবতে হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি ভালো দিক হলো ওষুধ নিয়ে সবার মাধ্যে সন্তোষ আছে। সবাই প্রয়োজনমতো ওষুধ পাচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিকর দিক হলো, বাংলাদেশে ওষুধের মুদি দোকান আছে দুই লাখ ৫০ হাজার। তার অর্ধেক হয়তো শহরে; অর্ধেক গ্রামে। এগুলোকে মুদি দোকানের বেশি বলা যাবে না। কারণ, কোনো ধরনের প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে এ দোকানগুলো পরিচালনা করা হয় না।
সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা
আমাদের ভাবনা ছিল ছোট অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যবস্থায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কাজ। একটি প্রশ্ন এসেছে, বাড়ি পরিদর্শন আগের তুলনায় কমে গেছে, কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার সূচক ঠিক আছে। এটি এমন হতে পারে যে আগে আমরা যার কাছে যেতাম, সেই মানুষ এখন আমাদের কাছে আসে।
আরও একটি প্রশ্ন আসছে যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ওষুধ দিতে পারেন কি না, তাঁরা সম্পূর্ণ উপযুক্ত, সেটি বলা যাবে না। তবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দিনে দিনে তাঁরা অনেক দক্ষ হয়ে উঠবেন। তার পরও এ বিষয় ভেবে দেখতে হবে। হাসপাতালে রেফার করা রোগী চিকিৎসা করার মতো তাঁদের দক্ষতা-যোগ্যতা আছে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এসব রোগী সঠিক চিকিৎসা না পেলে আবার আশাহত হবে।
আনোয়ার হোসেন সিকদার
১৯৯৮ সাল থেকে প্ল্যান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করে আসছে। ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, একটি হলো গাজীপুরে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাঁর ফান্ডের অর্থে একটি রাস্তা করে দিয়েছেন। ফলে খুব সহজেই মানুষ ক্লিনিকে আসা-যাওয়া করতে পারে। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে আসবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। যদি ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদকে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে এটি টেকসই হবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে আমরা যুক্ত থাকব।
শেহলীনা আহমেদ
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা অসাধারণ। কোনো কোনো জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক সফল, কোনো কোনো জায়গায় বিফল। যেখানে সফল, সেখানে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পেছন থেকে তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজ করেছে। সব পক্ষকে সমন্বয় করার জন্য কোনো এনজিওর ভূমিকা রাখা যেতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ার পর বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ যে কমে আসবে, এটি স্বাভাবিক। কারণ,
মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। তারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক নামটি বিদেশি। এর কোনো বাংলা নাম রাখা যায় কি না, সেদিকে ভাবার জন্য অনুরোধ করছি।
মোহাম্মদ শরীফ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বড় শহরগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমাদের জনবল আছে। তা-ই দিয়ে ঢাকা শহরের বাড়ি বাড়ি কাজ করা শুরু করেছি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর ছাড়া দেশের সব গর্ভবতী নারীর তালিকা তৈরি করেছি মোবাইল নম্বরসহ।
সাত মাস আগে সে সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে সামনের দিনগুলো অনেক ভালো হবে। আমাদের চিকিৎসকের সমস্যা রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় একজন করে চিকিৎসক দিতে পারলে রেফারেল রোগী দেখা সম্ভব হতো এবং আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হতো।
মো. ইফতেখার হাসান খান
আমি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের ল্যাপটপ ও মডেম থাকার প্রস্তাব করছি, যাতে তাঁরা বিশেষ বিশেষ সময় ল্যাপটপের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীক সেবা দিতে পারেন।
ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে রেফারেল রোগীদের সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ করার কতক্ষণ পর সেবা দেওয়া শুরু হলো, সে বিষয় মনিটর করা যায়। এফডব্লিউসি নামের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার একটি কাঠামো আছে। চিকিৎসকদের দুই বছরের ইন্টার্নশিপ হওয়া উচিত। প্রস্তাব হলে এক বছর বিএমডিসিতে ইন্টার্নির পর প্রাইমারি রেজিস্ট্রেশন হবে।
দ্বিতীয় বছর তাঁকে ইন্টার্নি করতে হবে এফডব্লিউসি ও কমিউনিটি ক্লিনিকে। চিকিৎসকেরা গ্রামে থাকতে চান না। যদি শুরুতে ইন্টার্নশিপের নিয়মে উল্লেখ থাকে যে তাঁকে এক বছর গ্রামীণ মানুষের সেবা দিতে হবে, তাহলে ভালো হয়। এক বছর সেবা দেওয়ার পর স্থানীয় ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ আনতে হবে। এভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেওয়া যেতে পারে।
মো. রাজ্জাকুল আলম
কমিউনিটি ক্লিনিক বলতে ঠিক এ মুহূর্তে আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে তা হচ্ছে, গ্রামীণ নারীরা শিশুদের কোলে নিয়ে লাইন ধরে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। গর্ভবতীরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখেফিরে যাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান চিত্র। বর্তমান এ ইতিবাচক চিত্র ধরে রাখতে হলে যা করতে হবে বলেআমি মনে করি তা হচ্ছে, কমিউনিটি ক্লিনিক আমাদেরই ক্লিনিক—এ ধারণা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি কমিউনিটি গ্রুপের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি গ্রুপ, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সিএইচসিপিদের সমন্বয় রেখে কাজ করা। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে পারেন।
কে এম আজাদ
কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে আজ পর্যন্ত এর সঙ্গে আছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে জবাবদিহিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন এখানে উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে বলব, কমিউনিটি ক্লিনিক কীভাবে পরিচালিত হবে, তার জন্য একটি সহায়িকা আছে এবং সেখানে সব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। অতএব, সহায়িকা অনুসরণ করলে এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ার কথা নয়। যেমন, কমিউনিটি ক্লিনিকের যে ওষুধের রেজিস্ট্রার আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ গ্রহণের সময় কমিউনিটি গ্রুপের সভাপতি সেখানে স্বাক্ষর করবেন। সিএইচসিপিরা কীভাবে ছুটিতে আছেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা আছে। সংশোধিত ডিপিপিতে ক্লিনিকের মেরামত খরচের সঙ্গে কমিউনিটি গ্রুপকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
কর্মকর্তা, কর্মচারী, কমিউনিটি গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ যখন মনে করবে, এটি তাদের ক্লিনিক, কেবল তখনই এটি টেকসই হবে।
মাখদুমা নার্গিস
কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিচালনার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও দাতা—সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে সহায়িকা তৈরি করা হয়েছে। এতে কমিউনিটি গ্রুপসহ সব পক্ষের দায়-দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বলা আছে। এটা অনুসরণ করলে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্রশাসনিক ক্ষমতার ব্যাপারে বলা আছে, মাসে কমিউনিটি গ্রুপের একটা মিটিং হবে। সে মিটিংয়ে তারা ক্লিনিকে সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত যে কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাসহ যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ আনতে পারবে। তারা এটি ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল অফিসারের কাছে জানাবেন।
মেডিকেল অফিসার তাঁর ওপরে জানাবেন। এভাবে প্রশাসনিক কাজ চলবে। কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এর সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার, পুষ্টি, পরিবারে তাঁর ক্ষমতায়ন—অনেক কিছু জড়িত। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজকেও পরিবার পরিকল্পনার কাজ মনে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শেষ ভাবনা হওয়া উচিত, সবাই সরকারের লোক। সরকারের যেকোনো কাজ সবাই একসঙ্গে করব।
সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানাই যে তাঁরা মাঝেমধ্যে আমাদের সমস্যাগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। আমাদের পক্ষে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। যখনই কোনো সমস্যার খবর দেখি, তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট জায়গায় ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে দেশের অনেক ক্লিনিকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মায়েরা সেবা নিচ্ছেন। সে খবরও যদি আপনারা দেন, তাহলে আমরা উৎসাহিত হই।
কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এ ওষুধ কোনোভাবে যাতে বাইরে বিক্রি হতে না পারে, সে জন্য ওষুধের গায়ে লাল-সবুজের চিহ্ন দেওয়া আছে।
আ ফ ম রুহুল হক
জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে থাইল্যান্ড গিয়ে বলেন, বাংলাদেশে গিয়ে দেখো, কীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমে সফল হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় স্বীকৃতি। পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনতে পাই, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মানুষের জন্য কিছু কাজ করেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ যতটা আশা করছে, সেটা হয়তো করতে পারছি না। কিন্তু সঠিক পথেই আছি। এই সাড়ে তিন বছরে অনেক কিছু জানতে হয়েছে। জেলা-উপজেলার হাসপাতালকে ভালো করতে চাইছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ভালো করতে চাচ্ছি।
কমিউনিটি ক্লিনিকের লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। সঙ্গে যদি মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু রোধসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসায় লক্ষ্যমাত্রা এসে গেছে। পরিবার পরিকল্পনায় সাড়ে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করতে পারলে এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হবে। পত্রপত্রিকায় গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আমরা সে ব্যাপারে কাজ করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কোনো খবর দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা সমাধান করার উদ্যোগ নিই।
আব্দুল কাইয়ুম
আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আ ফ ম রুহুলহক
মন্ত্রী, স্বাস্থ্যও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
মুহম্মদ হুমায়ুন কবির
সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্যও পরিবার কল্যাণমন্ত্রণালয়
মাখদুমা নার্গিস
অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক, রিভাইটালাইজেশন অবকমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প)
খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ
মহাপরিচালক, স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর
গণেশ চন্দ্র সরকার
আইইএম অ্যান্ড লাইন ডাইরেক্টর আইইসি মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
আনোয়ার হোসেন সিকদার
ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান বাংলাদেশ
সেলিনা আমিন
কান্ট্রি প্রজেক্টস ম্যানেজার, প্ল্যান বাংলাদেশ
সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা
পরিচালক প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা ও লাইন ডাইরেক্টর, এমএনসি অ্যান্ড এএইচ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মোহাম্মদ শরীফ
পরিচালক এমসিএইচ সার্ভিসেস ও লাইন ডাইরেক্টর, এমসিআরএএইচ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
কে এম আজাদ
ডিপিএম কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কমিউনিকেশন অফিসার, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প
মোমেনা খাতুন
স্বাস্থ্যউপদেষ্টা
মো. খায়রুলইসলাম
কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ
শেহলীনা আহমেদ
স্বাস্থ্যও জনসংখ্যাবিষয়ক উপদেষ্টা, ডিএফআইডি
মো. ইফতেখার হাসান খান
স্বাস্থ্যউপদেষ্টা, প্ল্যান বাংলাদেশ
মো. রাজ্জাকুলআলম
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্ল্যান বাংলাদেশ
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সফল হলে স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে যাবে। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে কিছু অসংগতি তুলে ধরা হয়েছিল। তিন মাস পর আবার আমাদের প্রতিবেদকেরা কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন, সেখানে সময়মতো চিকিৎসক আসেননি। রোগীরা সেবা পাচ্ছে না। আজ এই আলোচনা করার আগে মহেশখালী, সিলেট, বরগুনা, রংপুরসহ কয়েকটি জায়গায় খোঁজ নিয়ে প্রায় আগের চিত্রই পাওয়া গেছে। তবে একটি ভালো খবর হচ্ছে, এই অবস্থার পরও রোগীরা আসছে। এখন সেলিনা আমিনের কাছ থেকে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনব।
সেলিনা আমিন
প্ল্যান বাংলাদেশ ১৪ বছর ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করছে। প্রচলিত প্রথার মাধ্যমে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে এমনভাবে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম যে পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজনই এটিকে পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করে। প্রথম পর্যায়ে আটটি, দ্বিতীয় ধাপে ১৮টি এবং সবশেষে ৪৪টি পর্যন্ত ক্লিনিক তারা চালিয়ে নিতে পারছে। এখন আমরা এক হাজার কমিউনিটি গ্রুপকে দক্ষ করার ব্যবস্থা করছি। এর মধ্যে ৪৫০টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন তারা সময়মতো ক্লিনিক খোলা, ওষুধ সরবরাহসহ অন্যান্য কার্যক্রম ভালোভাবে করছে। প্ল্যান বাংলাদেশ গাজীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এ বছর শুরু হবে বরগুনায়। আমাদের প্রত্যয় হচ্ছে, আপনাদের উৎসাহ সহযোগিতা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া।
আব্দুল কাইয়ুম
প্ল্যান বাংলাদেশের সেলিনা আমিনের কাছ থেকে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে কথা শুনলাম। এবার বলবেন হুমায়ুন কবির।
মুহম্মদ হুমায়ুন কবির
প্ল্যান বাংলাদেশ কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো দিক। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) থাকার কথা। সিএইচসিপি নিয়োগে আমাদের কিছু সময় লেগেছে। দেরি হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। এ জন্য তিন দিন বসবেন স্বাস্থ্য সহকারী এবং তিন দিন বসবেন পরিবার কল্যাণ সহকারী, যাতে চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত না হয়। কিন্তু সিএইচসিপিদের এখন প্রশিক্ষণ থাকায় ক্লিনিকে উপস্থিতিতে ঘাটতি রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় চললে এটি টেকসই হবে। কারণ, এখানে জামি দেয় একজন, অন্যরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। তাই টেকসই কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি।
কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করলে টেকসই হবে না। এমন অনেক দুর্গম এলাকা আছে, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে তত্ত্বাবধান করা সম্ভব নয়। প্ল্যান বাংলাদেশ যেভাবে কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করেছে, সেটা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরাও এভাবেই কাজটি এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কমিউনিটিকেন্দ্রিক কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে কার্যকর করা। কমিউনিটি গ্রুপগুলো কার্যকর হলেই জবাবদিহি আসবে। এ ক্ষেত্রে যাঁরা সরকারি কর্মচারী আছেন, তাঁরাই কমিউনিটি ক্লিনিকের খোঁজখবর রাখবেন এবং কে কোথায় আছেন, প্রশ্ন করবেন। অনেকগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক আমি পরিদর্শন করেছি। কিছুদিন আগে একটায় ভিজিটে যাই। সেখানে দেখা যায় ক্লিনিকে একজন আছেন, একজন নেই। তখন আমি আশপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা খোলা থাকে কি না; ওষুধপত্র পাওয়া যায় কি না। তারা খোলা থাকা এবং ওষুধপ্রাপ্তির ব্যাপারে ইতিবাচক উত্তর দেয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকবে। ওষুধপত্র সবকিছু সরবরাহ করা হবে। সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেখাশোনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি গ্রুপগুলো কর্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে যারা জমি ও অন্যান্য সেবা দিয়েছে, তাদের সম্পৃক্ত করতে পারলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা টেকসই হবে।
ঠিকমতো ওষুধ দিতে পারলে এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের প্রশিক্ষণ শেষ হলে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া যাবে। এটা ঠিক যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। একটু সময় লাগলেও আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। আরও একটি ভালো খবর হলো, কোনো কোনো ক্লিনিকে নিজেদের উদ্যোগে স্বাভাবিক প্রসব করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নয়, আমরা পুষ্টিসেবাও দেব। এখন অনেকগুলো ক্লিনিক থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সম্ভাবনা যে বিশাল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো কিছু ক্লিনিকে অনুপস্থিতি আছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কারণেও এটা হচ্ছে। এসব কিছু সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মাখদুমা নার্গিস
কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সালের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক তৈরি হয়েছে। সে সময় এর মধ্যে আট হাজার ক্লিনিক চালু ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তন হয় এবং এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর বন্ধ থাকায় এগুলোর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (নতুন জনবল) নিয়োগ করা হয়েছে। অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এককথায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দেশের ৪২৩টি উপজেলায় সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণ চলছে। এটি তিন মাসের প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণের ফলে তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবাই এটিকে ভালো বলে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিন দিন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে তিন দিন করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় সেবা দেওয়া হবে। এর মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ থাকায় অনেক সময় অনুপস্থিত থাকতে হয়। তার পরও বলা যাবে না যে ঠিকভাবে অফিস করছেন। বাংলাদেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়েছে খুব সাধারণ মানুষের জায়গায়।
এ ক্ষেত্রে বিত্তবানদের অংশগ্রহণ খুবই কম। এসব লোকজন নিয়েই আমরা কমিউনিটি গ্রুপ করেছি। এ গ্রুপে স্থানীয় ইউপি সদস্য সভাপতি, জমিদানকারী সহসভাপতি, দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের অংশগ্রহণ এমনকি একজন ভূমিহীন নারীও থাকবেন। তাঁরা সেবাদানকারীদের সময়মতো ক্লিনিকে উপস্থিতিসহ ওষুধ সরবরাহ, হিসাবপত্র ও যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করবেন। এ জন্য কমিউনিটি গ্রুপগুলো খুব শক্তিশালী করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক না থাকলে তাঁরা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন না। কমিউনিটি গ্রুপগুলোর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর (এনজিও) সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ভবিষ্যতে প্রতিটি ক্লিনিকের সঙ্গে নতুন কক্ষ তৈরি করে নিরাপদ প্রসব করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কাজ করতে গিয়ে আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে। গণমাধ্যম সেটা ধরিয়ে দেবে। আজ প্রথম আলোর সংবাদ দেখে আমি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের ফোন করেছি। তাঁরা বলেছেন, আর্সেনিক প্রোগ্রাম থাকায় স্বাস্থ্য সহকারী ক্লিনিকের বাইরে আছেন। তাঁদের বলেছি, কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, তা লিখে মোবাইল নম্বর ক্লিনিকের সামনে টাঙিয়ে রাখতে। ফোন করলেও জানা যাবে, তাঁরা কোথায় আছেন। তবে সিএইচসিপিরা প্রশিক্ষণ শেষে কাজে যোগ দিলে এ অবস্থা থাকবে না। এখন ৪২৩টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ হচ্ছে। আপনারা আমাদের এ প্রশিক্ষণগুলো দেখেন। তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।
আব্দুল কাইয়ুম
শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরলেন মাখদুমা নার্গিস। এখন বলবেন মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
আ ফ ম রুহুল হক
আজ বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি সফল নাম। দেশে ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তার মধ্যে হয়তো ১০০টির সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। সংবাদপত্রগুলো কেবল যেগুলোর সেবার মান খারাপ, সেগুলোর সংবাদ প্রকাশ করে। এতে মনে করার কোনো কারণ নেই যে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার মান খারাপ। সংবাদপত্রের সমালোচনাকে সমর্থন করি। কারণ, এর মাধ্যমে অনেক সময় দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সংবাদ কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মন্ত্রণালয় থেকে দুর্বলতাগুলো স্বীকার করা হয়। যদি বলি, জেলা-উপজেলার সব হাসপাতাল সঠিকভাবে চলছে, সব কমিউনিটি ক্লিনিক সঠিকভাবে চলছে, এটা সত্য বলা হবে না এবং এ কথা কেউ গ্রহণ করবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। প্ল্যান বাংলাদেশসহ আপনারা যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা জানেন এবং আমরাও জানি, যেখানে স্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালো চলছে। কারণ, তাঁরা প্রতিদিন ক্লিনিকগুলোর বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করছেন।
বঙ্গবন্ধু এই স্বপ্ন দেখেছিলেন, কোনো কিছুকে টেকসই করতে হলে সেখানে স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। মাঝেমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে বক্তৃতা করি। তখন এলাকার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করি, এই ক্লিনিক আপনাদের। আপনারা এর মালিক। আপনারা এটিকে দেখেশুনে রাখবেন। এলাকার মানুষ যখন এটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, তখন ক্লিনিকটি টেকসই হয়। তবে এখানে আপনারা জানেন যে কেউ কাজ করছে, কেউ করছে না। কেউ উপস্থিত, কেউ অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এগুলো সবই সমস্যার অংশ। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাগুলো অতিক্রম করতে হবে। সবশেষে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কি না, সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে পেরেছি কি না, এ বিষয়ে আপনারা যতই সমালোচনা করেন, বলব যে এ ক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফল হয়েছি।
যতটুকু অপূর্ণতা, সেটাকে কীভাবে সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করি। বিগত সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এ সময় আমার দেখামতে, প্ল্যান বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং গ্রামের লোকজনের তত্ত্বাবধানে গাজীপুরে একটি ক্লিনিক খোলা ছিল। শুধু যে খোলা ছিল তা-ই নয়, সেখানে রোগীকে প্রসব করানো হতো। এভাবে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। বিদেশে বক্তৃতা করার সময় একটি কথা বলি, সাইক্লোন, বন্যা, শীত, জলোচ্ছ্বাসসহ বড় বড় দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের মানুষ একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে সিডরের কাছাকাছি সময় হাইতিতে ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে যায় এবং সেখানে লুটপাট শুরু হয়। বিদেশিদের বলেছি, দেখ, আমাদের মানুষ কীভাবে বিপদে মানুষকে সাহায্য করে। স্বীকার করি, কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু বহুলাংশে কমিউনিটি ক্লিনিক সাফল্য অর্জন করেছে।
আগে কর্মীদের কোনো বসার জায়গা ছিল না। এখন সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। তারা এখানে বসে তাদের কাজকর্ম ঠিক করে নিতে পারছে। ফলে বাড়ি বাড়ি যাওয়ায় তাদের আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া কর্মপরিকল্পনায় পরিবার কল্যাণ সহকারী ও স্বাস্থ্য সহকারীদের কে কয় দিন বাড়ি বাড়ি যাবে, সে বিষয়ে বলা আছে। অতএব, বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ কমবে—এই আশঙ্কা ঠিক নয়।
খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা অবশ্যই জরুরি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এটা প্রায় নিশ্চিত যে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থায়িত্ব থাকবে না। দেশের কয়েক জায়গায় কয়েকটি ক্লিনিক ভালো চলতে দেখেছি। কারণ, সেখানে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা আছে।
কোনো মানুষ যখন চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ইত্যাদি কিনে দেয়, তখন সে একধরনের একাত্মবোধ অনুভব করে। ফলে তারা এর ভালোমন্দ দিকগুলো দেখাশোনা করে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় ২৮ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মনে করি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এখন স্থায়ীভাবে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়ার ফলে সেবার মান আরও বেড়ে যাবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, এখান থেকে গ্রামীণ সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়ায় জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাপ কমবে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নিয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ সাধারণ মানুষ। ছয় লাখ রোগীকে সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এগুলো আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
রকফেলার ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ‘লো কস্ট গুড হেলথ’ নামের একটি ডকুমেন্টারি করেছে। সেখানে তারা পৃথিবীকে দেখিয়েছে, বাংলাদেশ কীভাবে স্বল্প ব্যয়ে ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। সংবাদপত্রের সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। দোষত্রুটি ধরে না দিলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব না।
গণেশ চন্দ্র সরকার
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর উদ্দেশ্য ছিল, এখান থেকে প্রাথমিক সেবা পাবে এবং রেফারেল পদ্ধতি থাকবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখানে তিন দিন পরিবার কল্যাণ সহকারী, তিন দিন স্বাস্থ্য সহকারী কাজ করবেন। কিন্তু দেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ হাসপাতালে এলেও পরিবার পরিকল্পনাসেবার জন্য এখনো হাসপাতালে আসতে চায় না। এ বিষয়ে তারা বাড়িতে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ কারণে তিন দিন পরিবার কল্যাণ সহকারী দিয়ে কতটুকু কাজ করা সম্ভব, সেটি একটি প্রশ্ন।
১৯৭৫ সালে এ খাতে যে জনবল ছিল, তা আর বাড়েনি। আজ জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আগের জনবল দিয়ে এখন সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একজন কর্মী একবার কোনো বাড়িতে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার যেতে তাঁর এক বছর সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে মানুষ সেবা পাবে, তাদের নানা রকম অভিযোগ থাকবে। এভাবে কত দিনই বা চলতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মী কিন্তু কেন্দ্রে বসে সেবাটি দিতে পারেন। পরিবার পরিকল্পনাকর্মী সেটা পারেন না। কারণ, তাঁকে বাড়ি বাড়ি যেতে হয়।
মোমেনা খাতুন
সবাই এখানে কমিউনিটি গ্রুপকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। আরও বলেছেন সমর্থক (সাপোর্ট) গ্রুপের কথা। এ দুই বিষয়ের প্রতি আমারও দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যেখানে কমিউনিটি গ্রুপ শক্তিশালী, সেখানে এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খুব সফলতার সঙ্গে চলেছে। যেমন, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কথা বলা যায়। স্থানীয় মানুষকে কমিউনিটি গ্রুপ বোঝাবে যে এ ক্লিনিকগুলো তাদেরই। তাহলে তারা নিজেরাই এর ভালো-মন্দ—সব দিক দেখবে। আমাদের একটি স্লোগান ছিল, আমাদের স্বাস্থ্য আমাদের হাতেই। সবাইকে এ স্লোগানের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে মালিকানার ধারণা দিলে তারা এটি চালিয়ে নেবে। তার ওপর সরকারের তত্ত্বাবধান তো আছেই। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির সার্কুলারে কার কী দায়িত্ব, সেটা বণ্টন করা আছে। সেখানে কমিউনিটি গ্রুপ বা সমর্থক গ্রুপেরও কিছু দায়িত্বের কথা বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা নিজেদের কাজ মনে করে গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। মোটের ওপর স্থানীয় ব্যক্তিদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছাড়া এ ক্লিনিকগুলো ভালোভাবে চালানো সম্ভব নয়।
মো. খায়রুল ইসলাম
সরকার কীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিককে দেখবে, সেটি একটি বিষয়। শুধু দু-একজনকে দু-এক মাস প্রশিক্ষণ দিয়ে ছেড়ে দিলে খুব ভালো চলবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনি বলছেন, কমিউনিটি গ্রুপ ব্যবস্থাপনা করবে। এখন পরিবার কল্যাণ সহকারী, স্বাস্থ্য সহকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার—তাঁরা যদি অফিসে না যান, তাহলে কমিউনিটি গ্রুপ কী ব্যবস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে নেবে? তাদের কী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? কোথায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে? বা তাঁর কথায় কি বেতন কাটা যাবে?
প্রতিটি ক্লিনিক মেরামত বাবদ বছরে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। যেটি ভালো আছে, তার জন্য ৮০ হাজার; যেটি ধসে গেছে, তার জন্যও ৮০ হাজার। আমি সুপারিশ করি, পরবর্তী অর্থ বরাদ্দের সময় ৮০ হাজার টাকা যেন কমিউনিটি গ্রুপকে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত বলব, বাড়ি পরিদর্শন ২০০৭ সালে ছিল ২১ শতাংশ। এখন হয়েছে ১৫ শতাংশ। এর কারণ কী? আগে গ্রামীণ স্বাস্থ্যের যে সূচক ছিল, তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার গুরুত্বের কথা সব সময় বলা হয়েছে। কিন্তু এখন বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে, কিন্তু মানুষের সেবা গ্রহণ কমেনি। এ বিষয়গুলো আমাদের ভাবতে হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি ভালো দিক হলো ওষুধ নিয়ে সবার মাধ্যে সন্তোষ আছে। সবাই প্রয়োজনমতো ওষুধ পাচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিকর দিক হলো, বাংলাদেশে ওষুধের মুদি দোকান আছে দুই লাখ ৫০ হাজার। তার অর্ধেক হয়তো শহরে; অর্ধেক গ্রামে। এগুলোকে মুদি দোকানের বেশি বলা যাবে না। কারণ, কোনো ধরনের প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে এ দোকানগুলো পরিচালনা করা হয় না।
সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা
আমাদের ভাবনা ছিল ছোট অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যবস্থায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কাজ। একটি প্রশ্ন এসেছে, বাড়ি পরিদর্শন আগের তুলনায় কমে গেছে, কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার সূচক ঠিক আছে। এটি এমন হতে পারে যে আগে আমরা যার কাছে যেতাম, সেই মানুষ এখন আমাদের কাছে আসে।
আরও একটি প্রশ্ন আসছে যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ওষুধ দিতে পারেন কি না, তাঁরা সম্পূর্ণ উপযুক্ত, সেটি বলা যাবে না। তবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দিনে দিনে তাঁরা অনেক দক্ষ হয়ে উঠবেন। তার পরও এ বিষয় ভেবে দেখতে হবে। হাসপাতালে রেফার করা রোগী চিকিৎসা করার মতো তাঁদের দক্ষতা-যোগ্যতা আছে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এসব রোগী সঠিক চিকিৎসা না পেলে আবার আশাহত হবে।
আনোয়ার হোসেন সিকদার
১৯৯৮ সাল থেকে প্ল্যান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করে আসছে। ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, একটি হলো গাজীপুরে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাঁর ফান্ডের অর্থে একটি রাস্তা করে দিয়েছেন। ফলে খুব সহজেই মানুষ ক্লিনিকে আসা-যাওয়া করতে পারে। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে আসবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। যদি ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদকে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে এটি টেকসই হবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে আমরা যুক্ত থাকব।
শেহলীনা আহমেদ
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা অসাধারণ। কোনো কোনো জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক সফল, কোনো কোনো জায়গায় বিফল। যেখানে সফল, সেখানে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পেছন থেকে তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজ করেছে। সব পক্ষকে সমন্বয় করার জন্য কোনো এনজিওর ভূমিকা রাখা যেতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ার পর বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিমাণ যে কমে আসবে, এটি স্বাভাবিক। কারণ,
মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। তারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক নামটি বিদেশি। এর কোনো বাংলা নাম রাখা যায় কি না, সেদিকে ভাবার জন্য অনুরোধ করছি।
মোহাম্মদ শরীফ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বড় শহরগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমাদের জনবল আছে। তা-ই দিয়ে ঢাকা শহরের বাড়ি বাড়ি কাজ করা শুরু করেছি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর ছাড়া দেশের সব গর্ভবতী নারীর তালিকা তৈরি করেছি মোবাইল নম্বরসহ।
সাত মাস আগে সে সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে সামনের দিনগুলো অনেক ভালো হবে। আমাদের চিকিৎসকের সমস্যা রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় একজন করে চিকিৎসক দিতে পারলে রেফারেল রোগী দেখা সম্ভব হতো এবং আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হতো।
মো. ইফতেখার হাসান খান
আমি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের ল্যাপটপ ও মডেম থাকার প্রস্তাব করছি, যাতে তাঁরা বিশেষ বিশেষ সময় ল্যাপটপের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীক সেবা দিতে পারেন।
ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে রেফারেল রোগীদের সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ করার কতক্ষণ পর সেবা দেওয়া শুরু হলো, সে বিষয় মনিটর করা যায়। এফডব্লিউসি নামের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার একটি কাঠামো আছে। চিকিৎসকদের দুই বছরের ইন্টার্নশিপ হওয়া উচিত। প্রস্তাব হলে এক বছর বিএমডিসিতে ইন্টার্নির পর প্রাইমারি রেজিস্ট্রেশন হবে।
দ্বিতীয় বছর তাঁকে ইন্টার্নি করতে হবে এফডব্লিউসি ও কমিউনিটি ক্লিনিকে। চিকিৎসকেরা গ্রামে থাকতে চান না। যদি শুরুতে ইন্টার্নশিপের নিয়মে উল্লেখ থাকে যে তাঁকে এক বছর গ্রামীণ মানুষের সেবা দিতে হবে, তাহলে ভালো হয়। এক বছর সেবা দেওয়ার পর স্থানীয় ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ আনতে হবে। এভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেওয়া যেতে পারে।
মো. রাজ্জাকুল আলম
কমিউনিটি ক্লিনিক বলতে ঠিক এ মুহূর্তে আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে তা হচ্ছে, গ্রামীণ নারীরা শিশুদের কোলে নিয়ে লাইন ধরে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। গর্ভবতীরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখেফিরে যাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান চিত্র। বর্তমান এ ইতিবাচক চিত্র ধরে রাখতে হলে যা করতে হবে বলেআমি মনে করি তা হচ্ছে, কমিউনিটি ক্লিনিক আমাদেরই ক্লিনিক—এ ধারণা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি কমিউনিটি গ্রুপের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি গ্রুপ, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সিএইচসিপিদের সমন্বয় রেখে কাজ করা। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে পারেন।
কে এম আজাদ
কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে আজ পর্যন্ত এর সঙ্গে আছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে জবাবদিহিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন এখানে উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে বলব, কমিউনিটি ক্লিনিক কীভাবে পরিচালিত হবে, তার জন্য একটি সহায়িকা আছে এবং সেখানে সব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। অতএব, সহায়িকা অনুসরণ করলে এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ার কথা নয়। যেমন, কমিউনিটি ক্লিনিকের যে ওষুধের রেজিস্ট্রার আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ গ্রহণের সময় কমিউনিটি গ্রুপের সভাপতি সেখানে স্বাক্ষর করবেন। সিএইচসিপিরা কীভাবে ছুটিতে আছেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা আছে। সংশোধিত ডিপিপিতে ক্লিনিকের মেরামত খরচের সঙ্গে কমিউনিটি গ্রুপকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
কর্মকর্তা, কর্মচারী, কমিউনিটি গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ যখন মনে করবে, এটি তাদের ক্লিনিক, কেবল তখনই এটি টেকসই হবে।
মাখদুমা নার্গিস
কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিচালনার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও দাতা—সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে সহায়িকা তৈরি করা হয়েছে। এতে কমিউনিটি গ্রুপসহ সব পক্ষের দায়-দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বলা আছে। এটা অনুসরণ করলে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্রশাসনিক ক্ষমতার ব্যাপারে বলা আছে, মাসে কমিউনিটি গ্রুপের একটা মিটিং হবে। সে মিটিংয়ে তারা ক্লিনিকে সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত যে কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাসহ যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ আনতে পারবে। তারা এটি ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল অফিসারের কাছে জানাবেন।
মেডিকেল অফিসার তাঁর ওপরে জানাবেন। এভাবে প্রশাসনিক কাজ চলবে। কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এর সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার, পুষ্টি, পরিবারে তাঁর ক্ষমতায়ন—অনেক কিছু জড়িত। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজকেও পরিবার পরিকল্পনার কাজ মনে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শেষ ভাবনা হওয়া উচিত, সবাই সরকারের লোক। সরকারের যেকোনো কাজ সবাই একসঙ্গে করব।
সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানাই যে তাঁরা মাঝেমধ্যে আমাদের সমস্যাগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। আমাদের পক্ষে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। যখনই কোনো সমস্যার খবর দেখি, তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট জায়গায় ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে দেশের অনেক ক্লিনিকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মায়েরা সেবা নিচ্ছেন। সে খবরও যদি আপনারা দেন, তাহলে আমরা উৎসাহিত হই।
কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এ ওষুধ কোনোভাবে যাতে বাইরে বিক্রি হতে না পারে, সে জন্য ওষুধের গায়ে লাল-সবুজের চিহ্ন দেওয়া আছে।
আ ফ ম রুহুল হক
জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে থাইল্যান্ড গিয়ে বলেন, বাংলাদেশে গিয়ে দেখো, কীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমে সফল হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় স্বীকৃতি। পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনতে পাই, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মানুষের জন্য কিছু কাজ করেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ যতটা আশা করছে, সেটা হয়তো করতে পারছি না। কিন্তু সঠিক পথেই আছি। এই সাড়ে তিন বছরে অনেক কিছু জানতে হয়েছে। জেলা-উপজেলার হাসপাতালকে ভালো করতে চাইছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ভালো করতে চাচ্ছি।
কমিউনিটি ক্লিনিকের লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। সঙ্গে যদি মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু রোধসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রাথমিক চিকিৎসায় লক্ষ্যমাত্রা এসে গেছে। পরিবার পরিকল্পনায় সাড়ে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করতে পারলে এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হবে। পত্রপত্রিকায় গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আমরা সে ব্যাপারে কাজ করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কোনো খবর দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা সমাধান করার উদ্যোগ নিই।
আব্দুল কাইয়ুম
আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
No comments