বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৪০৩ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। দুদু মিয়া, বীর প্রতীক বীর যোদ্ধা কুশলী যোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ করেছে। প্রচণ্ড সেই আক্রমণ। বিপুল সেনা ও সমরাস্ত্র নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর।
এই আক্রমণ আকস্মিক, তবে অপ্রত্যাশিত নয়। মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। তাঁরা সাহসের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকলেন। শুরু হয়ে গেল তুমুল ভয়াবহ যুদ্ধ। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত।
সেদিন পাকিস্তানি সেনা যারা আক্রমণে অংশ নিয়েছে তারা বেশ দুঃসাহসী। মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তারা সামনে এগোতে থাকল। কোনো কোনো স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। সেটা দেখে পাকিস্তানিরা বেশ উল্লসিত।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান বিভিন্ন স্থানে। সব অবস্থানেই পাকিস্তানি সেনারা একযোগে আক্রমণ করেছে। একটি অবস্থানে কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে আছেন দুদু মিয়া। তাঁদের নেতৃত্বে তিনি নিজেই। দুদু মিয়া পাকিস্তানি সেনাদের দুঃসাহসিকতায় বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে আক্রমণ মোকাবিলা করে পাল্টা আক্রমণ করলেন।
কাভারিং ফায়ারের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁদের অবস্থানের দিকে ক্রল করে এগিয়ে আসছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। দুদু মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। ব্যাপক গোলাগুলিতে হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। থেমে গেল ওদের অগ্রযাত্রা। তখন তিনি আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলো।
এ ঘটনা ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষে। ভোমরায়। সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভোমরা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ওপারে ভারতের গোজাডাঙ্গা। মার্চ-এপ্রিলের প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে খুলনা-সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার একদল প্রতিরোধযোদ্ধা সমবেত হয়েছিলেন ভোমরায়। তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন ইপিআর সদস্য। আর ছিল অল্প কিছুসংখ্যক স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের ইপিআর সদস্যরাই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
সেদিন ভোমরার যুদ্ধে দুদু মিয়াসহ কয়েকজন যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁদের রণকৌশল ও বীরত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধ চলে ১৪-১৫ ঘণ্টা। শেষে পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
দুদু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীনে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের ভোমরা সাব-সেক্টরে। অক্টোবর মাসের শেষে এক যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আট থেকে নয়টি গুলি লাগে। ভারতে তাঁর চিকিৎসা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য দুদু মিয়া বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২২৮।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুদু মিয়ার পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ জানতেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও না ফেরায় তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন তিনি আর বেঁচে নেই। কয়েক মাস পর পঙ্গু অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। ১৯৭২ সালে পঙ্গু দুদু মিয়াকে বিডিআর থেকে অবসর দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তিনি মারা গেছেন।
দুদু মিয়ার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার পটিয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ গোবিন্দারখীল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বদিউর রহমান, মা রহমানা খাতুন। স্ত্রী ছামিরা শবেমেহেরাজ বেগম। তাঁদের এক মেয়ে, তিন ছেলে।
সূত্র: প্রথম আলোর পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৮।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
সেদিন পাকিস্তানি সেনা যারা আক্রমণে অংশ নিয়েছে তারা বেশ দুঃসাহসী। মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তারা সামনে এগোতে থাকল। কোনো কোনো স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। সেটা দেখে পাকিস্তানিরা বেশ উল্লসিত।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান বিভিন্ন স্থানে। সব অবস্থানেই পাকিস্তানি সেনারা একযোগে আক্রমণ করেছে। একটি অবস্থানে কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে আছেন দুদু মিয়া। তাঁদের নেতৃত্বে তিনি নিজেই। দুদু মিয়া পাকিস্তানি সেনাদের দুঃসাহসিকতায় বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে আক্রমণ মোকাবিলা করে পাল্টা আক্রমণ করলেন।
কাভারিং ফায়ারের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁদের অবস্থানের দিকে ক্রল করে এগিয়ে আসছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। দুদু মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। ব্যাপক গোলাগুলিতে হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। থেমে গেল ওদের অগ্রযাত্রা। তখন তিনি আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলো।
এ ঘটনা ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষে। ভোমরায়। সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভোমরা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ওপারে ভারতের গোজাডাঙ্গা। মার্চ-এপ্রিলের প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে খুলনা-সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার একদল প্রতিরোধযোদ্ধা সমবেত হয়েছিলেন ভোমরায়। তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন ইপিআর সদস্য। আর ছিল অল্প কিছুসংখ্যক স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের ইপিআর সদস্যরাই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
সেদিন ভোমরার যুদ্ধে দুদু মিয়াসহ কয়েকজন যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁদের রণকৌশল ও বীরত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধ চলে ১৪-১৫ ঘণ্টা। শেষে পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
দুদু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীনে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের ভোমরা সাব-সেক্টরে। অক্টোবর মাসের শেষে এক যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আট থেকে নয়টি গুলি লাগে। ভারতে তাঁর চিকিৎসা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য দুদু মিয়া বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২২৮।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুদু মিয়ার পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ জানতেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও না ফেরায় তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন তিনি আর বেঁচে নেই। কয়েক মাস পর পঙ্গু অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। ১৯৭২ সালে পঙ্গু দুদু মিয়াকে বিডিআর থেকে অবসর দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তিনি মারা গেছেন।
দুদু মিয়ার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার পটিয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ গোবিন্দারখীল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বদিউর রহমান, মা রহমানা খাতুন। স্ত্রী ছামিরা শবেমেহেরাজ বেগম। তাঁদের এক মেয়ে, তিন ছেলে।
সূত্র: প্রথম আলোর পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৮।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments