প্রতিটি দিনই নজরুলের জন্মদিন by জাহীদ রেজা নূর
তুমি বলবে, নজরুল তো বিদ্রোহের কবি, আমি বলব প্রেমের। তুমি আবৃত্তি করবে ‘সাম্যবাদী’, আমি গাইব ‘এত জল ও কাজল চোখে’। তুমি আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে ‘রাজবন্দির জবানবন্দী’। আমি তোমাকে শোনাব ‘সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা’।
আমরা দুই মেরুর দুজন মানুষ একসময় বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে একসঙ্গে পড়ব ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাখানি। একসময় আমরা আবিষ্কার করব, আমরা দুজন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা বলছি। নজরুলের সঙ্গে আরেকটু সখ্য হলে দেখব, একই বৃন্তে যে দুটি কুসুম ফুটিয়েছেন তিনি, তা বিদ্রোহ আর প্রেমের গলিত-মিলিত স্রোতোধারা। বাঁধনহারা বুঝি একেই বলে!
নজরুল আসলে গতির অন্য নাম। সময়কে হাতের মুঠোয় রেখে তাল-ছন্দ-লয় নিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়েছেন। সৃষ্টিসুখের কী উল্লাস তাঁর! আর আবেগের মূর্ছনায় ভেসে গেল সব। তুমি আর আমি একমত হব, কবিতায়-গানে তিনি মুসলমান জাগরণের কথা বলেছেন যেমন, তেমনই ভারতীয় লোককথা, পুরাণেরও আশ্রয় নিয়েছেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি ‘জাহান্নামের’ আগুনে বসে পুষ্পের হাসি হাসছেন, সেখানেই ‘বিদ্রোহী’ ভৃগু হয়ে ভগবানের বুকে এঁকে দিচ্ছেন পদচিহ্ন। আমরা আরও বিস্মিত হব এই দেখে যে, নজরুল লিখছেন ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়’।
এখানে বিস্মিত হওয়ার কী আছে? প্রশ্ন করবে তুমি।
আমি বলব, ভেবে দেখো, তিনি দোজাহান বলছেন না, বলছেন ত্রিভুবন। এভাবেই তিনি খেলছেন ‘এ বিশ্ব লয়ে’।
২.
১৯৭৩ সালের একদিন। ধানমন্ডির কবিভবনে গিয়েছিলাম আমরা। একেবারে শিশুর মতো একজন মানুষ বসে আছেন খাটে। হারমোনিয়াম নিয়ে শিল্পী ফিরোজা বেগম গান করছেন। কবির মাথা একটু একটু দুলছে। আমরা কতিপয় শিশু তন্ময় হয়ে দেখছিলাম আমাদের জাতীয় কবিকে। আমাদেরই তিন বছুরে একজনের মাথায় হাত রেখেছিলেন দেখে আমরা আনন্দ পেয়েছিলাম খুব। পরদিন স্কুলে গিয়ে সেই বিশাল অর্জন ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে।
সেই আমরাই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বেতারে শুনতে পেলাম, কবি আর নেই। ঢাকা শহরের মানুষ তখন ছুটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে। সেই মানুষের ঢলে স্রোতের মতোই ভেসে চলি আমরা কয়েকজন। একনজর দেখা হয় নজরুলকে। তখনো বুঝিনি, এখন বুঝি, এই ইতিহাসের একটু অংশের অংশীদার হয়েছি আমরা।
৩.
তুমি বলবে, নজরুলের জন্মদিনে মৃত্যুদিনের কথা কেন?
আমি বলব, নজরুলের কি মৃত্যু হয় কখনো? প্রতিদিনই নজরুলের জন্মদিন। প্রতিটি দিনই নজরুলকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া!
নজরুল আসলে গতির অন্য নাম। সময়কে হাতের মুঠোয় রেখে তাল-ছন্দ-লয় নিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়েছেন। সৃষ্টিসুখের কী উল্লাস তাঁর! আর আবেগের মূর্ছনায় ভেসে গেল সব। তুমি আর আমি একমত হব, কবিতায়-গানে তিনি মুসলমান জাগরণের কথা বলেছেন যেমন, তেমনই ভারতীয় লোককথা, পুরাণেরও আশ্রয় নিয়েছেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি ‘জাহান্নামের’ আগুনে বসে পুষ্পের হাসি হাসছেন, সেখানেই ‘বিদ্রোহী’ ভৃগু হয়ে ভগবানের বুকে এঁকে দিচ্ছেন পদচিহ্ন। আমরা আরও বিস্মিত হব এই দেখে যে, নজরুল লিখছেন ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়’।
এখানে বিস্মিত হওয়ার কী আছে? প্রশ্ন করবে তুমি।
আমি বলব, ভেবে দেখো, তিনি দোজাহান বলছেন না, বলছেন ত্রিভুবন। এভাবেই তিনি খেলছেন ‘এ বিশ্ব লয়ে’।
২.
১৯৭৩ সালের একদিন। ধানমন্ডির কবিভবনে গিয়েছিলাম আমরা। একেবারে শিশুর মতো একজন মানুষ বসে আছেন খাটে। হারমোনিয়াম নিয়ে শিল্পী ফিরোজা বেগম গান করছেন। কবির মাথা একটু একটু দুলছে। আমরা কতিপয় শিশু তন্ময় হয়ে দেখছিলাম আমাদের জাতীয় কবিকে। আমাদেরই তিন বছুরে একজনের মাথায় হাত রেখেছিলেন দেখে আমরা আনন্দ পেয়েছিলাম খুব। পরদিন স্কুলে গিয়ে সেই বিশাল অর্জন ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে।
সেই আমরাই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বেতারে শুনতে পেলাম, কবি আর নেই। ঢাকা শহরের মানুষ তখন ছুটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে। সেই মানুষের ঢলে স্রোতের মতোই ভেসে চলি আমরা কয়েকজন। একনজর দেখা হয় নজরুলকে। তখনো বুঝিনি, এখন বুঝি, এই ইতিহাসের একটু অংশের অংশীদার হয়েছি আমরা।
৩.
তুমি বলবে, নজরুলের জন্মদিনে মৃত্যুদিনের কথা কেন?
আমি বলব, নজরুলের কি মৃত্যু হয় কখনো? প্রতিদিনই নজরুলের জন্মদিন। প্রতিটি দিনই নজরুলকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া!
No comments