চারদিক-ঐতিহ্যের বইমেলায় by সুচিত্রা সরকার
‘আজ তিনি অথর্ব, বুড়িয়ে গেছেন। চোখে ছানি। ম্যাজিশিয়ানের রংদার পোশাকটাও শতচ্ছিন্ন, মলিন। আস্তিনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা হাতের সেই সনাতন মুদ্রায় আর তো দর্শকদের চোখ লাগে না। কারণ, চলচ্চিত্রের নিজের চোখেই আজ চালশে!...’
ভূমিকার এতটুকু পড়েই নূরুল আলম আতিকের নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন-এর বইটি পছন্দ করে ফেললেন আবুল মাজেদ।
ভাই, দাম কত?
উৎসব উপলক্ষে মাত্র ২০ টাকা।—উত্তর আসে অপর প্রান্ত থেকে।
দাম শুনে ঝটপট আরও কিছু বই বাছতে শুরু করেন তিনি।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে শাহবাগের গণগন্থাগার প্রাঙ্গণে ১৫ মে শুরু হয়েছে ঐতিহ্য বই উৎসব। চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। মাসব্যাপী এ আয়োজনে ২৫ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ে বই পাওয়া যাচ্ছে। তাই বইপ্রেমীদের অনেকেই ভিড় করছেন এখানে।
ফারজানা আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তিনি জানান, ‘বাইরের বোর্ডে দেখলাম, এখানে বইমেলা হচ্ছে, তাই দেখতে এলাম।’
খুসবন্ত সিংয়ের নির্বাচিত ছোটগল্প বইটি দেখছেন আনিসুর রহমান। চাকরি করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে।
কী বই কিনছেন?—প্রশ্ন করতেই জানান, ‘শাহবাগে ঐতিহ্যের বই উৎসব হচ্ছে, শুনে চলে এলাম। এই প্রকাশনীর বইগুলোর প্রচ্ছদ, ভেতরের কাগজ বেশ ভালো। ছাপাও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে বেশ মানসম্পন্ন।
লাঠিতে ভর করে উৎসবে এসেছেন আতিকুল হক। অনেকগুলো বই বিক্রয়কর্মীর দিকে এগিয়ে দিলেন। দেখুন তো, দাম কত হলো?
কী বই কিনলেন?
মুচকি হেসে জবাব দেন, ‘বয়স হয়েছে, অবসরে গেছি। কী আর কিনব! ভ্রমণবিষয়ক আর আত্মজীবনীমূলক বই-ই এখন বেশি পড়া হয়। হাসনাত আবদুল হাইয়ের একজন লেখকের প্রতিকৃতি বইটি বেশ পছন্দ হলো। আরও দু-তিনটি নিলাম।’
হন্তদন্ত হয়ে স্টলে এলেন রাজন মিয়া। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। কিছু বই খুঁজেই বিক্রয়কর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, মানিক রচনাবলীটা দেখছি না যে!’
বিক্রয়কর্মী জানান, ‘এখনো ওটা এসে পৌঁছায়নি।’
বেশ হতাশ হলেন তিনি। বললেন, ‘আসলে বাইরে লেখা রয়েছে স্টক থাকা সাপেক্ষে। তাই দেখেই চলে এলাম। আবার উৎসব উপলক্ষে ছাড় দিয়েছে। মানিক রচনাবলী মাত্র তিন হাজার ৫০০ টাকায়। আর রবীন্দ্র রচনাবলী ছয় হাজার ৫০০ টাকা। রবীন্দ্র রচনাবলীটা গতবার কিনেছি। এবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরো রচনাবলি কিনব, ভাবছি।’
বাবার হাত ধরে বই উৎসবে এসেছে মাইশা। খুঁজে খুঁজে কবিতার বই দেখছে সে।
পাশ থেকে মৃদুলও বায়না ধরল মায়ের কাছে। ঐতিহ্য-গোল্লাছুট-প্রথম আলো গল্প লেখা প্রতিযোগিতার ২০১০ সেরা গল্প বইটি তার চাই। অগত্যা মা আর কী করেন! কিনে দিলেন।
তুমি এই বইটি কেন কিনলে?
ক্লাস ফোরপড়ুয়া মৃদুল বিজ্ঞের ভঙ্গিতে জবাব দিল, ‘অনেক গল্প আছে এখানে। আমার গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে। কিন্তু আম্মু বেশি বই কিনে দিতে চায় না। বড় হলে অনেক গল্পের বই কিনব!’
‘আমার গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালো লাগে।’ পাশ থেকে বলে ওঠে ইমরুল আম্মান। মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। ওর হাতে ধরা রাহাত খানের গুপ্তধন নিয়ে ঝামেলা। জিজ্ঞেস করি, ‘কোন লেখকের গোয়েন্দা গল্প পড়ো?
চশমার কাচের ভেতর চোখ পিটপিটিয়ে জবাব দিল, ‘সব ধরনের গোয়েন্দা গল্পই পড়ি। তবে তিন গোয়েন্দা বেশি পছন্দ। বিদেশি লেখকদের গল্পও পড়ি।’
খুদে পাঠকদের কাছ থেকে একটু সরে এগিয়ে যাই পেছনের টেবিলের দিকে। খুব মনোযোগ দিয়ে একজন একটি ছড়ার বই দেখছেন।
কী নাম আপনার?
হাম্মাদুর রহমান।
কী বই কিনছেন?
‘একটি ছড়ার বই কিনলাম। আমি একটি আবৃত্তি দলের সঙ্গে আছি। সেখানে এবার আমরা ছড়া নিয়ে একটি কর্মশালা করব। তাই এটা নিলাম। আর গুয়ানতানামো বে কারাগার নিয়েও একটি বই কিনেছি।’
কিছুদিন আগেই তো বাংলা একাডেমীর বইমেলা হলো, তবু এখানে এলেন কেন?
‘আসলে সে সময় এত ছাড় ছিল না। আর আমি টিউশনির টাকা পেলেই প্রতি মাসে বই কিনি। টাকা তো খরচ হয়ে যায়। আর বই তো সারা জীবন সঙ্গে থাকবে।’
সামনের টেবিলে বেশ আগ্রহ নিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন হাবিবুর রহমান। কলকাতা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন।
কী ধরনের বই কিনছেন?
মৃদু হেসে জবাব দেন, ‘এখানে অনেক বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদ দেখতে পাচ্ছি। এগুলোর মধ্য থেকেই কিনব।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাঈম উৎসব সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মূলত ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে পাবলিক লাইব্রেরির এই প্রাঙ্গণে বই উৎসব করে থাকি। তবে এবারের বই উৎসবটি একটু আলাদা। এ বছর আমাদের প্রকাশনার এক যুগ। এবার আমরা এই উৎসব উপলক্ষে ছয়টি নতুন বই প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া আরও ১০টি বইয়ের পুনর্মুদ্রণও করেছি। আশা করছি, এই উৎসবের মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে বইয়ের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সুচিত্রা সরকার
ভাই, দাম কত?
উৎসব উপলক্ষে মাত্র ২০ টাকা।—উত্তর আসে অপর প্রান্ত থেকে।
দাম শুনে ঝটপট আরও কিছু বই বাছতে শুরু করেন তিনি।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে শাহবাগের গণগন্থাগার প্রাঙ্গণে ১৫ মে শুরু হয়েছে ঐতিহ্য বই উৎসব। চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। মাসব্যাপী এ আয়োজনে ২৫ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ে বই পাওয়া যাচ্ছে। তাই বইপ্রেমীদের অনেকেই ভিড় করছেন এখানে।
ফারজানা আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তিনি জানান, ‘বাইরের বোর্ডে দেখলাম, এখানে বইমেলা হচ্ছে, তাই দেখতে এলাম।’
খুসবন্ত সিংয়ের নির্বাচিত ছোটগল্প বইটি দেখছেন আনিসুর রহমান। চাকরি করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে।
কী বই কিনছেন?—প্রশ্ন করতেই জানান, ‘শাহবাগে ঐতিহ্যের বই উৎসব হচ্ছে, শুনে চলে এলাম। এই প্রকাশনীর বইগুলোর প্রচ্ছদ, ভেতরের কাগজ বেশ ভালো। ছাপাও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে বেশ মানসম্পন্ন।
লাঠিতে ভর করে উৎসবে এসেছেন আতিকুল হক। অনেকগুলো বই বিক্রয়কর্মীর দিকে এগিয়ে দিলেন। দেখুন তো, দাম কত হলো?
কী বই কিনলেন?
মুচকি হেসে জবাব দেন, ‘বয়স হয়েছে, অবসরে গেছি। কী আর কিনব! ভ্রমণবিষয়ক আর আত্মজীবনীমূলক বই-ই এখন বেশি পড়া হয়। হাসনাত আবদুল হাইয়ের একজন লেখকের প্রতিকৃতি বইটি বেশ পছন্দ হলো। আরও দু-তিনটি নিলাম।’
হন্তদন্ত হয়ে স্টলে এলেন রাজন মিয়া। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। কিছু বই খুঁজেই বিক্রয়কর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, মানিক রচনাবলীটা দেখছি না যে!’
বিক্রয়কর্মী জানান, ‘এখনো ওটা এসে পৌঁছায়নি।’
বেশ হতাশ হলেন তিনি। বললেন, ‘আসলে বাইরে লেখা রয়েছে স্টক থাকা সাপেক্ষে। তাই দেখেই চলে এলাম। আবার উৎসব উপলক্ষে ছাড় দিয়েছে। মানিক রচনাবলী মাত্র তিন হাজার ৫০০ টাকায়। আর রবীন্দ্র রচনাবলী ছয় হাজার ৫০০ টাকা। রবীন্দ্র রচনাবলীটা গতবার কিনেছি। এবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরো রচনাবলি কিনব, ভাবছি।’
বাবার হাত ধরে বই উৎসবে এসেছে মাইশা। খুঁজে খুঁজে কবিতার বই দেখছে সে।
পাশ থেকে মৃদুলও বায়না ধরল মায়ের কাছে। ঐতিহ্য-গোল্লাছুট-প্রথম আলো গল্প লেখা প্রতিযোগিতার ২০১০ সেরা গল্প বইটি তার চাই। অগত্যা মা আর কী করেন! কিনে দিলেন।
তুমি এই বইটি কেন কিনলে?
ক্লাস ফোরপড়ুয়া মৃদুল বিজ্ঞের ভঙ্গিতে জবাব দিল, ‘অনেক গল্প আছে এখানে। আমার গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে। কিন্তু আম্মু বেশি বই কিনে দিতে চায় না। বড় হলে অনেক গল্পের বই কিনব!’
‘আমার গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালো লাগে।’ পাশ থেকে বলে ওঠে ইমরুল আম্মান। মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। ওর হাতে ধরা রাহাত খানের গুপ্তধন নিয়ে ঝামেলা। জিজ্ঞেস করি, ‘কোন লেখকের গোয়েন্দা গল্প পড়ো?
চশমার কাচের ভেতর চোখ পিটপিটিয়ে জবাব দিল, ‘সব ধরনের গোয়েন্দা গল্পই পড়ি। তবে তিন গোয়েন্দা বেশি পছন্দ। বিদেশি লেখকদের গল্পও পড়ি।’
খুদে পাঠকদের কাছ থেকে একটু সরে এগিয়ে যাই পেছনের টেবিলের দিকে। খুব মনোযোগ দিয়ে একজন একটি ছড়ার বই দেখছেন।
কী নাম আপনার?
হাম্মাদুর রহমান।
কী বই কিনছেন?
‘একটি ছড়ার বই কিনলাম। আমি একটি আবৃত্তি দলের সঙ্গে আছি। সেখানে এবার আমরা ছড়া নিয়ে একটি কর্মশালা করব। তাই এটা নিলাম। আর গুয়ানতানামো বে কারাগার নিয়েও একটি বই কিনেছি।’
কিছুদিন আগেই তো বাংলা একাডেমীর বইমেলা হলো, তবু এখানে এলেন কেন?
‘আসলে সে সময় এত ছাড় ছিল না। আর আমি টিউশনির টাকা পেলেই প্রতি মাসে বই কিনি। টাকা তো খরচ হয়ে যায়। আর বই তো সারা জীবন সঙ্গে থাকবে।’
সামনের টেবিলে বেশ আগ্রহ নিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন হাবিবুর রহমান। কলকাতা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন।
কী ধরনের বই কিনছেন?
মৃদু হেসে জবাব দেন, ‘এখানে অনেক বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদ দেখতে পাচ্ছি। এগুলোর মধ্য থেকেই কিনব।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাঈম উৎসব সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মূলত ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে পাবলিক লাইব্রেরির এই প্রাঙ্গণে বই উৎসব করে থাকি। তবে এবারের বই উৎসবটি একটু আলাদা। এ বছর আমাদের প্রকাশনার এক যুগ। এবার আমরা এই উৎসব উপলক্ষে ছয়টি নতুন বই প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া আরও ১০টি বইয়ের পুনর্মুদ্রণও করেছি। আশা করছি, এই উৎসবের মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে বইয়ের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সুচিত্রা সরকার
No comments