প্রজাতন্ত্রের অর্থব্যবস্থার শৃঙ্খলা অটুট থাক-অর্থ ব্যয়ের প্রাক-নিরীক্ষা
রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে অপচয়-দুর্নীতিপ্রবণ কোনো দেশে এসব প্রবণতা ঠেকানোর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা যদি থাকে, তবে সেসব ব্যবস্থাকে ক্রমশ আরও দক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টোটা করা হচ্ছে। খবর বেরিয়েছে, সরকারের সব কটি বিভাগে প্রাক-নিরীক্ষা ব্যবস্থা আছে, সেগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এটা এক কথায় দুঃসংবাদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা প্রাক-নিরীক্ষা তুলে নেওয়া এবং হিসাবরক্ষণ কার্যক্রম থেকে নিরীক্ষা কার্যক্রমকে পৃথক করার বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি করবে। উন্নয়নকাজসহ রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত কোনো বিল পাসের আগে প্রাক-নিরীক্ষা বা প্রি-অডিট হয়। তাতে মূলত নীতিমালার মধ্যে ব্যয় সম্পন্ন হয়েছে কি না, বিলের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখা হয়। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর (যেখানে প্রযোজ্য) ঠিকভাবে কর্তন করা হয়েছে কি না, তাও দেখা হয়। এটি একটি প্রয়োজনীয় অনুশীলন। বহু বছর ধরে এটা চলে আসছে। এখন কী কারণে এই অনুশীলন বন্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিল, তা একটা গুরুতর প্রশ্ন। সংবাদে প্রকাশ, যাঁরা প্রাক-নিরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে, তাঁদের যুক্তি এ রকম যে প্রাক-নিরীক্ষার কারণে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই যুক্তির পক্ষে বাস্তবভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। সরকারের একজন সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এম হাফিজউদ্দিন খান যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন: প্রাক-নিরীক্ষার কারণে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করা হোক। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতার নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ রয়েছে, নইলে যেসব প্রকল্পের প্রাক-নিরীক্ষা করা হয় না, সেগুলোর বাস্তবায়নেও কেন বিলম্ব হয়?
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা প্রাক-নিরীক্ষাব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে এতই দুর্বল একটি যুক্তি, যাকে যুক্তি না বলে অজুহাত বলাই সংগত। সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, গৃহায়ণ, বন, টেলিযোগাযোগসহ ছয়টি বিভাগকে আগেই প্রাক-নিরীক্ষার আওতামুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার কি সুফল মিলেছে? এই বিভাগগুলো অপচয়-দুর্নীতিতে সরকারের অন্য সব বিভাগকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু প্রাক-নিরীক্ষা তুলে দেওয়ার ফলেই যে এসব বিভাগে দুর্নীতি বেড়েছে তা নয়; তবে এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ নিঃসন্দেহে আরও বেড়েছে, কারণ অর্থ ব্যয়ে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি কমেছে।
নিরীক্ষা আপত্তির কারণে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি অর্থবছরে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকা আদায় ও সমন্বয় করা গেছে। এ ব্যবস্থা না থাকলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় যেত? কার স্বার্থে প্রাক-নিরীক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? জনগণের অর্থ তছরুপের সুযোগ অবাধ করে দেওয়ার এই উদ্যোগ থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
একইভাবে উচিত সরকারের হিসাবরক্ষণ কার্যক্রম থেকে নিরীক্ষা কার্যক্রমকে পৃথক করার চিন্তা বাদ দেওয়া। এটা হবে সংবিধানের নির্দেশনার পরিপন্থী। সংবিধান বলে, প্রজাতন্ত্রের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা কার্যক্রম কী পদ্ধতিতে চলবে, তা স্থির করবেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)। কিন্তু এ বিষয়ে সিএজির সঙ্গে কোনো আলোচনা-পরামর্শ করা হয়নি। মোদ্দা কথা, সরকার কেন এমন উদ্যোগ নেবে, যার ফলে রাষ্ট্রের পুরো হিসাব-নিরীক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা প্রাক-নিরীক্ষা তুলে নেওয়া এবং হিসাবরক্ষণ কার্যক্রম থেকে নিরীক্ষা কার্যক্রমকে পৃথক করার বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি করবে। উন্নয়নকাজসহ রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত কোনো বিল পাসের আগে প্রাক-নিরীক্ষা বা প্রি-অডিট হয়। তাতে মূলত নীতিমালার মধ্যে ব্যয় সম্পন্ন হয়েছে কি না, বিলের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখা হয়। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর (যেখানে প্রযোজ্য) ঠিকভাবে কর্তন করা হয়েছে কি না, তাও দেখা হয়। এটি একটি প্রয়োজনীয় অনুশীলন। বহু বছর ধরে এটা চলে আসছে। এখন কী কারণে এই অনুশীলন বন্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিল, তা একটা গুরুতর প্রশ্ন। সংবাদে প্রকাশ, যাঁরা প্রাক-নিরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে, তাঁদের যুক্তি এ রকম যে প্রাক-নিরীক্ষার কারণে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই যুক্তির পক্ষে বাস্তবভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। সরকারের একজন সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এম হাফিজউদ্দিন খান যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন: প্রাক-নিরীক্ষার কারণে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করা হোক। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতার নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ রয়েছে, নইলে যেসব প্রকল্পের প্রাক-নিরীক্ষা করা হয় না, সেগুলোর বাস্তবায়নেও কেন বিলম্ব হয়?
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা প্রাক-নিরীক্ষাব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে এতই দুর্বল একটি যুক্তি, যাকে যুক্তি না বলে অজুহাত বলাই সংগত। সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, গৃহায়ণ, বন, টেলিযোগাযোগসহ ছয়টি বিভাগকে আগেই প্রাক-নিরীক্ষার আওতামুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার কি সুফল মিলেছে? এই বিভাগগুলো অপচয়-দুর্নীতিতে সরকারের অন্য সব বিভাগকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু প্রাক-নিরীক্ষা তুলে দেওয়ার ফলেই যে এসব বিভাগে দুর্নীতি বেড়েছে তা নয়; তবে এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ নিঃসন্দেহে আরও বেড়েছে, কারণ অর্থ ব্যয়ে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি কমেছে।
নিরীক্ষা আপত্তির কারণে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি অর্থবছরে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকা আদায় ও সমন্বয় করা গেছে। এ ব্যবস্থা না থাকলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় যেত? কার স্বার্থে প্রাক-নিরীক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? জনগণের অর্থ তছরুপের সুযোগ অবাধ করে দেওয়ার এই উদ্যোগ থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
একইভাবে উচিত সরকারের হিসাবরক্ষণ কার্যক্রম থেকে নিরীক্ষা কার্যক্রমকে পৃথক করার চিন্তা বাদ দেওয়া। এটা হবে সংবিধানের নির্দেশনার পরিপন্থী। সংবিধান বলে, প্রজাতন্ত্রের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা কার্যক্রম কী পদ্ধতিতে চলবে, তা স্থির করবেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)। কিন্তু এ বিষয়ে সিএজির সঙ্গে কোনো আলোচনা-পরামর্শ করা হয়নি। মোদ্দা কথা, সরকার কেন এমন উদ্যোগ নেবে, যার ফলে রাষ্ট্রের পুরো হিসাব-নিরীক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে?
No comments