বিশেষ সাক্ষাৎকার-বহু মানুষকে ব্যাংকের সেবার আওতায় আনতে চাই by আতিউর রহমান

আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ৩ আগস্ট জামালপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন এবং ছিলেন বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন গবেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্মাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও একটি স্মাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।


সেখান থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রিও নেন।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর আহমেদ
প্রথম আলো  আপনার এক বছর শেষ হয়েছে, নিজের কাজের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
আতিউর রহমান  আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। যা করতে চেয়েছিলাম, তার অনেকটা করতে পেরেছি। একটা জায়গাতে আমার কিছুটা অপূর্ণতা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো এখনো চালু করতে পারিনি। তবে ভালো খবর হলো, প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দিয়েছেন। আর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমার অপূর্ণতা পূরণ করার জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করছেন। এই কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় উঠবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে একটা প্রণোদনা আসবে ব্যাংক খাতের জন্য। আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে আছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে আছে। এটা হয়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা উৎসাহ তৈরি হবে। এতে সরকারের উন্নয়ন ভিশনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুরোপুরি এক হয়ে কাজ করতে পারবেন।
প্রথম আলো  গত এক বছরে কী কী করলেন?
আতিউর রহমান  প্রথমবারের মতো দেশের ব্যাংক খাতকে কীভাবে সাজাব তার একটা অংশগ্রহণমূলক কৌশলগত পরিকল্পনা করেছি। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা পরিকল্পনা করেছে। ইতিমধ্যেই তা চূড়ান্ত হয়েছে, ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, শিগগিরই বই আকারে প্রকাশ করা হবে। এর একটা প্রধান দিক হলো, আরও বহুসংখ্যক মানুষকে কীভাবে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়। এর জন্য আমরা অনেক কাজও করেছি। যেমন কৃষিঋণ। আগে ব্যাংকগুলো বলত, এত টাকা দেব, গতবার এত দিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো যাচ্ছে কি না সেটা তদারক করা হতো না। আমরা সেটা করেছি। এমনকি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও এর মধ্যে এনে মাঠে পাঠিয়ে দিতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সবকিছু লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেই হচ্ছে। আমার মনে হয়, বছর শেষে আমরা কৃষিঋণে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা, তার প্রায় সবটাই অর্জন করতে পারব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিজস্ব উদ্যোগে নজরদারি করছে মাঠপর্যায়ে গিয়ে।
আর বিশেষ যে প্রকল্পটি আমরা নিয়েছি, সেটা নতুন ও খুবই সৃজনশীল উদ্যোগ আমরা বলব—বর্গাচাষিদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা। একটা অলাভজনক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে, তার কাছ থেকে ব্যাংক নিশ্চয়তাপত্র (গ্যারান্টি) নিয়ে এটা করতে পেরেছি। আমি শুনলাম তারা মহিলা বর্গাচাষিদেরও গ্রুপের মধ্যে নিয়ে আসছে। এটা কিন্তু একেবারে নতুন একটা দিক খুলে দিয়েছে। এটা নতুন ব্যাংকিং ইনক্লুশন (ব্যাংকিং সেবায় নিয়ে আসা) আমি মনে করি।
তারপর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ২৩-২৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আরও একটা বড় উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত এ খাতেও আমাদের অর্জন অনেক ভালো। চার মাসে আমাদের ৩৬ ভাগ অর্জন হয়েছে। ছয় মাসে ৫০ ভাগের ওপরে যাবে বলে আমার মনে হয়। বছর শেষেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।
যেটা কোনো দিনই বাংলাদেশ ব্যাংক করেনি, কার্বন ফুট প্রিন্ট কমিয়ে আনার একটা কর্মসূচি আমরা নিয়েছি। এটা খুব ধীরে ধীরে যাচ্ছে। কিন্তু এটা খুব ভালো কর্মসূচি বলে আমার মনে হয়। আবার আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। বায়োগ্যাস তৈরি। এ কাজে ট্রাস্ট ব্যাংক অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জৈব সার তৈরি করছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সোলার এনার্জি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য একটা ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে ২২ কোটি টাকা নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরে সোলার প্যানেল বসিয়েছি। এই যে আলোয় বসে আমরা কথা বলছি, তা কিন্তু সোলার প্যানেল দিচ্ছে। এটা ব্যয়বহুল। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এর উৎপাদনখরচ কমিয়ে আনা যায়।
প্রথম আলো  প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রোড-শো করল। এতে কী ফল পেলেন?
আতিউর রহমান  এর উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে ব্যাংকিং সেবার বিষয়ে সচেতন করা। এটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তবে প্রশংসাও পেয়েছি প্রচুর। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কিন্তু আরও বেশি করে। এরপর কিন্তু কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। আমরা ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ৯০ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এতে শুধু ভর্তুকির টাকা নয়, রেমিটেন্স আসবে, তারা নিয়মিত আমানত জমা ও গ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংক খাতের এ পদক্ষেপেই ৩০ শতাংশ ব্যাংক হিসাব বেড়েছে।
এসএমই ঋণ বিতরণে বড় অগ্রগতি হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে নানাভাবে তদারকের তৎপরতা বাড়িয়েছে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশ ব্যাংক একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে কোনো কাজে সরাসরি জড়িয়ে পড়েনি। এমনটা কেন?
আতিউর রহমান  বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের মুখবন্ধে বলা লাইনগুলোর শেষের অংশটিকে আমি নিয়েছি। দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় স্বার্থকে আমি বিবেচনায় নিয়েছি। এখন দেশের বড় অংশ মানুষ যেখানে গ্রামে বাস করে তাদেরকে যদি ব্যাংকের সেবার আওতায় না আনতে পারি কিংবা শহরের যে গরিব মানুষ আছে, তাদের যদি ব্যাংকিং সেবায় ঢোকাতে না পারি তাহলে দেশের স্বার্থ কীভাবে দেখা হবে? সুতরাং সেগুলোর জন্যই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমার মনে হয় ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ছে।
আমাদের এটাকে কিন্তু এখন মডেল হিসেবে বিভিন্ন দেশে নিচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন নেক্সট চ্যাপ্টার বিষয়ে আলোচনা হবে লন্ডনে ৩ জুন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জুয়েলিক সেখানে সভাপতিত্ব করবেন। একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে সেখানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করব। সেখানে আমি প্রধান বক্তা।
প্রথম আলো  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়নে নতুন কী ধরনের উদ্যোগ নিলেন?
আতিউর রহমান  আগে কখনো মুদ্রানীতি আলাপ-আলোচনা করে তৈরি হতো না। আমরা কিন্তু এখন অংশগ্রহণমূলক মুদ্রানীতি তৈরি করছি। এই নীতি তৈরি করতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, দেশের বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, সাবেক অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব, উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিয়েছি। আমরা মুদ্রানীতির জন্য একটা কমিটি করেছি। প্রতি মাসেই আমরা কিন্তু বসছি। এবার এসব আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমার নগদ অংশ (সিআরআর) বাড়ানো হয়েছে। এ রকম অংশগ্রহণমূলক মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য নতুন উদ্যোগ।
প্রথম আলো  আপনারা বৈদেশিক মুদ্রার বড় রিজার্ভকে কীভাবে ব্যবহার করছেন?
আতিউর রহমান  আমরা বিমান কিনতে প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলোকে পেছন থেকে সহযোগিতা করেছি। এর মাধ্যমে চেষ্টা করছি অবকাঠোমো খাতে যদি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করা যায়। এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমা রাখত। আমরা এখন দেশের ব্যাংকগুলোর অফসোর ব্যাংকে এই বৈদেশিক মুদ্রা আমানত রাখছি। সেই অর্থে কিন্তু এবার বিমান কেনা হচ্ছে। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের কাজে লাগছে। আবার বিদেশ থেকে ধার করতে গিয়ে যে বড় অঙ্কের সুদ ব্যয় করতে হতো, তা হচ্ছে না। তিনটা ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে। আমি মনে করি, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আবার এনার্জি খাতের জন্যও আমরা এই রিজার্ভ কাজে লাগাচ্ছি। উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছি।
প্রথম আলো  ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়দায়িত্ব (সিএসআর) নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগ কী অবস্থায় আছে?
আতিউর রহমান  সিএসআর কাজগুলোকে আমরা গুছিয়ে এনেছি। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে আমাদের জানাতে হবে তারা কোথায়, কীভাবে সিএসআর করেছে। এর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর প্রতিবেদন বের করবে। প্রথম প্রতিবেদন বের হয়ে গেছে। এতে করে যে ব্যাংক ভালো করবে, আমরা তাদের পুরস্কৃত করব। তাতে যেসব ব্যাংক সিএসআর কার্যক্রমের মধ্যে নেই তারা এ কাজে উৎসাহিত হবে।
প্রথম আলো  কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রযুক্তিনির্ভর করতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
আতিউর রহমান  সাত বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প (সিবিএসপি) একরকম আটকে ছিল। যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠেছি। দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে বলেছে, এই প্রকল্পের অগ্রগতিতে তারা খুবই সন্তুষ্ট। আরও অর্থ দিতে চায়। তারা এখন ই-পেমেন্ট গেটওয়ে, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সিস্টেম, ইন্টিগ্রেটেড ব্যাংকিং সলিউশন তৈরি করতে অর্থ দেবে। আমরা অটোমেশনে জোর দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ এখন অনলাইনে হয়, ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিও চালু হয়েছে। জুন থেকে আমাদের অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস চালু হচ্ছে। সিআইবি অনলাইনে পাবে ব্যাংকগুলো। মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়ে যাবে। আমাদের শাখাগুলোর মধ্যে আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করব। আমাদের ইচ্ছা হলো, সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগে এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
মানুষ বাসায় বসে কেনাকাটা করতে চায়। আমরা সে ব্যবস্থা করব। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু করতে দিতে চাইত না, বাধা হয়ে দাঁড়াত। এবার বাংলাদেশ ব্যাংক সবকিছু খুলে দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসতে চায় না। সেটা হচ্ছে বাধা। আমি চাই ই-কমার্সটা বাড়ুক। তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রত্যেকটা দোকানে একটা করে ওয়েবপেইজ তৈরি করে দেবে। তাতে নতুন কর্মসংস্থানও হবে।
প্রথম আলো  ব্যাংক সুপারভিশন বা তদারকের ক্ষেত্রে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
আতিউর রহমান  আমরা এখন ব্যাংক সুপারভিশনের বিষয়ে জোর দিয়েছি। তবে আগের মতো কোনো ব্যাংকের কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রথম কিছুদিন সময় দেব, তার মধ্যে ব্যাংকটি সংশোধন না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবার জন্য এই একই ব্যবস্থা। আমরা আমাদের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন থেকে পরিদর্শন কাজ বাড়িয়ে দেব।
প্রথম আলো  আপনার সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খোলা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আতিউর রহমান  আমার দায়িত্ব কিন্তু রেফারির। সরকার মালিকপক্ষ, তারা ঠিক করবে কীভাবে দল দাঁড় করাবে। যেসব বিধান করে দেবে তাই নিয়ে আমাকে চলতে হবে।
তবে আমি বলব, আমি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে কোনো পার্থক্য করব না। কোনো কিছু পেলে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কাজে এই বিভাগ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ হয়নি, আমার ধারণা, করবেও না। আমাকে বলা হয়েছে, সহযোগিতার জন্য করা হয়েছে।
প্রথম আলো  দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সম্পর্কে আপনার মত কী?
আতিউর রহমান  সারা পৃথিবীতে টালমাটাল হয়ে যাওয়ার পরও দেশের অর্থনীতি কিন্তু স্থিতিশীল রয়েছে। আরও ভালো করা যেত। বিশেষত বিনিয়োগের দিক থেকে আরও খানিকটা দেশকে এগিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে সরকার এখন কিন্তু জ্বালানি শক্তি বাড়ানো বিষয়ে অনেকগুলো কর্মসূচি নিয়েছে।
প্রথম আলো  আপনারা শর্তসাপেক্ষে মূলধন হিসাব উন্মুক্ত (ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভারটেবল) করতে যাচ্ছেন।
আতিউর রহমান  আমরা পরীক্ষামূলক কিছু উদ্যোগ নেব। যারা বিদেশে কারখানা করতে চায় তাদের কিছু সুযোগ দেব। যেমন, প্রাণ গ্রুপ, তারা আগরতলায় যদি কারখানা করতে চায় তবে তাদের সিড মানি হিসাবে কিছু অর্থ তাদের রপ্তানি আয় থেকে এ কাজের জন্য ব্যয়ের সুযোগ দেব। তাদের রপ্তানি আয় থেকে তারা যদি বিদেশে কোম্পানি করতে চায় তাহলে ক্ষতি কী? এতে আমাদের দেশের ইমেজও ভালো হবে। এমন আরও দু-একটাকে আমরা অনুমতি দেব। তবে অবশ্যই রিজার্ভ থেকে কোনো অর্থ আমরা দেব না। আর খুবই কম পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হবে।
আর একটা জিনিস আমরা ভাবছি যে, একটা ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ তৈরি করতে পারি কি না। রিজার্ভের একটা অংশ দিয়ে এই তহবিল করে দেওয়া। তাতে এই জাতীয় কাজ আমরা করতে পারব।
প্রথম আলো  ব্যাসেল-২ বাস্তবায়ন সম্পর্কে বলুন।
আতিউর রহমান  আমরা ব্যাসেল-২-এ ঢুকে পড়েছি। তার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তারই আলোকে আমরা দেখেছি, কোনো কোনো ব্যাংক অনুৎপাদনশীল খাতে বেশি বিনিয়োগ করেছে, যেমন জমি কেনা। আমরা ব্যাংকের জমি কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
কোনো কোনো ব্যাংক তাদের সীমার অতিরিক্ত অর্থ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিল। সেই ব্যাংকগুলোকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সেগুলোকে আমরা সময় বেঁধে দিয়েছি। তাদের বলে দিয়েছি, জুনের মধ্যে এগুলো সব সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। আর ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিমুক্তভাবে বিনিয়োগ করতে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে বলেছি।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
আতিউর রহমান  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.