তথ্যপ্রযুক্তি-শিল্পোদ্যোক্তাদের একীভূত প্ল্যাটফরম দরকার by মুনির হাসান
বিগত এক দশক ধরে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে দাবি করা যায়। বিশেষ করে সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি একটি মুক্ত আউটসোর্সিংয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকাকে এই কাজের জন্য তৃতীয় পছন্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে ১৯৯৭ সালে গঠিত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর কমিটি আইসিটি ব্যবসা খাতের যে বিকাশের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তেমনটি কিন্তু হয়নি। বর্তমানে আইসিটি খাতের রপ্তানি আয় মাত্র ৩৩ মিলিয়ন ডলার। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, ২০২১ সালে এই খাতটি আমাদের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হতে পারে।
দেশে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সদস্যসংখ্যা সাত শতাধিক। রয়েছে সাড়ে তিন শ সদস্যের বেসিস, দুই শতাধিক সদস্যের আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন। মোবাইল এবং পিএসটিএন ব্যবসায়ীদেরও দুটি পৃথক সংগঠন রয়েছে। গঠিত হয়েছে সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সর্বশেষে সৃষ্টি হয়েছে কলসেন্টার ও আউটসোর্সিং সংস্থাগুলোর একটি সংগঠন। এই সংগঠনগুলো পৃথকভাবে নিজেদের মতো করে আইসিটি খাতে কাজ করছে। দেখা যাচ্ছে, সাড়ে তিন শ বেসিস সদস্যের মাত্র ১৮৯ জন তাদের চাঁদা পরিশোধ করে নির্বাচনের জন্য ভোটার হয়েছেন! এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১০টি জেলায় প্রায় দুই হাজার আইটি সেবা প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে, যাদের বেশির ভাগের সঙ্গে কোনো সংগঠনেরই সম্পর্ক নেই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার তরুণ উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, প্রোগ্রামার, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর স্বাধীন ভাবে মুক্তপেশায় জড়িত। তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার কোনো সংস্থা নেই।
একাধিক সমিতির কারণে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নের বেলায় কোনো সামগ্রিক চিত্র উঠে আসছে না। আবার আকারে ছোট হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সক্ষমতাও কম বলে মনে হয়। দেশের অন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর বাজার গবেষণা, বাজার অনুসন্ধানী কার্যক্রম, সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যে কর্মকাণ্ড রয়েছে তার কোনোটিই এসব সমিতি সাফল্যের সঙ্গে করেছে বলে আমার জানা নেই।
ডিজিটালবান্ধব সরকারের আনুকূল্য গ্রহণ করে, দেশে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের ভূমিকা অপরিসীম। এ কারণে নিজেদের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য কমিয়ে এ খাতে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফরম দরকার। ভারতের নাসকম (http://www.nasscom.in/) এই ধারার সবচেয়ে সফল উদাহরণ। নিজেদের মধ্যে আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে না তুলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা নাসকম গড়ে তোলেন। ভারতীয় সংস্থাটিতে কেবল ভারতের আইটি সংস্থাগুলো আছে এমন নয়। সেখানে আছে বহুজাতিক আইটি-আউটসোর্সিং সংস্থা, যাদের ভারতে কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বিদেশি আইটি সংস্থা থাকলেও তারা কোনো সমিতির সদস্য নয়। একই কাজ করেছে শ্রীলঙ্কার সংস্থাগুলো। শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন আইসিটি সেবাদানকারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সব সংগঠন মিলে গঠন করেছে স্ল্যাশকম (http://www.slasscom.lk/)। উদ্দেশ্য এমন একটি ফোরাম গঠন করা যাতে আইটি ও আউটসোর্সিং খাতের একটি একক কণ্ঠস্বর তৈরি হয়। এরই মধ্যে আইটি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের আইসিটি সংস্থাগুলোকে ভবিষ্যতে ব্যাসকম (BASSCOM) গঠনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য চলতি বছরের মধ্যে সমিতিগুলো সবাই মিলে একটি ফেডারেশন গঠন করতে পারে। ফেডারেশন গঠনের তিন বছরের মধ্যে ব্যাসকম গঠন সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
খাত হিসেবে এর বিকাশের জন্য পরের কাজটি হবে এই খাত সম্পর্কে একটি প্রাথমিক সমীক্ষা। এই সমীক্ষায় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ, মুক্ত আউটসোর্সিং, আইটি সেবা সার্ভিস—প্রত্যেকটি উপখাতে বর্তমান অবস্থা তুলে আনতে হবে। প্রস্তাবিত ফেডারেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে তা যথাযথ হবে এবং একই সঙ্গে তা ফেডারেশনের সক্ষমতাকেও বাড়াবে। সমীক্ষার ভিত্তিতে তখন পরবর্তী কর্মপন্থা ও মাইলফলকগুলো নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, আইসিটি ব্যবসা খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা হবে প্রণোদনা ও উৎসাহমূলক। কারণ সরকার নিজে ব্যবসা করুক এটি আজকাল কেউ চায় না।
আইসিটি খাতের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা গেলে উপখাতগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে আইসিটি খাতের জন্য আগামী বছরগুলোয় প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা নিরূপণ। শিল্পোদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এ রূপ কোনো চাহিদাতালিকা তৈরি করা সম্ভব হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জনবল সরবরাহের দায়িত্ব নিতে পারে। সমন্বিত উদ্যোগ না থাকার ফলে, বিগত পাঁচ বছরে দেশে আইটি শিক্ষার প্রশিক্ষণ খাতটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলে আমার ধারণা। মান নিয়ন্ত্রণের অভাব, বাজার-চাহিদার ভুল নিরূপণ এবং যথাযথ মনোযোগের অভাবে প্রথমে সফটওয়্যার ও ডেটা এন্ট্রি শিল্প এবং অতিসম্প্রতি কলসেন্টারের দক্ষ জনবল তৈরির নাম করে দেশ থেকে এক বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। জনবল-চাহিদার প্রকৃত চিত্র পাওয়া গেলে, প্রকৃত কম্পিউটার স্নাতক এবং অন্যান্য বিষয় থেকে আগ্রহীদের এই খাতে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য ইনকিউবেটর স্থাপনের ক্ষেত্রেও ফেডারেশন বা ব্যাসকম উদ্যোগ নিতে সক্ষম হবে।
বিগত এক দশক ধরে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাঁদের চাহিদামতো স্নাতক সরবরাহ করছেন না বলে অভিযোগ করছেন। কিন্তু সম্প্রতি খাতের প্রয়োজনীয় দক্ষতার কোনো চাহিদা-প্রতিবেদন আছে কি না তার খোঁজ নিতে গিয়ে আমি দেখেছি, এরূপ কোনো প্রতিবেদন নেই (আমি খুঁজে পাইনি)। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ লক্ষ্যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণও সম্ভব হচ্ছে না। স্মর্তব্য, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস পরিবর্তন করতে হলে কমপক্ষে দুই-তিন বছর সময়ের পরিবর্তন হয়। সে জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর পরের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা করতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হতে পারে। তা ছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো আইটি সেবাখাত। এখানে প্রয়োজনীয় লোকবলের অনেক বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না বা সবাইকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক হতে হয় না। তিন থেকে আট মাসের প্রশিক্ষণ এবং কাজের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত এই খাতের প্রয়োজনীয় লোকবল তৈরি করা সম্ভব। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের অধুনা লুপ্ত আইটি প্রশিক্ষণক্ষেত্রটি পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে দেশে বিদ্যমান জনবল সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। মনে রাখা দরকার, চীনের কোন ল্যাপটপ সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা করলে তারা বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের দিয়ে তা চালাতে চাইবে। চীন থেকে প্রকৌশলী নিয়ে আসার কথা তারা ভুলেও ভাববে না।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সম্ভাবনা অসীম। তবে সেটি একটি অসীম সম্ভাবনাই থেকে যেতে পারে, যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি না করা হয়।
আশা করি, এ খাতের সংশ্লিষ্ট সবাই এটি উপলব্ধি করবেন।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
দেশে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সদস্যসংখ্যা সাত শতাধিক। রয়েছে সাড়ে তিন শ সদস্যের বেসিস, দুই শতাধিক সদস্যের আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন। মোবাইল এবং পিএসটিএন ব্যবসায়ীদেরও দুটি পৃথক সংগঠন রয়েছে। গঠিত হয়েছে সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সর্বশেষে সৃষ্টি হয়েছে কলসেন্টার ও আউটসোর্সিং সংস্থাগুলোর একটি সংগঠন। এই সংগঠনগুলো পৃথকভাবে নিজেদের মতো করে আইসিটি খাতে কাজ করছে। দেখা যাচ্ছে, সাড়ে তিন শ বেসিস সদস্যের মাত্র ১৮৯ জন তাদের চাঁদা পরিশোধ করে নির্বাচনের জন্য ভোটার হয়েছেন! এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১০টি জেলায় প্রায় দুই হাজার আইটি সেবা প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে, যাদের বেশির ভাগের সঙ্গে কোনো সংগঠনেরই সম্পর্ক নেই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার তরুণ উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, প্রোগ্রামার, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর স্বাধীন ভাবে মুক্তপেশায় জড়িত। তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার কোনো সংস্থা নেই।
একাধিক সমিতির কারণে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নের বেলায় কোনো সামগ্রিক চিত্র উঠে আসছে না। আবার আকারে ছোট হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সক্ষমতাও কম বলে মনে হয়। দেশের অন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর বাজার গবেষণা, বাজার অনুসন্ধানী কার্যক্রম, সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যে কর্মকাণ্ড রয়েছে তার কোনোটিই এসব সমিতি সাফল্যের সঙ্গে করেছে বলে আমার জানা নেই।
ডিজিটালবান্ধব সরকারের আনুকূল্য গ্রহণ করে, দেশে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের ভূমিকা অপরিসীম। এ কারণে নিজেদের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য কমিয়ে এ খাতে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফরম দরকার। ভারতের নাসকম (http://www.nasscom.in/) এই ধারার সবচেয়ে সফল উদাহরণ। নিজেদের মধ্যে আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে না তুলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা নাসকম গড়ে তোলেন। ভারতীয় সংস্থাটিতে কেবল ভারতের আইটি সংস্থাগুলো আছে এমন নয়। সেখানে আছে বহুজাতিক আইটি-আউটসোর্সিং সংস্থা, যাদের ভারতে কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বিদেশি আইটি সংস্থা থাকলেও তারা কোনো সমিতির সদস্য নয়। একই কাজ করেছে শ্রীলঙ্কার সংস্থাগুলো। শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন আইসিটি সেবাদানকারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সব সংগঠন মিলে গঠন করেছে স্ল্যাশকম (http://www.slasscom.lk/)। উদ্দেশ্য এমন একটি ফোরাম গঠন করা যাতে আইটি ও আউটসোর্সিং খাতের একটি একক কণ্ঠস্বর তৈরি হয়। এরই মধ্যে আইটি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের আইসিটি সংস্থাগুলোকে ভবিষ্যতে ব্যাসকম (BASSCOM) গঠনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য চলতি বছরের মধ্যে সমিতিগুলো সবাই মিলে একটি ফেডারেশন গঠন করতে পারে। ফেডারেশন গঠনের তিন বছরের মধ্যে ব্যাসকম গঠন সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
খাত হিসেবে এর বিকাশের জন্য পরের কাজটি হবে এই খাত সম্পর্কে একটি প্রাথমিক সমীক্ষা। এই সমীক্ষায় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ, মুক্ত আউটসোর্সিং, আইটি সেবা সার্ভিস—প্রত্যেকটি উপখাতে বর্তমান অবস্থা তুলে আনতে হবে। প্রস্তাবিত ফেডারেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে তা যথাযথ হবে এবং একই সঙ্গে তা ফেডারেশনের সক্ষমতাকেও বাড়াবে। সমীক্ষার ভিত্তিতে তখন পরবর্তী কর্মপন্থা ও মাইলফলকগুলো নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, আইসিটি ব্যবসা খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা হবে প্রণোদনা ও উৎসাহমূলক। কারণ সরকার নিজে ব্যবসা করুক এটি আজকাল কেউ চায় না।
আইসিটি খাতের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা গেলে উপখাতগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে আইসিটি খাতের জন্য আগামী বছরগুলোয় প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা নিরূপণ। শিল্পোদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এ রূপ কোনো চাহিদাতালিকা তৈরি করা সম্ভব হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জনবল সরবরাহের দায়িত্ব নিতে পারে। সমন্বিত উদ্যোগ না থাকার ফলে, বিগত পাঁচ বছরে দেশে আইটি শিক্ষার প্রশিক্ষণ খাতটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলে আমার ধারণা। মান নিয়ন্ত্রণের অভাব, বাজার-চাহিদার ভুল নিরূপণ এবং যথাযথ মনোযোগের অভাবে প্রথমে সফটওয়্যার ও ডেটা এন্ট্রি শিল্প এবং অতিসম্প্রতি কলসেন্টারের দক্ষ জনবল তৈরির নাম করে দেশ থেকে এক বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। জনবল-চাহিদার প্রকৃত চিত্র পাওয়া গেলে, প্রকৃত কম্পিউটার স্নাতক এবং অন্যান্য বিষয় থেকে আগ্রহীদের এই খাতে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য ইনকিউবেটর স্থাপনের ক্ষেত্রেও ফেডারেশন বা ব্যাসকম উদ্যোগ নিতে সক্ষম হবে।
বিগত এক দশক ধরে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাঁদের চাহিদামতো স্নাতক সরবরাহ করছেন না বলে অভিযোগ করছেন। কিন্তু সম্প্রতি খাতের প্রয়োজনীয় দক্ষতার কোনো চাহিদা-প্রতিবেদন আছে কি না তার খোঁজ নিতে গিয়ে আমি দেখেছি, এরূপ কোনো প্রতিবেদন নেই (আমি খুঁজে পাইনি)। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ লক্ষ্যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণও সম্ভব হচ্ছে না। স্মর্তব্য, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস পরিবর্তন করতে হলে কমপক্ষে দুই-তিন বছর সময়ের পরিবর্তন হয়। সে জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর পরের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা করতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হতে পারে। তা ছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো আইটি সেবাখাত। এখানে প্রয়োজনীয় লোকবলের অনেক বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না বা সবাইকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক হতে হয় না। তিন থেকে আট মাসের প্রশিক্ষণ এবং কাজের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত এই খাতের প্রয়োজনীয় লোকবল তৈরি করা সম্ভব। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের অধুনা লুপ্ত আইটি প্রশিক্ষণক্ষেত্রটি পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে দেশে বিদ্যমান জনবল সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। মনে রাখা দরকার, চীনের কোন ল্যাপটপ সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা করলে তারা বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের দিয়ে তা চালাতে চাইবে। চীন থেকে প্রকৌশলী নিয়ে আসার কথা তারা ভুলেও ভাববে না।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সম্ভাবনা অসীম। তবে সেটি একটি অসীম সম্ভাবনাই থেকে যেতে পারে, যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি না করা হয়।
আশা করি, এ খাতের সংশ্লিষ্ট সবাই এটি উপলব্ধি করবেন।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
No comments