এই সময়ে নজরুল by আশফাকুজ্জামান
‘তরুণদের প্রতি আমার অপরিসীম ভালোবাসা, প্রাণের টান। তারুণ্যকে, যৌবনকে আমি যেদিন হইতে গান গাহিতে শিখিয়াছি, সেই দিন হইতে বারে বারে সালাম করিয়াছি। গানে-কবিতায় আমার সকল শক্তি দিয়া তাহারই জয় ঘোষণা করিয়াছি।’ এভাবেই আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণদের বন্দনা করেছেন।
তিনি কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য—সব সময় তরুণের জয়গান করেছেন। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস—সব জায়গায় তারুণ্যের অমিত শক্তির কথা বলেছেন। কবি বিশ্বাস করতেন, জাতির মঙ্গলের জন্য যত কঠিন হোক, সবকিছু করতে পারে তরুণ। তারা সব দেশের, সব জাতির, সব কালের। দেশ, জাতি, কাল অতিক্রম করতে পারে বলে তরুণেরা মহাবীর। তরুণেরা তাদের পৃথিবী তাদের মতো করে গড়ে নিতে পারে। তারা আঘাত করতে পারে। আঘাত সইতে পারে। সূর্যের আলোয় ঘুম ভাঙার ভয়ে দরজা বন্ধ রাখে না।
নজরুল ছিলেন সর্বজনীন একজন মানুষ। নিজেকে পৃথিবীর কোথাও এক জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের।’
তাঁর জন্ম হয়েছিল একটি পরাধীন দেশে। ব্রিটিশের অত্যাচার-নির্যাতনমূলক শাসনের সময় তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর শিল্পীসত্তা, কবিসত্তা শাসন-শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি, মানবতার প্রতি তাঁর ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। অধিকারহারা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি কলম ধরেছিলেন।
একটি অস্থির সময়ে কবির জীবন কেটেছে। এই বৈরী সময় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সব সময় তরুণের প্রার্থনা করেছেন। কবি বলেন, ‘যৌবনের সীমা পরিক্রমণ আজও আমার শেষ হয় নাই, কাজেই আমি যে গান গাই তাহা যৌবনের গান।’ তিনি অসীম মনোবল নিয়ে যৌবনরূপী তরুণদের এগিয়ে আসার কথা বলেন।
নজরুল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। আজকে ২০১২ সালে এসে একটি অবিসংবাদিত সত্য মেনে নিতে হয়। তা হলো, বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতিকে যাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া যদি আর একজনের নাম উচ্চারণ করতে হয়, তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
মাত্র ২৩ বছরের সৃষ্টিশীল জীবন তাঁর। এর মধ্যে নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তরুণের জয় হোক, সত্যের জয় হোক, সুন্দরের জয় হোক।
No comments