ধর্ম-পরিকল্পিত পরিবার সুখের বন্ধন by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মানব সমাজের আদি ও ক্ষুদ্রতম মৌলিক প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। আর বিবাহ হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনের অন্যতম মাধ্যম। বিবাহ এমন একটি সামাজিক বন্ধন, যার মাধ্যমে নর-নারী একটি স্থায়ী ও মধুর সম্পর্কে আবদ্ধ হয় এবং সন্তান জন্মদানের পরও তাদের এ পারিবারিক সুখের বন্ধন স্থায়ী হয়ে থাকে।
মুসলিম সমাজে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে বিবাহ হচ্ছে একটি মৌলিক উপাদান। ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জীবনে পরিকল্পিত পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের সমন্বয়ে একটি যৌথ পরিবার এবং সামাজিক সুসম্পর্কের ভিত্তি গড়ে ওঠে। পরিকল্পিত পরিবার ছাড়া একজন মানব শিশু সুসন্তান হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে না। সন্তানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাদান, চরিত্র গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য পিতামাতার ওপর বর্তায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে সন্তানসন্ততি ও পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জীবন উপকরণ প্রদান করেছেন।’ (সূরা আন-নাহ্ল, আয়াত-৭২)
পরিবার গঠন ও বৈবাহিক জীবনযাত্রা শুরুর কালে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের বুদ্ধি, সামর্থ্য, কামনা, অভিপ্রায়, কর্মসূচি, লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত। সুদৃঢ়ভাবে পরিকল্পিত পারিবারিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও শলা-পরামর্শের দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভ বিরতিকরণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে বহু পরিবারের অস্বচ্ছন্দ দাম্পত্য জীবন স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যেতে দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মধ্যে জ্ঞানের অভাব, শিক্ষাগত অনগ্রসরতা, অপরিকল্পনা, অযৌক্তিক দাবি ও প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সাংস্কৃতিক বিরোধ প্রভৃতি অসংখ্য কারণে প্রায়ই বৈবাহিক জীবনে দাম্পত্য সম্পর্ক বিকশিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় না। তাই হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে কাজ কর, যাতে কাজটা সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়।’
নর-নারীর মধ্যে সুস্থ-স্বাভাবিক ও পরিকল্পিত পদ্ধতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পথ বৈবাহিক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে প্রশস্ত হয়। পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য সম্পর্কের দ্বারাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতাও গড়ে ওঠে। একে অন্যের সন্তুষ্টি ও স্বস্তির জন্যই নয়, বৈরী পরিস্থিতির মোকাবিলায় যুগল সম্পর্কজাত শক্তি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পরিবারে নতুন অতিথি তথা নবজাত সন্তানের আবির্ভাবের ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক সাংগঠনিক পরিপূর্ণতা লাভ করে। বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পরিবারে শিশুর আগমন ঘটে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষুদ্র পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধনের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে নবজাত সন্তান। ইসলামের আলোকে পরিবার হলো একটি শিশুর জীবন গড়ার প্রাথমিক পাঠশালা ও প্রধান পাঠাগার। এখানে শিশুর জীবনের ভিত রচিত হয়। পরিবারে শিশুরা ধীরে ধীরে গুণে ও মাধুর্যে বড় হয়ে যা কিছু শিখবে বা সুন্দর স্বভাব আয়ত্ত করবে এর বহিঃপ্রকাশ বাইরে ঘটাবে। পরিবার থেকে শিশু অন্যের সঙ্গে মেলামেশার সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম সুযোগ পায়। মুসলিম পারিবারিক কাঠামোর মধ্যেই সামাজিক সম্পর্ক রচনায় শিশুর প্রাথমিক অনুশীলন শুরু হয়।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়েই শিশুরা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার গুণাগুণের পরিচয় লাভ করতে শুরু করে। এ জন্য ক্ষুদ্র পরিবারের প্রধান দুজন সদস্য পিতা ও মাতার গুরুত্ব অপরিসীম। সন্তান পিতা-মাতার অতি প্রিয়জন। তারা পিতা-মাতার প্রতি অনুগত ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়; তারা যা শোনে, যা দেখে, তা-ই বলে ও করে। তাদের স্নেহ, আদর ও সুন্দর আচরণ শেখানো জরুরি। এতে তারা আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও ভালো কথা বলতে শিখবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে ছোটদের স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, তিরমিজি)
শিশুরা পরিবারের আদর-যত্ন, দয়া-মায়া, ভালোবাসা পেলে তারা সুন্দরভাবে বড় হবে এবং আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে মানবীয় গুণাবলির ভিত্তি মজবুত হবে। এভাবে পারিবারিক জীবন শুরুর প্রাথমিক বছরগুলোতেই শিশুর মানসিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব কাঠামো গড়ে ওঠার সুযোগ হয়। পরবর্তী জীবনে শিশুর আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মের ওপর প্রারম্ভিক জীবনাচরণের এই পরিবারিক অভিজ্ঞতা গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারে পিতা-মাতা যে ধরনের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও কাজকর্ম করেন, ছেলে-মেয়েরা সেসব অনুসরণ করতে শিখে। ছেলে-মেয়েরা তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে পিতা-মাতাকে গ্রহণ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের স্নেহ করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষাদান করবে। সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’
পরিকল্পিত পরিবারে ইসলামের নৈতিকতাবোধ, সামাজিক ব্যবহার, রীতিনীতি, চালচলন ও মানুষের সম্পর্কের গুণাগুণ সম্বন্ধে শিশুর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ পারিবারিক অনুশীলন ও শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা চালিকাশক্তির কাজ করে থাকে। পারিবারিক জীবনযাত্রার এসব ভালো দিকের পাশাপাশি শিশুর মন্দ দিকগুলো পরিবারে অসৎ সংস্পর্শ ও অবহেলা থেকেই প্রবল হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। শিশুর পরবর্তী জীবনের জন্য শুধু নয়, বরং সমাজের জন্যও পারিবারিক জীবনে গড়ে ওঠা শিশুর বদস্বভাব বা অসদাচরণগুলো ভীষণ ক্ষতিকর হয়ে প্রতিভাত হয়। সুতরাং উন্নত ভাবধারা, ধর্মীয় জীবনাদর্শের বোধ ও অনুশীলন যদি শিশুরা বাল্যকালে সঞ্চারিত ও চর্চার সুযোগ পায়, তাহলে পরিণত বয়সে তারা দেশ-জাতি-সমাজ ও পরিবারের কল্যাণের সহায়ক হয়ে মানসিক বিকাশ লাভ করতে পারে। পরিবার থেকে শিশুদের উত্তম ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য নবী করিম (সা.) উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান করো। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
পরিকল্পিত পরিবারে সন্তান আগমনে নতুন নতুন দায়দায়িত্ব, চিন্তা-চেতনা ও কর্তব্যবোধ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন সাধন করে দেয়। একমাত্র সুস্থ, সুন্দর ও পরিকল্পিত দাম্পত্য সম্পর্ক নির্মিত হওয়ার মাধ্যমেই ছোট পরিবারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করতে পারে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক উত্থানের জন্য কেবল পরিবারই অনুকূল পরিবেশ বিবেচিত হয়ে থাকে। আর দুটি পৃথক সত্তা নর-নারীর সমন্বিত জীবনযাত্রার মাধ্যমে শিশুর নব জীবনের উপযোগী পরিবেশ রচনা করে দিয়ে থাকেন। মুসলিম পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষের আদান-প্রদান নির্ভর এই যৌথশক্তি শুধু বৈবাহিক সম্পর্ক নির্মাণের মধ্য দিয়েই শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা সম্ভব। আমরা যদি ইসলাম প্রদত্ত দিকনির্দেশনাবলি যথাযথভাবে পালন করে পরিকল্পিত পরিবার গঠন করতে পারি তাহলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে সুখের বন্ধন এবং দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
পরিবার গঠন ও বৈবাহিক জীবনযাত্রা শুরুর কালে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের বুদ্ধি, সামর্থ্য, কামনা, অভিপ্রায়, কর্মসূচি, লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত। সুদৃঢ়ভাবে পরিকল্পিত পারিবারিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও শলা-পরামর্শের দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভ বিরতিকরণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে বহু পরিবারের অস্বচ্ছন্দ দাম্পত্য জীবন স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যেতে দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মধ্যে জ্ঞানের অভাব, শিক্ষাগত অনগ্রসরতা, অপরিকল্পনা, অযৌক্তিক দাবি ও প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সাংস্কৃতিক বিরোধ প্রভৃতি অসংখ্য কারণে প্রায়ই বৈবাহিক জীবনে দাম্পত্য সম্পর্ক বিকশিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় না। তাই হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে কাজ কর, যাতে কাজটা সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়।’
নর-নারীর মধ্যে সুস্থ-স্বাভাবিক ও পরিকল্পিত পদ্ধতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পথ বৈবাহিক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে প্রশস্ত হয়। পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য সম্পর্কের দ্বারাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতাও গড়ে ওঠে। একে অন্যের সন্তুষ্টি ও স্বস্তির জন্যই নয়, বৈরী পরিস্থিতির মোকাবিলায় যুগল সম্পর্কজাত শক্তি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পরিবারে নতুন অতিথি তথা নবজাত সন্তানের আবির্ভাবের ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক সাংগঠনিক পরিপূর্ণতা লাভ করে। বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পরিবারে শিশুর আগমন ঘটে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষুদ্র পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধনের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে নবজাত সন্তান। ইসলামের আলোকে পরিবার হলো একটি শিশুর জীবন গড়ার প্রাথমিক পাঠশালা ও প্রধান পাঠাগার। এখানে শিশুর জীবনের ভিত রচিত হয়। পরিবারে শিশুরা ধীরে ধীরে গুণে ও মাধুর্যে বড় হয়ে যা কিছু শিখবে বা সুন্দর স্বভাব আয়ত্ত করবে এর বহিঃপ্রকাশ বাইরে ঘটাবে। পরিবার থেকে শিশু অন্যের সঙ্গে মেলামেশার সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম সুযোগ পায়। মুসলিম পারিবারিক কাঠামোর মধ্যেই সামাজিক সম্পর্ক রচনায় শিশুর প্রাথমিক অনুশীলন শুরু হয়।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়েই শিশুরা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার গুণাগুণের পরিচয় লাভ করতে শুরু করে। এ জন্য ক্ষুদ্র পরিবারের প্রধান দুজন সদস্য পিতা ও মাতার গুরুত্ব অপরিসীম। সন্তান পিতা-মাতার অতি প্রিয়জন। তারা পিতা-মাতার প্রতি অনুগত ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়; তারা যা শোনে, যা দেখে, তা-ই বলে ও করে। তাদের স্নেহ, আদর ও সুন্দর আচরণ শেখানো জরুরি। এতে তারা আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও ভালো কথা বলতে শিখবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে ছোটদের স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, তিরমিজি)
শিশুরা পরিবারের আদর-যত্ন, দয়া-মায়া, ভালোবাসা পেলে তারা সুন্দরভাবে বড় হবে এবং আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে মানবীয় গুণাবলির ভিত্তি মজবুত হবে। এভাবে পারিবারিক জীবন শুরুর প্রাথমিক বছরগুলোতেই শিশুর মানসিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব কাঠামো গড়ে ওঠার সুযোগ হয়। পরবর্তী জীবনে শিশুর আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মের ওপর প্রারম্ভিক জীবনাচরণের এই পরিবারিক অভিজ্ঞতা গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারে পিতা-মাতা যে ধরনের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও কাজকর্ম করেন, ছেলে-মেয়েরা সেসব অনুসরণ করতে শিখে। ছেলে-মেয়েরা তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে পিতা-মাতাকে গ্রহণ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের স্নেহ করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষাদান করবে। সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’
পরিকল্পিত পরিবারে ইসলামের নৈতিকতাবোধ, সামাজিক ব্যবহার, রীতিনীতি, চালচলন ও মানুষের সম্পর্কের গুণাগুণ সম্বন্ধে শিশুর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ পারিবারিক অনুশীলন ও শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা চালিকাশক্তির কাজ করে থাকে। পারিবারিক জীবনযাত্রার এসব ভালো দিকের পাশাপাশি শিশুর মন্দ দিকগুলো পরিবারে অসৎ সংস্পর্শ ও অবহেলা থেকেই প্রবল হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। শিশুর পরবর্তী জীবনের জন্য শুধু নয়, বরং সমাজের জন্যও পারিবারিক জীবনে গড়ে ওঠা শিশুর বদস্বভাব বা অসদাচরণগুলো ভীষণ ক্ষতিকর হয়ে প্রতিভাত হয়। সুতরাং উন্নত ভাবধারা, ধর্মীয় জীবনাদর্শের বোধ ও অনুশীলন যদি শিশুরা বাল্যকালে সঞ্চারিত ও চর্চার সুযোগ পায়, তাহলে পরিণত বয়সে তারা দেশ-জাতি-সমাজ ও পরিবারের কল্যাণের সহায়ক হয়ে মানসিক বিকাশ লাভ করতে পারে। পরিবার থেকে শিশুদের উত্তম ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য নবী করিম (সা.) উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান করো। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
পরিকল্পিত পরিবারে সন্তান আগমনে নতুন নতুন দায়দায়িত্ব, চিন্তা-চেতনা ও কর্তব্যবোধ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন সাধন করে দেয়। একমাত্র সুস্থ, সুন্দর ও পরিকল্পিত দাম্পত্য সম্পর্ক নির্মিত হওয়ার মাধ্যমেই ছোট পরিবারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করতে পারে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক উত্থানের জন্য কেবল পরিবারই অনুকূল পরিবেশ বিবেচিত হয়ে থাকে। আর দুটি পৃথক সত্তা নর-নারীর সমন্বিত জীবনযাত্রার মাধ্যমে শিশুর নব জীবনের উপযোগী পরিবেশ রচনা করে দিয়ে থাকেন। মুসলিম পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষের আদান-প্রদান নির্ভর এই যৌথশক্তি শুধু বৈবাহিক সম্পর্ক নির্মাণের মধ্য দিয়েই শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা সম্ভব। আমরা যদি ইসলাম প্রদত্ত দিকনির্দেশনাবলি যথাযথভাবে পালন করে পরিকল্পিত পরিবার গঠন করতে পারি তাহলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে সুখের বন্ধন এবং দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments