শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র অতি জরুরি by ড. তুহিন ওয়াদুদ
ধবাংলাদেশে নারীশিক্ষার প্রসার এবং নারীদের কর্মজীবী হওয়ার হার দিন দিনই বাড়ছে । স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক এবং একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় যে কয়টি উল্লেখযোগ্য ভালো কাজ হয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন নারীশিক্ষার মাধ্যমে নারীর মুক্তিকল্পে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নারীদের বিকশিত হওয়া। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নারীদের কর্মজীবী এবং নারীর ক্ষমতায়ন অতি অল্প সময়ে অনেক দূর এগিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা সুনামের সঙ্গে চাকরি করছে। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়_সর্বত্র নারীদের এখন অবাধ বিচরণ।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের একটি বড় প্রতিকূলতা হচ্ছে, শিশুসন্তানের প্রতিপালন। নারী চাকরিজীবীদের সন্তান জন্মদানের জন্য চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা ছিল। বর্তমান সরকার সেই ছুটি ছয় মাস পর্যন্ত করেছে। কিন্তু শুধু ছুটিতে সমস্য দূর হচ্ছে না। এর জন্য একটি উপযুক্ত সমাধান প্রয়োজন। সন্তান উৎপাদন এবং লালন-পালন করাকে সমস্যা বলাটা সমীচীন নয়। তবুও কর্মজীবী নারীদের কাছে সেটাই একটা বড় সমস্যা। সন্তানের মায়ের নাড়ি কেটে মা এবং সন্তানের আলাদা সত্তা তৈরি করা হয়। তিন-চার মাসের সেই ছোট শিশুসন্তানকে বাসায় কারো কাছে রেখে অফিসে গিয়ে মনোযোগসহ কাজ করা অসম্ভব ব্যাপার। শিশুসন্তানকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে কাজ করার মতো অনুকূল পরিবেশও নেই। শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে দুই বছর। এ দুই বছর বাধ্য হয়ে মা তাঁর সন্তানকে আত্মীয়স্বজন কিংবা কাজের সহযোগী কোনো মেয়ের কাছে রেখে যান। সন্তান মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রক্রিয়াজাত দুধে অভ্যস্ত হয় শিশু। এতে সন্তানের ঘন ঘন অসুস্থতা মাকে বিচলিত করে তোলে। বাধ্য হয়ে নৈমিত্তিক ছুটি শেষ করে বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়। অথবা প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে বুঝিয়ে অফিসে নামমাত্র উপস্থিতি দেখিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। অথচ ১৯৯০ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ শিশুদের অধিকার রক্ষায় ৫৪ ধারাবিশিষ্ট 'শিশু অধিকার সনদ' প্রণয়ন করে। এই ধারার ১-এর (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, 'শরিক রাষ্ট্রগুলো শিশুর পরিচর্যা ও সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান, সেবা ও সুবিধাদি নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও উপযুক্ততা এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত তদারকির ব্যবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুরূপ হতে হবে।' একই আইনের ধারা ২০-এর (১)-এ বলা হয়েছে, 'যে শিশু স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে তার পারিবারিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত অথবা যে শিশুকে তার সর্বোত্তম স্বার্থে ওই পরিবেশে থাকতে দেওয়া যাবে না, সেই শিশু রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ সুরক্ষা ও সহায়তার অধিকারী।' জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত আইন কিংবা রাষ্ট্রীয় আইন শিশুদের জন্য করা হলেও তার সুফল বাংলাদেশের শিশুরা এখনো পায়নি। এ সমস্যা একই সঙ্গে মা এবং সন্তানের। সন্তানের বাবার জন্য এটি সমস্যা হলেও তা মা কিংবা শিশুর মতো নয়। তবে এ সমস্যার কারণে বাবার স্বাভাবিক কাজ যে ব্যাহত হয় না, এ কথা বলা যায় না।
দেশে এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকর্মী নেই। চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন হয়তো নারীরা একটি কিংবা দুটির বেশি সন্তান নেয় না। তার পরও শিশুসন্তানকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। মা যেমন শিশুসন্তানকে বাসায় রেখে কাজে মন বসাতে পারেন না, তেমনি সন্তানও বঞ্চিত হয়। কর্মজীবী নারীরা মা হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে বড় রকমের বিপাকে পড়েন। দেশব্যাপী এ রকম একটি বড় সমস্যা দূরীকরণে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন গৃহে আগের মতো পরিচারিকা পাওয়া যায় না। যেসব নারী মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে দূরে থাকেন, তাদের জন্য বাস্তবতা আরো ভয়ানক। ছোট ছোট চাকরি যাঁরা করেন, তাঁরা আর্থিকভাবে অসমর্থ হওয়ায় বাস্তবতা আরো অমানবিক হয়ে ওঠে। সন্তানের জন্য মাকে অনেক সময় অনিয়ম করতে হয়। সন্তানের সামান্য সর্দি হলেই আর কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। কর্মক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তি যদি হন পুরুষ, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা অবিশ্বাসের সঙ্গে যে আচরণ করেন, তাতে নির্বাক হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার থকে না। বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এর একটি কারণ হতে পারে যে তারা আন্দোলন করতে পারে না। এ দেশে আন্দোলন ছাড়া তো কোনো কিছু হয় না।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বড় বড় প্রতিষ্ঠান_যেখানে অনেক নারী কর্মজীবী থাকেন, সেখানে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠনে হয়তো আপাতত তা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে উপজেলাভিত্তিক একটি করে এবং জেলা শহরগুলোতে একাধিক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র বাধ্যতামূলকভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে যেন সরকারি-বেসরকারি সব নারী কর্মজীবীর সন্তান পরিচর্যা করার সুযোগ থাকে। পরিবারে একটি কিংবা দুটির বেশি সন্তান এখন থাকে না। এক সন্তানবিশিষ্ট পরিবারের সন্তানরা খেলার সাথি থেকে বঞ্চিত হয়। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র থাকলে শিশুদের এই শূন্যতাও পূরণ করা সম্ভব।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
কর্মক্ষেত্রে নারীদের একটি বড় প্রতিকূলতা হচ্ছে, শিশুসন্তানের প্রতিপালন। নারী চাকরিজীবীদের সন্তান জন্মদানের জন্য চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা ছিল। বর্তমান সরকার সেই ছুটি ছয় মাস পর্যন্ত করেছে। কিন্তু শুধু ছুটিতে সমস্য দূর হচ্ছে না। এর জন্য একটি উপযুক্ত সমাধান প্রয়োজন। সন্তান উৎপাদন এবং লালন-পালন করাকে সমস্যা বলাটা সমীচীন নয়। তবুও কর্মজীবী নারীদের কাছে সেটাই একটা বড় সমস্যা। সন্তানের মায়ের নাড়ি কেটে মা এবং সন্তানের আলাদা সত্তা তৈরি করা হয়। তিন-চার মাসের সেই ছোট শিশুসন্তানকে বাসায় কারো কাছে রেখে অফিসে গিয়ে মনোযোগসহ কাজ করা অসম্ভব ব্যাপার। শিশুসন্তানকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে কাজ করার মতো অনুকূল পরিবেশও নেই। শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে দুই বছর। এ দুই বছর বাধ্য হয়ে মা তাঁর সন্তানকে আত্মীয়স্বজন কিংবা কাজের সহযোগী কোনো মেয়ের কাছে রেখে যান। সন্তান মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রক্রিয়াজাত দুধে অভ্যস্ত হয় শিশু। এতে সন্তানের ঘন ঘন অসুস্থতা মাকে বিচলিত করে তোলে। বাধ্য হয়ে নৈমিত্তিক ছুটি শেষ করে বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়। অথবা প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে বুঝিয়ে অফিসে নামমাত্র উপস্থিতি দেখিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। অথচ ১৯৯০ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ শিশুদের অধিকার রক্ষায় ৫৪ ধারাবিশিষ্ট 'শিশু অধিকার সনদ' প্রণয়ন করে। এই ধারার ১-এর (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, 'শরিক রাষ্ট্রগুলো শিশুর পরিচর্যা ও সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান, সেবা ও সুবিধাদি নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও উপযুক্ততা এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত তদারকির ব্যবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুরূপ হতে হবে।' একই আইনের ধারা ২০-এর (১)-এ বলা হয়েছে, 'যে শিশু স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে তার পারিবারিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত অথবা যে শিশুকে তার সর্বোত্তম স্বার্থে ওই পরিবেশে থাকতে দেওয়া যাবে না, সেই শিশু রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ সুরক্ষা ও সহায়তার অধিকারী।' জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত আইন কিংবা রাষ্ট্রীয় আইন শিশুদের জন্য করা হলেও তার সুফল বাংলাদেশের শিশুরা এখনো পায়নি। এ সমস্যা একই সঙ্গে মা এবং সন্তানের। সন্তানের বাবার জন্য এটি সমস্যা হলেও তা মা কিংবা শিশুর মতো নয়। তবে এ সমস্যার কারণে বাবার স্বাভাবিক কাজ যে ব্যাহত হয় না, এ কথা বলা যায় না।
দেশে এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকর্মী নেই। চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন হয়তো নারীরা একটি কিংবা দুটির বেশি সন্তান নেয় না। তার পরও শিশুসন্তানকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। মা যেমন শিশুসন্তানকে বাসায় রেখে কাজে মন বসাতে পারেন না, তেমনি সন্তানও বঞ্চিত হয়। কর্মজীবী নারীরা মা হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে বড় রকমের বিপাকে পড়েন। দেশব্যাপী এ রকম একটি বড় সমস্যা দূরীকরণে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন গৃহে আগের মতো পরিচারিকা পাওয়া যায় না। যেসব নারী মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে দূরে থাকেন, তাদের জন্য বাস্তবতা আরো ভয়ানক। ছোট ছোট চাকরি যাঁরা করেন, তাঁরা আর্থিকভাবে অসমর্থ হওয়ায় বাস্তবতা আরো অমানবিক হয়ে ওঠে। সন্তানের জন্য মাকে অনেক সময় অনিয়ম করতে হয়। সন্তানের সামান্য সর্দি হলেই আর কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। কর্মক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তি যদি হন পুরুষ, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা অবিশ্বাসের সঙ্গে যে আচরণ করেন, তাতে নির্বাক হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার থকে না। বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এর একটি কারণ হতে পারে যে তারা আন্দোলন করতে পারে না। এ দেশে আন্দোলন ছাড়া তো কোনো কিছু হয় না।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বড় বড় প্রতিষ্ঠান_যেখানে অনেক নারী কর্মজীবী থাকেন, সেখানে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠনে হয়তো আপাতত তা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে উপজেলাভিত্তিক একটি করে এবং জেলা শহরগুলোতে একাধিক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র বাধ্যতামূলকভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে যেন সরকারি-বেসরকারি সব নারী কর্মজীবীর সন্তান পরিচর্যা করার সুযোগ থাকে। পরিবারে একটি কিংবা দুটির বেশি সন্তান এখন থাকে না। এক সন্তানবিশিষ্ট পরিবারের সন্তানরা খেলার সাথি থেকে বঞ্চিত হয়। শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র থাকলে শিশুদের এই শূন্যতাও পূরণ করা সম্ভব।
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
No comments