সাক্ষাৎকার-বাপেক্সকে অবজ্ঞার খেসারত দিয়েছে দেশ by ড. বদরুল ইমাম

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অজয় দাশগুপ্ত বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৭৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানের ভূতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৩ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।


১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের কিং ফাহদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে আরও তিন বছর কাজ করেন কানাডার রেগিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমকালের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন হরিপুর ও কৈলাসটিলার গ্যাসক্ষেত্র এবং বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সম্ভাবনা বিষয়ে
সমকাল :কৈলাসটিলা ও হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র এখন থেকে তেলক্ষেত্র। এ ঘোষণা এসেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে আশির দশকের শেষদিকে আপনি এবং আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পেট্রোবাংলা কিংবা জ্বালানি মন্ত্রণালয়_ সর্বোপরি সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। অবশেষে সত্য স্বীকৃত হয়েছে। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
বদরুল ইমাম :বাংলাদেশে এই প্রথম অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ক্ষেত্র পাওয়া গেল। আগামী এক বছরের মধ্যে এখান থেকে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার তরফে। এ খবরে দেশবাসী আনন্দিত। আমিও তাদের আনন্দের শরিক। বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড) ১৯৮৭ সালেই এ তেলক্ষেত্রের সন্ধান পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তৎকালীন জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও সরকার বাপেক্সকে না দিয়ে এ ক্ষেত্র তুলে দেয় সিমিটার নামে একটি স্বল্প পরিচিত বিদেশি কোম্পানির হাতে। তারা সুরমা-১ নামে কেবল একটি কূপ খনন করে। এর ভিত্তিতে তারা যে রেখাচিত্র (লগ) তৈরি করে, সেটা কোনোভাবে আমার হস্তগত হয়েছিল। আমি এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করি এবং তেল মজুদ থাকার চিহ্ন দেখতে পাই। এ বিষয়টি নিয়ে সে সময়ে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলি এবং তারাও সহমত পোষণ করেন। কিন্তু সিমিটার এ তেলক্ষেত্রের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
সমকাল :সে সময়ে সিমিটারের হাতে হরিপুর তেলক্ষেত্র তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ হয় এবং আয়োজকরা আপনার অভিমতকে সমর্থন জানিয়েছিল...।
বদরুল ইমাম :হ্যাঁ, আমার মনে আছে, যুব ইউনিয়ন নামে একটি সংগঠনের তরুণরা সিমিটারকে হরিপুর তেলক্ষেত্র প্রদানের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪৬ কিলোমিটার পদযাত্রার আয়োজন করেছিল। সিলেটে আয়োজিত সমাবেশে সংহতি জানাতে অনেক সংগঠনের নেতারা হাজির ছিলেন। এর পর একটি গণতদন্ত কমিশন গঠিত হয়। তার সঙ্গে তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত আইনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন নেতৃত্ব প্রদান করেন। সে সময়ে প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য সঠিক ছিল এবং এটা তৈরি করা হয় বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে। সিমিটার যে তেল উত্তোলনে ব্যর্থ হয়, সেটা তাদের অদক্ষতার প্রমাণ। এ ধরনের কোম্পানিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃৃত তেলক্ষেত্র কেন তুলে দেওয়া হলো_ সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। কেউ কেউ মনে করেন, এর পেছনে দুর্নীতি ও অনিয়ম কাজ করেছে। হরিপুরে আরও কূপ খননের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সিমিটার ২ বছর থেকে চলে গেল। এরপর মামলা-মোকদ্দমা, চুক্তি বাতিল। ক্ষতি হলো দেশের। আমরা মূল্যবান সময় হারালাম।
সমকাল :সেই তেল উত্তোলনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো প্রায় দুই যুগ পর। পরে কৈলাসটিলাতেও তেলের সম্ভাবনার বিষয়টি জানা যায়।
বদরুল ইমাম :তখন প্রতিদিন সামান্য কিছু তেল চার বছর ধরে তোলা হয়। নতুন পরিকল্পনা, ভূকম্পন জরিপ, কূপ খনন_ কিছুই আর করা হয়নি। অথচ ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের অ আ ক খ জানা লোকেরও জানা আছে, মাটির নিচের সম্পদ তুলে আনতে এ ধরনের পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মানুষ তো হরিপুর ও কৈলাসটিলার কথা প্রায় ভুলতে বসেছিল। ফের বাপেক্স এগিয়ে এলো এবং দেশবাসীকে প্রত্যাশিত আনন্দের সংবাদ দিল। তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। নতুন জরিপ থেকে দেখা গেছে, যা আশা করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে।
সমকাল :মজুদ কতটা_ তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কি?
বদরুল ইমাম :তেল যে যথেষ্ট রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। রেখাচিত্র (লগ), ভূকম্পন জরিপের ফল_ এসব দেখে বলা যায়, পেট্রোবাংলার দাবি যথার্থ। তবে নতুন কূপ খনন করে নিশ্চিত হওয়ার পরই প্রমাণিত মজুদ বলা ভালো। এখন আমরা বলতে পারি, এই পরিমাণ সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে। কেবল ভূকম্পন জরিপ দিয়ে প্রমাণিত মজুদ বলা হলে ভূতত্ত্ববিদরা যথার্থভাবেই আপত্তি করতে পারেন। তথাপি এই যে আবিষ্কার; পরিমাণে যাই হোক না কেন_ কয়েকটা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ, আশির দশকের শেষদিকে হরিপুর ও কৈলাসটিলা তেলক্ষেত্র আবিষ্কারের পরও একাধিক সরকারের দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া। আমরা জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি, কিন্তু নিজেদের মাটির নিচে ভালো করে তাকাতে চাইনি। এখন বাপেক্স নতুন করে কাজ করেছে এবং সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। তারা এ ক্ষেত্র উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেছে এবং তরল জ্বালানি আমদানিকারক একটি দেশের জনগণের জন্য যা আশীর্বাদস্বরূপ।
দ্বিতীয়ত, আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত হয়ে বাপেক্সের বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃজনশীল একটি তরুণ কর্মীবাহিনী ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ সফলভাবে সম্পন্ন করে এ ফল অর্জন করেছে। তাদের কর্মদক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আগামী ৫-৬ বছরে তারা অভিজ্ঞ হবে। চীন ও মালয়েশিয়ার মতো দেশের বিশেষজ্ঞদের সমকক্ষ বা কাছাকাছি পেঁৗছবে। তারা দেশের জন্য আরও সাফল্য নিয়ে আসবে।
সমকাল :বাপেক্স তার অনেক দক্ষ কর্মীকে অতীতে ধরে রাখতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, এ জন্য আন্তরিক চেষ্টাও হয়নি।
বদরুল ইমাম :এই একাগ্র তরুণদের অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। এ জন্য সুবিধা দিতে হবে। যতটা পারা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে হবে। তাদের সাদরে গ্রহণ করে নিতে বহু কোম্পানি অপেক্ষা করছে। ব্যক্তিগত সচ্ছলতার হাতছানি রয়েছে। আমরা তাদের প্রতি মনোযোগ না দিলে বাপেক্স যাদের গড়ে তুলছে, তারা কাজ করবে অন্যের হয়ে।
সমকাল :কীভাবে হরিপুর ও কৈলাসটিলা তেলক্ষেত্র আবিষ্কার হলো?
বদরুল ইমাম :আগেই বলেছি যে, সীমিত তেল থাকার কথা জানা ছিল। কিন্তু ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এবং পূর্ববর্তী কূপের রেখাচিত্র পুনর্বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কতগুলো স্তরের বৈশিষ্ট্য তেল মজুদের বৈশিষ্ট্যের সমতুল্য। তাদের অভিমত সহযোগী বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আস্থার সঙ্গে সমর্থন করেন। বলতে পারেন যে, দু'পক্ষের অবস্থান এক বিন্দুতে এসেছিল।
সমকাল :বাংলাদেশের স্থলভাগে আরও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
বদরুল ইমাম :সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলে এ সম্ভাবনা যথেষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামও সম্ভাবনাময়। এ জন্য কূপ খনন আবশ্যকীয় বলে মনে করি। বিশেষ করে হরিপুর ও কৈলাসটিলায় যে আবিষ্কারের ঘোষণা এসেছে, তার প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনতিবিলম্বে আরও একটি বা দুটি কূপ খনন করতে হবে। এটা করার পর তেলের প্রবাহ ঘটানো গেলেই প্রমাণিত মজুদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। অনেক ভূতত্ত্ববিদ মনে করেন, তিতাসের গভীরে কূপ খনন করা গেলে তেলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। পাহাড়ি এলাকার কিছু স্থানে বিন্দু বিন্দু তেল দেখা যায়। সীমান্তের কাছে উথানছত্র ও সীতাকুণ্ডে জরিপ ও খনন কাজ পরিচালনা জরুরি। মূলকথা হলো, জরিপ কাজ বাড়ানো এবং অধিক কূপ খনন। এখন পর্যন্ত এ দুটিরই অভাব রয়েছে। অন্যান্য তেল-গ্যাস সম্ভাবনার দেশে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও বছরে ১০ থেকে ৫০টা কূপ খনন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ১-২টা অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয় এবং সেটাও সব বছর হয় না। অল্প অনুসন্ধানই সম্পদ আহরণের পথে বড় বাধা। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে আরও অনেক কিছু ভাবতে হবে।
সমকাল :বাপেক্স কি এ কাজ পারবে?
বদরুল ইমাম :এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক বছর ইচ্ছাকৃতভাবে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। দেশের অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। তাদের রাজধানীর ছোট অফিসে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, বাপেক্সের দক্ষ কর্মীদের বিদেশি কোম্পানিগুলো বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়ে নেয়। কানাডার তেল-গ্যাসের প্রাণকেন্দ্র ক্যালগারিতে আজিম নামে বাংলাদেশের এক ভূতাত্তি্বক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি বাপেক্সে ছিলেন। তার কাজে সবাই মুগ্ধ ছিল। কিন্তু তাকে ধরে রাখা যায়নি। এখন তিনি একটি বড় প্রতিষ্ঠানের ড্রিলিং সুপারভাইজার। এ ধরনের কর্মী বাপেক্সে কাজ করলে আমাদের গর্বের এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কোথায় থাকত, বলতে পারেন! আমাদের অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি ঘটাতে হবে। এটা করা না গেলে তেল আপনাআপনি মাটির নিচ থেকে উঠবে না। আজ হরিপুর-কৈলাসটিলা তেলক্ষেত্র পেয়েছি তরুণ বিশেষজ্ঞদের কারণে। দেশের সৌভাগ্য যে, তাদের গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তাদের যাতে পালিয়ে যেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অন্যান্য স্থানেও অনুসন্ধান কাজ বাড়ানো উচিত। কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রের নিচে তেল এভাবে পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
সমকাল :হরিপুর-কৈলাসটিলায় তেলের মজুদ কতটা?
বদরুল ইমাম :আমাদের বছরে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যা ব্যয় হয়, কেবল জ্বালানি আমদানিতেই তার কাছাকাছি অর্থ ব্যয় হয়। অর্থনীতির জন্য এটা বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। হরিপুর-কৈলাসটিলায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার তেলও পাওয়া গেলে সেটা দুই বছরের চাহিদাও পূরণ করতে পারবে না। এ ভাণ্ডার খুব বড় নয়। আমরা যদি আরও তেল পেয়ে যাই, অর্থনীতির চেহারা দ্রুত বদলে যাবে। আমাদের অনুসন্ধান ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সমকাল :সমুদ্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত বলুন।
বদরুল ইমাম :বঙ্গোপসাগরে এতদিন আমরা সবচেয়ে কম নজর দিয়েছি। বিদেশিরা কিছু করেছে, কিন্তু বাপেক্স সুযোগ পায়নি। মুম্বাই হাই ও মাদ্রাজে অনেক খনন কাজ হয়েছে এবং তেল-গ্যাস মিলেছে। বঙ্গোপসাগরে ভারত ও মিয়ানমার যতটা সক্রিয়, আমরা সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সমুদ্রসীমা নিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থা এতদিন সমস্যা ছিল। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে নিজেদের অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন তার অনেকটাই নিষ্কণ্টক। অনতিবিলম্বে এ কাজ হাতে নিতে হবে। বাপেক্স সমতল ভূখণ্ডে আবিষ্কার ও উন্নয়নে দক্ষতা দেখিয়েছে। সমুদ্রে এককভাবে এ কাজ করতে পারবে না। এখন সমুদ্রে কেবল বিদেশি ২-৩টা কোম্পানি কাজ করছে। আমার মত হচ্ছে, বিদেশি কোম্পানি এককভাবে নয়, বরং বাপেক্সের সঙ্গে তারা যৌথভাবে কাজ করুক। তাদের কারিগরি যোগ্যতা ও দক্ষতা থেকে আমাদের কর্মীরা শিখবে এবং এক পর্যায়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। বিদেশি যেসব কোম্পানিকে ১০০ ভাগ মালিকানা দেওয়া হচ্ছে, তার অন্তত ৩০ ভাগ বাপেক্সকে দেওয়া উচিত। এভাবে সমুদ্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা বাড়বে। নতুন প্রযুক্তিও আয়ত্তে আনার মতো সম্পদ আমাদের হাতে আসবে। কনকোফিলিপস দুটি ব্লকে কাজ করছে এখন। সাঙ্গু যে মজুদের কথা প্রথমে বলেছিল, এখন তা থেকে কম গ্যাস মিলছে। অগভীর সমুদ্রে কেউ নেই।
সমকাল :উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে।
বদরুল ইমাম :বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির শর্ত নিয়েও সমস্যা রয়েছে। তারা ব্যয়ের অঙ্কটা বাড়িয়ে দেখায়। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় দেখায়। এ সংক্রান্ত হিসাব বুঝে উঠতে পারে এমন দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। তারা ম্যানিপুলেটও করে। এর ফলে আমরা ঠকে যাই এবং বিদেশি কোম্পানি বেশি তেল-গ্যাস নিয়ে যায়। আমাদের অবশ্যই কস্ট রিকভারি চুক্তির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের স্বার্থ আরও সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম অগ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। দেশের স্বার্থ হতে হবে সবার ওপরে।
সমকাল :আপনি সৌদি আরবের একটি খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। কানাডায় একই কাজ করেছেন। দুটি দেশই জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। সেখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন।
বদরুল ইমাম :সৌদি আরবে যে পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে, সেটা আমাদের কাছে অকল্পনীয়। গাওয়ার অয়েল ফিল্ডের দৈর্ঘ্য ৪০০ কিলোমিটার। গাড়িতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে। এ দানবীয় ফিল্ডের মজুদ দিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা কয়েক দশক পূরণ করা যাবে। আমাদের হরিপুর-কৈলাসটিলায় যে সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে, তা এর তুলনায় কণামাত্র। কুয়েত এবং ইরানেও বিশাল বিশাল তেলক্ষেত্র রয়েছে। এ তথ্য এ কারণেই বলছি যে, 'তেল পেয়েছি', 'তেল পেয়েছি' বলে আমরা যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে না পড়ি। জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এখন তেলের সবটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। বিশ্ববাজার অস্থির। দাম চড়া। আমদানি পণ্যের দাম বাড়াতে হয় স্বাভাবিক নিয়মে, কিন্তু তাতে ভোক্তারা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে সরকারের কোষাগারে চাপ পড়ে এবং অন্য উন্নয়ন কাজ কমিয়ে দিতে হয়। তবে এখন আমরা ভালো একটি সূচনার পর্যায়ে রয়েছি। আমরা সম্ভাবনা দেখাতে পেরেছি। শক্তি দেখিয়েছি। তরুণরা এগিয়ে এসেছে। আমি বর্তমান নয়, সামনের দিকে তাকাতে ভালোবাসি। খুব ভালো কিছু মিলবে, আমাদের অভাব থাকবে না_ এমনটি কিন্তু আর স্বপ্ন মনে হয় না।
সমকাল :আপনাকে ধন্যবাদ।
বদরুল ইমাম :সমকাল পাঠকদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
 

No comments

Powered by Blogger.