শ্রদ্ধাঞ্জলি-আমার অনুজ বন্ধুর কথা by যতীন সরকার
সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট ছিলেন। অর্থাত্ তাঁর আগেই আমি এই পৃথিবীতে এসেছি। অথচ পৃথিবী ছেড়ে গত বছর এই দিনে তিনি চলে গেলেন। শুধু তিনি নন, আমার অনুজ বন্ধুদের অনেকেই এমনটি করেছেন। ছেলেবেলায় গাঁয়ের গীতালুদের আসরে একটি গান শুনেছিলাম।
গানের প্রথম কলিটি ছিল এ রকম, ‘যারা পাছে এল, আগে গেল/ আমি শুধু রইলাম বসে’। এই বুড়ো বয়সে বসে বসে গানের এই কথাগুলোই আমাকে বারবার আওড়াতে হয়।
১৯৬৭ সালে পরিচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের জীবিকার সঙ্গে তিনি ছিলেন জড়িত। বিমা কোম্পানিতে কিছুদিনের জন্য ঢুকে ভালো না লাগায় ছেড়ে অধ্যাপনায় ঢোকেন। পরবর্তী সময়ে জাদুঘরের কর্মকর্তারূপে অবসর নেন। ফাঁকে ফাঁকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে এখানেও তিনি অনন্য কিছু প্রকাশনার কাজ করেন। সব শেষে শিক্ষাকোষ নামে একটি গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
তিনি ও আমি ময়মনসিংহ শহরেই থাকতাম। সে সময় প্রতিদিন অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা আমরা একই সঙ্গে কাটাতাম। দুজনে মিলে অনেক কঠিন কঠিন বই আমরা পড়েছি এবং বইয়ের বক্তব্য ও অন্তবস্তু নিয়ে আলোচনা ও তর্কবিতর্ক করেছি। মনে পড়ে, অত্যন্ত কঠিন একটি বই ক্রিস্টোফার কডওয়েলের ইল্যুশন অ্যান্ড রিয়ালিটিও আমরা এমনভাবেই পাঠ করেছিলাম এবং এর মর্মানুধাবনে প্রয়াসী হয়েছিলাম। এরপর বগুড়ায় যখন তিনি কলেজের অধ্যাপক হয়ে যান, তখনো ছুটিছাটা পেলেই ময়মনসিংহে চলে আসতেন এবং আগের মতোই আমরা পাঠে ও আলোচনায় নিবিষ্ট হয়ে পড়তাম। তেমনটিই ঘটেছে ঢাকায় জাদুঘরে যখন তিনি যোগ দিয়েছেন তখনো এবং এর পরও।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমি আমার স্ত্রী-পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। তারা আমার শ্বশুর পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ভেতরই থেকে গিয়েছিল। সেই দুঃসহ ও ভয়াবহ দিনগুলোতে সেই পরিবারটিকে বল-ভরসা জোগানোর ক্ষেত্রে সৈয়দ আমীরুল ইসলামের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। আজও আমার স্ত্রী সে কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন বছরও আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। তাল কেটে গেল পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের সেই অচিন্তিত পূর্ব জাতীয় দুর্ঘটনার পর। আমাদের সমমনা বন্ধুবান্ধব আত্মরক্ষার তাগিদেই এদিক-সেদিক ছিটকে পড়লেন। ছিয়াত্তরের মার্চের গোড়াতেই আমি ‘রাজ অতিথি’ হয়ে গেলাম এবং পরবর্তী আঠারো মাস অবস্থান করলাম ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে। সেখান থেকেই খবর পেলাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বিয়ে করছেন তাঁর চাচাতো বোনকে। এর আগে আমরা নানাভাবে বিয়ের কথা বলেও তাঁর দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি।
সৈয়দ আমীরুল ইসলাম রাজনৈতিক শিক্ষায় পাকা হয়ে উঠেছিলেন এবং মার্ক্সবাদকেই জীবনের দর্শনরূপে গ্রহণ করেছিলেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক প্রেরণাদাতা ছিলেন তাঁর বন্ধু মোস্তফা হোসাইন। তবে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সংযুক্তি আমিই ঘটিয়ে দিয়েছিলাম। আমারই অনুঘটকত্বে কমরেড অজয় রায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, কমিউনিস্ট পার্টির গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি এবং শেষে পার্টির সদস্যপদ লাভ। পার্টির নেতৃত্বে তিনি পৌঁছাননি। কিন্তু নানা সময়ে নানাভাবে পার্টির জন্য তাঁর নীরব ও সমর্থক অবদান ছিল একেবারে অবাক করে দেওয়ার মতো। এ রকমটি তিনি চালিয়ে গিয়েছিলেন বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় পির্যয় এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বড় অংশের বিলোপবাদী হয়ে যাওয়া—এ সবই আমার বন্ধু সৈয়দের চিত্তে উথাল-পাতাল ঢেউ তুলেছিল। তবে সেই ঢেউকে তিনি বাইরে আসতে দিতেন না, নিজে নিজেই সামলে নিতেন। কিন্তু সেই সামলে নিতে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে সামলাতে ক্রমেই তিনি বিবর্ণ হয়ে উঠেছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন একান্ত মিতবাক।
তাই বলে তিনি সমাজতন্ত্র-ভাবনা পরিত্যাগ করেছিলেন কিংবা মার্ক্সীয় দ্বান্দ্বিক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দর্শনকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করে বসে ছিলেন, তেমনটি কিন্তু মোটেই নয়। আমার তো মনে হয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের পর পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলেও দ্বান্দ্বিক-ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে তিনি আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এর পরিচয় তিনি সে সময়কার লেখালেখির মধ্যেও রেখেছেন। ‘বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ নামক’ সংগঠনটির সঙ্গে তাঁর সক্রিয় সংযুক্তির মধ্যেও সেই পরিচয়ই ধরা পড়েছে।
সৈয়দ আমীরুল ইসলামের আসল পরিচয় পেতে হলে তাঁর বইগুলো পড়তে হবে মনোযোগের সঙ্গে। আমি তো তাঁর বই পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তাঁর বই পড়তে পড়তে আমি আমার ‘জ্ঞানের দীনতা’ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছি। বন্ধু থেকে তিনি আমার শিক্ষক পদে উন্নীত হয়ে গেছেন। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রকৃত মর্ম অনুধাবন করতে পেরেছেন—এ দেশে এমন গুণীজনের সংখ্যা একেবারেই মুষ্টিমেয়। সেই মুষ্টিমেয়র মধ্যেও একান্ত উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যের ধারক ছিলেন সৈয়দ আমীরুল ইসলাম। তাঁর বাংলাদেশ ও ইসলাম, কিংবা বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস কিংবা অন্য যেকোনো বইয়ের মধ্যেই কোনো না কোনো প্রকারে ওই বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে।
সারা জীবন সৈয়দ আমীরুল ইসলাম নিজের ক্ষতি করেও অন্যের ভালো করে গেছেন।
আত্মপ্রচারবিমুখ এই মানুষটি আপন কৃতি সম্পর্কে একান্ত সংযতবাক হলেও অন্যের সামান্যতম বা তুচ্ছতম কৃতির সোচ্চার প্রচারে তাঁর একটুও ক্লান্তি ছিল না।
একজন আত্মনিবেদিত ইতিহাস-সন্ধান কবি। ইতিহাস দীক্ষার কোনো একাডেমিক বা বিশেষায়িত শিক্ষা তিনি লাভ করেননি। অথচ তিনি যখন ‘বঙ্ক’ থেকে ‘বঙ্গ’ নামের উত্পত্তি অনুমান করেন এবং তাঁর অনুমানের সপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি উত্থাপন করেন, একটি রচনায় উল্লেখ করেন, তখন সে রচনাটি সম্পর্কে সৈয়দ আমীরুল ইসলামের কী উচ্ছ্বাস আর উল্লাস! পারলে তিনি ওয়াহাব সাহেবকে বাংলার ইতিহাসের একটি বিশেষ দিকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারক হিসেবে সারা বিশ্বের বুধমণ্ডলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
আমাদের সবাইকে অনেক কিছু দিয়ে, নিজে প্রায় কিছুই না পেয়ে, শেষে কি তিনি একান্তই অভিমানী হয়ে উঠেছিলেন? অভিমান করেই কি তিনি অকালে চলে গেলেন?
১৯৬৭ সালে পরিচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের জীবিকার সঙ্গে তিনি ছিলেন জড়িত। বিমা কোম্পানিতে কিছুদিনের জন্য ঢুকে ভালো না লাগায় ছেড়ে অধ্যাপনায় ঢোকেন। পরবর্তী সময়ে জাদুঘরের কর্মকর্তারূপে অবসর নেন। ফাঁকে ফাঁকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে এখানেও তিনি অনন্য কিছু প্রকাশনার কাজ করেন। সব শেষে শিক্ষাকোষ নামে একটি গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
তিনি ও আমি ময়মনসিংহ শহরেই থাকতাম। সে সময় প্রতিদিন অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা আমরা একই সঙ্গে কাটাতাম। দুজনে মিলে অনেক কঠিন কঠিন বই আমরা পড়েছি এবং বইয়ের বক্তব্য ও অন্তবস্তু নিয়ে আলোচনা ও তর্কবিতর্ক করেছি। মনে পড়ে, অত্যন্ত কঠিন একটি বই ক্রিস্টোফার কডওয়েলের ইল্যুশন অ্যান্ড রিয়ালিটিও আমরা এমনভাবেই পাঠ করেছিলাম এবং এর মর্মানুধাবনে প্রয়াসী হয়েছিলাম। এরপর বগুড়ায় যখন তিনি কলেজের অধ্যাপক হয়ে যান, তখনো ছুটিছাটা পেলেই ময়মনসিংহে চলে আসতেন এবং আগের মতোই আমরা পাঠে ও আলোচনায় নিবিষ্ট হয়ে পড়তাম। তেমনটিই ঘটেছে ঢাকায় জাদুঘরে যখন তিনি যোগ দিয়েছেন তখনো এবং এর পরও।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমি আমার স্ত্রী-পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। তারা আমার শ্বশুর পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ভেতরই থেকে গিয়েছিল। সেই দুঃসহ ও ভয়াবহ দিনগুলোতে সেই পরিবারটিকে বল-ভরসা জোগানোর ক্ষেত্রে সৈয়দ আমীরুল ইসলামের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। আজও আমার স্ত্রী সে কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন বছরও আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। তাল কেটে গেল পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের সেই অচিন্তিত পূর্ব জাতীয় দুর্ঘটনার পর। আমাদের সমমনা বন্ধুবান্ধব আত্মরক্ষার তাগিদেই এদিক-সেদিক ছিটকে পড়লেন। ছিয়াত্তরের মার্চের গোড়াতেই আমি ‘রাজ অতিথি’ হয়ে গেলাম এবং পরবর্তী আঠারো মাস অবস্থান করলাম ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে। সেখান থেকেই খবর পেলাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বিয়ে করছেন তাঁর চাচাতো বোনকে। এর আগে আমরা নানাভাবে বিয়ের কথা বলেও তাঁর দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি।
সৈয়দ আমীরুল ইসলাম রাজনৈতিক শিক্ষায় পাকা হয়ে উঠেছিলেন এবং মার্ক্সবাদকেই জীবনের দর্শনরূপে গ্রহণ করেছিলেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক প্রেরণাদাতা ছিলেন তাঁর বন্ধু মোস্তফা হোসাইন। তবে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সংযুক্তি আমিই ঘটিয়ে দিয়েছিলাম। আমারই অনুঘটকত্বে কমরেড অজয় রায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, কমিউনিস্ট পার্টির গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি এবং শেষে পার্টির সদস্যপদ লাভ। পার্টির নেতৃত্বে তিনি পৌঁছাননি। কিন্তু নানা সময়ে নানাভাবে পার্টির জন্য তাঁর নীরব ও সমর্থক অবদান ছিল একেবারে অবাক করে দেওয়ার মতো। এ রকমটি তিনি চালিয়ে গিয়েছিলেন বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় পির্যয় এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বড় অংশের বিলোপবাদী হয়ে যাওয়া—এ সবই আমার বন্ধু সৈয়দের চিত্তে উথাল-পাতাল ঢেউ তুলেছিল। তবে সেই ঢেউকে তিনি বাইরে আসতে দিতেন না, নিজে নিজেই সামলে নিতেন। কিন্তু সেই সামলে নিতে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে সামলাতে ক্রমেই তিনি বিবর্ণ হয়ে উঠেছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন একান্ত মিতবাক।
তাই বলে তিনি সমাজতন্ত্র-ভাবনা পরিত্যাগ করেছিলেন কিংবা মার্ক্সীয় দ্বান্দ্বিক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দর্শনকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করে বসে ছিলেন, তেমনটি কিন্তু মোটেই নয়। আমার তো মনে হয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের পর পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলেও দ্বান্দ্বিক-ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে তিনি আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এর পরিচয় তিনি সে সময়কার লেখালেখির মধ্যেও রেখেছেন। ‘বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ নামক’ সংগঠনটির সঙ্গে তাঁর সক্রিয় সংযুক্তির মধ্যেও সেই পরিচয়ই ধরা পড়েছে।
সৈয়দ আমীরুল ইসলামের আসল পরিচয় পেতে হলে তাঁর বইগুলো পড়তে হবে মনোযোগের সঙ্গে। আমি তো তাঁর বই পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তাঁর বই পড়তে পড়তে আমি আমার ‘জ্ঞানের দীনতা’ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছি। বন্ধু থেকে তিনি আমার শিক্ষক পদে উন্নীত হয়ে গেছেন। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রকৃত মর্ম অনুধাবন করতে পেরেছেন—এ দেশে এমন গুণীজনের সংখ্যা একেবারেই মুষ্টিমেয়। সেই মুষ্টিমেয়র মধ্যেও একান্ত উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যের ধারক ছিলেন সৈয়দ আমীরুল ইসলাম। তাঁর বাংলাদেশ ও ইসলাম, কিংবা বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস কিংবা অন্য যেকোনো বইয়ের মধ্যেই কোনো না কোনো প্রকারে ওই বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে।
সারা জীবন সৈয়দ আমীরুল ইসলাম নিজের ক্ষতি করেও অন্যের ভালো করে গেছেন।
আত্মপ্রচারবিমুখ এই মানুষটি আপন কৃতি সম্পর্কে একান্ত সংযতবাক হলেও অন্যের সামান্যতম বা তুচ্ছতম কৃতির সোচ্চার প্রচারে তাঁর একটুও ক্লান্তি ছিল না।
একজন আত্মনিবেদিত ইতিহাস-সন্ধান কবি। ইতিহাস দীক্ষার কোনো একাডেমিক বা বিশেষায়িত শিক্ষা তিনি লাভ করেননি। অথচ তিনি যখন ‘বঙ্ক’ থেকে ‘বঙ্গ’ নামের উত্পত্তি অনুমান করেন এবং তাঁর অনুমানের সপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি উত্থাপন করেন, একটি রচনায় উল্লেখ করেন, তখন সে রচনাটি সম্পর্কে সৈয়দ আমীরুল ইসলামের কী উচ্ছ্বাস আর উল্লাস! পারলে তিনি ওয়াহাব সাহেবকে বাংলার ইতিহাসের একটি বিশেষ দিকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারক হিসেবে সারা বিশ্বের বুধমণ্ডলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
আমাদের সবাইকে অনেক কিছু দিয়ে, নিজে প্রায় কিছুই না পেয়ে, শেষে কি তিনি একান্তই অভিমানী হয়ে উঠেছিলেন? অভিমান করেই কি তিনি অকালে চলে গেলেন?
No comments